Partha Pratim Guha Neogy

Romance Tragedy

3  

Partha Pratim Guha Neogy

Romance Tragedy

অজানা প্রিয়া

অজানা প্রিয়া

8 mins
275


গ্রীষ্মকালের বিকেলবেলায় হঠাৎ শুরু কালবৈশাখী।বৃষ্টি পড়েই যাচ্ছে। ঝলসে ওঠা বাজের পর উচ্চারিত মেঘমন্দ্র স্বর মাঝেমধ্যে সুর কাটাচ্ছে জলপতনের। সেই সঙ্গে যোগ হয়েছে ঝোড়ো বাতাস। বড় বড় গাছগুলো চাবি দেওয়া পুতুলের মতো দুলছে বাম থেকে ডানে। মনে হচ্ছে, আরেকটু দুললেই হয়ে যাবে চিৎপটাং। সব মিলিয়ে দেখা ও শোনার মতো অভিজ্ঞতা, যেন ইউটিউবের কোনো মেডিটেশন ভিডিও থেকে তুলে আনা। এমন চমৎকার সন্ধ্যার ভেতর অনায়াসে তলিয়ে যাওয়া যায়। এই মনোরম সুন্দর পরিবেশে সামরিক উর্দির তলায় ঢাকা পড়ে থাকা সেনানীর কঠিন হৃদয়ও রোমান্টিক হয়ে উঠেছে।শুধু প্রয়োজন একজন সঙ্গীর। কিন্তু মন যাকে চাইছে, সেই প্রিয়ার বৃষ্টি ভালো লাগে না।

বৃষ্টি জিনিসটা প্রিয়ার কাছে একঘেয়ে । বৈচিত্র্যহীন নীরস। আমার তর্ক করতে ভালো লাগে। কিন্তু প্রিয়ার সঙ্গে তর্ক করাটা নিরর্থক। কথার পিঠে কাট কাট কথা বলে কালো ঘাম ছুটিয়ে দেয়। একটু এদিক-সেদিক হলে কোনো ছাড় নেই। গলার মোলায়েম স্বরটাকে এক জায়গায় স্থির রেখে একের পর এক মারণাস্ত্র ছোড়ে। আগ্রাসী ফাস্ট বোলারের সামনে পড়া টেলএন্ডারের মতো তখন বারবার ডাক করে নিজের গর্দান বাঁচাতে হয়। বোধ হয় এ জন্যই প্রিয়ার এত আকর্ষণ। অমোঘ অতলান্তিক টান।

প্রিয়ার সঙ্গে পরিচয় মাস তিনেকের। এতটুকু সময়ের মধ্যেই হৃদয়ে একটু একটু করে দাগ কেটে প্রায় পুরোটাই অধিকার করে ফেলেছে। অথচ আমাদের এখনো দেখা পর্যন্ত হয়নি। সে সুযোগও নেই অবশ্য। তিন মাস ধরে আমি একটা সামরিক একাডেমিতে আটকে আছি। ট্রেনিংয়ের কাজে একটু একটু করে নিজেকে ক্ষয়ে স্রেফ দিন গুনছি। আর মাত্র তিন মাস। তারপর আসবে আকাঙ্ক্ষিত ছুটি। সেদিনই ছুট দেব কলকাতার দিকে। সেখানে অপেক্ষা করে আছে প্রিয়া । আমার ভালোবাসার প্রিয়তমা প্রিয়া।

আমাদের পরিচয়ের গল্পটা খুব আহামরি বা বলার মত নয়। ফেসবুকে ফ্রেন্ড সাজেশন এসেছিল। মোটামুটি সুশ্রী প্রোফাইল ছবি দেখে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছিলাম। সঙ্গে সঙ্গে এক্সেপ্ট করে সে আমাকে মেসেজ পাঠিয়েছিল, ‘কে আপনি?’ প্রশ্ন শুনে ধন্দে পড়ে গিয়েছিলাম। এ আবার কেমন মানুষ বাবা! চাকরির সুবাদে প্রাপ্ত অহং উচ্চ রেখে জবাব দিয়েছিলাম, ‘আমি কে সেটা আমার প্রোফাইলে লেখা আছে। কষ্ট করে দেখে নেবেন।’

বলবই বা না কেন? এলেবেলে কেউ তো আমি নই। সামরিক বাহিনীর পদস্থ কর্মকর্তাদের যেখান থেকে যাত্রা শুরু হয়, সেই সিঁড়িতে পা দিয়েছি। কেবল প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার অপেক্ষা, তরতর করে উপরে ওঠার সিঁড়ি বেয়ে সামনে এগোব। তা ছাড়া প্রোফাইলের ছবিটাও ইউনিফর্ম পরা। এমন একটা জলজ্যান্ত মানুষকে পরিচয় জিজ্ঞেস করার সাহস হয় কী করে?

খানিক বাদে দেখি সে মেসেজটা সিন করেছে। আমি লিখলাম, ‘না চিনলে আনফ্রেন্ড করে দেন।’ সে দ্রুত জবাব দিল, ‘আপনি রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছেন, আপনিই করুন না!’

জবাব দেখে আমার পিত্তি জ্বলে গেল। আনফ্রেন্ড করতে গিয়েও করলাম না কড়া কয়েকটা কথা বলার জন্য। কিন্তু উনুনে সসপ্যান চড়ালে আগুন যেভাবে উপরিতলের শেষ জলবিন্দুটুকু পর্যন্ত শুষে নেয়, ঠিক সেভাবে আমার সবটুকু রাগ হঠাৎ করে উবে গেল। ভীষণ কৌতূহল হলো। কে এই মেয়ে? কীসের এত অহংকার তার? আমাকে সে অবজ্ঞা করে কীভাবে? 


নরম হয়ে পরদিন আবার মেসেজ দিলাম। লক্ষ্য করলাম, তার অহং বেশ থিতিয়ে এসেছে। আমাদের কথা বাড়তে থাকল। তারপর ফোন নম্বর আদান-প্রদান এবং শেষ পর্যন্ত মেসেঞ্জারে ভিডিও চ্যাট। এভাবে ফুরফুর করে কেটে গেল তিন মাস।

একাডেমির জীবন খুব কঠিন। ক্ষেত্রবিশেষে নির্দয়, নির্মম। কষ্টের অভ্যাস খুব একটা নেই বলে আমার জন্য আরও কঠিন। প্রিয়া জীবনে যোগ না হলে আমার কী হতো জানি না। হয়তো চাকরি ছেড়ে চলে যেতাম।

অহংকারটা বাদ দিলে খুব লক্ষ্মী একটা মেয়ে প্রিয়া । আমাদের পছন্দ-অপছন্দের তালিকাটা বিপরীত মেরুর হলেও সে আমাকে বুঝতে পারে। এই ব্যাপারটাই আমাকে নির্ভার করে দেয়।

সব মিলিয়ে ভালোই ছিলাম আমরা। শুধু তিন দিন ধরে তার কোনো হদিস নেই। সে নেই। ফোন, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ থেকে লাপাত্তা।

বাঁ হাতে সিগারেট আর ডান হাতে চায়ের কাপ নিয়ে আমি বৃষ্টি দেখায় মন দিলাম। প্রিয়ার একঘেয়ে বৃষ্টি আছে। কিন্তু প্রিয়া নেই। কোথায় গেল সে?

তিন দিন আগের কথা মনে পড়ছে। খুব ছোট্ট একটা ব্যাপার নিয়ে আমাদের ঝগড়া হয়েছিল। উত্তেজনায় আমি খানিকটা চেঁচামেচিও করেছি। রেগে গেলে আমার হুঁশ থাকে না। প্রিয়া জানে এটা। আগেও কয়েকবার এমন হয়েছে। কিন্তু তখন তো প্রিয়া এভাবে ডুব দেয়নি। বড়জোর দু-এক দিন আমাদের কথা বন্ধ ছিল। তারপর আমিই বরফ গলানোর উদ্যোগ নিয়েছি। কাজও হয়েছে। এবার তবে কী হলো?

রুমে ঢুকে মোবাইল ফোন হাতে তুলে নিলাম। চ্যাট হিস্ট্রি পড়ব। বোঝার চেষ্টা করব আসলে ভুলটা কোথায়।

ডেটা অন করতে গিয়ে করলাম না। দেখি আমার রুমমেট অমিত কানে হেডফোন লাগিয়ে খিক খিক করে হাসছে। ও প্রান্ত থেকে কী বলছে জানি না, কিন্তু অমিতকে দেখে মনে হচ্ছে নিশ্চয়ই দারুণ কিছু। এমনিতে খুব শান্ত আর সরল ছেলে অমিত । হাসলে ওর হাসি চোখ পর্যন্ত স্পর্শ করে। নিজের মন খারাপের মধ্যেও ওর আনন্দ দেখে ভালো লাগল।

আমাকে দেখে সে কান থেকে হেডফোন সরিয়ে রেখে বলল, ‘কী দুলাল ভাই, বৃষ্টি দেখা হল?’ আমি ম্লান হাসি হাসলাম। সে বলল, ‘চলেন না বারান্দায় বসি। বৃষ্টি আমার ভালো লাগে না। কিন্তু সে ভালোবাসে। চলেন দেখি বৃষ্টিতে আসলে কী আছে?’ বলে সে মোবাইলের দিকে ইঙ্গিত করল।

কয়েক দিন ধরেই অমিতকে ফোনে গুজুর গুজুর করতে দেখি। রাতে ঘুমোতে যাওয়ার সময় তাকে ফোন চালাতে দেখি। ভোরে ফিজিক্যাল ট্রেনিংয়ের জন্য ওকে ডেকে তুললেও দু-এক মিনিটের জন্য তার ফেসবুকে ঢোকা চাই । বুঝতে পারছিলাম যে তার কোনো বান্ধবী জুটেছে। আজ সে ব্যাপারটা খোলাসা করল। বারান্দায় যাওয়ার উদ্দেশে উঠে বসামাত্র আমি তাকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করলাম। চোখ টিপে কথা চালিয়ে যাওয়ার ইশারা করলাম। কিন্তু সে এক গাল হেসে বলল, ‘ওর কালকে পরীক্ষা আছে। আর কথা বলব না।’

বারান্দায় পাশাপাশি দুটো চেয়ারে বসলাম দুজনে। রুমমেট হলেও আমাদের খুব একটা কথা হয় না। দুজনের ব্যক্তিত্ব দুরকম হলে যেমন হয়। আমি যেমন চঞ্চলমতি, ঠিক তেমনি ধীর-স্থির অমিত । তবে ট্রেনিংয়ে খুব মনোযোগ। আর্মি অফিসার হওয়াটাই তার জীবনের লক্ষ্য ছিল। সুযোগটাকে একেবারে লুফে নিয়েছে।

বৃষ্টি তখনো পড়ছে। অমিত আমার প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে নিয়ে দুই হাতের আঙুলে লোফালুফি করতে লাগল।

‘প্রেমে পড়েছ নাকি অমিত ?’ প্রশ্নটা না করে পারলাম না। সে সিগারেট দুই ঠোঁটের ফাঁকে নিয়ে কায়দা করে জ্বালালো। তারপর একরাশ ধোঁয়া ছেড়ে বলল, ‘হ্যাঁ,ভাই। জীবনে প্রথমবার।’

ধোঁয়ার রহস্যময়তার মধ্যেও দেখলাম তার ফরসা গাল রাঙা হয়ে উঠছে। সে নিজেই সব বলবে ভেবে চুপ করে গেলাম। সে আমাকে ভুল প্রমাণ করে চুপ করে রইল। জিজ্ঞেস করলাম, ‘কীভাবে পরিচয়? আগে থেকেই চেনাজানা নাকি?’ সে জিভ কেটে বলল, ‘না না ভাই। এই তো ফেসবুকে। দুই মাস হলো পরিচয়। কিছুদিন ধরে ফোনে কথা বলা শুরু করেছি। এক সপ্তাহ ধরে ভিডিও চ্যাট হচ্ছে।’ আমি একটা দীর্ঘশ্বাস চেপে গেলাম। অমিত ব্যাপারটা খেয়াল করল না। সে বলতেই থাকল, ‘জানেন মেয়েটা মাত্র প্রথম বর্ষে পড়ে। কিন্তু কী চিন্তা, দারুণ স্বপ্রতিভ। কলকাতায় গেলে আপনার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেব। আপনি ভবানীপুরে থাকেন না?’

‘হ্যাঁ, কেন বলো তো?’ 


‘সে থাকে বড়বাজারে।’

কথাটা শুনে একটু খটকা লাগল। রুমমেটের গার্লফ্রেন্ড সম্পর্কে অতিরিক্ত কৌতূহল দেখানো উচিত না জেনেও জিজ্ঞেস না করে পারলাম না, ‘বড়বাজারে কোথায়?’

‘বড়বাজার, মন্দিরের গলি।’

শুনে আমার বুক ধড়ফড় করতে লাগল, ‘সে কী সিটি কলেজে পড়ে?’

‘হ্যাঁ, বউবাজার । আপনি চেনেন নাকি?’

এইবার আমার হাত-পায়ের তালু ঘামতে লাগল। কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম, ‘মেয়েটার নাম কি প্রিয়া ?’

প্রিয়াঙ্কা তিওয়ারি । আপনি তো তাকে চেনেন দেখছি।’

অমিতের হাত থেকে খপ করে সিগারেট কেড়ে নিলাম। জোরে জোরে দুটো টান দিয়ে অনিককে বললাম, ‘মেয়েটার ছবি দেখাও তো।’

হঠাৎ এমন ব্যবহারে কিছুটা থতমত খেয়ে গেল অমিত । চোখভরা বিস্ময় নিয়ে বলল, ‘কী হয়েছে দুলাল ভাই? কোনো সমস্যা নাকি?’

আমি মাথা নেড়ে না বললাম। সে নিখাদ অনিচ্ছা নিয়ে রুম থেকে ফোন নিয়ে এল। ফেসবুক খুলে যে প্রোফাইল ছবি দেখাল, সেটা প্রিয়ার ছবিই বটে। আমার মেরুদণ্ড দিয়ে একটা শীতল স্রোত নেমে গেল। মনে হলো আমার শ্বাস বন্ধ হয়ে যাবে। এদিকে অমিত ব্যগ্র গলায় প্রশ্ন করেই যাচ্ছে, ‘কী হয়েছে দুলাল ভাই? শরীর খারাপ লাগছে নাকি? এমন করছেন কেন?’

অনেক কষ্টে চোখের জল গোপন করলাম। প্রিয়ার এ কেমন প্রতারণা! অমিতকে বললাম, ‘তোমাকে বলব। মেয়েটা ভিডিও কল দিলে আমাকে ডেকো তো।’

সে রাতে আর ঘুম হলো না। পাশের বিছানায় দেখলাম অমিতও এপাশ-ওপাশ করছে। প্রেম ও সংশয়ের মাঝামাঝি একটা বিবমিষা জাগানো অনুভূতি আমাকে সারা রাত দংশন করতে লাগল। সূর্য ওঠার আগেই ঘাম–ঝরানো পিটির কাজে নামতে হবে। একেবারে নির্ঘুম থেকে একাডেমিতে একটা দিন টেকা খুব কষ্টকর। এই সম্ভাব্য অনির্বচনীয় যন্ত্রণাও চোখে ঘুম আনতে পারল না।

সারা দিন মাঠে শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণায় কাটিয়ে সন্ধ্যায় রুমে এসে গা এলিয়ে দিলাম। ঘুমিয়েছি কি ঘুমাইনি, এমন সময় অমিত এসে আমাকে ডেকে তুলল। মুখটা থমথমে। বলল, ‘আমার সঙ্গে একটু আসেন।’

অমিতের টেবিলে গিয়ে ল্যাপটপের পর্দায় চোখ রাখতেই চমকে উঠলাম। প্রিয়া , মুখ টিপে হাসছে। আমাকে যেন চেনে না। কখনো দেখেনি, আমার কথা শোনেনি। আমাদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক হয়নি। এক বুক যন্ত্রণা নিয়ে চেয়ারে বসলাম। প্রিয়া বলতে লাগল, ‘অমিত , এই বুঝি তোমার রুমমেট? দাদা , প্রণাম নেবেন । আপনার কথা অনেক শুনেছি অমিতের কাছে।’ আমি শুকনো মুখে ধন্যবাদ দিলাম। অমিত বলল, ‘দাদা বোধ হয় তোমাকে চেনেন। কালকে তোমার কথা বলতেই ঠিক ঠিক চিনতে পারলেন। কলকাতার ছেলে, ভবানীপুরে বাসা। কী দাদা , ওকে চেনেন?’ আমি মাথা নাড়িয়ে না বললাম। ‘আসলে ওদিকে টিউশনি করাতাম তো, ওনাকে দেখেছি বোধ হয় দু-একবার।’ প্রিয়া হাসল। টোল পড়া সুন্দর হাসি। আমার হৃদয় গলে যাওয়ার কথা, কিন্তু কষ্টে চোখে জল চলে এল। আমি তাড়াতাড়ি ওদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাথরুমে ঢুকে অনেকক্ষণ কাঁদলাম।

এরপর দিন কাটতে লাগল যন্ত্রণায়। সারা দিন আমার রুমমেটের খুনসুটি দেখি, হাসি-আনন্দ-অভিমান দেখি আমারই প্রিয়তমা মানুষটির সঙ্গে। এই যন্ত্রণা যে কী রকম তীব্র, সেটা অভিজ্ঞতায় না থাকলে বলে বোঝানো যাবে না। কোনোমতে দাঁতে দাঁত চেপে টিকে থাকলাম।

দেখতে দেখতে একাডেমিতে ছুটির সময় হয়ে গেল। যথাসময়ে বাসায় পৌঁছলাম। পরের দিন নিজেই গেলাম বড়বাজার। আঁতিপাঁতি করে খুঁজেও মন্দির গলির প্রিয়াঙ্কাকে খুঁজে পেলাম না। কাজিনকে দিয়ে সিটি কলেজেও খোঁজ নিলাম। এই নামে কেউ নেই। কোনোকালেও ছিল না। ফেসবুকে সিটি কলেজের প্রথম বর্ষের কয়েকজনের সঙ্গে পরিচয় হলো। ওদের কাছে প্রিয়ার ছবি পাঠিয়েও কিছু উদ্ধার করতে পারলাম না। কেউ তাকে কোনো দিন দেখেনি।

ছুটি শেষ। মনের মধ্যে বিশাল খটকা নিয়ে ফিরে এলাম একাডেমিতে। আবার সেই কঠোর শৃঙ্খলার জীবন, নাভিশ্বাস ওঠা বন্দী জীবন। ব্যাচমেটদের সঙ্গে কোলাকুলির মধ্যেই জানতে পারলাম, অমিত ফেরেনি। ফিরবেও না। মানসিকভাবে নাকি এতটাই অসুস্থ হয়ে পড়েছে যে ওকে সিঙ্গাপুরে পাঠাতে হয়েছে। সবাই নানা কথা বলাবলি করতে লাগল। পুরো একাডেমিতে আলোড়ন পড়ে গেছে, কেউ জানে না কী হয়েছে অমিতের মতো প্রাণবন্ত ছেলের। সংশয়ের দোলাচলে দুলে নিশ্চুপ হয়ে রইলাম আমি। প্রিয়ার কথা একটিবারের জন্যও বললাম না কাউকে। 


ভেবেছিলাম এই রহস্য নিয়েই আমাকে বাকি জীবন কাটাতে হবে। অমিত তো আগেই শেষ, আমার মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যু হবে প্রিয়া –রহস্যেরও। 


কিন্তু ব্যাপারটার সমাধান হলো সাত বছর পর। সেন্ট পিটার্সবার্গে একটা ইন্টেলিজেন্স কনফারেন্সে। রুদ্ধদ্বার বৈঠকে রুশ বিশেষজ্ঞ সের্গেই রোমানভ একটা হ্যাকার গ্রুপকে ট্রেস করার কথা জানালেন। ১০ বছর চেষ্টার পর তারা নাকি বেশ কিছু তথ্য উদ্ধার করতে পেরেছে। স্লাইড অন করতেই আমার মধ্যে পুরোনো ভয় ফিরে এল। উষ্ণ রুমে বসেও শিরশির করতে লাগল হাত-পা। পেটের মধ্যে জট বাঁধতে শুরু করল আদিম অনুভূতি। এ যে প্রিয়ার ছবি। রোমানভ বললেন, দক্ষিণ এশিয়ার তিন দেশে তিন নামে পরিচিত এই নারী চরিত্রটি রক্ত-মাংসের কোনো মানুষ নয়। বরং উত্তর–পূর্ব এশিয়ার একটি দেশের হ্যাকারদের বানানো একটি প্রোগ্রাম মাত্র। বাংলাদেশে রোশনারা হক , ভারতে প্রিয়াঙ্কা তিওয়ারি ও পাকিস্তানে পারিসা আরা নামে পরিচিত চরিত্রটি মূলত সামরিক বাহিনীর অফিসারদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করে তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার একটা টুল মাত্র। স্রেফ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স। 


পুরো হলরুমে তখন পিনপতন নীরবতা। এর মধ্যেই কে যেন হেঁচকি দিয়ে কেঁদে উঠল।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance