বেড নম্বর ছয়
বেড নম্বর ছয়
-ছয় নম্বর বেডে নতুন পেশেন্ট এসেছে শুনলাম। ওনার কোন কেস হিস্ট্রি পেয়েছেন সিস্টার।
-না ডাঃ রায়। আসলে ওনার বাড়ির লোক তো সাথে কেউ আসেনি। সদর হাসপাতাল থেকে এখানে ট্রান্সফার করেছে। একটা অ্যাক্সিডেন্টে পায়ে চোট পেয়েছিল, রাস্তার লোকেরা ভর্তি করেছিল হসপিটালে। রিপোর্টে এটুকুই লেখা আছে।
-ওকে। আমি একটু পরে রাউন্ডে যাব যখন দেখে নেব পেশেন্টকে।
অল্প কথায় সিস্টারকে জবাব দিলেন শহরের বিখ্যাত সাইক্রিয়াটিস্ট ডাঃ স্বর্ণেন্দু রায়।
চেম্বার থেকে বেরিয়ে যেতে গিয়েও ফিরে এলেন অভিজ্ঞ সিস্টার ঈশানী।
-স্যার।
কিছু দরকারী কাগজপত্র দেখছিলেন ডাক্তারবাবু। মাথা না তুলেই জিজ্ঞাসা করলেন,
-কি হলো?
-ঐ ছয় নম্বরের নতুন পেশেন্টের সাথে কতগুলো কাগজ আছে।
সিস্টারের চোখের দিকে তাকালেন ডাঃ রায়। জানতে চাইলেন,
-কি কাগজ?
-কি কাগজ তো বুঝতে পারছি না স্যার। পেশেন্ট তো কিছুতেই ছাড়তে চাইল না কাগজগুলো। মনে হচ্ছিল সাদা কাগজে হাতে লেখা কোন্ নোটস্ জাতীয় কিছু হবে। জোর করে নিতে গেলে ভায়োলেন্ট হয়ে উঠছে।
-ইন্টারেস্টিং। ওকে সিস্টার। এমনিতে কাগজগুলো না নিতে পারলে, পেশেন্টকে একটা সিডেটিভ ইনজেক্ট করুন। কাগজগুলো আমার চাই।
ঘন্টাখানেক পর এসে সিস্টার ময়লা এলোমেলো ভাবে মোড়ানো কাগজগুলো রেখে যায় ডাঃ রায়ের টেবিলে।
চমকে ওঠেন ডাক্তারবাবু। নিজের কলেজবেলার হাতের লেখা চিনতে অসুবিধা হয়না স্বর্ণেন্দু রায়ের। আসি বলে আর ফিরে আসা হয়নি পরমার জীবনে। নিজের ভবিষ্যতটাকে সুন্দর করে গড়তে বিয়ে করতেই হয়েছিল কল্পিতাকে।
অজস্র চিঠিতে শুধু ভালোবাসা আর সুখী জীবনের প্রতিশ্রুতি।
সেই মিথ্যা প্রতিশ্রুতির কাগজগুলোকে আঁকড়ে পরমা আজ মানসিক হাসপাতালের নাম পরিচয়হীন ছয় নম্বর বেডের পেশেন্ট!