অসমাপ্ত প্রেমের কাহিনী ২
অসমাপ্ত প্রেমের কাহিনী ২
পাগলীটা আমাকে জড়িয়ে ধরে খুব কান্না করছিলো আর বলছিলো,
_আমার আর কিচ্ছু চাই না
শুধু একটু ভালোবাসো তাইলেই চলবে
_আচ্ছা ঠিক আছে..অনেক ভালোবাসবো তোমায়,
এখন বাসায় যাও, অনেক রাত হয়ে এলো
_তাহলে একবার ভালোবাসি বলো
_হ্যা...অনেক অনেক ভালোবাসি তোমায়
_তাহলে আমার কপালে একটা চুমু দাও
আমি ওর কপালে ছোট্ট করে একটা চুমু একে দিলাম।
_হইছে??? এবার বাসায় যাও।
_আচ্ছা যাচ্ছি,,, আর আমার ফোনটা আজ রাতের জন্য নিয়ে যাও।
কালকে তোমাকে একটা নতুন ফোন কিনে দেবো।
যাও কোথাও দেরী করবে না কিন্তু।
সোজা মেসে চলে যাবে।
বেশি রাতও জাগবে না।
_আচ্ছা ঠিক আছে।
তাকে বিদায় দিয়ে আবারো রওনা হলাম আমার ঠিকানায়।
পরের দিন অনেকবার মানা করা পরেও ও আমাকে একটা ফোন কিনে দিলো।
সাথে অনেক জায়গায় ঘুরলো।
অহহহ হ্যা পাগলীটার নামটাই তো বলা হলো না
ওর নাম নীলিমা,,
আমার ভালোবাসার পরম সঙ্গী
আর আমার নাম অয়ন,,
আমাদের দুই বছর হলো রিলেশন চলছে।
দুজন দুজনকে পাগলের মত করে ভালোবাসি।
নীলিমা কে সত্যি এত ভালোবাসি যে ওকে ছেড়ে থাকার কথা ভাবতেও পারি না।
পাগলীটা যখন আমার সাথে পার্কে বসে আইসক্রিম খাচ্ছিলো তখন ওকে খুব খুশি দেখাচ্ছিলো।
মনে মনে ভাবলাম এতক্ষন হয়তো অন্য প্রেমিকারা রেস্টুরেন্টের দামি খাবার খাচ্ছে।
আসলেই মেয়েটা অন্যরকম।
আমার প্রতি ওর তেমন কোন চাওয়া পাওয়া নেই।
একটাই চাওয়া ওকে অনেক ভালোবাসতে হবে।
হ্যা আমি ওকে নিজের জীবনের থেকেও বেশি ভালোবাসি।
রাত ১১ঃ৫৫ বাজে।
তখন হঠাৎ করেই নীলিমার কল আসলো।
_খেয়েছো???
_হ্যা..খেয়েছি..তুমি খেয়েছো তো??
_হুমমম খেয়েছি।
আজ একটু আমার বাড়ির নিচে আসবে???
তোমাকে না দেখতে খুবই ইচ্ছে করছে
_আচ্ছা..একটু ওয়েট করো আসতেছি আমি।
মহারানীর হকুম আর কি করবো।
যেতে তো হবেই।
ওর বাড়ির সামনে গিয়ে দেখি পাগলী টা বেলকনিতে দাড়িয়ে আছে।
আমাকে দেখে মুচকি হাসি দিলো
তারপর বেলকনি থেকেই ধীর স্বরে বললো,,
_রাগ করেছো??
_দূররর পাগলী রাগ কেন করবো বলোতো?
এতে রাগ করার কি হলো শুনি??
_কি করবো বলো???
তোমাকে দেখতে ইচ্ছে হচ্ছিলো..আমি কি করবো?
_আরে এমন ভাবে বলছো কেন??
আমি তো এসে গেছি তোমার সামনে
_হুমমমম☺️
আমার তো ঘুমই আসছিলো না। তোমাকে দেখলাম এবার ঘুম আসবে।
_ঠিক তো?? ঘুম আসবে তো??
_হুমমম...খুব ঘুম হবে।
ঠিক আছে সোনা, এবার তুমি যাও আর হ্যা গিয়েই ঘুমিয়ে পড়বে।
বেশি রাত জাগবে না কিন্তু বলে দিলাম।
_আচ্ছা মহারানী.... শুভ রাত্রি।
_শুভরাত্রি মহারাজ
পরের দিন বিকেল বেলা,
সেদিন ছিলো শুক্রবার,,
একদিন নিলীমা বললো বিকেল বেলা একসাথে দীঘির পাড়ে গিয়ে বসে গল্প করবে।
যা ভাবা সেই কাজ।
দুজন একসাথে পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে চলে এলাম দিঘীর পাড়ে।
বসে বসে বাদাম খাচ্ছিলাম দুজন।
নিলীমা হঠাৎ আমার কাঁধে মাথা রেখে বললো,
_আমি যদি না থাকি কোন সময় তুমি আমাকে ছেড়ে থাকতে পারবে তো???
আমি ওর কথা শুনে চমকে গিয়ে বললাম,
_হঠাৎ এমন কথা কেন বলছো তুমি বলোতো???
_না এমনি বললাম,,
বলো না,,প্লিজ পারবে কি থাকতে??
_উত্তর টা শুনতে চাও তাহলে??
_হুমমম শুনতে চাই বলো।
_তাহলে শোনো তোমাকে ছাড়া আমার পুরো দুনিয়া অন্ধকার বুঝতে পারছো,,
তোমাকে ছাড়া আমি কিচ্ছু ভাবতে পারি না।
আর তুমি বলছো তোমাকে ছাড়া থাকতে,,
এটা অসম্ভব বুঝলে।
তখন নিলীমা আমার এ কথাগুলো শুনে আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো।
আমি ওর কান্না দেখে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,,
_এই পাগলী কাঁদছো কেন???
এতে কান্নার কি হলো???
_আসলে এটা আমার আনন্দের কান্না,,
আমাকে তুমি এতোটা ভালোবাসো
_কেন?? কোন সন্দেহ আছে নাকি ভালোবাসি কি বাসি না??
_ না না কোন সন্দেহ নেই,,,,
জাস্ট তোমার মুখ থেকে এ উত্তর টা আশা করছিলাম।
_পাগলী একটা???
এই বলে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম নিলীমাকে।
এভাবেই কাটছিলো আমাদের ভালোবাসার দিনগুলো।
অনেক সুখী ছিলাম আমরা।
হঠাৎ একদিন নীলিমা অসুস্থ হয়ে পড়লো।
আজ তিনদিন হলো ওর সাথে দেখাও হয়নি আবার কোন কথাও হয়নি।
ফোন দিলে ওর মা রিসিভ করতো।
আমাদের সম্পর্কের কথা ওর মা বাবা জানতো না।
নীলিমা হাসপাতালে ছিলো।
ওর এক বান্ধবীর সহযোগিতায় তিনদিন পর ওকে দেখার সৌভাগ্য হলো।
কিন্তু কথা বলার ভাগ্যটুকু হয়নি।
ও তখন ঘুমিয়ে ছিলো।
জানালার বাইরে থেকে ওকে দেখলাম।
পাগলীটাকে দেখে বুকের মধ্যে কেমন যেন মোচড় দিয়ে উঠলো।
চোখ মুখ কালো হয়ে গেছে।
কেমন যেন শুকিয়ে গেছে মেয়েটা।
খুব কষ্ট লাগছিলো ওকে দেখে।
ইচ্ছে করছিলো ওর কপালে আলতো করে একটা চুমো দিতে।
ইচ্ছে করছিলো ওকে জড়িয়ে ধরে আদর করে শান্তনা দিতে।
সব ঠিক হয়ে যাবে।
কিন্তু ভেতরে যাওয়ার সাহস পাইনি।
ওর মা ছিলো।
কি পরিচয়ে ওকে দেখতে ভেতরে যাবো।
কিন্তু সত্যি খুবই ইচ্ছে হচ্ছিলো একটিবার ওকে ভেতর গিয়ে দেখার।
তারপর ওর সেই বান্ধবীর সাহায্য নিলাম।
ওর বান্ধবী ভেতরে গিয়ে ওর মাকে কোন একটা বাহানায় বের করে বাইরে নিয়ে আসলো।
তারপর আমি কেবিনের ভেতর ঢুকে গেলাম।
গিয়ে ওর পাশে গিয়ে একটু বসলাম।
হাতে সময় বেশি ছিলো না।
ওর মুখে হাত বুলিয়ে দিলাম একবার।
তখনও ও ঘুমিয়ে।
ওকে জাগালাম না, জাগালেই পাগলীটা পাগলামি শুরু করবে।
কিছুক্ষন ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম।
ওর শুকনো মুখটাকে দেখে কেমন যেন অসহনীয় কষ্ট হচ্ছিলো।
বেশি দেরী না করে ওর কপালে একটা আলতো করে চুমু দিলাম।
ও একটু নড়ে উঠলো তখনি আর দেরী না করে কেবিন থেকে বের হয়ে আসলাম।
ওকে কাছে থেকে দেখতে পেয়ে একটু ভালো লাগছিলো মনের মধ্যে।
আবার খুব অসহনীয় কষ্ট হচ্ছিলো ওর অবস্থা দেখে।
ওর বান্ধবীকে জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে ওর কিন্তু সে কথাটা এড়িয়ে গেলো।
কিছু বললো না।
অনেক রিকোয়েস্ট করলাম বলতে কিন্তু কিচ্ছু বললো না।
আমিও আর জোর করলাম না।
ভাবলাম পরে জেনে নেবো ও সুস্থ হলে।
ডাক্তার কে যে জিজ্ঞেস করবো তা করারও সুযোগ পেলাম না।
তার আগেই ডাক্তার কেবিনের ভেতর চলে গেলো নীলিমার চেকআপ করতে।
তারপর আর কি করা,,
ওর বান্ধবীকে ধন্যবাদ জানিয়ে ওকে জানালার বাইরে থেকে আবারো এক নজর দেখে মেসে চলে আসলাম।
ওকে দেখার পর থেকে কেমন যেন অস্থির অস্থির লাগছিলো।
মনে হলো কি যেন হারিয়ে ফেলছি আমি।
রাতে গলা দিয়ে কিছু নামলো না।
শুয়ে পড়লাম।
অনেক রাত পাড় হয়ে গেলো কিন্তু দু চোখের পাতা এক করতে পারছি না।
খুব টেনশন হচ্ছে ওর জন্য।
সারারাত আল্লাহকে ডাকলাম।
তাহাজ্জুদ নামাজে বসে পড়লাম, নামাজ শেষ করে আল্লাহকে ডাকতে লাগলাম।
দু হাত তুলে আল্লাহ তায়ালা কে ফরিয়াদ জানালাম,,,
_হে আল্লাহ....আমার নীলিমা কে তুমি যেকোনো ভাবে সুস্থ করে দাও।
ওকে পাওয়া আমার শত জনমের ভাগ্য।
ওর মত করে কেউ আর আমাকে ভালোবাসবে না আল্লাহ।
ও আমার কাছ থেকে হারিয়ে গেলে যে আমি নিজেকেই হারিয়ে ফেলবো আল্লাহ।
প্লিজ আল্লাহ...আমার সারাজীবনের ভালো কাজের বিনিময়ে ওকে তুমি সুস্থ করে দাও।
ওকে ছাড়া সত্যি আমি বাঁচবো না।
নামাজ পড়তে পড়তে কখন যে ঘুমিয়ে গেছিলাম টেরই পায়নি।
ভোর রাতে ফজরের আযানের আওয়াজ কানে আমার ঘুন ভাঙলো।
ফজরের নামাজ শেষ করে একটু বিছানায় নিজেকে এলিয়ে দিলাম।
তখনও ঘুম আসছিলো না।
ভোর বেলার দিকে চোখের পাতাগুলো ভারি হয়ে আসলো।
সকাল সাতটায় ঘুম থেকে উঠলাম।
তারাতাড়ি করে ফ্রেশ হয়ে নিলাম।
তারপর না খেয়েই হাসপাতালের দিকে রওনা হলাম।
ভোর বেলার দিকে চোখের পাতাগুলো ভারি হয়ে আসলো।
সকাল সাতটায় ঘুম থেকে উঠলাম।
তারাতাড়ি করে ফ্রেশ হয়ে নিলাম।
তারপর না খেয়েই হাসপাতালের দিকে রওনা হলাম।
হাসপাতাল পৌঁছে আবার সেই জানালার পাশে দাড়ালাম।
কিন্তু নীলিমাকে কোথাও দেখতে পেলাম না।
বেডটা খালি পড়েছিলো।
বুকটা ধকধক করছিলো। সারা হাসপাতাল পাগলীটাকে খুঁজলাম কিন্তু কোন কেবিনে দেখতে পেলাম না।
তারপর হঠাৎ পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখি ওর সেই বান্ধবী দাড়িয়ে আছে অবসন্ন মনে।
তারপর ওর হাতের দিকে খেয়াল করলাম একটা কাগজ।
আমি তার দিকে এগিয়ে যেতেই আমি কিছু বলবো তা বলার আগেই সে বললো,
_ভাইয়া..নীলিমা এই চিঠিটা আপনাকে দিতে বলছিলো।
তারপর চিঠিটা হাতে দিয়ে কোনকিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ওর বান্ধবী চোখ মুছতে মুছতে বেরিয়ে গেলো হসপিটাল থেকে।
কিছু বুঝতে পারলাম না,
হঠাৎ ও কাঁদতে কাঁদতে কেন বেরিয়ে গেলো??
তারপর আমি চিঠিটার ভাজ খুললাম।
চিঠির লেখার শুরু তেই সুন্দর করে রঙিন কলমের কালিতে লেখা রয়েছে,
তোমাকে খুব ভালোবাসি অয়ন।
তারপর থেকে চিঠির পড়া শুরু করলাম।
প্রিয় অয়ন,
তুমি তো জানো আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি।
তুমিও আমাকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসো।
বিগত দুই বছরে আমাদের মধ্যে ভালোবাসার কোন কমতি ছিলো না।
দুজন দুজনকে পাগলের মত সবসময় ভালোবেসে গেছি।
কিন্তু কথায় আছে না সবার কপালে সুখ সয় না।
হয়তো আমার কপালেও তাই হলো।
তোমাকে এতটা ভালোবাসার পরেও তোমাকে আপন করতে পারলাম না।
তখন ওর এই কথা পড়ে বুকের বামপাশে অসহনীয় ব্যাথা শুরু হলো।
কেমন যেন লাগছিলো শরীরের মধ্যে।
তবুও আবারো ওখান থেকে পড়া শুরু করলাম।
তোমাকে আপন করে পাওয়ার ভাগ্যটা হয়তো আমার নেই।
আসলে আমি ব্লাড ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত।
তাও ছয় মাস হয়ে গেছে।
কিন্তু তোমাকে বলিনি কারন তুমি এটা শুনলে কিছুতেই সহ্য করতে পারতে না।
তোমার থেকে এই ছয় মাস এ ব্যাপারটা লুকিয়ে ছিলাম।
কিছু মনে করো না সোনা।
প্লিজ রাগ করো না।
অনেক চিকিৎসা হয়েছে কিন্তু শেষ পর্যন্ত সারানো যায় নি।
তখন আমি নিশ্চিত হয়ে গেছিলাম আমি আর বাঁচবো না হয়তো।
এই চিঠিটা তিনদিন আগে লিখে ওর হাতে দিয়েছিলাম যাতে আমি চলে যাওয়ার পর যাতে চিঠি টা তোমার হাতে দেয়।
আমিই ওকে সবকিছু বলতে বারন করছিলাম তাই ও আমার অসুস্থতার ব্যাপারে কিচ্ছু বলে নি।
তুমি যে হসপিটালে এসে আমার কেবিনে আমার পাশে বসেছিলে তারপর আমার মুখে হাত বুলিয়ে দিলে, কপালে চুমো দিলে সব বুঝতে পারছি আমি।
তখন জাগ্রত ই ছিলাম কিন্তু চোখ খুলে সাহস পাইনি।
কারন তোমার চোখের দিকে যদি তখন তাকাতাম তখন তোমার চোখে আমার জন্য কষ্ট কণ গুলো দেখতে পেতাম।
তাহলে আমার শেষ বিদায়টা খুব কষ্টের হতো।
তোমার চোখে কষ্ট দেখতে পেলে আমি চলে আসার সময় ভিষন কষ্ট হতো।
কিন্তু এখন চলে গেলাম আমি অন্তহীন জীবনের পথে।
মনে আছে সে শুক্রবারের কথা,
দিঘীর পাড়ে বসে তোমাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম আমাকে ছাড়া থাকতে পারবে কিনা,
তখন তোমার দেয়া সে উত্তর টা খুব মনে পড়ছে আমার।
খুব কষ্ট হচ্ছে সেটা ভেবে
তোমার সাথে একসাথে বাঁচতে পারলাম না এ ব্যাথাটাও রয়ে গেলো।
জানি তুমি কষ্ট পাচ্ছো এখন খুব কিন্তু সেটা নিজ চোখে দেখতে তো হচ্ছে না।
নিজ চোখে তোমার কষ্ট দেখতে পেলে মরেও শান্তি পেতাম না আমি।
তোমাকে ছেড়ে চলে আসতে ভিষন ভিষন কষ্ট হচ্ছিলো জানো তো কিন্তু কি করা বলো।
আল্লাহ তায়ালা এই টুকো সময়ের জন্য আমাকে দুনিয়াতে পাঠিয়েছিলো।
তুমি একদম কাঁদবে না কিন্তু বলে দিলাম।
আমাকে হাসিমুখে বিদায় না জানালে মরেও কিন্তু শান্তি পাবো বলো।
প্লিজ কান্না করবে না একদম।
তোমাকে পাওয়া আমার ভাগ্যতে নেই কিন্তু এর জন্য কষ্ট পাবে না বলে দিলাম।
আমি সবসময় তোমার পাশে থাকবো তোমার ভালোবাসা হয়ে।
সবসময় থাকবো তোমার মনের মধ্যে।
দূর আকাশের তারা হয়ে সবসময় তোমাকে দেখবো আর ইশারায় কথা বলবো।
তারা হয়ে সবসময় মন ভরে তোমাকে দেখবো।
জানি তুমি এসব কথা বলার পরেও কষ্ট পাবে খুব কান্না ও করবে কিন্তু একদম ভেঙে পড়বে না কিন্তু বলে দিলাম।
না হয় একটু খানি হাসি দিয়ে বিদায় জানাও আমাকে।
ভালো থাকার চেষ্টা করো অয়ন আমাকে ছাড়া।
চিন্তা করো না সোনা সবসময় তোমার পাশে আছি এবং থাকবো।
তোমার মনের গভীরে লুকিয়ে থাকবো।
ভালো থেকো অয়ন
আর পারলে ক্ষমা করে দিও তোমার থেকে আমার মারন অসুখের কথা লুকিয়েছিলাম বলে
তোমাকে না পাওয়ার কষ্ট টা রয়ে যাবে আমার মনের মধ্যে।
তোমাকে না পাওয়ার কষ্ট টা বুকে নিয়ে বিদায় নিলাম এ পৃথিবী থেকে
তুমিও পারলে নতুন করে জীবন শুরু করো অন্য কারো সাথে।
আমাকে না পাওয়ার কষ্ট টা ভুলে পারলে নতুন কাউকে জীবন সাথী করে ভালো থাকার চেষ্টা করো,
ভালো থাকবে সবসময়
শেষে একটা কথাই বলতে চাই,,,
ভালোবাসি অয়ন তোমায়,, খুব খুব ভালোবাসি।
বিদায়,,,,,
ইতি তোমার হতভাগিনী
নীলিমা।
ওর চিঠিটা পড়ার সময় চোখের পানিতে চিঠিটা অর্ধেক ভিজে গেছে।
নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারলাম না।
আমি মনে হয় একটু আর দাড়িয়ে থাকতে পারছি না।
মাথা ঘুরছে, চোখের সামনে সবকিছু যেন ঝাপসা হয়ে আসছে।
কোনরকমে বাইরে চলে আসলাম।
খুব জোরে বৃষ্টি হচ্ছিলো তখন, আকাশটা মেঘে ঢেকে গেছে।
রাস্তায় হাটুগেড়ে বেস চিৎকার করে কাঁদতে লাগলাম আর চিৎকার করে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলাম,,
_আল্লাহ......আল্লাহ....ওও আল্লাহ
এটা কেন করলে আমার সাথে তুমি?? কেন? কেন?
কেন?
শুধু তো একটা জিনিসই চেয়েছিলাম নীলিমা কে সুস্থ করে দাও।
আমার ভালোবাসাকে আমার কাছে সুস্থ ভাবে ফিরিয়ে দাও।
বলেছিলাম ও হারিয়ে গেলে আমি নিজেকে হারিয়ে ফেলবো।
তবে কেন তুমি আমার নীলিমা কে আমার থেকে কেড়ে নিলে বলোতো???
কেন??? কেন?? কেন??
উত্তর দাও আমাকে,,
তুমি আমাকে এক্ষুনি তুলে নাও,,আমিও মরে যেতে চাই, কি করে বাঁচবো এ দুনিয়ায় নীলিমা কে ছাড়া,
কিছুতেই পারবো না আল্লাহ,, কিছুতেই পারবো না।
আমি পারবো না অন্য কাউকে নীলিমার জায়গা দিতে।
কখোনই না।
আল্লাহ তুমি কেন বুঝলে না নীলিমা আমার একমাত্র বেচে থাকার ভরসা ছিলো।
তাকেও তুমি কেড়ে নিলে??
এটা ঠিক করলে না তুমি একদমি ঠিক করলে না।
আমার বেদনার আর্তনাদ ও কান্নায় যেন প্রকৃতিটাও হয়তো কষ্ট পাচ্ছে।
সব কেমন ঐ দুর আকাশের মেঘ ভেঙে আসা বৃষ্টির ফোটায় মিশে হারিয়ে যাচ্ছে বেদনার অতল গভীরে।
পুরো শরীর কেমন যেন অসার হয়ে যাচ্ছে আমার।
মনে হচ্ছে আমার পায়ের নিচ থেকে সমস্ত মাটি সরে যাচ্ছে।
সবকিছু যেন চোখের সামনে ফ্যাকাশে হতে লাগলো।
এভাবে হাটুগেড়ে বসে বসে অঝোরে কাঁদছিলাম
চোখের পানিগুলো বৃষ্টির পানির ফোঁটার সাথে মিশে বিলীন হয়ে যাচ্ছিলো বৃষ্টির ধারায়।
এমনটা তো না হলেও পারতো,,
কেন হলো এটা আমার সাথে?
আবারো মেঘলা আকাশের দিকে তাকিয়ে জোরে জোরে চিৎকার করে বলতে লাগলাম,,
নিলীমা.......ঐ নিলীমা,,
তোমাকে খুব ভালোবাসি গো,, খুব খুব ভালোবাসি।
কেন সার্থপরের মত আমাকে একা ফেলে চলে গেলে বলোতো,,
কেন? কেন? কেন?
চোখের জল ধারা যেন আজ থামতেই চাইছে না।
বৃষ্টির জলের সাথে চোখের জল মিশে একাকার হয়ে তৈরি হয়েছে এক বেদনার নদী।
সে নদীতে জলধারা বয়ে যাচ্ছে অনবরত।
সে জল আকাশ থেকে নয় আসছে আমার চোখ থেকে।
গাল বেয়ে ঝরনা নেমে নদীর ধারা অনবরত বয়ে চলেছে।
মনে হচ্ছিলো এখনি যদি মরে যেতে পারতাম এই চোখের জলধারার নদীতে ডুবে,
কতটা ভালো হতো।
তাহলে দুজনে একসাথে চলে যেতে পারতাম।
তাও তো হলো না।
কিচ্ছু ভালো লাগছে না।
এভাবে অনেক সময় বসে থাকার পর ধীরে ধীরে উঠে অবসন্ন শরীরটা নিয়ে এগোতে লাগলাম মেসের দিকে।
মেসে এসে ভিজে শরীরটা নিয়ে ধপাস করে শুয়ে পড়লাম খাটের ওপর।
মনে হচ্ছিল এক্ষুনি মনে হয় মরে গেলে খুব ভালো হতো।
তারপর সারাদিন কেমন ছিলাম মনে নেই।
পাগলের মতো কেঁদেছি সারাদিন।
আমার বুদ্ধির পর থেকে আমি যা চেয়েছি তা আমি কখনোই পাইনি।
ভেবেছিলাম সবকিছুর বিনিময়ে আল্লাহ হয়তো আমাকে নীলিমা কে দিয়েছে।
আমার আর কিছু চাই না।
কিন্তু আল্লাহ যে এভাবে আমাকে নিঃস করে নীলিমা কেও কেড়ে নেবে তা কখনোই ভাবিনি।
নীলিমার মারা যাওয়াটা আমি একদম মেনে নিতে পারিনি।
বিকেলে নীলিমার জানাযা হবে।
জানাযায় গেলাম কিন্তু ওকে শেষ বারের মতো দু চোখ ভরে শেষ দেখার সুযোগ টাও আল্লাহ করে দিলো না।
একটিবারের জন্য নীলিমার মুখটা দেখতে পেলাম না হাজারো অচেনা লোকজনের ভীড়ে।
কবর হয়ে গেলো আমার ভালোবাসার।
চিরকালের জন্য ঘুমিয়ে গেলো আমার নীলিমা।
যে ঘুম আর কখনো ভাঙার নয়,,
এক অন্তহীন ঘুমের রাজ্য চলে গেলো সে।
ওর কবরে তিন মুঠো মাটি দিয়ে সেই পরিচিত জায়গা দীঘির পাড়ে গেলাম।
এখানেই আমরা প্রতি শুক্রবার বসে গল্প করতাম।
গত শুক্রবার ও আমরা এখানে বসে সময় কাটিয়েছি।
গত শুক্রবারে নিলীমা জিজ্ঞেস করেছিলো আমাকে ছেড়ে থাকতে পারবে কি না
তার মানে কথাটা এজন্যই বলেছিলো কারন সে বেশিদিন বাঁচবে না আর
সেই যে বাদাম খেয়েছিলাম বাদামের খোসাগুলো এখনো পড়ে আছে।
বাদামের প্রতিটি খোসায় ছিলো নীলিমার হাতের স্পর্শ।
আবারো খুব কান্না পাচ্ছিলো আমার খুব।
হাতে কয়েকটা বাদামের খোসা নিয়ে মেসের পথে রওনা হলাম।
আজকে কেন জানি চেনা রাস্তা গুলো অচেনা মনে হচ্ছে।
কিছুক্ষন হাঁটার পর আর ধাপ ফেলতে পারছি না।
খুবই কষ্ট করে হেঁটে চলেছি।
হাঁটছি আর পাগলীটার স্মৃতি গুলো মনে করে কাঁদছি।
বুকের বামপাশে অজানা এক তীব্র ব্যাথা জেগে উঠেছে।
সন্ধ্যা বেলা মেসের ছাদে উঠে আকাশের দিকে মুখ করে নিজেকে মৃত মানুষের মত এলিয়ে দিলাম।
চলে গেলাম ভাবনার জগতে।
আজকের পর থেকে আমাকে মাঝরাতে কেউ ফোন দিয়ে বলবে না,,
একটু আমার বাসার নিচে আসবে,
তোমাকে দেখতে খুব ইচ্ছে করছে।
সারারাত জেগে থাকলেও কেউ বলবে না তারাতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ো কিন্তু।
আর কেউ বলবে না,, আমার কপালে একটা চুৃমো দেবে?
কোনদিন হয়তো আর কারো মুখে শুনতে পাবো না আমাকে একটু জড়িয়ে ধরবে?
কেউ বলবে না আর কেউ বলবে না।
শরীরের কোন অঙ্গই যেন কাজ করছে না।
হয়তো তারাও আজ নীলিমার জন্য শোকাহত।
নীলিমা চিঠিতে বলে গিয়েছিলো সে নাকি আকাশের তারা হয়ে আমার সাথে ইশারায় কথা বলবে।
তখন আমি মিটিমিটি চোখে আকাশের দিকে তাকালাম।
দেখি আকাশে কোটি তারার মেলা।
আমি সেই লক্ষ্য কোটি তারার মাঝে পাগলীটাকে খুঁজতে থাকি।
হয়তো সে তারা হয়ে আমাকে দেখছে আমি খুঁজে পাচ্ছি না।
অপলক নয়নে দূর আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
দেখি পাগলীটা দেখা দেয় কিনা।
পাগলীটাকে খুঁজছি ভেজা নয়নটা দিয়ে,,
গাল বেয়ে নেমে পড়ছে বেদনার নোনা জল।
হারিয়ে যেতে মন চাইছে ঐ লক্ষ কোটি তারার মাঝে।
যেখানে আমার পাগলীটা রয়েছে।
শুধু একটা আফোসোস থেকে যাবে আমার
নীলিমার মত করে কে ভালোবাসবে আমায়???
কেউ ওর মতো করে ভালোবাসতে পারবে না।
কেউ না....কেউ না।
অপরিনত রয়ে গেলো আমার ভালোবাসা।
অসমাপ্ত রয়ে গেলো আমার এই প্রেমের কাহিনী
"

