The Stamp Paper Scam, Real Story by Jayant Tinaikar, on Telgi's takedown & unveiling the scam of ₹30,000 Cr. READ NOW
The Stamp Paper Scam, Real Story by Jayant Tinaikar, on Telgi's takedown & unveiling the scam of ₹30,000 Cr. READ NOW

Sanghamitra Roychowdhury

Romance Classics

4  

Sanghamitra Roychowdhury

Romance Classics

একবাক্স ভালোবাসা

একবাক্স ভালোবাসা

5 mins
320



চৌকির তলায় রাখা টিনের বাক্সটার ভেতরে ভালো করে দেখে নিয়ে আবার তালাচাবি দিয়ে রেখে দিলো গৌরী। যৌতুকে বাক্সটা গৌরীর বাপেরবাড়ী থেকে দিয়েছিলো গৌরীকে। আর তেমন কোন কিছুই দিতে পারেনি ওর বাবা। গৌরীর বর মঙ্গল ভারী বুঝদার ছেলে। কিচ্ছুটি চায়নি বিয়েতে। তবু শ্বশুরের একটা কর্তব্য তো আছে। তাই এই টিনের বাক্সে ভরে মেয়ে জামাইয়ের ক'টা সাদামাটা কাপড়চোপড় আর সস্তার গন্ধ তেল, সাবান, পাউডার আর গৌরীর শাশুড়ি ও পিসশাশুড়ির জন্য দুখানা নমস্কারী শাড়ি... এইই গৌরীর বাবা পাঠিয়েছিলো। সঙ্গে একহাঁড়ি মিষ্টি আর একটা ছোট চুপড়িতে পাঁচটা ফল। তাই কত বড়ো মুখ করে গৌরীর শাশুড়ি পাড়ার লোক ডেকে ডেকে দেখিয়েছিলো। সবাইকার হাতে একটু করে তত্ত্বের ফল মিষ্টিও দিয়েছিলো। ভারী অমায়িক ভদ্র সভ্য পরিবার। গৌরীও মানিয়ে গুছিয়ে নিয়েছে। সংসারে হয়তো বিরাট সুখ স্বাচ্ছন্দ্য নেই, তবে নিরেট শান্তি আছে গৌরীর সংসারে।




মঙ্গল দিনমজুর, অন্যের জমিতে চাষ করে। আবার সংসারে দুটো বাড়তি পয়সার জন্য মেলায় মেলায় গ্যাসের বেলুন বিক্রি করে। দুর্গাপুজোর সময়ে মঙ্গল কলকাতাতেও যায় বেলুন বেচতে। চলে যায় সংসার হাসি খুশিতেই। বিধবা পিসি ও মা তো ছিলোই, এখন গৌরী এসেছে। তবুও তাতে কোনো অসুবিধা হয় না মঙ্গলের। হতে পারে মঙ্গলের সংসার অভাবের, তবে ওদের সংসারে ভালোবাসার কোনও কমতি নেই।




একবছর হলো ওদের বিয়ে হয়েছে। গৌরী আবদার করেছে মঙ্গলের কাছে, কলকাতায় ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার জন্য। মঙ্গলের কাছে কলকাতার গল্প শুনে শুনে বড়ো সাধ হয়েছে গৌরীর কলকাতা দেখবার। মঙ্গল ঠিক করেছে একদিন গৌরীকে নিয়ে যাবে কলকাতায়। সারাদিন ঘুরবে ফিরবে, খাবে দাবে, তারপর পাতাল রেলে চড়বে আর গৌরীকে চিড়িয়াখানাও দেখাবে। মঙ্গল ভাবলো, "আহা, বিয়ে হওয়া ইস্তক তো কোথাও নিয়ে যেতে পারিনি, এক ঐ পাড়ায় কারুর বিয়েতে কি গৌরীর বাপেরবাড়ী ছাড়া। শখ আহ্লাদ এটুকু তো বৌয়ের হতেই পারে।"




ক'দিন পরে বিকেলবেলায় কাজ থেকে ফিরে মঙ্গল গৌরীকে বললো, "কাল আমরা কলকাতায় যাবো গো। সকাল সকাল রওনা দেবো তা নাহলে ভালো করে ঘুরতে বেড়াতে দেখতে পারবে না। তার ওপরে বাড়ীতে ফিরতেও অনেক রাত হয়ে যাবে নইলে।" গৌরী তো আহ্লাদে আটখানা। ছুটে গিয়ে পিসশাশুড়ি ও শাশুড়িকে গিয়ে বললো, "কী মজা, কাল আমরা সবাই মিলে কলকাতা যাবো বেড়াতে। অনেক আনন্দ করবো।" গৌরীর শাশুড়ি বললো, "বৌমা তোমরা ঘুরে এসো দুজনে। আমরা নাহয় অন্য দিনে যাবো।" হতাশ হলো গৌরী। উৎসাহে একটু যেন ভাটা পড়লো আর

গৌরীর অভিমানও হলো শাশুড়ির কথা শুনে।



রাত্রিবেলায় টিনের বাক্স খোলার ক্যাঁচ-ক্যাঁচ শব্দে মঙ্গলের ঘুম ভেঙে গেলো। চোখ কচলাতে কচলাতে মঙ্গল দেখলো গৌরী টিনের বাক্সটা তাড়াহুড়ো করে বন্ধ করছে। মঙ্গল একটু বিরক্তই যেন, "গৌরী, এতোরাতে চৌকির তলায় কি করছো?"



গৌরী বাক্সটা ঠেলে দিয়ে বললো, "কই কিছু করছি নাতো। ভোরবেলায় উঠতে হবেতো তাই তখন যাতে তাড়াহুড়ো না হয় সেই জন্য সব গুছিয়ে রাখছি কাপড়চোপড়।" মঙ্গল গৌরীর কথা শুনে পাশ ফিরে একটা দীর্ঘশ্বাস গোপন করে, "কত কি আর গুছোবে গৌরী? আছেতো ওর ঐ দুটো মোটে তোলা কাপড়!" কথা না বাড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়লো মঙ্গল।




সকালবেলায় গৌরী বিয়ের সেই গোলাপিরঙের ঝুটো বেনারসী শাড়িটা পরে সেজেগুজে তৈরী হয়ে মঙ্গলের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। মঙ্গল তো হেসেই খুন। হাসতে হাসতেই বললো, "বিয়ের এই শাড়িটা বাসের ভিড়ে, ট্রেনের ভিড়ে আস্ত থাকবে তো?

একটাইতো ভালো শাড়ি। যাও হলদে রঙের তাঁতের কাপড়টা পরে নাও।"




হলদে তাঁতের শাড়িটা নিজে হাতে করে কিনেছিলো মঙ্গল ধনেখালির মেলায় বেলুন বেচতে গিয়ে। গৌরী যত্ন করে তুলে রেখে দিয়েছে। কিছুতেই শাড়িটা ভেঙে পরবে না, পুরনো হয়ে যাবে বলে। এখনই এই সুযোগ হলদে ঐ তাঁতের শাড়িটা পরানোর। যেখানেই যাক গৌরী, যখনই যাক, সবসময় ঐ বিয়ের বেনারসীটাই পরে পরে লাট করে ফেলেছে। মঙ্গল তো চট করে বেনারসী কিনে দিতে পারবে না, সে যতই ঝুটো হোক না কেন?




মঙ্গল গৌরীকে নিয়ে চিড়িয়াখানা আর ভিক্টোরিয়া ঘুরিয়ে দেখালো। ছেলে-মেয়ে, স্বামী-স্ত্রীদের বসার ভঙ্গী আর হাবভাব দেখেইতো গৌরী লজ্জায় অস্থির, "এ আবার কি জায়গা? ছিঃ ছিঃ!" মঙ্গল গৌরীর গাল টিপে দিয়ে হাসতে হাসতে বললো, "আজ তো ভালবাসার দিন গো। সবাই আনন্দ করে তাই প্রেম করতে এসেছে গো। তুমিও করো।" গৌরীর মুখচোখ লজ্জায় লাল হয়ে উঠেছে। কী সুন্দর দেখাচ্ছে গৌরীকে! মঙ্গল তো হেসেই মরছে। আজ কিসের কি ভ্যালেন্টাইনস্ ডে... গৌরী তো এর মানেই জানে না। মঙ্গলও অবশ্য জানতো না। পাড়ার হারুর দোকানের দৌলতে জেনেছে। কতই না বিরাট ব্যাপার এই ভ্যালেনটাইনস্ ডে নিয়ে... শহরে শহরে দেশ বিদেশে সব জায়গায়। তবে তাদের মতো দিন আনি দিন খাই লোকেদের জন্য নয়। তবুও একদিন কি গৌরীকে নিয়ে মঙ্গল একটু আনন্দ ফূর্তি করতে পারে না? হাজার হোক ওদেরওতো শখ হতেই পারে একদিনের জন্য, নাকি?




সারাদিন ধরে ঘুরে বেড়িয়ে ক্লান্ত ওরা। একটু বাদাম, আর ঝালমুড়ি ছাড়া খাওয়া দাওয়া তেমন কিছুই হয়নি। ভারি কিছু পেটে দিতে হবে। একটা খাবারের দোকান দেখে দোনামোনা করে ঢুকবো কি ঢুকবো না করে করেও শেষ পর্যন্ত মঙ্গল গৌরীর হাতটা ধরে নিয়ে গটগট করে গিয়ে দোকানের ভেতরে ঢুকে পড়লো। সামনে বিরাট বড়ো কাঁচের শোকেসে হাজার একটা রঙচঙে খাবার সাজানো... চেনেই না ওরা সেসব। দেখেনি কখনো আগে। নাম জানা তো দূরস্ত। ভেতরে বসবার জায়গা আছে চেয়ার টেবিল পেতে। সেখানে একটা বড়সড় রঙিন বইতে খাবারের নাম আর দাম লেখা। তবে তাতে বিশেষ সুবিধা হলো না মঙ্গল গৌরীর... ইংরেজিতে লেখা খাবারের নামইতো পড়তে পারছে না। এরথেকে বরং শোকেসের সামনে গিয়ে দেখে দেখে যেটা যেটা পছন্দ হয় সেগুলোই খাবে। আরে বাবা খাবে তো মুখের স্বাদে আর পেট ভরাতে... তাতে খাবারের নাম-ধাম দিয়ে কী হবে?





গৌরী এবার হনহন করে এসে কাঁচের শোকেসের সামনে দাঁড়ালো। পাশে মঙ্গল। গৌরী খুব মনোযোগ দিয়ে দেখে, আর আঙুল দিয়ে দেখায়, "এইটা, ওইটা" করে করে। যথেষ্ট পরিমাণে খাবার নেওয়া হয়েছে। এবার মঙ্গলের বুক ঢিপঢিপ করছে, "গৌরী যতকিছু নিয়েছে তার দাম দিতে পারবো তো? টাকা যা আছে পকেটে তাতে কি হবে? অনেক দাম হয়ে গেছে তো মনে হচ্ছে।" ওদের হাবেভাবে, পোশাকে-আষাকে কাউন্টারে বসা লোকটির চোখেমুখেও ঘোর সংশয়। ভয়ে ভয়ে মঙ্গল জানতে চাইলো, "কত দাম হয়েছে দাদা?" কাউন্টারের লোকটা ক্যালকুলেটর দিয়ে হিসেব করতে শুরু করলো, ওদের মুখের দিকে আরেকবার ভালো করে চোখ বুলিয়ে নিয়ে।





লোকটা মাথা নীচু করে হিসেবে মন দিতেই গৌরী মঙ্গলের হাতে মৃদু টান মারলো, তারপর কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে ফিসফিস করে বলে, "নাও ধরো, সাড়ে ন'শো টাকা দাম হয়েছে। এতে হাজার টাকা আছে, দাম মিটিয়ে দাও। আমি দাম দেখে দেখে হিসেব করে নিয়েছি।" মঙ্গলের চোখের পলক পড়ছে না। চোয়াল ঝুলে পড়ার জোগাড়। মন্ত্রমুগ্ধের মতো হাতের মুঠোয় গৌরীর গুঁজে দেওয়া টাকাগুলো... ওতেই দাম মেটায়। তারপর কলের পুতুলের মতো ফেরত টাকাটা নিয়ে গৌরীকে নিয়ে গিয়ে বসলো চেয়ার টেবিলে। সামনে প্লেটে প্লেটে সাজানো হরেক খাবারের মেলা, সব গৌরীর পছন্দের। গৌরী চোখ দিয়ে ইশারা করে, "খাও... অমন ড্যাবড্যাব করে দেখলে আমার কিন্তু ভারী লজ্জা করে বলে দিলুম।"




তৃপ্তি করে খাওয়া-দাওয়া সেরে দুজনে বেরিয়ে এলো দোকান থেকে। গৌরীর হাত ধরে রাস্তায় নামার সময় মঙ্গল বলে, "বাব্বা, এতোগুলো টাকা তুমি পেলে কোথায় গো?" গৌরী মঙ্গলের হাতটা জড়িয়ে ধরে বলে, "বিয়েতে মুখদ্যাখানি যা পেয়েছিলুম, সব গুছিয়ে রেখেছিলুম টিনের বাক্সে।" "ওওও, তার মানে তুমি তাহলে ওই জন্যেই কাল রাতে চৌকির তলায় ঢুকেছিলে", সুর করে বলে মঙ্গল। একটু থেমে বলে মঙ্গল, "তা তাহলে সব টাকা খরচা করে দিলে কেন?" গৌরী ঘাড় দুলিয়ে হেসে বলে, "কেন আমার বরকে বুঝি আমার কিছু দিতে ইচ্ছে করে না? তুমিই তো বললে, আজ কি বলে ঐযে ভ্যালেনট্যালেন না কি যেন এক ভালোবাসার দিন!"




হাওড়াগামী মিনিবাসের জানালার ধারের সিটে বসে গৌরী। পাশে গৌরীর উত্তাপের উষ্ণতা মেখে বসে মঙ্গল। মগ্ন দুই অনন্ত প্রেমী... গৌরী ও মঙ্গল, বুকে তাদের এক বাক্স ভালোবাসা ভরে নিয়ে।




Rate this content
Log in

More bengali story from Sanghamitra Roychowdhury

Similar bengali story from Romance