অসমাপ্ত প্রেমের কাহিনী
অসমাপ্ত প্রেমের কাহিনী
_অনেকক্ষন অপেক্ষা করালাম তাইনা,,,
কি করবো বলো,,,
বাবা বসে ছিলো বাসায়....বেরই হতে পারছিলাম না,,,,,,
_না ঠিক আছে,,,
_কিচ্ছু ঠিক নেই.....
তুমি তো দেখছি ঘেমে গেছো,,,,,
খেয়েছো কিছু???
_না...টিউশন থেকে তো সরাসরি এখানে আসলাম,,,,,,,,
_জানতাম......এটা নাও,,,,
_কি এটা???
_তোমার জন্য খিচুড়ি রান্না করে এনেছি,,,,
বাসায় গিয়ে গরম গরম খেয়ে নেবে,,,,,
_আচ্ছা,,,,
_চাকরীর কিছু হলো????
বাবা বলছিলো আজও নাকি কোন পাত্র দেখতে আসবে,,,,
_না... এখনো কোন খোঁজ পাইনি,,,তবে হয়ে যাবে
তুমি টেনশন করো না....ঠিক হয়ে যাবে,,,,,
_একটু তারাতাড়ি দেখো হ্যা,,,,
বাবাকে তো চিনই....কখন কি করে ফেলে,,,,
আমি কিন্তু তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না,,,
_তুমি এতোটাই ভালোবাসো আমাকে????
_হ্যা....এতোটাই,,,,
আচ্ছা....আমি এখন যাই...
কেউ দেখে ফেললে আমার সমস্যা হবে,,,,
রাতে কল দিও,,,,,
_আচ্ছা.. বাই,,,,
এটা বলে শিহাব ও তিশা ওদের বাসার দিকে রওনা হলো,,,,,,
রাতে শিহাব তিশাকে কল দিলো,,,,,,
_হ্যালো.......
_কি করছো???
_কিছু না...বারান্দায় দাড়িয়ে অাছি,,,,
_খিচুড়ি খেয়েছো???
_হ্যা খেয়েছি,,,,,
_মজা হয়েছে????
_হুমমম....অনেক মজা হয়েছে,,,,
_তোমার কি মন খারাপ কোন কারনে বলোতো???????
_শান্তি পাচ্ছি না...
চারিদিক থেকে এত এত চাপ আর আমি নিতে পারছি না,,,,,,,
_সব ঠিক হয়ে যাবে দেখো,,,,,
এর মধ্যেই হঠাৎ তিশার বাবা তিশার রুমে চলে আসে,,,,,
_এত রাতে কার সাথে কথা বলছিস তুই????
তিশা কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,,,,,
_বাবা এক বান্ধবীর সাথে,,,,
_ বান্ধবী???? দে ফোন দে,,,,,
তিশার বাবা তিশার থেকে ফোন কেড়ে নিয়ে চলে যায়,,,,,
পরদিন সকালে,,,,,
_তোর এত বড় সাহস....তুই বেকার ছেলের সাথে প্রেম করিস আবার সেটা আমাকে বলিস????
ঐ ছেলে তোকে এখন বিয়ে করে নিয়ে রাখতে পারবে???
খাওয়াতে পারবে????
ঐ ছেলেকে ফোন দে,,,
তারপর তিশা শিহাবকে কল দেয়,,,,,,,
_হ্যালো তিশা......গতকাল রাতে কি হয়েছিলো???????
আমি তো টেনশনে পড়ে গিয়েছি,,,,,
_আমি তিশা নই,,,,
তিশার বাবা,,,,
_জি... আসসালামুলাইকুম আংকেল,,,,,
_ওয়ালাইকুম আসসালাম,,,,
সোজা কথা বলি,,,,,
সাতদিন সময় পাবা.......সাতদিনের মধ্যে চাকরী জোগাড় করে আমার মেয়ের জন্য বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসবা,,,,,,,
শিহাব কথাগুলো শুনে ফোনের ওপাশ থেকে নীরব হয়ে যায়,,,,,
তারপর আবারো তিশার বাবা বলে,,,,
_সাতদিন.....সাতদিন কথাটা যেন মনে থাকে,,,,
নইলে অন্য কোথাও বিয়ে দিয়ে দেবো আমার মেয়ের,,,,,
পাত্র রেডি আছে,,,,,
এটা বলার সাথে সাথেই তিশার বাবা ফোনটা রেখে দেয়,,,,,,
ফোন নিয়ে নেওয়ার পর থেকে তিশা প্রতিদিন কোন না কোন ভাবে বের হয়ে বান্ধবীদের ফোন দিয়ে শিহাবের সাথে,,,
আর ওর সাথে দেখা হলে একটাই কথা বলতো তিশা,,,
চাকরীর কি খবর......চাকরীর কি খবর,,,,
পাঁচদিন এভাবে যাওয়ার পর তিশা লুকিয়ে লুকিয়ে একটা ফোন কিনে শিহাবকে কল করলো,,,,,
_হ্যালো,,,
_আর মাত্র দুইটা দিন বাকি,,,,
আমি কিন্তু তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না বলে দিলাম,,,
আর যে করেই হোক একটা চাকরী ম্যানেজ করো না প্লিজ,,,,
এ কথা শুনে শিহাব বিরক্ত হয়ে ফোন কেটে দেয় আর ফোন অফ করে দেয়,,,
আর প্রতিজ্ঞা করে চাকরী পাওয়ার পরই সে ফোন অন করবে,,,,
আর ঐ দিকে তিশা ফোনে ট্রাই করতে থাকে বারবার,,,,
অবশেষে শিহাব চাকরী পেয়ে যায়
কিন্তু ওদের সময় বেঁধে দেওয়া ছিলো মাত্র সাতদিন,,,,,
কিন্তু শিহাব চাকরীটা পায় নয় দিন পর,,,
চাকরী পাওয়ার সাথে সাথে সে তিশাকে ফোন দেয় কিন্তু তিশার ফোন বন্ধ পায়,,,,
তাই সে বাধ্য হয়ে কোন ভাবে তিশার বাবার নাম্বার জোগাড় করে তারপর তিশার বাবাকে কল দেয়,,,,,
_হ্যালো আসসালামুআলাইকুম আংকেল,,,
আসলে তিশার ফোন বন্ধ পেয়ে আপনাকে কল করলাম,,,,
আমি চাকরীটা পেয়ে গেছি,,,
২০ হাজার টাকা বেতন.....তিশাকে একটু জানাবেন৷
ও খুব টেনসনে আছে,,,,,
ফোনের ওপাশ থেকে কান্নাভেজা কন্ঠ ভেসে আসে শিহাবের কানে,,,,,
_ওরে বাবারে,,, তিশা আর নেই,,,,
বিয়ের দিন আমার কলিজার টুকরাটা আত্নহত্যা করেছে,,,,
সব দোষ আমার,,,, জোর করে আমি আমার মেয়েটাকে বিয়ে দিতে গেছিলাম,,,,,
শিহাব নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না,,,
এসব কি শুনছে ও,,,
পায়ের নিচ থেকে ধীরে ধীরে মাটি সরে যাচ্ছে,,,,,৷
_এগুলো কি বলছেন আংকেল,,,,,
না আংকেল এটা হতে পারে না,,, কি বলছেন কি এসব,,,,
না আংকেল এগুলো হতে পারে না,,,,,
তিশা আমাকে ছেড়ে যেতে পারে না,,,,,,,,
কখনোই না,
এরপর ছেলেটি ধপাস করে মাটির ওপর হাঁটুগেড়ে বসে পড়ে,,,
আর কিছু বলতে পারে না,,,,,,
শিহাব আকাশের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে কাঁদতে থাকে,,,,,,,,
চোখ দিয়ে ঝরতে থাকে অথৈ নোনা জলের ঝরণা,,,,,,,,,
আকাশ টা ঘন কালো মেঘে ছেয়ে যায়,,,,
ঝরতে থাকে অঝোর ধারায় বৃষ্টি,,,
বৃষ্টির জলের সাথে মিশে যায় শিহাবের চোখের জল,,,,,,,
এ কান্না যেন আর কিছুতেই থামার নয়,,,,,
এ যেন অসমাপ্ত ভালোবাসার কান্না,,,,,,
এভাবেই গল্পটাকে অসমাপ্ত রেখে শিহাবের জীবন থেকে হারিয়ে যায় তিশা,,,,,
তিশাকে যদি ওর বাবা জোর করে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা না করতো,,,
তিশা যদি আর দুইটা দিন অপেক্ষা করতো আর পর পরিবার যদি ধৈর্য ধরতো তাইলে ওদের প্রেমের কাহিনী অসমাপ্ত থাকতো না,,,,,,,,
কাউকে অত কষ্ট পেতে হতো না,,,
(সুইসাইড কোন সলূশন নয়,,,
বরং সুুইসাইড আরো সমস্যা বাড়ায়,,,
তাই বলি সবাইকে,,, সমস্যা থেকে বাঁচতে নয়,,
সমস্যার সাথে লড়াই করতে শেখো,,,,,
তবেই তুমি জিতবে,,,,
তখন কোন প্রেমের কাহিনী আর অসমাপ্ত থাকবে না,,)

