STORYMIRROR

ANISH JANA

Tragedy Classics Thriller

4  

ANISH JANA

Tragedy Classics Thriller

"বন্ধু ভ্রমণ বিপর্যয়"

"বন্ধু ভ্রমণ বিপর্যয়"

4 mins
39

শীতের একটা সন্ধ্যে ,বোধহয় কোনো national Holiday ছিল, শহরে গাড়ির চাপ কম । পার্ক সার্কাস 7 পয়েন্ট থেকে বেশি দরাদরি না করেই একটা ট্যাক্সিতে উঠে পড়লাম, ট্যাক্সি চালক মুখচেনা। যাবো উত্তর কলকাতায় এক বন্ধুর বাড়ি, স্রেফ আড্ডা আর কিছুটা গান। তখন হাতে অঢেল সময়। সেই সবে মেডিকেল কলেজের পরীক্ষা শেষ হয়েছে, পড়াশোনার চাপও সেরকম নেই।


পুরোনো হলুদ ট্যাক্সি ফাঁকা রাস্তা বরাবর ছুটে চলেছে, আর কিছুটা পথ বাকি। হঠাৎ, একটা মেয়ে আর একটা ছেলে একসঙ্গে এসে পড়েছে আমাদের ট্যাক্সি তলায়। কি অবস্থা ! মুহুর্তের মধ্যে অনেকগুলো ঘটনা ঘটে গেলো ।


আমি তো হুড়মুড়িয়ে সামনের দিকে এগিয়ে গেছি ; কোনো মতে সামনের সিট ধরে ফেলে নিজের মাথাটা বাঁচলাম, ট্যাক্সি ড্রাইভার তার হাতযসেই ঠিক সময়ে ব্রেক কসেছে। আর নিশ্চিত দুটো প্রাণকে বাঁচিয়েছে । ড্রাইভারের নাকের সামনের অংশটা আর মাথা ধাক্কা খেয়েছে স্টিয়ারিং এর হাতলে ,মাথা থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে সঙ্গে সে নাক ধরে চিৎকার করছে।


গাড়ির ওপারে থাকা অন্য দুজনের অবস্থা আরো কাহিল। দুজনের কানে তখনও হেডফোন। মেয়েটা মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে । ছেলেটা মাটি ধরে বসে আছে, বেশ আহত হয়েছে, হাঁটু কনুই ছিঁড়ে গেছে ।


আমরা গাড়ি থেকে কোনোভাবে নেমে সামনের দিকে এগিয়ে গেলাম।


পাশ থেকেও কিছু লোকজন ছুটে এসেছে, মেয়েটা তখনও মাটিতে শুয়ে আছে। তাদের মুখে চোখে জল দেওয়া হলো, হাত ধরে তুলে বসানো হলো। মেয়েটার বিশেষ চোট লাগেনি তবুও কেমন বিহ্বল ভাবে তাকিয়ে, শুধু বলছে কিছুই নাকি শুনতে পাচ্ছে না!


এইদিকে আমাদের ড্রাইভার আর অন্য ছেলেটার যা অবস্থা তাতে দুজনকে এখনই first aid দিতে হবে। আপাতত তাদের রুমাল বের করে, টাইট করে বেধে দিলাম।


পরিবেশটা একটু শান্ত হল।

ট্যাক্সি ড্রাইভার এবার নিজের মেজাজ সপ্তমে চড়িয়ে বললেন " বলি ব্যাপার কি ! তোদের কোন আক্কেলে জ্ঞান নেই ! কানে হেডফোন লাগিয়ে এইভাবে রাস্তা পার হস । এইভাবে গাড়ির সামনে এসে পড়ছিস, শান্তিতে দুটো খেটে খেতেও দিবি না ? "


"আজ কিছু হলে আমার নিস্তার ছিল , আমাকে তো জেলের ভাত খেতে হতো "


দুজনেই চুপ !


এবার বেশ শান্ত গলায় বললেন " হ্যাঁ রে বাবা , আমার যা হতো হতো, এই তো তোদের জীবনের শুরু ! এইভাবে জীবনটা খোয়াতে বসেছিস"।


দুজনেই এবার কথা বললো " কাকু খুব ভুল হয়ে গেছে, আর কোনোদিন কানে হেডফোন লাগিয়ে এভাবে রাস্তা পার হবো না"।


'হ্যাঁ ওটাকে শুধু বাড়িতে অবসরের সময় ব্যাবহার করিস, রাস্তায় খবরদার নয়। এই তো এটুকু আমাদের জীবন রে।"


আমিও ট্যাক্সি ড্রাইভার এর কথা গুলো মন দিয়ে শুনছিলাম, কত অন্তর থেকে বলছে সে এই কথাগুলো।


ওরা এবার first aid এর জন্য কাছাকাছি লোকজনের কাছে জিজ্ঞেস করতে যাবে, আমি এবার ব্যাস্ত হয়ে বললাম "আর এখানে first aid করাতে হবে না আমি ডাক্তারি বিভাগের ছাত্র ; যাচ্ছি এক বন্ধুর বাড়ি, আপনার আপত্তি না থাকলে সেখানেই সব হবে।


ড্রাইভার বললো "তবে তাই হোক, এই যে! তোরা গাড়িতে উঠে বস।"


তারাও আপত্তি করলো না !


বন্ধুকে ফোন করে বললাম " চারজন আসছি, তিনটে patient নিয়ে। বন্ধু তো অবাক ! "রাস্তায় কিছু হলো নাকি "


'কি হয়েছে ?কি হয়েছে বল '? 


সংক্ষেপে বললাম সবটা। 10 মিনিটে যাচ্ছি, তুই একটু ঘরদর টা গুছিয়ে রাখ। বাইরের লোক ! এমনিতে সবাই আমাদের নোংরা বলে।


সেই সংঘাতের সময় আমার পাশে রাখা জলে বোতলটার ছিপি খোলা ছিল। সেই মাত্র জল খেয়ে রাখতে যাচ্ছিলাম । ফলে কিছুটা জল আমার ট্রাউজার আর ট্যাক্সির অর্ধেক সিট ভিজিয়ে দিয়েছে।


সেই সিট মোছা হল !তারা গাড়িতে উঠে বসলো আমাদের গাড়ি আবার ছুটলো বন্ধুর বাড়ির দিকে।


মেয়েটা আবারও বললো এখনো নাকি কানে ঝিঁঝিঁ করছে।আমি বললাম কিছুই হয়নি ! "সামনে থেকে দেখেছিস তো সবটা , নার্ভে একটু চাপ পড়েছে ! ঠিক হয়ে যাবে।


তাদের গল্পটা শুনলাম । গল্পটা এইরকম " নাম বর্ষা আর রিক । কলেজে পড়ে ,দুই বছরের সম্পর্ক । হঠাৎ বেশকিছু দিনে যেন সম্পর্কটা দুর্বল হয়ে পড়েছে, দুজনেই নাকি break up এর কথা ভাবছিল । আজ যাচ্ছিল পার্কে সম্পর্কের কথাই আলোচনা করতে। তাদের সম্পর্কটাকে একটা শেষ সুযোগ দিতে। কিন্ত এরই মাঝে সময়ের এই অভিঘাত।


বললাম "তাহলে এখন কি আর "break up" নয় তো ?"


বর্ষা বললো " খবরদার নয় "


রিক বললো " দুর্ঘটনার মুখে পড়ে , আমি ওর ভালোবাসা বুঝতে পেরেছি। আমার দুর্দিনে বর্ষা আমার পাশে আছে, আমি ওর পাশে আছি এটুকুই ! ।আর বেশি কিছু আমি চাই না।


তারপর আবার কি...,


যথাযথ বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে পৌঁছলাম। তাদের first aid করা হতে তারা চলে গেলো।


মাঝে বন্ধু একবার বলেছিল " সে নাকি তাদের জন্যে রান্না করবে ? অর্থাৎ Dinner করে যেতে।


আমি কিছুটা অবাক হলেও কিছুই প্রকাশ করিনি!


হবু ডাক্তারদের কাছ থেকে বিশ্বাস করে first aid নিলেও , বিশ্বাস করে Dinner খাওয়ার কথা তারা ভাবতে পারেনি। 'শেষে কি খাওয়াতে কি খাওয়াবে !'


সেদিন আর আমাদের গান-আড্ডা হয়নি।শুধু সেই সন্ধ্যের কথাই বারবার ফিরে আসছিল।

আমিও সামান্য কিছু খেয়ে বাড়ি চলে এসেছিলাম।


এই ঘটনার পর বছর পাঁচেক কেটে গেছে,প্রায় ভুলতে বসেছি। আমি তখনও কলকাতা শহরেই আছি, 

এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতাল ;সারাদিন শুধু দৌড়াদৌড়ি করি।


এইরকম এক রাতে নাইট ডিউটি তে ছিলাম। তেমন Patient এর চাপ নেই ,তাই কোয়াটারে বিশ্রাম নিচ্ছিলাম।


Nurse এসে বললো " স্যার patient এসেছে। একটা pregnent মা।"

খুব বিরক্তই লাগলো ।

বেজার মুখে বললাম C section (সিজার) হবে তো !


হ্যাঁ স্যার!

আচ্ছা, O.T রেডী করো।


আমিও রেডী হয়ে বেরিয়ে আসছি ! মুখোমুখি সেই বর্ষা আর রিকের সঙ্গে দেখা, আর সঙ্গে সেই টেক্সী চালক।


আমি বললাম " আরে আপনারা"

কেমন আছেন ?


Patient কে ?

বর্ষা এগিয়ে এলো!


এই পেপারে একটা সই করুন , এটা ফর্মালিটি !


এবার দেখলাম রিক এগিয়ে এলো না। কলম নিয়ে এগিয়ে আসছে সেই ট্যাক্সি চালক ।


আপনি কেন ?

ট্যাক্সি চালক বললেন " আসলে ওদের তো বাপ-মা নেই !


আমি এবার একটা পাঁচ বছর আগের সন্ধ্যেতে ফিরে গেলাম...,




Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy