koustav halder

Tragedy Inspirational

4  

koustav halder

Tragedy Inspirational

জাগরণ

জাগরণ

4 mins
344


রমেশ বাবু পাখিটির দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। পাখিটা টেবিলের ওপর দেওয়া খাবারের দানাগুলো তার ঈষৎ লাল রঙের ঠোঁটের ডগা দিয়ে খুঁটে খুঁটে খাচ্ছে।

  

                                    পাখিটাকে তিনি কয়েকদিন আগেই তার বাগানে দেখতে পান,ডানায় চোট লেগেছিল। তখনই তিনি সেটিকে নিয়ে আসেন এবং পাখিটির সেবা যত্ন করেন।


এই কয়েকদিনে বেশ সেড়ে উঠেছে পখিটি। আর কদিন পরেই হয়তো উড়তে পারবে ।

বেশ ভালো দেখতে পাখিটা। ছোট্ট মুনিয়া পাখি, গায়ে লাল , কালো পালকে ঢাকা।ডানায় কয়েকটি সাদা রং ছোপ। 


সত্যি প্রকৃতির রঙের খেলার গাছে নামী চিত্রশিল্পীও মাথা নত করে ।


রমেশবাবু টেবিল থেকে চায়ের কাপটা তুলে নিলেন ।পাখিটি এখনো খাচ্ছে। পাখিটির চোখ দুটো বড় সুন্দর, নীল চোখের মধ্যে বাদামী রং। সেই মাদকতা ভরা চোখের দিকে তাকিয়ে পক্ষীপ্রেমিক রমেশ সরকার হারিয়ে যাচ্ছেন অতীতের কোনো এক গ্রীষ্মের দুপুরে। যেদিন তার মনে প্রথম পাখিদের জন্য নিজের মনে ভালোবাসা খুঁজে পেয়েছিলেন ।

সেই দুপুরের কথা তিনি তার মনে সযত্নে সোনার বাক্সে বন্দী করে রেখেছেন তার মনের সিন্দুকে।

যে দুপুরের জন্য আজ তিনি ভারতের একজন নামকরা পক্ষী- বিষারদ ।


গ্রীষ্মকাল ,সূর্যের প্রচণ্ড তেজে দুপুরে কোন প্রাণী কলরবে যোগ না দিয়ে গাছের শীতল হাওয়ায় নিজেদেরকে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করছে ।আর একটা দশ বছরের ছেলে ,খালি গায়ে সেই দুপুরে হাতে গুলতি নিয়ে টিপ্ শিখছে।


রমেশবাবু মনে মনে একটু হাসলেন।

তখনকার রমেশ এর সাথে আজকের রমেশের আকাশ-পাতাল পার্থক্য।


ছেলেটা মাঝে মাঝে কোন গাছে গুলতি দিয়ে টিপ্ মাড়ছে। আবার কখনো শুন্যে ছুঁড়ে দিচ্ছে। কিন্তু কোনটিই সঠিক

নিশানায় মাড়তে পাড়ছে না।প্রতিবারই চেষ্টায় সে বিফল হচ্ছে।


এমন সময় তার চোখে পড়লো আম গাছের ডালে বসে থাকা একটা হলুদ রঙের ইষ্টি কুটুম পাখি । কয়েকটা কলো রঙের পালক ছাড়া সমগ্র দেহটা গাঢ় হলুদ রঙের পালকে মোড়া। সে তার ক্লান্ত তৃষ্ণার্ত কন্ঠে দুপুরে ডেকে চলেছে মৃত দুপুরের প্রাণের শেষ স্পন্দনের সন্ধানে ।


সে অনবরত ডেকে চলেছে....-ইষ্টিকুটুম ....... ইষ্টিকুটুম.....

আহঃ কি অপূর্ব তার গলার স্বর।


ছেলেটি অবাক চোখে পাখিটির দিকে তাকিয়ে আছে।

হঠাৎ তার মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে গেল ।সে মাটিতে পড়ে থাকা একটা ইঁটের টুকরো তুলে নিল। পাখিটিকে নিশানায় এনে গুলতিতে জোড়ে একটা টান দিল ।


তখনও সে বুঝিতে পারেনি কী হতে চলেছে?

সে ভেবেছিল এইবারেও সে বিফল হবে। কিন্তু না ঈশ্বরের

সেই ইচ্ছা ছিল না।

গুলতির দঁড়ি ছাড়তেই ইঁটের টুকরাটা শুন্যে উঠে গেল...।


কয়েক সেকেন্ড পরে গাছ থেকে কোন একটা ভারী বস্তু ছেলেটির পায়ের কাছে এসে পড়ল।


নীচের দিকে তাকাতেই ছেলেটির বুকটা ধড়াস করে উঠল।                                     গাছের ইষ্টি কুটুম পাখিটা সেখানে এখন আর নেই ,

এখন সেটা তার পায়ের কাছে পড়ে আছে ।শুধু পরিবর্তন এই যে ,সেই সুরেলা কণ্ঠস্বর আর নেই, আর চোখের উপর নেমে এসেছে একটা কালো পর্দা ।


                        তার জীবনে করা প্রথম খুন.....!!

এখন সে খুনী.....!! আজ তার জন্য এই অচল দুপুর রক্তাক্ত হয়েছে ।সে নিজেকে সামলাতে পারল না ।

হাতের গুলতিটা পড়ে গেল মাটিতে ।

পাখিটার নরম পালক হাতের মধ্যে জড়িয়ে নিয়ে সেটিকে মাটি থেকে তুলে আনল ।সে হাতটাকে কানের কাছে নিয়ে গিয়ে কিছু একটা শোনার চেষ্টা করলো। এখনও একটা-- চি.... চি....শব্দ আসছে।

সে তাড়াতাড়ি পুকুরের ঘাটের দিকে ছুটলো, আঁজলা করে পাখিটার ঠোটে জল ঢালতে লাগল ........


সেদিন রমেশবাবু পাখিটিকে বাঁচাতে পারেনিন।

প্রায় এক মাস তিনি পাখিটির জন্য বুকে একটা ক্ষীন ব্যথা অনুভব করেছিলেন। আর মাঝে মাঝে তার নিজের মনের চোড়াকুঠুরিতে লুকিয়ে থাকা কোন এক পাপবোধ বারবার তাকে খোঁচা দিয়েছে ।

তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন জীবনে আর কোনদিন পাখি হত্যা করবে না ।


সেই একটা খুন, রমেশবাবুর জীবনকে একবারে বদলে দিয়েছে। হয়ত এই একটা খুন তার হাত দিয়ে না হলে তিনি আরও শত শত ছোট পাখির জীবন বাঁচাতে পারতেন না ...?

হয়ত তিনি তার সামনে থাকা পাখিটিকে ওই অবস্থাতেই ছেড়ে চলে আসতেন....?

রমেশ বাবুর চোখের কোনটা ভিজে।উঠলো ।

সেই পাখিটার জন্য কি ....?

হয়তো সেই পাখিটার জন্যই .....!!!

তার জীবনে করা প্রথম খুন......!!!

                    ....................................................


Rate this content
Log in

More bengali story from koustav halder

Similar bengali story from Tragedy