বেপরোয়া মাঝরাত
বেপরোয়া মাঝরাত


সময় জ্ঞান নেই ,পাত্র-পাত্রী বিচার নেই, নিজের সম্পর্কেও বড় বেশি বেপরোয়া; এমন কেউ চিঠি লিখে , মনের সব জীবনমরণ কথা বলে যাবে ভাবলে, তার পক্ষে রাত দুটোই ঠিক সময় ।আবেগ নেই, ভালোবাসা নেই, সৃজনশীলতা নেই, আর নেই একটা পাগল মন, এমন কেউ লিখলে,সে লেখা কবিতাই হতো না কখনো,সে ছবিতে রঙই থাকত না কোন,আর ফ্যাকাশে একঘেয়ে বর্ষার বিরক্তিতে ধুয়ে ধুয়ে, ক্ষয়ে ক্ষয়ে, শেষ হয়ে যেত সে লেখা। এ কাজ আমার দ্বারা হবে না ।এই গভীর রাতে উল্টো ফুটের বাড়ির ছাদের ঘরে আলো জ্বলছে কিনা,সে বাড়ির তোরসা অনেক ভাবনার গোপনে ডুব সাঁতার দিচ্ছে ,নাকি বিছানায় হেলান দিয়ে 'কোয়েলের কাছে' ,আর সত্যি সত্যিই সেখানে পৌঁছে গেল কিনা, অনেক চেষ্টা করেও সেকথা জানার উপায় নেই ।বারান্দা থেকে দেখা যায় না তোরসার ঘর। ছাদে উঠে হয়তো এক চিলতে দেখা যাবে, কিন্তু তার জন্য মশারি থেকে বেরোতে হবে ,সাবধানে চটি পায়ে গলাতে হবে ,খুব আস্তে আস্তে খুলে ফেলতে হবে প্রথমে খিল, তারপর ছিটকিনি, তারপর গদরেজ লক্ ।এতসব করলে দরজাটা ঠিক বিরক্তি প্রকাশ করবে ক্যাঁচ ক্যাঁচ শব্দ করে। তাই সে ব্যাটাকে ঠেকনা দিয়ে রাখতে হবে ,যাতে পাশের ঘরে শব্দ না যায় ।কিন্তু শব্দ যাবেই, আমি জানি। বাবার ঘুম খুব পাতলা ,মা ও জেগে যেতেই পারে। এরপরে আরও আছে। মই বেয়ে উঠতে হবে উপরে। মইটা একদিক ঢক্ ঢক্ করে, শব্দ না করে সেও ছাড়বেনা ।রাতের এই অ্যাডভেঞ্চারে এরা কোন না কোন অবদান রাখতে বদ্ধপরিকর হবেই। আর শব্দ যা হবে, ভয় হয় তা সব বাধা পেরিয়ে ,ঠিক সময় সোজা বাবার কানে পৌঁছে যাবে।
তারপরেও আধভাঙা দরজাটা খুলে, শেষে ছাদে উঠতে হবে আর ছাদে পা রাখা মাত্রই একটা দমকা হাওয়ায় দরজাটা আছড়ে বন্ধ হবে ,যেটা রাত দুটোয়
যে কারোও ঘুম ভাঙানোর পক্ষে যথেষ্ট।এরা কেউই কোনকালে আমার বাধ্য ছিল না,হবেও না,বৃথা শাপশাপান্ত। এমতাবস্থায় ছাদে ত্রিশঙ্কু হব আমি, আমাকে নীচ থেকে বাবার অসংখ্য বকুনি শুনতে হবে, আর কিছুতেই বুঝিয়ে উঠতে পারব না ,আমি ঠিক কি কারনে এই মধ্যরাতে ছাদে উঠেছিলুম। তাই সেই দুর্গম ঘরের আলো জ্বলছে কিনা ,আর সেই ঘরে সে বেচারা আমার জন্য রাত জেগে বসে আছে কিনা আর একটিমাত্র ঝোড়ো উড়ো চিঠি বুকে করে সতেরোতম বার গোগ্রাসে পড়ে ফেলছে কিনা, তার আভাস পাওয়া ,এখন আর তাই কিছুতেই সম্ভব নয়।কেন যে প্রিয় মানুষগুলোর কাছে পৌছনোই সবসময় এত কঠিন,কে জানে? সুতরাং মশারির বাইরে বেরই হবনা ঠিক করলুম।বসে বসে ফালতু সব কথা ভাবতে লাগলুম আর এইসব বিশেষ কথা যারা ভাবতে পারেনা, তাদের জন্য দীর্ঘশ্বাস ফেললুম।দেখলুম, এই অসীম ক্ষমতা কেবল ভূভারতে আমারই আছে ,নইলে এই রাত দুটোর সময় কেনই বা আমার ঘুম ভেঙে এইসব অসাধারন জরুরী কথা মনে পড়ে গেল? আর কেনই বা জানলা দিয়ে মৃদু হাওয়া ঢুকে আমার চুল এলোমেলো করে দিল?সে কি তোরসা নয়? নাকি সে ঘুমিয়েই পড়েছে তার উষ্ণ ছাদের ঘরে আমার নাম লেখা বালিশে শুয়ে?
আর এই যে স্পষ্ট দেখছি চাঁদের আলো আর স্ট্রীটলাইট দুই'ই জানলার এক কোনা দিয়ে ঢুকে, তার মুখের ওপর পড়তে চেয়েও পড়তে পারছে না,তার কি হবে? কানের কাছে সিলিং ফ্যানের একঘেয়ে শোঁ-শোঁ শব্দ আর আর বুকের ভেতর একফোঁটা দুঃখই হয়ত অগত্যা জেগে আছে। চিন্তা করার বা অবাক হবার কিছু নেই, এই রাতের অন্ধকারকে হারিয়ে আর তার ঘরের জানালার গরাদ পেরিয়ে এই ভাবনাটা, জানি ঠিক ঢুকে পড়বে হুড়মুড় করে সেই ঘরে,সেই ঠোঁটে, কোনো বাধা-নিষেধ না শুনে, সময় জ্ঞান ভুলে; আমারই মত বেপরোয়া ।