নদী তুমি বড়ো নিষ্ঠুর
নদী তুমি বড়ো নিষ্ঠুর
গ্রামের নাম ভগবতী পুর। গ্রাম টি সবুজে সমৃদ্ধ। গ্রামের এই সবুজে ভরা রূপ মনমুগ্ধকর হলেও বিপদ শুধু বর্ষাকালে। আগে গ্রাম সম্পর্কে কিছু বলা যাক। গ্রাম টি খুব বড় নয়। দুই দিকে বইছে দুই নদী। উত্তরে দুঃখের নদ দামোদর আর দক্ষিণে শালী নদী। এই নদী এমনিতে শান্ত কিন্তু বর্ষা এলেই ও বৃষ্টির জলে পূর্ণ হয়ে ওঠে।
এই গ্রামের পর থেকেই এই দুই নদী একসঙ্গে বইছে। সেটি এক দর্শনীয় স্থান। শালী নদীর উপর বাঁশের ব্রিজ। নদী যেমন ই জলে ভর্তি হয় তেমনি স্রোতের টানে ব্রিজ যায় চলে। তারপর থেকে ই শুরু হয় দূর্ভোগ। আমাদের গ্রামে উচ্চ বিদ্যালয় নেই তাই বর্ষা তে নৌকা ভাঙলে যেতে হয় নৌকা করে। কত বিপদ ঘটে। রাজনৈতিক দল এর শুধু পরিবর্তন ঘটে। এরা বলে আমরা করব, অন্য জন বলে আমরা। সেই সময় পরে পরীক্ষা প্রতি বছর। তাই স্কুল যেতে হয়।
ছেলেটির নাম আদি। সে বন্যা কে খুব ই ভয় পেত। বন্যার সময় স্কুলে যেতে চাইতো না। সে দশম শ্রেণীর প্রথম। যেমন বুদ্ধি তেমনি গুণী ও শান্ত। সব বিষয়ে তার জ্ঞান ছিল অনবদ্য। সবার অনেক আশা তার উপর। তার বাবা একটা কোম্পানিতে কাজ করে। নিজে না খেয়ে ছেলের জন্য সব উজাড় করে দেয়।
সে বছর তিন দিনের অঝোর বৃষ্টিতে নদী ভরে গেল। ব্রিজ টাও চলে গেল পরপর তিনটি গ্রামের। সেদিন ছিল তার প্রিয় বিষয় ইংরেজির পরীক্ষা। নদীতে খুব স্রোত হওয়াই নদীতে খেয়া দিচ্ছে অনেক জন।
আদির মা ছেলে কে আজ ছাড়তেই চাইছে না। তাই আদির বাবা গেল আদি কে ছাড়তে। নৌকাই চাপলে ওর বাবা একটা দরকারী কাজ মনে পরে আর তিনি চলে যেতে বাধ্য হন। আদি একাই চাপে নৌকাই আর ছিল সেই দাঁড় টান ছিল তারা। হঠাৎ স্রোতের টানে নৌকা যেতে যেতেই একটা ধাক্কায় নৌকা গেল উল্টে। চারিদিকে চিৎকার অনেকই নামলো নদীতে। সবাইকে পাওয়া গেলেও, আদি কে পাওয়া গেল না। সে তো সাঁতার ও জানতো না।জাল ফেলা হল। সদর ঘাটে খবর দেওয়া হল। তাও কোনো খবর নেই। বোধ হয় তলিয়ে গেল নদীর অতলে।
সবাই কাঁদছে। কান্নার রোল পরল চারিদিকে। আদির মা পাগলের মতো ছুটছে আর তার ছেলে কে খুঁজছে। আদির বাবা নিজেকেই দোষী ভাবছে। এইভাবেই শেষ হয়ে গেল একটা জীবন। তার আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন এক নিমেষেই তলিয়ে গেল নদীর অতলে।
