অন্তিম চুম্বন
অন্তিম চুম্বন
জীবনটা ক্ষনস্থায়ী ঠিক - কিন্ত এভাবে আদরটা শেষ হয়ে যাবে এতো তাড়াতাড়ি ভাবতে পারেনি ইতালীয় ওই দম্পতি । বুকে ছিলো তাদের দ্য ভিঞ্চিয় প্রেম । কিন্তু করোনার শক্তি যে ইতালিয় দম্পতিকে এত সহজে নুইয়ে দেবে তা কে জানতো ? অবশ্য তারা সহজে হার স্বীকার করেনি, শেষ অবধি লড়াই করেছে - তারপর এক অসীম বিস্তৃত ভালোবাসাকে নিয়ে তাঁদের কর্তব্য শেষ করেছে। তাঁদের এই করোনার কাছে পরাজয় তাঁদের ভালো বাসাকে একটা শাশ্বত সত্যের নিদর্শন হিসাবে রেখে গিয়েছে।
লরেন্স লুসির প্রেমে পড়েছিলো মেডিক্যাল কলেজে পড়াকালীন । মিলানের মেয়ে লুসি লিখতো অসাধারণ কবিতা । লুসি আঁকতে ভালোবাসতো । শবচ্ছেদ করতে করতে গা গুলিয়ে যাওয়ায় একদিন লুসি বাথরুমের দিকে এগোয় । সেই সময় বেরোনোর পর প্যাসেজে বসে থাকা লরেন্সকে দেখলো লুসি । একটা এ ফোর কাগজে একটা ছবি আঁকছে । ভালো করে দেখতে দেখতে লুসি বোঝে ছবিটা মিলানের ওই ইউনিভার্সিটিরই ছবি ।
" ওয়াও লরেন্স , হোয়াট এ বিউটিফুল স্কেচ ! ইউ হ্যাভ ব্রট আওয়ার ইউনিভার্সিটি টু লাইফ ইন ইওর স্কেচ । "
" ও লুসি ! নো,নো,দিস ইজ আ টাইমপাস ওনলি । ডোনট হ্যাভ এ ক্লাস নাও হেন্স ... বাট ইউ হিয়ার ... ? "
" ও লরেন্স ! হোয়াট এ পিকিউলিয়ার এক্সপিরিয়েন্স ইট ওয়াজ টু টেস্ট আ কর্পস ! ইউ হ্যাভ ক্রসড দিস লাইনস বাট ইটস ওনলি দি স্টার্ট ফর মি ! "
" মি টু ওয়াজ টু মাচ ফ্রাইটেন্ড টু টেস্ট দ্য সেম । ইউ উইল বি স্লোলি অ্যাকাস্টমড টু ইট । "
ব্যস ওখান থেকেই শুরু - কখন যে দুটি সংবেদনশীল মন একে অপরের কাছাকাছি আসতে শুরু করেছে তা দুজনের অজ্ঞাত ছিল । ক্রমে ক্রমে অন্তিম বর্ষের এম্.বি.বি.এস স্টুডেন্ট লরেন্স ও লুসির প্রেম এগোতে থাকে । উচ্চশিক্ষায় থাকাকালীনই একদা দুজনের চার্চসম্মত বিবাহ সম্পন্ন হলো ।
লুসি পিডিয়াট্রিশান হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে । আর পালমোনোলজিস্ট হিসেবে খ্যাতি বেড়েছে লরেন্সের ।
২০২০ সাল ১০ই মার্চ :
একের পর এক করোনা রোগী আসতে চলেছে নার্সিংহোমে । হিমসিম খেয়ে যাচ্ছেন মিলানের এই প্রসিদ্ধ নার্সিংহোমে । থার্ড স্টেজ এসে গেছে , লোকে শোনেনি সতর্কবাণী ।
আই.সি.ইউয়ের এপার ওপার মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো এক দুবার লরেন্স ও লুসি । ফের লেগে পড়লো এই দুঃসময়ে জনগনের সেবায় ।
১৬ ই মার্চ :
যমরাজ রুদ্ধশ্বাসে তাঁর বিজয় রথ নিয়ে এগিয়ে চলেছেন ইতালি জুড়ে । হাজারে হাজারে মারা যাচ্ছে লোক ।
থার্ড স্টেজের মারণকোপ ভয়ঙ্কর হবে অনেক বিশেষজ্ঞ সাবধান করেছিলেন কিন্তু কর্ণপাত করেনি কেউ । আজ তারই মাশুল গুনতে হচ্ছে।
সংক্রমণের ভয়কে পায়ের তলায় রেখে ডাক্তার এবং সেবিকা এক অসম লড়াই লড়ছে - যে ভাবেই হোক মানবজাতিকে রক্ষা করতে হবে। অথচ জানেন মৃত্যু তাঁদের ঘাড়ের উপর নিশ্বাস ফেলছে - তবুও শিক্ষা শেষের শপথকে বুকে সম্বল করে অসহায় যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন।
১৮ ই মার্চ :
গত কয়েকদিন ধরে লুসির শরীর ভালো লাগছে না, অক্লান্ত পরিশ্রম আর অনিয়মে দুর্বল এবং ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। হঠাৎ সেবা করাকালীন লুসি একনাগাড়ে কাশতে লাগলেন । কিছুক্ষনের ভিতর অসম্ভব জ্বরে জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে পড়ে গেলেন । লরেন্স দ্রুত সেদিকে গিয়ে লুসিকে এমার্জেন্সীতে নিয়ে যায় । পরীক্ষায় ধরা পরে করোনা । ওই রাত্রি থেকেই নিঃশ্বাসের কষ্ট ও জ্বরে পড়লো লরেন্সও । দুটোদিন চিকিৎসায় ছিলো ।
হসপিটালের বাইরে চলেছে শবদেহের মিছিল।
এদিকে গণকবর খোঁড়া শুরু হয়েছে । জানলা , বারান্দা থেকে হাত বাড়িয়ে কাঁদছেন মা , বউ , বাচ্চারা।
২০ শে মার্চ :
জীবনের দিক দিয়ে যখন আশা বলতে কিছু বাকি নেই তখন লরেন্স ধুঁকতে ধুঁকতে বিছানা থেকে উঠে লুসিকে টেনে তুললো । গোটা হল ভর্তি করোনা আক্রান্ত । মাস্ক খুলে একে অপরের ঠোঁট স্পর্শ করলো লুসি ও লরেন্স । জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে । ঘর জুড়ে হাততালি । পাঁচ মিনিট পর সব স্তব্ধ । দুজনে ঘরের মধ্যেই লুটিয়ে পড়লো ।
আর ১ টি ঘন্টা কাতরাতে কাতরাতে , হাতে হাত রেখে পাশাপাশি বিছানায় গণকবরে যেতে প্রস্তুত হলো দুই করোনা আক্রান্ত ।
করোনা ভাইরাসের প্রভাবে হারিয়ে গেল ভালোবাসার দুটো প্রাণ । কিন্ত তারা হার মানেনি শেষ অবধি লড়াই চালু রেখে গেছে - মৃত্যুও ভালবাসার দুটি প্রাণকে আলাদা করতে পারেনি।নাম পরিবর্তিত হলেও এই লেখাটি আসলে কোন গল্প নয় , ইটালির দুজন ডাক্তার যারা নিজেদের শেষদিন অব্দি রোগীদের চিকিৎসা করেছেন , তাদের ভালোবাসার বাস্তব গল্প কথা ....

