ডিভোর্স (হাস্যরসাত্মক)
ডিভোর্স (হাস্যরসাত্মক)


ডিভোর্স
সংঘমিত্রা রায়চৌধুরী
----------------------------------
আজ মামলার নিষ্পত্তি হতে পারে ভেবে মলয় বেশ স্বস্তি পেলো। দৌড়ঝাঁপ কোর্টের চক্কর তার আর পোষাচ্ছে না। যদি আজ মামলার রায় নাও বেরোয় তবু মলয় আজই একটা এস্পার ওস্পার করেই ছাড়বে। মলয়ের মরিয়া ভাব দেখে মায়ার গাপিত্তি জ্বলে গেলো, ট্যাক্সির পেছনের সিটে দুজনে দুই জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে, আর সামনে ড্রাইভারের পাশে মায়ার সিড়িঙ্গে উকিলটা পেন্ডুলামের মতো দুলে দুলে ঢুলছে।
ট্রাফিক সিগন্যাল গ্রীন, স্টার্টের গোঁত্তা খেয়ে উকিলবাবুর ভাতঘুম ছুটলো। কোর্টে পৌঁছে ট্যাক্সিভাড়া মিটিয়ে মলয় নিজের উকিলের কাছে দৌড়লো। মায়া আস্তে সুস্থে কোর্টের লম্বা বারান্দায় দাঁড়িয়ে ইতিউতি দেখছে। মলয় হাত পা নেড়ে নিজের উকিলকে অনেক কিছু বোঝাচ্ছে। মায়ার উকিল রঙ জ্বলা কালো কোটের পকেট থেকে বিড়ি দেশলাই বার করছে, মায়ার চোখ আবার মলয়ের উকিলের দিকে ঘুরে গেলো।
মলয়ের উকিল দোর্দণ্ডপ্রতাপ, দুহাতের আঙুলে গোটা ছয় সাত সোনার আঙটি, কব্জি বেষ্টন করে বিদেশী নামী ব্র্যান্ডের দামী ঘড়ি, পকেটে বিদেশী কলম মাথা উঁচিয়ে সগৌরবে, চোখে ভারী আধুনিক এক রিমলেস চশমা, সব মিলিয়ে বেশ একটা আন্তর্জাতিক লুক। এর ওপর আবার সহকারীর হাতে ব্রিফকেস কাঁধে ল্যাপটপ।
মলয় মায়ার ডাক পড়ল। মলয়ের উকিল ঝরঝরে ভাষায় তরতরে ভঙ্গিতে জলদগম্ভীর কন্ঠে বক্তব্য পেশ করলেন। সারমর্ম মায়ার বাপেরবাড়ী থেকে বিয়ের সময় গোপন করা হয়েছে যে মায়া বিকট শব্দে নাক ডাকে। এই কারণে মলয়ের সারারাত ঘুম হয়না, তাই সে অসুস্থ হয়ে পড়ছে, এই মর্মে মহামান্য আদালতের কাছে মলয়ের মেডিকেল রিপোর্ট পেশ করা হল।
মায়ার সিড়িঙ্গে উকিল তেমন কিছু না বলে মহামান্য আদালতের সমীপে কেবলমাত্র একটি ভিডিও পেশ করল।
ভিডিও চালু হোলো মহামান্য বিচারপতির নির্দেশে... অনস্ক্রিন মলয় হাঁ করে নাক ডাকছে বেশ বজ্রগম্ভীর নিনাদে... কিঞ্চিৎ সুরেলা...পারিপার্শ্ব কাঁপিয়ে।
মামলা ডিসমিস।
-------------------------------------------------------------------