বাস্তবায়ন
বাস্তবায়ন
রতন দাস, এক সাধারণ মধ্যবিত্ত বাড়ির ছেলে। সংসারে একমাত্র উপার্জনকারী হল রতনের বাবা, মৃণ্ময় দাস। প্রতি মাসে উপার্জন সামান্য, ছেলের পড়াশোনার খরচ আর সংসারের খরচ সামলে সামান্য যা কিছু পড়ে থাকে তা ছেলের ভবিষ্যতের পড়াশোনার জন্য জমাতেই শেষ হয়ে যায়। তবে এই নিয়ে কোনো আফসোস নেই মৃণ্ময়বাবুর, কারণ তাদের ছেলে মেধাবী। প্রত্যেকবার পরীক্ষায় প্রথম ১০ এর মধ্যে আসে রতন। তার ওপর পাড়ার লোকজন, শিক্ষক সবাই বলে রতনের মতো ছেলে হয় না, যেমন পড়াশোনায় ভালো তেমনি আচার-আচরণে তার জুড়ি মেলা ভার, তারা কোনো দিন রতনের মুখ থেকে কোনো খারাপ ভাষা শোনেনি। তাই মৃণ্ময় বাবুর জীবনে কোনো আক্ষেপ নেই, কারণ তিনি ছেলে মানুষ করতে পেরেছেন।........... একদিন স্কুলে এক বন্ধুর কাছ থেকে রতনের একটা পড়ার জেরক্স ফেরত পাওয়ার কথা কিন্তু ছেলেটা তা আনতে ভুলে যায় তখন রতন বলে, 'কি রে বাড়া ! কবে নোটটা দিয়েছি, এবার কি তোর বাড়ি থেকে নিয়ে আসবো নাকি ? তখন যদি তোর মাকে লাগিয়ে দিয়ে আসি তখন কিন্তু কিছু বলতে পারবি না।'........... এক দিন একটা বন্ধু রতনকে জিজ্ঞেস করলো তুই আমাদের সাথে এইভাবে কথা বলিস কিন্তু স্যারদের সামনে কন্ট্রোল করিস কি করে ? উত্তরে রতন বলল, 'ওই টাই তো ট্যালেন্ট। '
এরপর অনেক বছর কেটে গেছে আজ রতন একটা নামী কোম্পানির একটা ব্রাঞ্চের ম্যানেজার, মৃণ্ময়বাবুর স্বপ্ন পূরণ হয়েছে তবে তিনি এখন ছেলের সাথে থাকেন না। তিনি থাকেন এক শহরে আর ছেলে তার স্ত্রী-পুত্র নিয়ে থাকে অন্য শহরে নিজের কেনা বাড়িতে। তবে রতনের একটাই আফসোস যে শহরটা কলকাতার মত খুব জাঁকজমকপূর্ণ নয়। তবে রতনের আগে মুখের লাগামে জোর থাকলেও এখন একটু হালকা হয়েছে, এখন একটু খোলাখুলি বলে ফেলে, অনেক সময়ে অজান্তেই নিজের ছেলের সামনে। তবে স্ত্রীর বা অফিসে স্টাফদের সামনে কোনো দিনও সেই ভুল হয় না।
এই ভাবে দিন কাটতে থাকে, তাদের ছেলেও বড় হয়েছে। রতনেরও প্রমোশনের কথা চলছে।...... তবে একদিন ঘটে যায় এক দুর্ঘটনা। একদিন রতনের তাড়াতাড়ি কাজ শেষ হয়ে গেলে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে আসে কিন্তু এসে দেখেন বাড়ির দরজা খোলা, ঘরের জিনিসপত্র ছড়ানো, আর স্ত্রী বিছানার ওপর অর্ধনগ্ন অবস্থায় শুয়ে কেঁদে চলেছে। রতনের বুঝতে অসুবিধা হয় না কি ঘটেছে। রতন দেরি না করে স্ত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে যায় তারপর থানায় গিয়ে ডায়েরি করে আসে, তবে অবাক করার বিষয় হলো ঘরের কোনো কিছু চুরি হয় হয়নি আর ঘরের দরজার তালাও ভাঙা হয়নি। সেই দিন রতনের ছেলের টিউশন ছিল তাই সে বাড়ি ছিল না, ঘরে ফিরে এই সব শুনে তার মাথাতেও যেন আকাশ ভেঙে পড়ল।
এইভাবেই দৌড়াদৌড়িতে কয়েকটা দিন কাটলো। এক দিন ছেলে ফোন না নিয়ে টিউশন পড়তে গেছে, তখন একটা ফোন আসে, রতন ফোনটা রিসিভ করে কিছু বলার আগেই ওপার থেকে শোনে, 'তোর মার একটু বয়স হলেও সেদিন সেই মজা পেলাম, ঐ রাতে তোর বাড়ির ডুপ্লিকেট চাবিটা দেওয়ার জন্য থ্যানকস্। ' রতনের হাত থেকে ৩০০০০ টাকার ফোনটা পড়ে যায়, সারা শরীর ভারী হয়ে আসে, সে মনে মনে ভাবে এই বয়সে তারা শুধু এই কথাগুলো বলত, কিন্তু এখন তাদের সন্তানরা তাদের সেই কথাগুলোর আক্ষরিক অর্থেই বাস্তবায়ন ঘটালো।
(এই নোংরা ভাষায় গল্পটা লেখার জন্যে ক্ষমা চাইছি। বর্তমান ছাত্রসমাজে এই সব ভাষার ব্যবহার এতো বেড়ে গেছে যে তাদের ভবিষ্যত যেন এই রকম না হয়..... আবার সকলের কাছে ক্ষমা চাইলাম)