Sheli Bhattacherjee

Drama

0.2  

Sheli Bhattacherjee

Drama

মুখোশের আড়ালে

মুখোশের আড়ালে

3 mins
2.3K


দুচোখে কাজলের টান দিতে দিতে নিজের পরিপাটিরূপটা বেশ কয়েকবার পরখ করে নিল অমৃতা। তারপর শিফনের স্বচ্ছ শাড়ির আবরণে নিজের শরীরটাকে হেয়ালি করে সাজালো। কোমর, ঘাড়, পিঠ ও বক্ষের একাংশকে উন্মুক্ত রেখে সেক্সকে সোচ্চার করে রাখল নিজ প্রয়োজনে। আজ ওর ভালোবাসার মানুষটির জীবনে সবচেয়ে আনন্দের দিন। নিখিল আজ রায় অ্যান্ড সন্সে ম্যানেজার হয়ে গেছে। তাইতো আজকের এই ঝলমলে পার্টির আয়োজন। ব্যাঙ্কুয়েট ভাড়া করে প্রায় মধ্য রাত অবধি সেখানে চলবে 'ম' যুক্ত শব্দের ম-ম করা গা ঘিনঘিনে গন্ধ। মদ- মেয়ে- মাংসের কচলাকচলির মধ্য দিয়ে অনেক ভবিষ্যৎ প্রমোশন আর ডিমোশনের সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে আদিম রিপুর দাঁড়িপাল্লায়। এই লড়াইতে বাজিমাৎ করতেই তো বিগত কয়েকটা পার্টিতে নিখিলের তুরুপের তাস হয়েছিল অমৃতা। জোকারের মতো সেজেগুজে ঢলে পরেছিল ব্যাবসার জগতের রাজাদের রিপুকে উস্কে দিতে। এসব কারণেই তো মূলত ২৮ বছরের প্রায় হাভাতে পরিবারের ডানা কাটা পরীর মতো দেখতে মেয়ে অমৃতাকে তিন বছর আগে বিয়ে করেছিল চল্লিশোর্ধ্ব নিখিল সরকার। নিখিলের কাছে অমৃতা শুনেছিল, ওর প্রথম স্ত্রীয়ের কথা। নিখিলের ভাষায়, সে নাকি টিপিকালই আনস্মার্ট ছিল। পার্টিতে নিয়ে গেলে বলত, চিড়িয়াখানায় এসেছি। বলত, এসব কদাকার পশুর মধ্যে দাঁড়িয়ে আমি হেসে কথা বলতে পারব না। সেই নিয়েই তো ডাইভোর্স হল ওদের। তারপর বছর দুয়েক পর নিখিলের চোখে পড়েছিল অমৃতাকে। টাকার পাহাড়ের আতিশয্যে নিজের বাড়ি গাড়ি স্ট্যাটাস দেখিয়ে একরকম শকুনের মতোই বিনা প্রতিরোধে ছো মেরে তুলে নিয়ে এসেছিল অমৃতাকে ওর বাবার নিম্ন মধ্যবিত্ত ঘর থেকে। দায়িত্ব নিয়েছিল অমৃতার কণিষ্ঠ ভাইটার চিকিৎসার। কয়েক মাস পর পর ছেলেটার যে রক্ত বদলাতে হয়।


নিখিলের বাড়িতে, সোসাইটিতে, পার্টিতে থাকার সময়, নিজের ঝা চকচকে সাজের আড়ালে নিজের মন আর রুচিবোধগুলোকে শীতল পাটির মতো গুটিয়ে রাখে অমৃতা। ও জানে শীতল পাটি মাটির ঘরেই মানায়, তাই তাকে খুলে বসে বাপের বাড়ি গেলে। মনটা সেখানে মনমতো খোলা বাতাসে একটু শ্বাস নিতে পারে।


আজ পার্টিতে হয়তো অমৃতার আগের বারগুলোর মতো স্বপ্নিল চ্যাটার্জির কাছাকাছি খুব বেশি ঘেঁষে দাঁড়াবার প্রয়োজন হবে না। কারণ, নিখিল বলেছে ওই বেরিয়ারটা ও পার হয়ে গেছে। এবার আরো উপরে ওঠার স্বপ্ন। আরো উঁচু পোস্টের জন্য এবার টার্গেট অরবিন্দ রায়। মাথা ভর্তি চকচকে টাকযুক্ত কালো কুষ্ঠি পাথরের গায়ের রঙের অরবিন্দ যখন অমৃতার দিকে কুতকুতে চোখে চেয়ে হেসে ওঠে, অমৃতার সারা পেট মুড়িয়ে বমি পায়। তবু, ঠোঁটের কোণের মৃদু রহস্যময়ী হাসিতে নিজেকে দুর্লভ প্রমাণ কর‍তে থাকে বিশ্রাম বিহীন ভাবে। নইলে যে মিসেস সাহা, মিসেস ব্যানার্জি আর মিসেস সেনের জালে চলে যাবে অরবিন্দ। সেসব নারীরাও যে হাসিমুখে এই পশুগুলোর একরাতের কিছুক্ষণের কিমতি সঙ্গ ছিনিয়ে নিয়ে নিজেদের স্বামীকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চায় কর্পোরেট লড়াইয়ে।


এসব ভাবতেই, হঠাৎ অমৃতার চিকন দুধ রঙা কোমরটাকে জড়িয়ে ধরে টান মারে একজন। সহসা ছলকে ওঠে অমৃতার হাতে রাখা রঙিন পানীয়ের গ্লাস। অমৃতা টের পায়, একটা বিকট দুর্গন্ধ যুক্ত আদিম জীবের পেট মোড়ানো রিপুর আস্ফালন। অত:পর অরবিন্দ ডান্স ফ্লোরে ওর অনিচ্ছুক শরীরটাকে মিউজিকের তালে তালে দোলাতে থাকে নিজের ইচ্ছামতো। লাল চোখে পাশে দাঁড়িয়ে হাততালি দিতে থাকে নিখিল। নৃত্যরত অবস্থায় হঠাৎই অমৃতার মনে হয়, ওর চারপাশে আর একটাও মানুষ নেই। কেউ শিয়াল, কেউ বাঘ, কেউ নেকড়ে, কেউ মোহময়ী হরিণ হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আর ওর শরীরে যখনতখন মুখ গুঁজে দিচ্ছে একটা কিম্ভুতকিমাকার চেহারার শিম্পাঞ্জি। অমৃতা অবাক হয় ভাবে, নিখিলের প্রথম স্ত্রীয়ের ধারণাগুলো কিভাবে ওর মধ্যে দিন কে দিন চেতনার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রন্ধ্র তৈরি করছে। সেই সম্মিলিত চৈতন্যগুলোর স্বচ্ছ আয়নার দিকে অপলক চেয়ে আৎকে উঠছে অমৃতা। সেখানে ও সহসা নিজেকে আবিষ্কার করছে ... লাস্যময়ী এক নারীর রূপে, যার সামনে আগ্রাসী হয়ে বসে রয়েছে এক আদিম রিপুযুক্ত কদাকার জীব।


(সমাপ্ত)


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama