জীবনের রঙ
জীবনের রঙ
রনি-দার সিদ্ধান্ত শুনে বেশ অস্বস্তিতে পড়লাম। নীলাকে বিয়ে করার প্রস্তুতি নিচ্ছে কিন্তু নীলার জীবনে যে সীমাবদ্ধতা রয়েছে তা কি জানে রনিদা ! না-জেনে যদি বিয়ে করে বসে, ওদের বিবাহিত জীবন মোটেই সুখের হবে না। তাই বলেই ফেললাম, "নীলা রাজি তো !"
-- আরে ব্রাদার, মিঁয়া-বিবি দুজনে রাজি না-হলে বিয়ে হয় নাকি !
-- না , মানে নীলার জীবনের সবকিছু জেনেই তাকে প্রস্তাব দিয়েছো তো !
আসলে নীলা আমার সম্পর্কে দিদি..বন্ধু..অনেক কিছুই। আমার চেয়ে মাত্র একমাসের বড়ো বলে দিদি বলতে চাইতাম না কিন্তু ঠাকুমার ভয়ে বলতেই হত। সেই পাঁচ বছর বয়স থেকে আমায় ভাইফোঁটা দিত। ঠাকুমা মারা যাওয়ার পর অবশ্য সে-সব বন্ধ হয়ে যায়, তবে বন্ধু তো ছিলই।
তখন মাধ্যমিক শুরু হয়েছে, নীলা পেটের যন্ত্রণার চোটে দিতেই পারল না পরীক্ষা। কিডনিতে পাথর জমেছিল। অপারেশনের কয়েকমাস পর সুস্থ হয়েও উঠল। তখন আমি একাদশ শ্রেণীতে পড়ি। স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পর জেঠিমা মানে নীলার মা-কে কাঁদতে দেখে চমকে গেলাম। আমার মা সান্ত্বনা দিচ্ছিল।। পরে সব জানলাম। নীলা আর কোনোদিনই 'মা' হতে পারবে না।কিডনি অপারেশন করতে গিয়ে ডাক্তার ওর ইউটেরাসে ছুরি চালিয়ে দিয়েছিল।
রনি-দা হাসল, " দ্যাখ যাকে সত্যিই ভালোবাসি, সে কী আমায় কিছু লুকোতে পারে ! জখনি আমরা সন্তানের মুখ দেখতে পাবো না -- এই তো ! কত স্বামী-স্ত্রীই তো পায় না ! তাছাড়া দোষ তো নীলার নয় ডাক্তারের তাহলে ওর কেন এতো বড়ো শাস্তি হবে ! আমরা যে পরস্পরকে এত ভালোবাসি, তার বুঝি কোনো মূল্য নেই না- রে!
------------