হাতছানি
হাতছানি
-বলরাম তুই দেখিস আমার এই সাধের বাড়িটাকে। তোর গিন্নিমা আর ছেলেদের স্মৃতি লেগে আছে বাড়িটার প্রতিটা ধুলোতে।
ছোটখোকাও যেদিন চাকরি পেয়ে এই বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিল, কত্তাবাবা বড়ো দুঃখের সাথে কথাগুলো বলেছিল। চার-চারটে ছেলে কত্তাবাবার। সবাই নিজে নিজে প্রতিষ্ঠিত হয়ে পৃথিবীর নানা প্রান্তে বসবাস করছে। বাবার জন্য এতটুকু সময় নেই তাদের কাছে।
ছোটখোকাও চলে যাওয়ার আঘাতটা কত্তাবাবা যেন সইতে পারলেন না। সুস্থ মানুষটা সেই যে বিছানা নিলেন, আর উঠলেন না। সবাই চলে গেলেও কত্তাবাবার কথা ফেলতে পারেনি বলরাম। আজ ষোলটা বছর এই যক্ষের পুরী বলরাম একা আগলে রেখেছে। ছেলেরা বছরান্তে বাড়ির দুর্গাপুজোতে একবার করে আসে সবাই।
এবার মনে হচ্ছে বলরামেরও সময় হয়ে আসছে। শরীরটা আর আগের মত সাথ দিচ্ছে না। কদিন পরেই পুজো। বছর পরে মা আসবেন। ঘরের ছেলেরা ঘরে ফিরবে। এইসময় নাওয়া-খাওয়ার সময় থাকে না বলরামের। অথচ এবার সে বিছানা থেকে উঠতেই পারছে না। রাত পেরোলেই মহালয়া। ছেলেরা সব কাল থেকেই আসতে শুরু করবে। ওদের হাতে সব দায়িত্ব তুলে দিয়ে ছুটি নেবে বলরাম। ও দিব্যি বুঝতে পারছে আর বেশি সময় নেই ওর হাতে।
নাটমন্দিরে ঠাকুর তৈরি প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। একবার মায়ের মুখটা দেখার জন্য মনটা যেন ছটফট করে ওঠে বলরামের। কোনরকমে দেওয়াল ধরে ধরে বেরিয়ে আসে ঘর থেকে। কিন্তু মা দুর্গার কাছ অবধি পৌঁছাতে পারেনা। ভাঙা নাটমন্দিরের দেওয়ালে হেলান দিয়ে বসে পড়ে বলরাম। হাত-পা কেমন যেন কাঁপছে, চোখ দুটো খুলে রাখতে পারছে না। বুকের মধ্যি অসহ্য কষ্ট।
আবছা ঘোলাটে দৃষ্টিতে বলরাম দেখতে পায়, দূর আকাশ থেকে একটা পরী তার দিকেই আসছে। তবে কি মরে যাচ্ছে বললাম। ছোটবেলায় ঠাকুমা বলতো, মরে গেলে মানুষ পরীর দেশে চলে যায়।
প্রাণপণ শক্তি দিয়ে পরীকে চলে যেতে বলছে বলরাম। কত্তাবাবার ছেলেরা না এসে পৌঁছানো অবধি সে কোথাও যেতে পারবে না।
কি জানি, পরী কি শুনতে পায় বলরামের কণ্ঠস্বর!!