ভালোবাসার পূর্নতা
ভালোবাসার পূর্নতা
তখন সকাল ৯টা বাজে,,
বাইরে অঝোর ধারায় বৃষ্টি হচ্ছে,
বারান্দায় হাতে গরম কফির মগ নিয়ে দাড়িয়ে নিলয়।
মনটা আজ ওর ভিষন খারাপ, কারন গতকাল ওর ভালোবাসার মানুষ নীলার বিয়ে হয়ে গেছে অন্য কারো সাথে।
হারিয়ে গেছে ওর জীবন থেকে নীলা।
কিছুতেই ভালো লাগছে না ওর, ওর বাড়িতেও আজ কেউ নেই।
ওর মা বাবা গেছে ওর নানু বাড়িতে,
নিলয় পড়াশোনার বাহানা করে রয়ে গেছে বাসায়।
নিলয় নীলার রিলেশনশিপ এর কথা জানতো না ওর মা বাবা।
নিলয় আর নীলার তিন বছরের রিলেশনশিপ ছিলো।
খুব ভালো ভাবে চলছিলো সবকিছু,
ওদের একসাথে হাত ধরে চলা, একজন আরেকজনের মনের কথা শেয়ার করা, দুজন দুজনের প্রতি কেয়ারিং সবকিছু খুব ভালো চলছিলো।
কিন্তু গতকাল নীলার জোর করে দেওয়া বিয়ের মাধ্যমে সব এক মূহুর্তে যেন তছনছ হয়ে যায়।
ভেঙে চুরমার হয়ে যায় সবকিছু।
নিলয় অর্নাস ৩য় বর্ষে পড়াশোনা করে।
তাই নীলার কথা বলে সাহস পায়নি ওর মা বাবাকে।
নীলা বলেছিলো নিলয়ের কথা ওর বাড়িতে কিন্তু
নিলয় বেকার জন্য ওর বাবা মা জোর করে ওকে অন্য কোথাও বিয়ে দিয়ে দেয়।
নিলয় বলতে চেয়েছিলো ওর মা বাবাকে কিন্তু হুট করেই গতকাল নীলা খবর দেয় ওর বিয়ে হয়ে গেছে।
নিলয় তখন খুবই ভেঙে পড়ে,
সেই খবর পাওয়ার পর থেকে অনেক চুপচাপ হয়ে গেছে ছেলেটা।
ওর মা বাবা গতকালই গেছে ওর নানু বাড়িতে।
মনের মধ্যে এক রাশ বিষন্নতা চেপে রেখে দাড়িয়ে আছে বারান্দায়।
গড়িয়ে পড়ছে নোনা জলের ধারা ওর গাল বেয়ে।
খুব কষ্ট হচ্ছে ওর।
কিন্তু আজ যেন ওর কষ্ট দেখার মত কেউ নেই,
শুধু মাত্র এই মেঘলা আকাশ আর এই অঝোর ধারার বৃষ্টি বাদে।
নিলয় এক সময় সহ্য করতে না পেরে কফির মগটা টেবিলে রেখে ছাঁদে চলে যায়।
ছাঁদে গিয়ে হাটুগেড়ে বসে বৃষ্টি ঝরা আকাশের দিকে তাকিয়ে অঝোরে কাঁদতে থাকে।
নীলার সাথে কাটানো তিন বছরের প্রতিটা মূহুর্ত, স্মৃতি ওর মনে পড়তে থাকে।
নিলয় আকাশের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে বলতে লাগলো,
_ইয়া খোদা, কি দোষ করেছিলাম আমি?
কেন আমার থেকে আমার নীলাকে কেড়ে নিলে তুমি???
কেন আমার ভালোবাসা কে অসমাপ্ত করে দিলে?
কিভাবে সহ্য করবো এবার আমি?
নীলাকে ছাড়া কি করে বাঁচবো?
বলতে বলতে অঝোর কাঁদতে কাঁদতে উঠে দাড়ায় সাইফ।
কিচ্ছু ভালো লাগছে না নিলয়ের।
পুরো শরীর যেন অসার হয়ে আসছে ওর,
চোখেও কেমন যেন ঝাপসা দেখছে ছেলেটা।
হাঁটতে হাঁটতে একেবারে ছাদের কিনারে চলে যায় নিলয়।
চার তলা বিল্ডিং এর ওপর থেকে নিচে একবার তাকায় নিলয়।
আর বলে,
_চলে যাচ্ছি আমি নীলা,
ভালো থেকো তুমি তোমার নতুন সংসারে,
আমি না হয় ডুবে থাকি গহীন আধারে,
তোমাকে ছাড়া কোনমতেই বাঁচা সম্ভব নয় আমার,
তাই বিদায় নিলাম এই পৃথিবী থেকে।
আজ আমার মৃত্যুর সাক্ষী থাকবে এই ঘন কালো মেঘলা আকাশ আর এই অঝোর ধারায় বৃষ্টি ধারা।
এই বলে ছাঁদের রেলিং এর উপর উঠে নিলয়।
তারপর একবার আকাশের দিকে তাকায় তারপর নিজেকে ছেড়ে দেয় শূন্যতার মাঝে।
হঠাৎ তখনই নিলয়ের হাত কেউ টেনে ধরে,
নিলয় বুঝতে পারে ওর হাত কেউ টেনে ধরেছে আর ওর সেই হাতের বাঁধনে ঝুলে আছে।
নিলয় ওপর দিক তাকিয়ে দেখে নীলা ওর হাত ধরে আছে।
নিলয় নীলাকে দেখে খুবই অবাক হয়ে যায়, অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে নীলার দিকে।
আর ও ভাবতে থাকে এটা স্বপ্ন নয়তো??
নাকি চোখের ভুল দেখছি আমি?
তখন নীলা বললো,,,
_এই যে মিস্টার, এটা চোখের ভুল নয় গো,
আপনি ঠিকই দেখছেন, আমি নীলা,
এবার উঠে আসুন, অনেক বোঝাপড়া আছে।
নিলয় তখন কিছু ভাবতে পারে না,
উঠে আসে নীলার হাত ধরে ছাঁদের ওপর। ছাঁদের ওপর উঠার পর নীলা ঠাস করে একটা চড় বসায় নিলয়ের গালে।
তখনো অঝোর ধারায় বৃষ্টি হচ্ছে,
নিলয় গালে হাত দিয়ে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে নীলাকে,,
_একি আমাকে চড় মারলে কেন???
_চড় মারবো না তো কি আদর করবো??
সুইসাইড করা তাইনা, তোমার সুইসাইড করা আমি বের করে দেবো,
_তো কি করতাম, তুমি নেই তাই??
_আমি নেই ওমনি মশাই সুইসাইড করতে নেমে গেছেন,
বাহ! কি সুন্দর কাজ?? সুইসাইড করে আমাকে উদ্ধার করবেন উনি
_কিছু বুঝতে পারছি না, তোমার না বিয়ে হয়ে গেছে?
তাহলে তুমি এখানে কি করে?
_সব উত্তর পাবে, নিচে চলো এখন,
অনেক সুইসাইড খেলা হয়েছে, নিচে গিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে নাও,
অনেক ভেজাও হয়েছে।
_তুমিও তো ভিজে গেছো, তুমিও,,
_আমার কথ এখন চিন্তা করতে হবে না,
আগে ড্রেস বদলে নাও চলো,
তারপর নিলয় আর কিছু না বলে নীলার পেছন পেছন নিচে যায়।
নিচে গিয়ে বাসার মধ্যে ড্রয়িং রুমে দেখে ওর মা বাবা আর নীলার মা বাবা বসে আছে,
সাথে একজন মুরুব্বি ও বসে।
নিলয় কিছু টা নয় অনেকটা অবাক হয়ে যায় এসব দেখে।
তখন নিলয়ের মা নিলয়ের কাছে এসে ওর হাত ধরে ওর রুমে নিয়ে যায়।
নীলাও চেঞ্জ করতে নিলয়ের মায়ের রুমে যায়।
নিলয় রুমে আসার পর ওর মা একটা লাল কালারের পাঞ্জাবী আর পায়াজামা নিলয়ের হাতে দিয়ে বলে,,
_এগুলো পড়ে রেডি হয়ে তারাতাড়ি ড্রয়িং রুমে আয়।
_কিন্তু মা, বুঝতে পারছি না এসব কি হচ্ছে,
_সব বুঝতে পারবি, তৈরি হয়ে আয়
এটা বলেই নিলয়ের মা রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
তারপর নিলয় ওয়াশরুমে গিয়ে গা মুছে রেডি হয়ে চলে গেলো ড্রয়িং রুমে।
যাওয়ার পর যা দেখে একদমই ও যেন আকাশ থেকে পড়ে।
দেখে নীলা একটা লাল রঙের সুন্দর শাড়ি আর ম্যাচিং জুয়েলারি, কপালে লাল টিপ, ঠোঁটে গারো লাল লিপস্টিক,
মাথায় লাল ওড়না,
একদম এভাবেই বউয়ের মতো করে সেজে বসে আছে ওর মায়ের পাশে।
নিলয় অপলকে তাকিয়ে থাকে নীলার দিকে
কি অপরুপ দেখতে লাগছে ওকে।
তখনি নীলার বাবা বললো,,,,
_বাবা নিলয়, ওভাবে আমার মেয়েটার দিকে তাকানোর অনেক সময় পাবে,
আগে বিয়ের কাজটা সেরে নেই।
নীলার বাবার কথায় নিলয়ের ধ্যান ভাঙে,
তারপর নিলয় বলে,
_হ্যা...বিয়ে?? কিচ্ছু বুঝতে পারছি না,
বিয়ে মানে?? ওর তো??
নিলয়ের বাবা তখন বললো,,
_না ওর বিয়ে হয়নি অন্য কোথাও,
সব বলছি তোকে, তুই এখন নীলার পাশে গিয়ে বস।
তারপর নিলয় নীলার পাশে গিয়ে বসে।
তারপর নিলয়ের বাবা বলে,
_আমরা আসলে গতকাল তোর নানুবাড়ি নয় নীলার বাড়িতে গিয়েছিলাম।
কারন আমি আর তোর মা জানতে পারছিলাম তোর আর নীলার সম্পর্ক আছে,
আর ঐদিন তোর আর নীলার সব কথাবার্তা সব শুনেছিলাম,
তোর ঐভাবে কান্না করা টা একদম সহ্য করতে পারিনি আমরা,
তোর আর নীলার কথা শেষ হওয়ার পর তুই ফোন রেখে যখন ওয়াশরুমে গেলি তখনি আমি তোর ফোন চেক করি তারপর তোর আর নীলার সম্পর্কের কথা পুরোপুরি পরিস্কার ভাবে জানতে পারি।
তারপর তোর ফোনেই নীলার বাড়ির ঠিকানা সেভ করা ছিলো সেটা দেখে তখনি আমি আর তোর মা তোর নানুবাড়ি যাওয়ার নাম করে নীলার বাড়ির উদ্দেশ্য বেরিয়ে পড়ি ওর বিয়ে আটকানোর জন্য।
তারপর ওর বাড়িতে যাওয়ার পর,,,,
তখনি নীলার বাবা বলল,
_বাকিটা আমি বলছি বেয়াই সাহেব
_আচ্ছা বলুন,,
_যখন তোমার বাবা মা আমার বাড়িতে আসে তখন তাদেরকে দেখে আমি খুবই অবাক হয়ে যাই।
তোমার মা বাবাকে দেখে আমার চিনতে খুব একটা অসুবিধা হয়নি।
কারন নীলা সবকিছু বলেছিলো, তোমার সম্পর্কে, তোমার মা বাবার সম্পর্কে।
তখনো বরপক্ষ আসেনি আমার বাড়িতে।
আমি তখন তোমার মা বাবার সাথে কথা বলি।
তোমার মা বাবার সাথে কথা বলে বুঝতে পারি তুমি নীলাকে কতটা ভালোবাসো।
তখন আমি আমার সব ভুল বুঝতে পারি যে জোর করে কখনো বিয়ে দিলে মেয়ে সুখী হবে না,
যার সাথে তার সুখ তার সাথেই বিয়ে দিতে হবে।
নীলার মুখটা তখন খুশিতে ভরে গেলো তখন ওর হাসিমাখা মুখটা দেখে নিজের ভুলটা হারে হারে বুঝতে পারি।
তুমি বেকার তো কি হয়েছে সময়ের সাথে সব ঠিক হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
তারপর ওদিকে বরপক্ষকে কোনভাবে মানিয়ে নিয়ে ওদের আসতে না করে দেই।
এই নিয়ে ওদিকে ঝামেলা হয়েছে বটে কিন্তু সব এখন ঠিক হয়ে গেছে,
ওরা মানতে চাইছিলো না কিন্তু মানিয়ে নিয়েছি।
তারপর আমি তোমার মা বাবাকে আমার বাড়িতে থেকে যেতে বলি,
সবাই একসাথে বসে আলোচনা করে নেই যে কালকেই তোমাদের দুজনের চার হাত এক করে দিয়ে তোমাদের সুখী দেখবো তা দেখে আমরাও সুখী হবো।
আর সেজন্য তোমাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম সবাই মিলে।
সেজন্য তোমার মা বাবাকে কাল আসতে দেয়নি
তার মধ্যে ই তুমি চরম সিদ্ধান্ত টদ নিয়ে সুইসাইড করতে নিলে।
নিলয় সব শুনে হতভম্ব তো হলোই তার থেকে অনেক বেশি খুশি হলো।
নীলাও মুখটাও খুশিতে ভরে গেছে।
নিলয় তখন বললো সবাইকে,
_প্লিজ সবাই আমাকে ক্ষমা করবেন,
আমি তখন কিচ্ছু বুঝতে পারিনি, তখন আমার মাইন্ড একদম কাজ করছিলো না,
তাই ঐ সুইসাইড....
এটা বলেই মাথানিচু করে ফেলে নিলয়,
তখন নীলার মা বলে,
_থাক বাবা, এখন এসব ভাবতে হবে না,
যা হওয়ার হয়ে গেছে, এবার তোমাদের বিয়ে দিয়ে তোমাদের সুখী দেখতে চাই।
তখন নিলয়ের মা বললো,,
_একদমই তাই বেয়াইন সাহেবা, এবার ওদের চার হাত এক করে দিয়ে আমরাও একটু শান্তি পাই।
_হ্যা বেয়াইন সাহেবা....
তখন নিলয়ের বাবা বললো,,,
_তাহলে আর দেরী কিসের,
কাজী সাহেব, বিয়ের কাজ শুরু করুন।
তখন নীলার বাবা ও বললো,,
_হুমমম এবার বিয়ের কাজ সেরে ফেলা যাক,
আগামীকাল বড় করে অনুষ্ঠান করা হবে।
_হুমম একদম বেয়াই সাহেব।
তারপর নিলয় নীলার বিয়ে পড়ানো শুরু হয়।
শান্তি পূর্ন ভাবে বিয়ে পড়ানোর কাজ শেষ হয়।
বিয়ে হয়ে যায় নিলয় নীলার।
আজ থেকে ওরা দুজনে সারাজীবনের জন্য একে অপরের জীবন সঙ্গী হয়ে যায়।
বিয়ে পড়ানো শেষে নিলয়❤️নীলা সবাইকে সালাম করে।
তারপর নিলয়ের বাবা ও নীলার বাবা একসাথে কোলাকুলি করে,
নিলয়ের মা ও নীলার মাও একে অপরের আনন্দে জড়িয়ে ধরে।
নিলয়ের মা ও নীলার মা একসাথে দুজনে রান্না করে।
তারপর সবাই একসাথে জমিয়ে খাওয়া দাওয়া করে।
খাওয়া দাওয়া শেষে নিলয় নীলাকে রুমে নিয়ে যেতে গেলে তখন নিলয়ের মা বলে,,,
_দাড়া নিলয়,,, আজকে তোরা একসাথে থাকতে পারবি না,
_কেন মা?? কিছু হয়েছে???
_আরে না কি হবে, আসলে আমাদের সবার মতামত এটা,
কালকে রিসেপশনটা হয়ে যাক তারপর কালকে তোদের ঘরটা সুন্দর করে কাঁচা গোলাপ দিয়ে সাজানো হবে সেজন্য কালকেই তোরা একসাথে থাক।
তোদের রুমটাও তো সাজানো হয়নি।
নিলয় কিছু বলতে যাবে তখন নীলা বললো,,
_একদম মা,, এটাই ভালো হবে,,
নিলয় আর কিছু বললো না,
সারাদিন সবাই একসাথে খুব মজা করলো,
ধীরে ধীরে রাত হয়ে এলো।
রাতে খাওয়া দাওয়া করে নিলয়ের বাবা নীলার বাবা ফোনের মাধ্যমে সব আত্তীয়দের দাওয়াত করলো।
তারপর সবাই শুতে গেলো।
নীলা ওর মায়ের সাথে শুতে গেলো আর নিলয় একা ওর রুমে।
নীলার বাবা গেস্ট রুমে আর নিলয়ের বাবা মা তাদের রুমে।
নিলয় আর নীলা শুধু অপেক্ষা করতে লাগলো আগামীকালের তাদের তাদের ভালোবাসাময় রাত্রিটার জন্য।
ওদের দুজনের কারো চোখেই ঘুম এলো না।
দুজন দুজনেই ভাবতে লাগলো নিজেদের কথা।
দুজন দুজনার কথা ভাবতে ভাবতে সকাল হয়ে গেলো।
সকাল হতেই শুরু হলো নিলয় নীলার রিসেপশনের জোরদার আয়োজন।
সব আত্তীয় স্বজনরা আসতে লাগলো।
আজ নিলয় ও নীলা দুজনেই নীল রঙের পোশাক পরলো।
নিলয় নীল রঙের ব্লেজার, হাতে দামী ঘড়ি, গায়ে ফক্স পারফিউম সবকিছু মিলিয়ে নিলয়কে দারুন লাগছিলো আজ।
ওদিকে নীলা নীল লেহেঙ্গা, মাথায় নীল হিজাব,
গা ভর্তি সোনার গহনা,
একদম নীল পরীর মতো লাগছে নীলাকে।
রিসেপশন এর অনুষ্ঠান অনেক সুন্দর ভাবে মিটে গেলো।
সবাই অনেক দোয়া করলো নিলয় নীলার নতুন জীবনের জন্য।
অনেক হাসিখুশি আনন্দে কেটে গেলো নিলয় নীলার রিসেপশন এর অনুষ্ঠান।
ধীরে ধীরে রাত হয়ে গেলো।
সব আত্তীয় স্বজন রা চলে গেলো, কিছু কিছু মেহমান থেকে গেলো।
অনেক মজা করতে করতে রাত ১০টা বেজে গেলো।
এবার ওদের ফুলশয্যার ঘরে যাওয়ার পালা।
নিলয় নীলা ওদের মা বাবাকে সালাম করে সবার দোয়া নিলো ওদের নতুন জীবনের জন্য।
ওদের মা বাবারা প্রানভরে ওদের দোয়া করলো।
সবার অনেক দোয়া ও ভালোবাস নিয়ে নিলয় নীলা প্রবেশ করলো ওদের ফুলশয্যার ঘরে।
নিলয় নীলার ঘরটা আজকে অনেক সুন্দর করে সাজানো হয়েছে।
একটি অসাধারণ ভালোবাসাময় রাত্রি শুরু হলো নিলয়নিলার।
নিলয় নীলার ফুলশয্যার খাট কাঁচা লাল গোলাপ দিয়ে সাজানো হয়েছে।
ঘরটা গোলাপের ঘ্রানে একদম মোহমিত হয়ে গেছে।
বিছানায় গোলাপের পাপড়ি ছড়িয়ে দেওয়া রয়েছে।ঘরের চারদিকে নানা রকম মোমবাতি জ্বালিয়ে ফুলশয্যার এই ভালোবাসাময় মূহুর্তটাকে আরো রঙিন করেছে।
নিলয়নীলা ওদের ফুলশয্যার ঘরে ঢোকার পর নিলয় দরজা বন্ধ করে দিলো।
তারপর নীলাকে কোলে তুলে নিলো।
নীলা তখন নিলয়কে বললো,,
_একি তুমি কোলে তুলে নিলে কেন??
তোমাকে সালাম করতে হবে তো,
_না আমাকে সালাম করতে হবে না,
তোমার স্থান আমার পায়ে নয়, আমার বুকে।
নীলা লজ্জায় নিলয়ের বুকে মুখ লুকালো।
নিলয় মুচকি হেসে নীলাকে কোলে করে নিয়ে গিয়ে গোলাপের পাপড়ি বিছানো গালিচার ওপর শুইয়ে দিলো।
তারপর যখনি নিলয় নীলার কাছে যেতে নিলো তখনি নীলা উঠে দৌড়ে বারান্দার দিকে চলে গেলো।
নিলয় মুচকি হাসি দিয়ে নীলার কাছে গেলো বারান্দায়।
বারান্দায় যাওয়ার পর নীলাকে বললো নিলয়,
_কি গো?? ওভাবে উঠে এলে যে,
একটু....
তখনি নিলয়কে কিছু বলতে না দিয়ে নীলা বললো,
_দেখো কি সুন্দর জোসনা দেখা দিয়েছে ঐ দুর আকাশে, মিষ্টি জোসনার আলো, তারা ভরা আকা, ঝিরিঝিরি হাওয়া বইছে,
চলো না একটু ছাঁদে যাই,
এই মধু জোসনায় মন শুধু চায় চলো না দুজনে একসাথে গল্প করি।
_বাব্বাহ, আমার বউটা তো গানের মাধ্যমে কথা বলছে, উফফ কি রোমান্টিক রোমান্টিক কথা বললে তুমি,
ছাঁদে না গেলে হবেই না, চলো তাহলে ছাদের যাওয়া যাক, খুব রোমান্টিক মুডে আছি এখন গো তারাতাড়ি চলো।
নীলা একটু মুচকি হাসি দিয়ে বললো,,
_হুমমম চলো গো,,
এটা বলেই মুখটা লাল হয়ে গেলো নীলার।
_আহা, এত লজ্জা পেলে কি করে চলবে বউ,
এত লজ্জা সত্যি তোমার মধ্যে কখনো দেখিনি আগে।
চলো এবার ছাঁদে।
তারপরই নিলয় নীলাকে কোলে তুলে নিলো তারপর ওকে নিয়ো ছাঁদের দিকে রওনা হলো।
নীলা এবার আর কিছু জিজ্ঞেস করলো না ওকে।
কারন ও জানতো নিলয় ওকে ঠিক কোলে করেই নিয়ে যাবে ছাঁদে।
তারপর নিলয় নীলাকে নিয়ে ছাঁদে যাওয়ার পর নীলাকে ছাঁদের দোলনায় বসিয়ে দিলো তারপর নিজেও নীলার পাশে বসলো।
তারপর দুজন দুজনকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বসে রইলো আর তাকিয়ে রইলো ঐ তারা ভরা দূর আকাশের দিকে।
মিষ্টি জোসনার আলোয় নীলার মিষ্টি মুখটা আরো অনেক সুন্দর দেখাচ্ছে,
নিলয় নীলার দিকে তাকিয়ে নীলার কপালে আলতো করে একটা চুমু খেলো।
নীলার শরীরে তখন যেন বিদ্যুৎ খেলে গেলো।
নিলয় নীলাকে নিজের মধ্যে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে দোলনায় দুলতে লাগলো।
ধীর স্বরে নিলয় বললো,,
_আচ্ছা বউ... এত সুন্দর মূহুর্তে কেমন লাগছে তোমার???
_কেমন লাগছে বলতে পারবো না গো, আমার মনে হচ্ছে এখন দুনিয়ার সবচেয়ে সুখী মানুষ হলো আমি আমার ভালোবাসার মানুষকে জীবন সঙ্গী হিসাবে পেয়েছি
_হুমমম আমারো নিজেকে অনেক অনেক সুখী মনে হচ্ছে জানো,
আমার ভালোবাসার মানুষকে আজ আপন করে পেয়েছি আমি।
পৃথিবীর সবথেকে সুন্দর মেয়েটা আমার বউ হয়েছে
_ধ্যাত, আমি পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ে?
_হুমমমম আর কারো কাছে না হোক,
তুমি আমার কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ে,,
আমার হৃদয়ের মহলের রানী তুমি
_হুমমম হয়েছে হয়েছে আর কত প্রশংসা করবে
এটা বলেই,,
নীলা মুচকি হাসি দিয়ে নিলয়ের বুকের মধ্যে নিজেকে সঁপে দিলো।
নিলয়ও নীলাকে নিজের বাহুডোরে শক্ত করে আবব্ধ করে ফেললো।
নিলয় হঠাৎ করেই নীলাকে বলে উঠলো,,
_আচ্ছা বউ একটা গান করলে কেমন হয় এই সুন্দর মূহুর্তে?
_হুমমম খুব ভালো হয়, তুমি গাইবে গান,
_না, তুমি গাইবে,,
_বললাম না তুমি গাইবে গান,
_ওকে, ওকে, এত মন খারাপ করার কিছু নেই,
গাইছি গান,,,
_হুমমম....
_কিন্তু খালি গলায়?? গিটার আছে আমার নিয়ে আসি,
_ না, এমনি খালি গলায়ই গান গাও তুমি,,,
_ওকে গাইছি,,
তারপর নিলয় তারা ভরা ঝলমলে আকাশের দিকে তাকিয়ে দিকে গান ধরলো,
""তোমাকে খুঁজে পাই ওই নীল আকাশে"
"পাই যে খুঁজে ওই মিষ্টি বাতাসে"
"তোমাকে খুঁজে পাই ওই নীল আকাশে"
"পাই যে খুঁজে ওই মিষ্টি বাতাসে"
"তোমায় ভালোবাসি, আমি ভালোবাসি"
"পেতে চাই আরো আরো কাছে"
খুঁজে খুঁজে দু'চোখ বুজে পাই তোমায় আরো কাছে,,
একই ডোরে বাঁধা দু'জন থাকবো সারা জনম ধরে""
নিলয় গান গাওয়া শেষ হলে নিলয় খেয়াল করে নীলা ওর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে,,
তখন নিলয় নীলার মুখের সামনে হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে বললো,,
_এই যে ম্যাডাম, গান গাওয়া হয়ে গেছে,
কি দেখছেন ওভাবে শুনি
নীলার তখন ধ্যান ভাঙে আর বলে,,,,
_না, না, কি দেখবো
আসলে তোমার গলায় গানটা শুনতে শুনতে যেন অন্য জগতে হারিয়ে গেছিলাম।
_কেন শুনি?? এর আগেও তো কত গান গাইতাম তখন তো এমন বলোনি?? এমন করে তাকিয়ে ও থাকো নি,
_তখনকার মধ্যে আর এখনকার মধ্যে অনেক পার্থক্য বুঝলেন মিস্টার,
_হুমমম বুঝলাম, তা ম্যাডাম গানটা কি খুব ভালো লেগেছে আপনার???
_হুমমম খুব খুব ভালো লেগেছে গো,
নিলয় তখন নীলার দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি দিয়ে ওকে দুই হাতে আকড়ে ধরলো।
এভাবে অনেক সময় ছাঁদে দোলনায় বসে থাকার পর নিলয় হঠাৎ করেই নীলাকে বলে উঠলো,
_নীলা...
_হুমমম বলো,
_আমার না বড্ড প্রেম, প্রেম পাচ্ছে
_কিইই???
_হুমমমম চলো না ফুলশয্যার ঘরে,
একটু রোমান্স হয়ে যাক
_না, না, ওসব হবে না,
এখানেই বসে থাকবো সারারাত
_কিইই
_হুমমমম
নিলয় তখন মন খারাপের ভান করে নীলাকে ছেড়ে দিয়ে অন্যদিকে মুখ করে রইলো।
নীলা তখন বুঝতে পারলো নিলয়ের মন খারাপ হয়েছে তখন নীলা নিলয়ের মুখটা নিজের দিকে ঘুরিয়ে এনে বললো,,
_ও বাবা, বাবুর তো মন খারাপ হয়ে গেছে,
এই বলে নীলা নিলয়ের গালে একটা চুমু খেলো।
নীলার চুমু খেয়ে নিলয় তখনি নীলাকে নিজের বাহুডোরে আবারো আবদ্ধ করে নিলো।
তারপর বললো,,
_তাহলে এবার হয়ে যাক ফুলশয্যা
নীলা তখন লজ্জায় নিলয়ের বুকে মুখ লুকালো।
তখনি নিলয় নীলাকে কোলে তুলে নিলো আবার।
তারপর ধীর পায়ে নীলাকে নিয়ে ঘরে নিয়ে আসলো।
নীলাকে কাঁচা গোলাপ দিয়ে সাজানে গোলাপের পাপড়ি বিছানো গালিচায় শুইয়ে দিলো নিলয়।
তারপর দরজটা আটকে দিয়ে আসলো।
তারপর নীলার পাশে শুয়ে পড়লো নিলয়।
মিষ্টি জোসনার আলো ওদের ঘরের জানালার গ্রিল ভেদ করে ঘরে ঢুকছে।
ঘরের চারদিকে মোমবাতির উজ্জ্বল আলোয় আলোকিত করছে।
কাঁচা গােলাপের ঘ্রানে মোহমিত চারদিক।
ঝিরিঝিরি হাওয়া বইছে বাইরে।
নিলয় ধীরে ধীরে নীলার গায়ের সব গহনা খুলতে লাগলো।
ধীরে ধীরে নিলয় নীলার ওপর নিজের শরীরের ভর ছেড়ে দিলো।
নীলা তখন ধীর স্বরে বললো,,
_নিলয়......
_এখন কোন কথা নয় বউ,
এখন শুধু রোমান্স হবে
নীলা লজ্জায় চোখ বন্ধ করে ফেললো নিলয়ের এই কথা শুনে,,
_ধূররর কি যে বলো না
_এখন লজ্জা পেলে হবে না বউ,
শুধু রোমান্স আর রোমান্স
_🙈🙈🙈🙈
ধীরে ধীরে নিলয় নীলার একদমই কাছাকাছি চলে গেলো,
একসাথে মিশে গেলো দুজনের নিঃশাস,
নীলার মিষ্টি ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দিয়ে স্বাদ নিতে লাগলো নিজেদের ভালোবাসার।
নীলাও নিলয়ের ডাকে সাড়া দিয়ে একসাথে তাল মিলিয়ে ভালোবাসার অনুভূতির মধ্যে মিশে যেতে লাগলো।
হারিয়ে যেতে লাগলো অচেনা এক জগতে।
ধীরে ধীরে নিলয় নীলা ওদের ভালোবাসার মধুময় নতুন জগতে ডুব দিলো।
ওদের এই মধুময় ভালোবাসার রাত্রির সাক্ষী হয়ে রইলো এই মধুময় রাতের মিষ্টি জোসনা আলো ও তারা ভরা ঝলমলে আকাশ।
ঝিরিঝিরি হাওয়া বইছে
মিষ্টি জোসনার আলো
নিলয় নীলার ভালোবাসার
মধুময় পূর্নতা পেলো।
ভালো থাকুক নিলয়নীলা,
সুন্দর ভাবে ওরা যেন একসাথে ভালোবাসাময় জীবন যাপন করতে পারে।
সবাই ওদের জন্য দোয়া করবেন।
ভালো থাকুক পৃথিবীর সব সত্যি কারের ভালোবাসা।
কারো ভালোবাসা যেন অসমাপ্ত না হয়।
একটা সুন্দর পূর্নতা যেন হয় সবার সত্যি কারের ভালোবাসার।
।

