STORYMIRROR

Naziul Mamun

Inspirational Others

3  

Naziul Mamun

Inspirational Others

অনিকের জীবনের লক্ষ্য

অনিকের জীবনের লক্ষ্য

5 mins
184

অনিক মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে,

ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ও জীবনের লক্ষ্য হলো ডাক্তার হওয়া।

বর্তমানে অনিক এইচএসসি পাশ করছে কোচিং করছে।

ওর বাবা পেশায় প্রাইমেরী স্কুলের টিচার।

আর মা একজন গৃহিণী।

ওর ছোট বোন আছে,

সে ক্লাস সেভেনে পড়াশোনা করে।

অনিক ওর মা বাবা বোনের সাথে ঢাকায় ছোট্ট বাসা ভাড়া করে থাকে।

ওদের পারিবারিক অবস্থা মোটামুটি সচ্ছল।

সবকিছু মিলিয়ে ওরা সবাই একসাথে বেশ হাসিখুশি ভাবেই আছে।

অনিকের জীবনের স্বপ্ন ও লক্ষ্য পূরন করার জন্য ওর বাবা অনরবত চেষ্টা করে যাচ্ছেন,

যাতে ছেলে বড় হয়ে বড় ডাক্তার হতে পারে।

অনিকও খুব ভালো স্টুডেন্ট।

এসএসসি, এইচএসসি তে জিপিএ ৫ পেয়েছে।

পড়াশোনার প্রতি অনিকের ভিষন ঝোক।

অনিকরা চারজনে মিলে একটি সুখী পরিবার।

একদিন কোচিং শেষে বাসায় এসে দেখে ওর বাবা বিছানায় স্যালাইন দেওয়া অবস্থায় শুয়ে আছে।

অনিক ওর বাবার এই অবস্থা দেখে ওর মাকে জিজ্ঞেস করে,

_বাবার কি হয়েছে??

ওর মা বলে,

_তোর বাবার হঠাৎ করেই বিপি লো হয়ে গেছে।

অনিক ওর বাবার পাশে গিয়ে বসে ওর বাবার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।

ওর বাবা তখন ঘুমিয়ে ছিলো।

মাথায় হাতের স্পর্শ পেয়ে চোখ খুলে অনিকের দিকে তাকালো।

তারপর অনিক ওর বাবাকে বললো,

_এখন কেমন আছো বাবা???

_এখন একটু ভালো লাগছে বাপ,

তুই কখন আসলি??

_এই তো মাত্র, তোমার কি হয়েছে??

হঠাৎ করেই বিপি লো হলো কেন???

_কিছু না রে বাপ, এই নানা রকম চিন্তা,

বাদ দে ওসব,

_ না না, বাদ দেবো কেন বলো কিন্তু এত চিন্তা করো??

_এই তোর স্বপ্ন পূরন করার চিন্তা,

আমি এভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে থাকলে তোর স্বপ্ন অসফল রয়ে যাবে বাপ,

আমি চাই তোর স্বপ্ন পূরন করতে।

_তুমি আগে সুস্থ হও তো,

তারপর আমার স্বপ্ন নিয়ে ভেবো।

এখন ঘুমাও।

_দাড়া বাপ একটা কথা শোন,

_হুমমম বলো,

_আমি যদি না থাকি মানে কথার কথা বলছি,

তুই কি তোর জীবনের লক্ষ্য থেকে সরবি না একদম বলে দিলাম।

কথা দে বাপ

_বাবা এখন এসব কি বলছো,

আচ্ছা যাও কথা দিলাম, এবার ঘুমাও তো।

তারপর ওর বাবা ঘুমিয়ে যায়।

এভাবে দেখতে দেখতে তিন মাসের কোচিং শেষ হয়ে যায় অনিকের।

মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষার সময় চলে আসে।

এদিকে ওর বাবার শরীরের অবস্থা দিনদিন খারাপ হতে থাকে।

শরীর একদম দূর্বল হয়ে যায়।

মাঝে মাঝে বিপি একদম লো হয়ে যাচ্ছে।

ওর মেডিক্যালে ওর ভর্তি পরীক্ষার দিন চলে আসে।

অনিক তখন ওর মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষার ফরম তুলতে গেছে,

হঠাৎ করেই অনিকের ফোনে ফোন আসে।

ফোনের ওপাশ থেকে কান্নায় ভেঙে পড়ে ওর বোন।

তখন অনিক কোনরকমে ফরম টা তুলে নিয়ে বাড়িতে এসে দেখে,,,,,

ওর বাবাকে বারান্দায় শুইয়ে রাখা হয়েছে,

পাশে ওর বোন আর মা বসে কাঁদছে।

আশেপাশে প্রতিবেশীরা ভীর জমিয়েছে।

অনিক ওর বাবার পাশে গিয়ে বুঝতে পারে ওর বাবা আর এ দুনিয়াতে নেই।

ওদের ছেড়ে চলে গেছে না ফেরার দেশে।

অনিক ধপাস করে ওর বাবার পাশে বসে পড়ে।

অঝোর ধারায় গাল বেয়ে ঝরতে থাকে অনিকের চোখের জল।

তখন অনিকের চোখের সামনে যেন সবকিছু অন্ধকার মনে হয়।

আর একটু ঘন্টা খানেক পর মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা।

এদিকে ওর বাবা মারা গেছে।

অনিক কি করবে বুঝতে পারছিলো না।

খুব ভেঙে পড়েছে ও।

পরক্ষনে ওর বাবাকে দেওয়া কথা মনে হয়,

বাবা বলে গেছিলো,

তুই তোর জীবনের লক্ষ্য থেকে একদম সরবি না বাপ।

তখন অনিক বসা থেকে উঠে দাড়ায়।

মনের মধ্যে মনোবল আনার চেষ্টা করে।

চোখের পানি মুছে ওর মাকে বলে,

_মা, আমি বাবাকে দেওয়া কথা রাখতে যাচ্ছি,

আমি না আসা পর্যন্ত বাবাকে কবর দিও না।

ওর মা কাঁদো কাঁদো গলায় বলে,

_যা বাবা, মন দিয়ে পরীক্ষা দে,

বাবার কাছে দেওয়া কথা ও নিজের জীবনের লক্ষ্য পূরন কর।

অনিক কিছু না বলে ওর বাবার পা স্পর্শ করে বেরিয়ে যায় পরীক্ষা দিতে।

পরীক্ষার হলে গিয়ে এক হাত দিয়ে চোখ মুছে আরেক হাত দিয়ে পরীক্ষা দেয়।

পরীক্ষা দেওয়ার সময় বারবার ওর বাবাকে দেওয়া কথা মনে হতে থাকে।

মনের মধ্যে প্রচুর শক্তি এনে খুবই কষ্টে পরীক্ষা দেয় অনিক।

আপনারাই ভাবুন বাবার লাশ বাড়িতে রেখে এসে পরীক্ষা দেওয়াটা কতটা কষ্ট দায়ক।

এভাবেই মনোবল নিয়ে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা শেষ করে অনিক।

তারপর বাড়িতে চলে আসে।

বাড়িতে এসে ওর বাবাকে শেষ গোসল করিয়ে দাফন কাফন করিয়ে কবরস্থানে নিয়ে যাওয়া হয়।

জানাযা শেষে কবর হয়ে যায় ওর বাবার।

সবাই একে একে কবর দিয়ে চলে যায় কিন্তু অনিক যায় না।

সবাই চলে যাওয়ার পর অনিক ওর বাবার কবরের পাশে দাড়িয়ে বলে,

_বাবা, তুুমি তো আমাদের রেখে চলে গেলে,

ভাবতে ও পারিনি তোমাকে এভাবে হারাতে হবে।

কিন্তু চিন্তা করো না বাবা,

তোমার ছেলে তোমাকে দেওয়া কথা রাখবে,

তোমার ছেলে তার জীবনের লক্ষ্য থেকে সরবে না।

আমার জন্য দোয়া করো বাবা,

যেন তোমার ছেলে বড় ডাক্তার হতে পারে।

এভাবে একমাস কেটে যায় ওর বাবার মৃত্যুর।

আজ ওর মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষার রেজাল্ট দিয়েছে।

অনিক সরাসরি ঢাকা মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়ে গেছে।

অনিক রেজাল্ট পাওয়া মাত্রই ওর মা ও বোনকে নিয়ে কবরস্থানে চলে যায়।

কবরস্থানে গিয়ে ওরা কবরের পাশে দাড়িয়ে কবর জিয়ারত করে।

তারপর অনিক বলে,

_বাবা,,, দেখো তোমার ছেলে তোমার দোয়ায় জীবনের লক্ষ্যতে এক ধাপ এগিয়ে গেছে।

অনেক অনেক দোয়া করো বাবা আমার জন্য।

যাতে তোমাকে দেওয়া কথা রেখে জীবনের লক্ষ্য এগোতে পারি।

ছয় বছর পর,

অনিক এখন সার্জন বিভাগের অনেক বড় ডাক্তার।

অনেক সুনাম এখন ওর।

ওর জীবনের লক্ষ্যতে সাকসেসফুলি ভাবে এগোতে পেরেছে সে।

ওর বাবার কথাও রেখেছে।

একটা ফ্ল্যাট কিনে মা ও বোনকে নিয়ে থাকে অনিক।

অনিক প্রতিদিন ফজরের নামাজের পরে ওর বাবার কবর জিয়ারত করে আসে।

হাজারো কষ্ট ও প্রতিকুলতার মধ্যে দিয়ে অনিক নিজের জীবনের লক্ষ্য পৌছাতে পেরেছে।

পেরেছে সে বাবাকে দেওয়া কথা রাখতে।

বাবার মৃত্যু দিনেও মনে হাজারো মনোবল নিয়ে মন শক্ত করে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছিলো অনিক।

বাবার মৃত লাশ বাড়িতে রেখে পরীক্ষা হলে পরীক্ষা দেওয়া অনেক মনোবল ও শক্তির প্রয়োজন হয়।

কিন্তু অনিক নিজের মনোবল ও শক্তি দাড়া নিজের জীবনের লক্ষ্য পূরন করে দেখিয়েছে।

আজ সে সফল হয়েছে।

অনিক এটাই প্রমান করেছে

জীবনে যত বাঁধা আসুক না কেন নিজের জীবনের লক্ষ্য থেকো কখনো ই সরে আসা উচিত নয়।

নিজের জীবনের লক্ষ্য অবশ্যই পূরন করা উচিত।

সবশেষে একটা কথা,

যত বাঁধা ই আসুক না কেন সব বাঁধা বিপদ পেরিয়ে সফল করো নিজের জীবনের লক্ষ্য।

❤️



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Inspirational