গর্ব
গর্ব


ন্যাড়াকে ডেকে ডেকে সাড়া না পেয়ে ন্যাড়ার মা ভুবনমোহিনী কিঞ্চিৎ দুশ্চিন্তায়। রান্নাচালার পাশের একফালি উঠোনের কোণ, গোয়ালঘর, খিড়কিঘাট, ঠাকুরদালান সব জায়গায় খুঁজেছেন, কোথাও নেই ন্যাড়া। হতদরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারে মধ্যাহ্নভোজনের শাক ভাত জুড়িয়ে যায়, মায়ের মন তাই উতলা, ছেলের যে এখনো সেই শাকান্নটুকু অবধি মুখে ওঠে নি।
ভুবনমোহিনীর মনে হোলো ছেলে হয়তো বাপের কোলের কাছটিতে বসে গল্প শুনছে। গজগজ করতে করতে শোবার ঘরে এসে দেখেন ন্যাড়া সেখানেও নেই আর ন্যাড়ার বাপ মতিলাল মগ্ন নভেলপাঠে। এই নিয়ে ন্যাড়ার মায়ের বিস্তর অভিযোগ। বাপ বসে বসে দুনিয়ার ছাইভস্ম পড়ছে, ওদিকে ছেলে যে না খেয়ে না দেয়ে কোন আদাড়েবাদাড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে বাপ হয়ে তার খোঁজটুকু পর্যন্ত রাখে না! স্মিতহাস্যে শান্তকন্ঠে মতিলাল বললেন, "যাবে আর কোথায়? হয় ফড়িং ধরছে আমবাগানে, নয়তো কানানদীর ধারে বসে বকেদের মাছ ধরা দেখছে, অথবা তেঁতুলগাছের কোটরে কাঠবেড়ালির বাচ্চাদের আদর করছে।"
ছেলের গতিবিধি সম্বন্ধে বাপের এমন নিরুত্তাপ ভাবলেশহীন সরল ব্যাখ্যায় ন্যাড়ার মা ভারী অখুশি। ছেলে যে আজকাল আর পিয়ারী পন্ডিতের পাঠশালে পর্যন্ত যায় না, তাতেও ন্যাড়ার বাপ ন্যাড়ারই পক্ষে একরকম। ছেলের প্রতি বাপের এই উদাসীনতা মাকে বিহ্বল করে তুলেছে।
ন্যাড়া... মায়ের আদরের শোরো... উত্তরাধিকার সূত্রে অর্জন করেছে সাহিত্যপ্রীতি, বাবার কাছ থেকে পেয়েছে লেখালেখির আন্তরিক অন্তর্নিহিত অনুপ্রেরণা। কালক্রমে সে হবে আমাদের গর্ব, গুচ্ছ গুচ্ছ কলমচির লেখালেখির অনুপ্রেরণা... অমর কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।