জারুল ফুল
জারুল ফুল


"হৃদয় আছে যার সেই তো ভালোবাসে
প্রতিটি মানুষেরই হৃদয়ে প্রেম আসে"....
গানের কলি গুলো ভেসে আসছে মোহর কুঞ্জের একটি গেট্টুতে কোন ওক মান্না কণ্ঠীর কণ্ঠ থেকে। সময় যে নদীর মতোই বয়ে চলেছে। তাতে কার হৃদয় কার হাতে যে দোলে তা সঠিক ভাবে বলা যায়না আর... তবুও এই কণ্ঠ বহুদিনের চেনা রাই এর । এ যে বিশাল পুরকায়স্তদের টিমের অরিজিত কুণ্ডুর কণ্ঠ। তারমানে... তারমানে সুমিতও কি আছে এ টিমে! কথাটা ভাবতে ভাবতেই নিজেদের কলেজের কিছু বন্ধুদের গেট্টু থেকে নিজেকে সরিয়ে এগিয়ে আসে সেই জারুল গাছটার কাছে। যেখানে সাদা ফুলগুলো এখনও তরতাজা পঁচিশ বছর আগের মতোনই। শুধু রাই এর জীবনে পরিবর্তন ঘটেছে অনেক, দুই মেয়ের সিঙ্গল মাদার হিসেবে কুড়িটা বছর পেরিয়ে এসেছে ... সেই ২০১৯ সালের ফার্স্ট ইয়ারে হুল্লোড় বাজ রাই আজ শান্ত নদীর মতোন যাতে ছলাৎ ছল শব্দ তোলার মতোন কোন আকর্ষণই নেই আছে কেবল স্থবিরতা... একটানা বয়ে যাওয়া...
জারুল গাছটার পিছন থেকে একটা চাপা গলার শব্দ শুনতেই ফিরে তাকায় রাই। হলুদ পাঞ্জাবী আর ফেডেড জিন্সে আজকের সুমিত আর সেই ক্যালানে সুমিতের মধ্যে বিস্তর ফারাক। রাই ওকে দেখে চোখ নামিয়ে সরে গিয়েছিল একটু। হা হা হা করে হাসতে হাসতে সুমিত বলে ওঠে'
"গাছটার সাইন্টিফিক নামটা কি মনে আছে তোমার?"
রাই যেন শুনতে না পেয়ে চুপ করে তাকিয়ে দেখে, সুমিতের চেহারার কত পরিবর্তন! রোগা হয়েছে অনেক, তবে ফর্সা হয়েছে আগের চেয়ে। হবেনাই বা কেন, এখন তো সারাক্ষণ ঠাণ্ডার দেশে... সেই জার্মানিতে। চুপচাপ সুমিত অনর্গল কত কথা বলে যাচ্ছে। বিয়ে করেনি! সে খবর তিন বছরের পুরোন বন্ধুদের হোয়াটসআপ গ্রুপ থেকেই জেনেছে। প্রতিবছর এ সময় আসে নিয়ম করে। কেন তা জানে না! রাই বলল,
"তোমার এ রকম চেহারা হলো কেন? সুগার বাড়িয়েছ না কি?"
প্রত্যুত্তর সুমিত বলল,
"যাক না এমনি করে যায় যদি দিন" ...
তারপর বলো তোমার আর তমোজিতের কথা.. কেমন আছো সবাই... ?"
রাই মনে মনে ভাবে সত্যি জীবন কত পরীক্ষাটাই না নিল তার। এই সুমিতের সাথে সামান্য কথায় ব্রেকাপের পর তমোজিতকে বিয়ে করে পালিয়ে গেল মুম্বাই। তারপর.... তারপর বছর পাঁচেক অনেক অশান্তির পর দুই মেয়ে নিয়ে আজ পর্যন্ত সেপারেশনে থাকলেও স্ক্রিৎজোফেনিক তমোজিতের দায়ভার তারই বহন করতে হয়। ইন্দোর থেকে সব খবরই পায় রাই। তাই এবার দেখা করতে এসেছে বন্ধুদের সাথে। শুধু মুখে সুমিতকে বলে,
"ঐ চলে যাচ্ছে সব। তবে বোটানীর ফার্স্ট ক্লাশ ফার্স্ট বয়, জারুল গাছের পাতার অনেক ভেষজ গুণাবলী আছে সেটা জানেন তো? ডায়াবেটিক পেশেন্টের খুব উপকারী এইপাতা। সবচেয়ে উপকারী অনিদ্রার রোগীদের। চোখের তলায় কালি গুলো ঐ রোগের সংকেত দেয় সুমিত।"
সুমিত জোরে জোরে বলে,
"জারুল, পারুল বনফুল
চৈত্রশেষে আবার ফুটুক
গন্ধ নয় নানা রূপের রং ধরুক
হৃদয় থেকে হৃদয়ে ভালোবাসার বাতাস লাগুক"