একটির মধ্যে দুটি সত্ত্বা
একটির মধ্যে দুটি সত্ত্বা
একটা মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে, নাম তার মেঘা চক্রবর্তী। তার বাবা একজন অফিসের কর্মচারী এবং মা গৃহবধূ।
মেঘা ছাড়া, তাদের আরও একটা ছোট্ট পুত্র সন্তান আছে। যার নাম দেবার্থ চক্রবর্তী।
পরিবার টা আগাগোড়াই ছিল কঠোর প্রকৃতির। কখনোই মেঘা কে নিজের ইচ্ছা মতো কাজ করতে দেওয়া হয়নি।
মেঘা ছিল সবার থেকে আলাদা, তার ভাবনা চিন্তা আর বাকি পাঁচটা ছেলেমেয়েদের মতোন নয়।
সালটা ২০১৫, যখন মেঘা অষ্টম শ্রেণীতে পড়ে।
এখনও পর্যন্ত সে এমন কাউকে পায়নি যাকে সে 'বেস্টু' বলে ডাকতে পারবে বা মনের সব কথা খুলে বলতে পারবে। সবাই তার সাথে স্বার্থ নিয়েই মেশে।
মেঘা যে কখনও কাউকে ভালোবাসিনি এমনটা নয়। মেঘার জীবনে প্রথম প্রেম বলতে ছিল রোহিত হাজরা। এই হল প্রথম পুরুষ যাকে মেঘা মন থেকে ভালোবেসেছিল।
সে অনেক কষ্টে রোহিতকে প্রোপোজ ও করে, কিন্তু রোহিত পরিষ্কার জানিয়ে দেয়,
-আমি তোকে শুধু বান্ধবী ভাবি, তুই আমাকে ভুলে যা। দেখিস তুই আমার থেকেও ভালো ছেলে পাবি।
তখন মেঘার খুব রাগ হচ্ছিল, কারণ সে রোহিত কে অন্য নজরে দেখেছিল, কিন্তু রোহিত তাকে বান্ধবী বানিয়ে ফেলল। এটা শুধু রোহিত ক্ষেত্রেই হয়নি, বহু ছেলে এসেছে কিন্তু সবাই স্বার্থ নিয়েই এসেছে। সে যাকেই ভালোবেসে কাছে পেতে চাইতো, সেই তাকে অবহেলা করে দূরে সরিয়ে দিত। তাই মেঘা আর ছেলেদের কে সহ্য করতে পারে না। তার সবসময় মনে হতে থাকে যে ছেলে শুধু মেয়েদের কাছে আসে শারীরিক সম্পর্ক করার জন্য।
মেঘা অষ্টম শ্রেণীর বার্ষিক পরীক্ষার আগে, তার জীবনে এলো প্রথম ভালোবাসার ছোঁয়া। তার নাম ছিল দিপান্বিতা ঘোষ। মেঘার থেকে দিপান্বিতা এক-ক্লাস বড়ো। মেঘা আর দিপান্বিতার প্রথম দেখা সাক্ষাত হয় তাদের টিউশনিতে। মেঘা দিপান্বিতাকে দেখা মাত্রই, সে স্বপ্নের জগতে চলে গেল। মেঘার মনে হতে লাগল দিপান্বিতা যেন তার জন্ম-জন্মান্তরের সঙ্গী। দিপান্বিতাও মেঘার সাথে বন্ধুসুলভ ব্যবহার করতে থাকে।
এখন করে মেঘা টিউশনিতে আসে শুধুমাত্র দিপান্বিতাকে মন খুলে দেখার জন্য। মেঘার কাছে এই অনুভুতিটা কোনো খারাপ অনুভূতি বলে মনে হয় না। কারণ সে আর বাকিদের মতোন এটা ভাবে না যে একটা ছেলেকে সবসময় একটা মেয়েকেই বা একটা মেয়েকে একটা ছেলেকেই ভালোবাসা উচিত। তাঁর মতে ভালোবাসা ধর্ম, বর্ণ, জাতি, লিঙ্গ এইসব দেখে হয় না, শুধুমাত্র দুটো পবিত্র মনের প্রয়োজন। এই নিয়ে তাকে কম কথা শুনতে হয়নি।
এইভাবেই কিছু মাস কেটে গেল, এইসময় মেঘা অনেক চেষ্টা করেও তার মনের কথা বলতে পারেনি দিপান্বিতাকে।
এখন সাল ২০১৭,
মেঘা এখন দশম শ্রেণীতে পড়ে, আর ওরই টিউশনিতে একটা ছেলে ছিল, যার নাম সৌরভ হালদার। সেও মেঘার সাথে একই ক্লাসে পড়ত। শুধু পার্থক্য একটাই মেঘা ছিল সৌরভের থেকে একবছরের বড়ো।
সৌরভ মেঘাকে প্রথম দেখাতেই ভালোবেসে ফেলে। অনেক চেষ্টা করেও সে মেঘার সাথে কথা বলতে পারেনি। আর এদিকে মেঘাও দিপান্বিতাকে তার মনের কথা বলতে চাইছিল কিন্তু বলতে পারেনি।
মেঘা সবসময় দিপান্বিতার কথাই ভাবতে থাকে তাই তার পড়াশোনা থেকে মন উঠে যায়, যার প্রভাবটা সে মাধ্যমিক পরীক্ষায় ফেল করেই বুঝতে পারে। এই নিয়ে পরিবারের কাছে অনেক ছোটো বড়ো কথাও শুনতে হয়েছিল। পরিবার পরিষ্কার জানিয়ে দেয় যে পরবর্তীকালে যদি আবার এমন খারাপ রেজাল্ট হয়, তবে পড়াশোনা ছাড়িয়ে দিয়ে বিয়ে দিয়ে দেবে। কিন্তু মেঘা তো কোনো পুরুষকে তার জীবন সঙ্গী করতে চায় না, সে শুধু দিপান্বিতাকেই ভালোবাসে আর তাকেই বিয়ে করতে চায়। মেঘা নিজেকে কথা দেয় আগে সে স্কুল পাশ করবে তারপরই দিপান্বিতাকে মনের কথা বলবে।
এদিকে সৌরভ মাধ্যমিক পাশ করে পরবর্তী ক্লাসে চলে যায়, যার ফলে সে কিছুতেই মেঘার সাথে যোগাযোগ করতে পারে না। সৌরভ প্রায় দুবছর অপেক্ষা করার পর মেঘার সাথে কথা বলতে পারে। অনেক খোঁজার পর সে মেঘাকে ফেসবুকে খুঁজে পায়, তখন তারা কথা বলতে থাকে।
সালটা তখন ২০১৯, ১লা জুন
সৌরভ মেঘাকে আর হাঁড়াতে চায় না, তাই মেঘাকে আজ অনলাইনে প্রোপোজ করেই ফেলে। মেঘা কথাগুলো শুনে অবাক হয়ে যায়, কারণ মেঘা যে কোনো পুরুষকে ভালোবাসবে না, সে শুধুমাত্র দিপান্বিতাকেই ভালোবাসে।
তখন সৌরভ বলে,
-কোনো তাড়াহুড়ো করার প্রয়োজন নেই, তুই তোর পর্যাপ্ত সময় নিয়ে সিদ্ধান্ত কর। যদি তোর উত্তর হ্যাঁ হয়, তবে আমাকে ফোন করিস এই নম্বরে----।
এই প্রথম কোনো ছেলে মেঘাকে প্রোপোজ করল, তাই মেঘা মুখের উপর নাও বলতে পারলো না। মেঘা এখন অনেক ভাবতে থাকে কি করা উচিত? সৌরভকে কি ‘হ্যাঁ’ বলা উচিত? সৌরভ ও যদি অন্য ছেলের মতোন তাকে ছেড়ে চলে যায়? তবে কি ‘না’ বলা উচিত? দিপান্বিতাকেও তো সে ভালোবাসে, একসাথে সে দুজনকে কীভাবে ভালোবাসবে?
তার ভিতরে যেন দুটো সত্ত্বা রয়েছে। প্রথমটা নারী যে পুরুষকে কাছে পেতে চাইছে আর দ্বিতীয়টা পুরুষ যে কিনা নারীকে কাছে পেতে চাইছে।
(এটা কোনো গল্প নয়, একটা বাস্তব ঘটনাকে গল্পের আকারে দেওয়ার হল। এটা হল গল্পের প্রথম ভাগ, খুব দ্রুত পরবর্তী পর্ব আসতে চলেছে। এটা আমার প্রথম গল্প, তাই কোনো ভুল ত্রুটি থাকলে ক্ষমা করবেন।)