Meherab Hossain

Tragedy Classics

3.0  

Meherab Hossain

Tragedy Classics

দিন মজুরের বর্ষা।

দিন মজুরের বর্ষা।

3 mins
403


গ্রীষ্মের প্রচণ্ড দাবদাহের পর প্রকৃতির মাঝে নতুন প্রাণের সঞ্চার করতে বর্ষার আগমন ঘটে। বর্ষা এলে প্রকৃতি যেন তার প্রাণ ফিরে পায়। এ সময় গাছে গাছে নতুন নতুন ফুলের আগমন ঘটে যেমন- শাপলা, কদম, বেলি ইত্যাদি। সেই সাথে নদী, নালা, খাল, পুকুর, ডোবা সবকিছু বর্ষার পানিতে নেচে ওঠে।

এ সময় নদীর দুই কূল উপচে পড়ে পানি। সেই পানি নদীর নিজ সীমানা ছাড়িয়ে গ্রাম হতে গ্রামান্তরে ছুটে চলে।

সেই পানিতে অনেকেরই স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়। তেমনি একজন স্বপ্নভাঙা কৃষক আবদুল গণি মিঞা।

গণি মিঞার জমি বলতে নিজের বসতভিটাই একটি ঘর, একটি রান্নাঘর আর একটি গোয়ালঘর তাও আবার তালপাতা আর ছনের বেড়া। বর্ষার সময় তাদের কষ্টের সীমা থাকে না। গণি মিঞার এই সংসারে তার এক স্ত্রী ও এক কন্যা সন্তান আছে।

গণি মিঞার আবাদি কোনো জমি না থাকায় দু’বেলা খাবার জোগাড় করার জন্য সে সর্বদা ব্যাকুল। তাই এবার সে গ্রামের এক মহাজনের এক বিঘা জমি লিজ নিয়েছে পাঁচ হাজার টাকায়। ইতোমধ্যে সেই টাকা জোগাড় করতে তার একটি ছাগল ছিল সেটা বাজারে বিক্রি করে দিয়েছে। ছাগল হারানোর কষ্টে গণি মিঞা ব্যথিত। ব্যথিত হবেই না বা কেন? একটি মাত্র ধন সেটা আবার হাত থেকে চলে গেল তা ছাড়া তার ছোট্ট মেয়ে সারাদিন ছাগলের সাথে খেলা করত সেওতো কেঁদে কেঁদে ব্যাকুল।

যাহোক গরিবের আবার ভালোবাসা কি আর ভালো লাগাই বা কি গণি মিঞা তাই ভাবে। অনেক আশা বুকে নিয়ে সে স্বপ্নের বীজ বুনেছে। এবার সে তার ঐ এক বিঘা জমিতে ধান বুনেছে। ধানও সবার চাইতে ভালো হয়েছে।

গণি মিঞা এবার চিন্তা করে এই ধান হলে তার আগামী বছর দু’বেলা খাবারের জন্য আর কোন দুশ্চিন্তা থাকবে না।

হঠাৎ একদিন প্রচণ্ড বৃষ্টি শুরু হলো- সেই বৃষ্টি এক, দুই দিন নয় এক টানা সাত দিন অবিরাম গতিতে চলল। এতে করে নদী, নালা, খাল, বিল সব পানিতে ভরে গেল। এমনিতেই অভাবের সংসার তার মধ্যে আবার সাত দিন কোন কাজ নেই। এদিকে ঘরে যা ছিল তাও শেষ, এবার সবাই মিলে না খেয়ে দিন পার করতে হবে- গণি মিঞা তাই ভাবে।

এদিকে বর্ষার পানি সেতো আর গণি মিঞার কষ্টের কথা বুঝে না। পানি তার নিজ গতিতে এগিয়ে চলল। এবার গণি মিঞার খেত পানিতে তলিয়ে গেল। গণি মিঞা উভয় সঙ্কটে পড়ল। এদিকে ঘরে নেই খাবার, স্বপ্নের ক্ষেত সেও পানির নিচে। পরিবারের সবার কথা চিন্তা করে গণি মিঞা উচ্চ সুদে ঋণ নিলো কিছু টাকা। এবার তাও শেষ।

বন্যার পানি কমার কোন কথা নেই, তা বেড়েই চলেছে দুই মাস যাবৎ। এদিকে ঋণের টাকা পরিশোধের সময় শেষ। মহাজন সুদের পরিমাণ আরো বাড়িয়ে দ্বিগুণ করেছে। এভাবে তিন মাস চলার পর পাঁচ হাজার টাকার সুদ কয়েক হাজার টাকায় দাঁড়িয়েছে। গণি মিঞার টাকা পরিশোধের কোন উপায় আর বর্তমান রইল না। এদিকে মহাজনের কঠিন চাপ অব্যাহত রইল। গণি মিঞা মহাজনের পায়ে ধরে কেঁদে কেঁদে আরো কিছুদিন সময় চাইল কিন্তু নির্দয় মহাজনের মন তাতে সায় দিল না। মহাজন এবার তার টাকার জন্য জোর করে বসতভিটাটুকুও নিজের করে লিখে নিলেন এবং গণি মিঞাকে সেখান থেকে তাড়িয়ে দিলেন। গণি মিঞা আজ পরিবার পরিজন নিয়ে পথের ভিখারি। 

(মেহেরাব হোসেন)  


Facebook

Twitter


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy