হিসেব
হিসেব
রমেন কুণ্ডুর রাধানগরে একটা সিমেন্টের দোকান আছে । তিনি ভলানটারি রিটায়ারমেনট নিয়ে সিমেন্টের ডিলারশিপ নিয়েছেন । খুচরো বিক্রেতারা সিমেন্ট কিনে নিয়ে যায় । সামান্য লাভ রেখে রমেনবাবু সিমেন্ট ছেড়ে দেন । সবাই জানে রমেন কুণ্ডুর থেকে সিমেন্ট কেনা মানে ভেজালহীন সিমেন্ট পাওয়া । এমন কি কোন কোন সিমেন্ট বিক্রেতা এখান থেকে সিমেন্ট নিয়ে ভেজাল মিশিয়ে এই দোকানের থেকে কম দামে বিক্রি করে৷
সেদিনটা ছিল রবিবার । সকালে রমেন বাবু দোকান খুলে গণেশকে ধুপদীপ দিয়ে খবরের কাগজের পাতায় চোখ রেখেছেন । রবীণ বাগ এসে ঢুকলেন । বললেনঃ কুণ্ডুদা কি করেন ?
কুণ্ডুবাবুঃ এই তো খবরের কাগজটা দেখছিলাম । মানুষ বাঁচবে কি করে ব্লুন তো ? দিন দিন জিনিস পত্রের যা দাম বাড়ছে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়ছে ।
রবীণঃ যারা চালাবার তারা ঠিকই চালাচ্ছে । মানুষের হাতে এখন টাকাও অনেক । আরে আপনার চিন্তা কি মশাই । সিমেন্টের কারবারি টাকায় টাকা । নিন এক কাপ চা খাওয়ান দেখি ।
কুণ্ডুবাবু তার দোকানের কর্মচারীকে টাকা দিয়ে বললেনঃ যা দুলাল চা নিয়ে আয় ।
চা এলে আধ ঘণ্টাটাক সময় কাটিয়ে রবীণ বাগ চলে যেতে দুলাল বলেঃ বাবু ! ঐ বাবুরে আপনে চা খাওয়াইবেন না, বেশী কথা বলবেন না ।
কুণ্ডুবাবুঃ কেন রে?
দুলালঃ সেদিন বাজারে দেখি সবজি ওয়ালার সঙ্গে কি ঝগড়া ! কথা কাটাকাটি । এক কিলো বেগুন লইয়া বলেঃ তুই আবার মাপ, ওজন কম দিছস ।
সব্জিওয়ালা বলেঃ আমার অন্য খরিদ্দার আছে বারবার মাপতে পারুম না । নিতে হইলে নেন নাইলে আপনে অন্য দোকানে যান । ওই বাবু কয় তুই বেগুন পাল্লায় তুলছস তোর থিকাই নিমু । নে নে আবার ওজন কর । চারপাশে লোক জড়ো হইয়া গেছে । কন দেখি গরীব মানুষ সবজি বেইচ্যা কয় পয়সা আর লাভ করব ? না বাবু আমি এমন মানুষ দেখি নাই ।
কুণ্ডুবাবুঃ সব মানুষ কি আর একরকম হয় রে ?
দুলালঃ আপনে যাই বলেন না বাবু আমি দেখছি বাজারে কোন সবজিওয়ালা ওনারে সবজি ব্যাচতে চায় না। মাছওয়ালা মাছ ব্যাচতে চায় না । ওই বাবু সকলের লগে দরদাম লইয়া ঝগড়া করে । সেদিন ত দ্যাখলাম এক সবজিওয়ালারে কইতাছে তর পয়সা কাল দিমু । বাবু নিজে কামায়, বউ কামায় অথচ দ্যাখেন - - -!
বাজারের মধ্যে দোকান সেজন্য রমেন কুণ্ডুর চেনা লোকজন একবার হাই হ্যালো করে যান কখনও বা চা খেয়ে একটু গল্পগুজব করে বাজার সারেন । সেদিন কার্ত্তিক কংসবণিক এসেছে এদিকে রবীণ বাবুও এসেছেন । খানিকক্ষণ কথা বলে রবীণ বাবু চলে যেতেই কার্ত্তিক বলেনঃ ওই দাদা রোজ আপনের দোকানে আসে নাকি কুণ্ডুবাবু ?
কুণ্ডুবাবুঃ মাঝে মাঝে আসেন ।
কার্ত্তিকঃ গতবার স্বরস্বতী পূজার আগে আমার দোকান থিকা কিছু বাসন নিছিল । পাঁচশো টাকা হইছিল । আমারে কয় দাদা আজ আপনি তিনশ টাকা রাখেন । বাকীটা পরে দিয়া যামুখন । আইজ ও দিছে কাইলও দিছে । অনেকবার বলছি । দ্যাখলেন না আমারে দেইখ্যা তাড়াতাড়ি চইল্যা গেল । তাই বলি কি কুণ্ডু বাবু, সাবধানে থাকবেন ।
এক রবিবার রমেন কুণ্ডু রবীণবাবুর সঙ্গে দোকানে বসে চা খাচ্ছেন এমন সময় ফোন এল সিমেন্টের ট্রাক ঢুকেছে । ব্যস্ত হয়ে রমেন কুণ্ডু একটু এগিয়ে গোডাউন খুলে দিলেন । রবীণবাবুও তার পিছু নিলেন ।
কুণ্ডুবাবু দুলালকে বললেনঃ তুই এখানে থাক আমি দোকানে যাচ্ছি । হলে চাবি দিয়ে আসবি ।
দোকানে ফিরে এসে বসে রবীণ বলেঃ কুণ্ডুদা, আপনার গোডাউনে দেখলাম সিমেন্টের গুড়া ভর্তি ছিটানো । কি করবেন ?
কুণ্ডুবাবুঃ ওই দুলাল ঝাড় দিয়ে দেবে ।
রবীণঃ হ্যাঁ দাদা, আপনি ওরে ঝাড় দিয়ে গুঁড়া গুলি বস্তায় ভরে রাখতে বলবেন । আমি নিয়ে যাব ।
কুণ্ডুবাবুঃ বিস্ময়ের সঙ্গে বললেনঃ ও গুলো নিয়ে আপনি কি করবেন ?
রবীণঃ আমার উঠোনটায় ইট পাতা আছে । এই গুঁড়োগুলো ছড়িয়ে দিলে উঠোনটা বাঁধানো হয়ে যাবে । আপনার সিমেন্টে তো ভেজাল নেই । ভালই হবে ।
কুণ্ডুবাবু মনে মনে রবীণের বুদ্ধির তারিফ না করে পারলেন না ।
পরদিন রবীণ এসে দুলালকে বললেনঃ এই গোডাউনে একটা ঝাড়ু লইয়্যা চল । দুলাল কুণ্ডু বাবুর দিকে তাকায় ।
রবীণঃ বাবুর দিকে তাকাইতে হইব না । আমি কইতাছি ত । কুণ্ডুদার সঙ্গে আমার কথা হইয়া গ্যাছে । রবীণ কুণ্ডুবাবুকে কিছু বলার অবকাশ না দিয়ে দুলালকে হাইজ্যাক করে গোডাউনে নিয়ে সিমেন্ট ঝাড় দিয়ে দুটো বস্তা ভরে ভ্যানে উঠিয়ে বাড়ীর দিকে পাঠিয়ে দিয়ে ভ্যান ওয়ালাকে বললেনঃ যা, আমি আইতাছি ।
মাল পৌঁছে ভ্যানওয়ালা বল্লেঃ বাবু চা খাওয়ার লইগ্যা কিছু দ্যান ।
রবীণঃ কুণ্ডুবাবু দিব ।