অতৃপ্ত আত্মার ডাকে
অতৃপ্ত আত্মার ডাকে
অতৃপ্ত আত্মার ডাকে--
ডাঃ সত্যব্রত মজুমদার/ (প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য)
২৬/০৭/২০২২
------------------
পল্লবী তুমি আজ ছুটির পরে আমাকে ফোন করো, আমি ঠিক চলে আসবো, স্টেশনের এক নম্বর প্লেটফর্মের পিছনের দিকটা থেকো, তাহলে একটু ফাঁকা দেখে বসা যাবে।
জয়, আমি সময় মত ঠিক এসে যাবো, তুমি অন্যদিনের মতো লেট্ করো না,প্লিজ।
পল্লবী শহরের এক নার্সিংহোমে কাজ করে, আয়ার কাজ, প্রায় পনেরো বছর ধরে এই কাজ করে ভালোই অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছে, হাতও খুব পোক্ত আর চটপটে। ফর্সা,সুন্দরী ত্রিশ, বত্রিশ বছর বয়সি পল্লবী খুবই গরীব ঘরের মেয়ে,বাবা ভাড়ার ট্যাক্সি চালাত, নেশা করতো পুরোমাত্রায়, তিন ভাইবোনের মধ্যে পল্লবি ছিল বড়ো, সংসার বাঁচাতে মাকে শহরে লোকের বাড়িতে কাজ করতে হতো। শহরতলীতে পল্লবীদের পুরোনো টালি আর টিনের ঘর , সংসারে অনেক অশান্তি ছিল, তাই পড়াশুনো বেশি করতে পারেনি, কোনো ভাই বোনেই । বাবা একটা সময় গাড়িও ঠিক মত চালাতো না, বন্ধু-বান্ধব, জুয়া, নেশা আর রাত্রে বাড়িতে ফিরে অশান্তি, একদিন বাইরে ধার দেনায় চাপে পড়ে নেশার ঘোরে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করে বসে। অল্প বয়সেই তাই পল্লবীদের বাইরে কাজে লেগে যেতে হয়, চেহারায় আর কথাবার্তায় আকর্ষণীয় পল্লবী পাড়ার একটি ছেলের প্রেমে পড়ে যায়। ধীরে ধীরে মেলামেশা আরো ঘনিষ্ঠ হতেই একদিন ছেলেটি তার বাড়িতে নিয়ে আসে। বাড়ির লোকের অবর্তমানে পল্লবী প্রেমিকের সাথে দৈহিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়ে পড়ে, যৌন মিলনের আনন্দে আস্তে আস্তে আরো বেশি মাতোয়ারা হতে থাকে পল্লবী। একদিন পল্লবী বুঝতে পারে তাঁর পেটে কিছু একটা নড়ছে,শরীরে
নীচের অংশ, পায়ের দিকে ফুলো, ফুলো ভাব, সাথে সাথে প্রেমিককে খবর দেয়, প্রেমিক পল্লবীর সাথে দেখা করে বিপদ বুঝতে পেরে পালিয়ে যায়।
প্রেমিকরা যেহেতু যথেষ্ট অর্থবান আর এলাকায় প্রভাবশালী,রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকা পরিবার,অসহায় পল্লবী এবং তাঁর মা একাধারে সামাজিক লজ্জা আর ভয়ে প্রেমিকের পরিবারের চাপে টাকার বিনিময়ে রফা করতে বাধ্য হলো। কিন্তু পল্লবী ছয় মাসের বাচ্চা নষ্ট করতে রাজি হলো না,বিয়ের জন্য চাপ দিতে লাগল, প্রেমিক ছেলেটি বাড়ির মান সন্মান রক্ষার্থে একসাথে থাকতে লাগল, কোনো সামাজিক বিয়ের দিকে গেল না। পল্লবীর সুন্দর ফুটফুটে পুত্রসন্তান হলো,
কিন্তু প্রেমিক স্বামী বেশি দিন টিকল না, আরেকটি মেয়ের সাথে ভালোবাসা করে পালিয়ে গেল। আর পল্লবী বিভিন্ন জায়গায় আয়ার কাজ করে ছেলেকে বড়ো করতে লাগলো, লেখাপড়া করিয়ে মাধ্যমিক পাশ করে উচ্চমাধ্যমিক পড়ার জন্য ভর্তি করলো, পড়াশুনোয় ভালো ছেলে মার খুবই বাধ্যের ছিল। বুঝতো মা কত কষ্ট করে সারাদিন বাইরে কাজ করে তাকে পড়াশুনো করিয়ে বড়ো করছে। কিন্তু পল্লবী মনের জোর আর বল হারাতে দেয়নি, কিন্তু দেহের যৌন ক্ষুধা, কামনা বাসনা, একজন জীবনের পুরুষসাথী পাওয়ার উদগ্র ইচ্ছা দিনের পর দিন মনে দমন করে রাখার জন্য নিজের প্রতি রাগ দুঃখ অভিমান গ্রাস করতো, নিজের মনেই অবসর সময়ে কাঁদতো, আবার ছেলে সামনে এলে মনকে এই ব্যাকুলতা থেকে জোড় করে দূরে সরিয়ে নিত। পল্লবী দেহের আর মনের চাহিদার সামনে মাঝে মাঝে অসহায় হয়ে পড়ত, বিশ্বাস করে চলতি পথে অনেকের সাথেই আলাপ পরিচয় থেকে মন দেওয়া নেওয়া করেছিল, ফিটফাট সুন্দর, আকর্ষণীয় চেহারায় পল্লবী বিবাহিত, অবিবাহিত অনেক পুরুষকে সাথি করার চেষ্টা করেছিল, একান্তে ভালোবেসেছিল, কিন্তু তারা পল্লবীর ক্ষুধার্থ দেহ ভোগ করার কিছুদিন পরেই আস্তে আস্তে সম্পর্ক ত্যাগ করে। কিছুদিন মনমরা থাকার পর পল্লবী আবার কারো প্রত্যাশায় ভাসতে থাকে, ছেলে বড়ো হওয়াতে আবার বিয়ের চিন্তা করতেই পারতো না। এর পর জয়ের সাথে ট্রেনে আলাপ হয় পল্লবীর, বছর চল্লিশের জয় এক বেসরকারি কোম্পানিতে কাজ করতো, দুই সন্তানের পিতা জয়ের স্ত্রী সন্তান হওয়ার পরেই জটিল সুগার আর হৃদযন্ত্রের সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে পড়ে। তার ফলে জয় তাঁর যৌন চাহিদায় আক্ষেপ থেকে সুন্দরী তরতাজা, পল্লবীর প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে। দিনে দিনে প্রেমের বন্ধন দৃঢ় হতে থাকে, কাজ থেকে ফেরার পথে কোনো নির্দিষ্ট স্হানে দুইজনে নিয়মিত মিলিত হতো, মনের কথা বলা, খাওয়া দাওয়া, প্রেমের নতূন আবেগে দুইজনেই ভাসতে থাকে। সাথে সময় করে মোবাইলে সারাদিন কথোপকথন চলতেই থাকে, বাড়িতে কিছুই বুঝতে দিত না। সকাল হলেই জয় ভাবতো কখন পল্লবীর সাথে দেখা হবে, তাঁর মিষ্টি সুরেলা কথা শুনবো, তাকে কোনো স্হানে আড়ালে জড়িয়ে ধরে আদর করবো, চুমু খাব।
পল্লবীও সারাদিন কাজের ফাঁকে জয়ের কথা ভাবতো, জয় তাকে কাছে টেনে আদর করছে, চুম্বন করছে ঠোঁটে, গালে, কপালে, আর এই ভেবে পল্লবীর শরীর যৌন উত্তেজনায় আন্দোলিত হতো, শরীরি মিলনের আবেগে কাঁপতে থাকতো।
জয়ের এক বন্ধুর খালি বাড়িতে পল্লবীকে নিয়ে এলো, কিছুক্ষণ নিরাপদে সময় কাটানোর জন্য, বন্ধু বছর দুয়েক ধরে দিল্লীতে রয়েছে চাকরির সুবাদে, উঁচু পাচিল ঘেরা পুরোনো বাড়ি, জয় বন্ধুর সাথে যোগাযোগ করে কাছাকাছি থাকা বন্ধুর বোনের কাছ থেকে চাবি সংগ্রহ করেছিল বাড়ির, মাঝে মাঝে এসে বাড়িঘর দেখাশুনো করার জন্য।
তাতে জয়ের আর পল্লবীর পক্ষে ভালোই হলো।
জয় বন্ধুর বাড়িতে পল্লবীকে নিয়ে ছুটির পরে এসে থাকতে শুরু করলো, তারপর শুরু হলো রাত্রি যাপন, মাঝে মাঝেই সারা রাত্রি জয় আর পল্লবী বন্ধুর এই বাড়িতে প্রেমের নেশায় উন্মত্ত হতে থাকলো। এই রকম নিরাপদ আশ্রয়ে রাত্রিযাপন তাদের নেশায় পরিণত হয়ে গেল।
হ্যালো, পল্লবী আমি জয় বলছি, তুমি আজ কাজের ছুটির পরে চলে এসো, কয়দিন তো আমি আসতে পারি নাই, স্ত্রীর শরীর খুব খারাপ, বাড়াবাড়ি হয়েছিল, হাঁপানির টানটা বেড়েছিল, দুইদিন হাসপাতালে ভর্তি থাকার পরে আজ বাড়িতে এনেছি, একটু ভালো আছে। তোমাকে কাছে পাওয়ার জন্য মনটা ব্যাকুল হয়েছে। ঠিক আছে জয়, তোমার শরীর ভালো আছে তো জয়? মনে হচ্ছে কতদিন দেখিনি তোমায় জয়, শরীর মন খুব চাইছে তোমায় জয়, আমি আসছি, তুমি থেকো। স্ত্রীর অল্প বয়সে শারীরিক অক্ষমতায় জয় পল্লবীর সাথে পরকীয়ায় আসক্ত হয়ে পড়ে খুব তাড়াতাড়ি। মাঝে মাঝেই কোম্পানির কাজের কথা বলে বন্ধুর বাড়িতেই পল্লবীর সাথে রাত কাটাতে থাকে জয়।
এই বন্ধুর বাড়ি তোমার আর আমার পক্ষে খুবই নিরাপদ পল্লবী। এই ঘর আমাদের নিশিযাপনের জন্য ডাকে বারে বার পল্লবী। তোমার আমার মিলন কত সুখের পল্লবী, মাঝে মাঝে আমি চিন্তা করি, তোমাকে না পেলে এই সুখ অথবা মিলনের এত আনন্দ এই জীবনে না পাওয়ার দলেই থেকে যেত না কি? পল্লবী আবেগে তাড়াতাড়ি জয়কে জড়িয়ে ধরে, জয়ের গালে, ঠোঁটে, কপালে চুম্বনে চুম্বনে মাতাল হয়ে পড়ে, মধ্যরাত্রি, পল্লবী আর জয় ক্রমশ শয্যায় আলিঙ্গনে রত, তোমাকে কত সুখ দেব আমি পল্লবী, এই বলে জয় পল্লবীকে কোলে নিয়ে চেপে ধরে জামা, ব্রেসিয়ার, প্যান্ট, তারপর প্যান্টি খুলে উন্মত্ত হয়ে সারা শরীরে, সুগৌল স্তনে, পেটে, নিতম্বে চুমু খেতে খেতে যৌনক্ষুধা মেটাতে থাকে, পল্লবী যৌন উত্তেজনায় যেন অস্হির হয়ে পড়ে, অস্ফুট স্বরে বলতে থাকে পল্লবী," জয় তুমি কত সুন্দর, তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচবো না, আমাকে করো, আরো তৃপ্তি দাও আমার প্রাণের প্রিয় জয়, জয়,"ভোরের আলো ফোটার আগেই জয় পল্লবীর সাথে সঙ্গম ক্রিয়া শুরু করে,, আঃ কি সুখ জয়, তুমি দিলে আমায়, রতিক্রিয়া দীর্ঘ সময় পর্যন্ত চলতে থাকে, সুখের সাগরে ভাসতে ভাসতে ভোরের আলো ফুটে ওঠে আকাশে, তখনও জয় আর পল্লবী ক্লান্ত , পরিশ্রান্ত সারারাতের সঙ্গম ক্রিয়ায়, ঘুমে আচ্ছন্ন,বেলা বাড়তে থাকে, এর ফলে দুইজনেই একটু বেলাতেই যে যার কাজে যায়, কাজের মধ্যে দুইজনেরই আবার চিন্তা করে, সেই রাত আবার কখন আসবে? বন্ধুর নিরাপদ সেই বড়ো পুরোনো দিনের খালি বাড়ি, জয় আর পল্লবী, সারা রাত প্রেমের রতিক্রিয়ার উন্মাদনা, সোহাগের সহবাসের পর শিথিল শরীর, দুইজনে মনের আর দেহের তৃপ্তির গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন, কেউ কিছু জানতেই পারলো না। পরের দিন আবার নিজের নিজের সংসারে আর কাজে ফিরে যাওয়া। আবার সেই অপেক্ষা সেই রাতের, নেশার ঘোরে পল্লবী আর জয়, মন আর দেহ যেন চাতক পাখীর মতো চেয়ে থাকে সেই বন্ধুর বাড়ির অন্ধকার রাতের জন্য। এই মিলন খেলা চলতেই থাকে দিনের পর দিন, রাতের পর রাত। রাত এলেই দুইজনেরই মনে পাগলের মতো অস্হিরতা তৈরী হয় বন্ধুর বাড়িতে কখন আবার মিলিত হবে, জয় পল্লবীর সুগৌল স্তনে হাত বুলাবে আর পল্লবীর মনে, শরীরে যৌন উত্তেজনার ঢেউ উঠবে, কামোত্তেজনায় পল্লবী জয়কে চেপে ধরবে, তারপর শুরু হবে আনন্দের সঙ্গম খেলা, রাতের পর রাত চলতেই থাকে, এই পরকীয়ার প্রেমের খেলা।
কিন্তু জয় আর পল্লবীর এই সুখের দিনের সামনে ঘোর অন্ধকার নেমে এলো এক আতঙ্কের রাতে, পল্লবীর আকস্মিক পথ দুর্ঘটনায় মারাত্মক ভাবে আঘাত পায়, হাসপাতালে সংকটজনক অবস্হায় তিন দিন পরেই মৃত্যু হয়।
আকস্মিক এই ঘটনায় জয় মানসিক ভাবে ভেঙে
পড়ে, কি করবে, এক অসীম শূন্যতা জয়ের মনে সর্বদা গ্রাস করতে থাকে, কোনো কিছুই আর ভালো লাগে না, কাজে যাওয়ার মন নেই, শুধুই পল্লবীর কথা আর ছবি মনে আসতে থাকে।
কিছুদিনের মধ্যে জয়ের মনে এক অলৌকিক বিকার দেখা দিতে থাকে, মাঝে মাঝে পল্লবীর কথা বিড়বিড় করে বকতে থাকে আপন মনে, রাত হলেই উপস্হিত হয় ঐ বন্ধুর বাড়িতে, একা, একা ঘুরে বেড়ায়, রাতের পর রাত, একদিন রাতে জয়ের সামনে এসে উপস্হিত হয় অশরীরী সুন্দরী পল্লবী," অস্ফুট স্বরে তাঁর ধ্বনি ঘরের ভিতর চার দেওয়ালে প্রতিধ্বনিত হতে থাকে, আমি এসেছি জয়, আমি আছি সর্বদা তোমার পাশে পাশে, জয় তোমার কামনার বহ্নিশিখা আমি শীতল করবো আমার অপূর্ণ কামনায় বরণ করে, জয় আজ এই সুরেলা গভীর রাতে আমাকে আলিঙ্গন বদ্ধ করবে না? আমার স্তনে মুখ লুকাবে না, আমাকে শয্যায় নিয়ে আমাকে যৌন তৃপ্তি দেবে না, জয়? তবে চুপ কেন জয়, চুপ কেন কথা বলো, কিছুতো বলো জয়, আমি আর তোমার নীরব চাহুনি সহ্য করতে পারছি না, আমি তো অল্প সময়ের জন্য এসেছি জয়, তবু এখনো কেন নীরব তুমি আমার প্রিয় জয়? তাহলে পারলে না জয়, আমি খুব নিরাশ মনে ফিরে চললাম আমার ঘরে, তুমি ভালো থেকো জয়, আমার প্রাণের প্রিয় অসহায় ছেলে বুবুনের প্রতি একটু খেয়াল করো, অনেক আক্ষেপ আর বেদনা নিয়ে চললাম জয়, সাবধানে থেকো, আবার আমি আসবো গভীর রাতে, এই ভালোবাসার স্মৃতিতে ভরা বাড়িতে," তারপরই ভেসে এলো দূর থেকে যেন চাপা, বিকট কান্নার ধ্বনি, আর কিছু নাই,শুধু হাহাকার আর হতাশা ঘরময়, জয় এতোক্ষণ ভয়ে আর ঘটনার আকস্মিকতায় সাময়িক স্তব্ধ হয়ে পড়েছিল ।
প্রতিদিনই জয় রাত হলেই এক অলৌকিক টানে বন্ধুর বাড়িতে উপস্হিত হতো অশরীরী পল্লবীর টানে, সে আসবে আমাকে নিতে, চিৎকার করে বলতে থাকে, পল্লবী আমি তোমার কাছে যেতে চাই, তোমাকে ছাড়া আমি আর বাঁচতে চাই না, বাঁচবো না, আমি আসছি পল্লবী তোমার কাছে।
আমি আর এই বিরহ জ্বালা সহ্য করতে পারছি না।
জয় সেই রাতেই নিঃশব্দে বন্ধুর বাড়িতে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতি হলো। সব পরকীয়া প্রেমের জ্বালাই শেষ হয়ে গেল।
ডাঃ সত্যব্রত মজুমদার---
শব্দ সংখ্যা মোট :-১৫০১

