হীরেনের বিশ্বাস
হীরেনের বিশ্বাস
ধর্মবাগ জেলার অর্চিস্পুর অঞ্চলে দুদিন আগে একটা ব্যাপার ঘটেছে । পাথরের একটা চাঁইয়ের উপর অঞ্চলের লোক ভক্তির জোরে দুধ , জল , ডাবের জল ঢালতো । পাথরটি একটি মন্দিরে প্রতিষ্ঠার ব্যবস্থাও করেছে লোকেরা ।
দুদিন আগে হঠাৎ করে জানকীনাথ বাবু সকালে এসে দুধ ঢেলে দেখেন দুধ বাইরে না পড়ে সব ভেতরে চলে যাচ্ছে । অমনি উনি " জয় মহাদেবের জয় " বলে গোটা এলাকায় জয়ধ্বনি করতে লাগলেন ।
ব্যাস আর লোকজন সব্বাই একে একে এসে শিলার উপর দুধ , জল ও তরলাদি ঢালতে লাগলো । সব টেনে নিলো মহাদেবের শিলা ।
ঠিক পরদিন মন্দিরের পুরোহিত শিলা ধরে সরিয়ে ফুল , মালা পরিষ্কার করতে গিয়ে দেখেন সরাতে পারছেন না । সে কী প্রচন্ড ভারী ! ব্যাস তিনি উল্লাসে নেচে বলে উঠলেন , " বাবা ভোলানাথের কি অপরূপ মাহাত্ম্য গো , দেখো দেখো বাবার ওজন বেড়ে গেছে । মন্দির ছেড়ে বাবা আর যাবেন না । "
সেই থেকে দুদিন হলো মন্দিরে আনন্দ উৎসব অনুষ্ঠান চলছে । হীরেন প্রায় একবছর পর বিদেশ থেকে এসেছে অর্চিস্পুরে । এই মন্দির সে দেখেনি । তার বিষয়ে শুনে আর তার মাহাত্ম্যের গল্প শুনে সে রীতিমতো অবাক হলো । সেই সঙ্গে তার প্রচণ্ড রাগ হলো । ভগবান নাকি ওজনে বাড়ছেন !
সে বাড়ি গিয়ে বাবাকে বললো , " বাবা গ্রামে কী শুরু হয়েছে ? "
জানকীবাবু বললেন , " যা জানিস না তা নিয়ে কথা বলবি না । আমার সামনে ঘটনাটা ঘটেছে । "
হীরেন তো রাগেই অস্থির । একবছর পর সে ফিরে এই জিনিস দেখে ফিরেই যাবে ঠিক করে একদিনের মধ্যে । যাওয়ার টিকিট বেশী দিয়েই বুক করে ।
ঠিক বেরোনোর দিন দুপুরে তার শরীরটা ভীষণ খারাপ করে । মাথা ধরে তার , গা ম্যাজম্যাজ করে । ক্
রমে জ্বর আসে । তবুও সে গোঁ ধরে আজই চলে যাবে ।
মা জানতে পারলে রে রে করে তেড়ে আসেন । " কী বাবু , তোর কি মাথা খারাপ হলো ? "
" হয়েছে তোমাদের , এই পাগলামিতে নইলে মেতে থাকতে না । "
" পাগলামি বলছিস তো দাঁড়া তোর জন্য বাবার গায়ে লাগা দুধের ফোঁটা নিয়ে আসি , দেখ কী হয় । "
এসব শুনে হীরেনের জ্বরের চেয়েও আরও কষ্ট বেড়ে গেলো । বাবার দুধের ফোঁটা মা এনে ছেলের মুখে লাগিয়ে দিলেন । ইতিমধ্যে অনলাইনে ডাক্তারের সাথে কনসাল্ট করে সে ওষুধ কিনে খেয়ে জ্বর থেকে খানিক মুক্তি পেয়েছে । লম্বা যাত্রার ধকলেই শরীর খারাপ । এদিকে মায়ের বিশ্বাস স্পষ্ট হলো যে বাবার গায়ের দুধের ফোঁটাটেই ছেলের জ্বর কেটেছে ।
যাই হোক লাগেজ নিয়ে ফিরতে গিয়ে মনে হলো শরীরটা আরো ভালো হয়েছে । মনটা কেমন জানি মন্দিরের দিকে টানলো । সে লাগেজ নিয়েই মন্দিরের দিকে এগিয়ে গেলো । সাথে তার হেয়ার অয়েলের একটা শিশি ছিলো । কি মনে হলো খানিক ঢেলে দেখতে গেলো । একি এ তো সত্যি কথা , তেল পাথরের মধ্যেই চলে যাচ্ছে । কীরকম অদ্ভুত একটা শক্তির টান অনুভব করতে লাগলো ।
এমন সময় পিছন থেকে মায়ের গলা শুনে সে চমকে গেলো । " কি রে বিশ্বাস হলো তো ? "
হীরেন চুপ । সে যাওয়া ক্যান্সেল করে থেকে গেলো । মন্দিরে প্রতিদিন পুজো দিতে শুরু করলো । তার এক বন্ধু এক মাস পরেও তার না ফেরা দেখে ফোন করলো । সব কথা শুনে চমকে গেলো ।
সেই বন্ধু নিজে হীরেনের বাড়ি এলো । মন্দিরে সেদিনই গেলো হীরেনের সাথে । সকলের আড়ালে শিলা নাড়িয়ে দেখলো শিলার এক পাশে গভীর ফাটল । সে হীরেনকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখালো । হীরেন কেমন যেন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে দাঁড়িয়ে রইলো ।