Sahanaz Gold Jewellery

Tragedy

3  

Sahanaz Gold Jewellery

Tragedy

অভাগিনী আজও অপেক্ষারত

অভাগিনী আজও অপেক্ষারত

5 mins
1.1K


ছোট্ট সুমির মনটা আজ ভীষণ খারাপ, তার ভাইয়া সুমন তাকে কথা দিয়েছিলো দুবাই থেকে ফেরার পথে তার জন্য নাকি অনেক বড় বড় খেলনা-পুতুল নিয়ে আসবে ! সেই আনন্দেই প্রতিটি দিন প্রতিটি রাত শুধু প্রতিক্ষার দিনগোনা|

সুমি আর সুমন দুই ভাই বোন, সুমি সবে ৫-য়ে পা আর সুমন ১৫, অভাবের সংসার, কোনও রকম দিনআনা খাওয়া পড়াতেই তাদের বেঁচে থাকা, মায়ের শরীর অসুস্থ থাকায় সেরকম খাটাখাটনি করতে পারেনা, তাই এই বয়সেই পাশের বাড়ির এক আত্মীয় কাশেম চাচার সাথে কাজের তাগিদেই বছর খানেক হলো দুবাই পাড়ি দিয়েছিলো সুমন, খুব অভাব তাদের, কিন্তু মানুষ হিসাবে এতোটাই ভালো যে পাড়ার লোক সবাই তাদের কিছু না কিছু দিয়ে সাহায্য করে দিতো.

বাবা অসুখে মারা গেছিলো সুমি হওয়ার পরে পরেই, তাই বাবা কি জিনিস ছোট্ট সুমি কোনও দিন-ই সেটা বোঝেনি, বড় ভাইয়া সুমন আর 'মা' কেই সে আপন বলে জানতো|দুবাই যাওয়ার পর থেকেই যেটুকু রোজগার করতো সুমন, বেশির ভাগটাই সে 'মা' কে পাঠাতো চাচার হাতে, যাতে 'মা' আর বোনের ভালো ভাবে চলে যায়.

বেশ কাটছিলো তাদের দিনকাল আর সময়|কিছুটা হলেও খাওয়া পড়ার চিন্তাটা তো একেবারেই মিটে গেছিলো, মাঝে একবার বাড়িও এসেছিলো কাশেম চাচার সাথে, খুব মন খারাপ করছিলো 'মা' বোনের জন্য তাই, সুমন তার বোনকে আদর করতে করতে একদিন বলেছিলো এবার যখন সে আসবে,তখন সব থেকে বড় পুতুল টা তার জন্য নিয়ে আসবে দুবাই থেকে, সাথে আনবে আরও অনেক খেলনা বাটি|

সেই কথা শোনার পর থেকেই ছোট্ট সুমি খুশিতে খুব নেচে উঠেছিলো সেদিন, একদৌড়ে আরও ছোট ছোট সব বন্ধুদের খবরটা দিয়ে এসেছিলো|

শুধু অপেক্ষায় ছিলো ভাইয়া কবে দুবাই পৌঁছাবে, আর কবে আবার বড় পুতুল নিয়ে দেশে ফিরে আসবে ? রোজ -ই একবার করে 'মা'কে জড়িয়ে ধরতো আর আদুরে গলায় ভাইয়ার আসার দিন গুনতো|

হঠাৎ একদিন সকাল বেলা 'মা' কে বিছানার মধ্যেই মুখ গুজে কাঁদতে দেখে ছোট্ট সুমি ভেবেছিলো 'মা' এর বোধহয় পেট ব‍্যাথা করছে, কারন তাঁর নিজের পেট ব‍্যাথা করলে ঠিক এভাবেই কাঁদতো|পরে অবশ্য বেলার দিকে 'মা'এর কাছে শুনেছিলো তাঁর ভাইয়ার নাকি বড় অসুখ করেছে,মাথায় পানি-টানি কি যেনও সব জমেছে, তাই হাসপাতালে আছে, কাশেম চাচা ফোন করে নাকি এই কথা জানিয়েছে 'মা'কে|সেই থেকেই 'মা' কেমন যেনও চুপচাপ থাকে, আর লুকিয়ে লুকিয়ে কাঁদে, চান করা, খাওয়া কিছুই ঠিকমতো করেনা, এ সবকিছুই সুমি লক্ষ্য করে, কিন্তু 'মা' কে কিছু জিজ্ঞেস করতে পারে না|তাঁর সেই বোধবুদ্ধিটা এখনও ঠিক মতো তৈরি হয়নি, নিজের ছন্দে খাওয়া দাওয়া আর খেলাধুলা নিয়ে সারাদিন মেতে থাকে, আর অপেক্ষা করতে থাকে তাঁর ভাইয়া কবে আসবে?


বেশ কিছুদিন যাওয়ার পর হঠাৎ একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে সুমি দেখে তাদের ঘরের বাইরে অনেক লোকজনের আওয়াজ, 'মা' কে সে দেখতে পাইনা বিছানার পাশে, বাইরে থেকে লোকমুখে শুনতে পাই তাঁর ভাইয়া এসেছে, খুব আনন্দ হয় মনে মনে, তড়িঘড়ি করে বিছানা ছেড়ে ঘরের বাইরে বেরিয়ে আসে, কিন্তু এতো ভিড়ের মাঝে কাউকেই সে দেখতে পাইনা, মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে যায়|এককোণে চুপটি করে বসে আর ভাবে ভাইয়া যে তার জন্য সব থেকে বড় পুতুলটা আনবে বলেছিলো দুবাই থেকে, তাহলে সেটা আগে না দিয়ে কোথায় সব লুকিয়ে পড়লো, 'মা' কেউ তো কাছাকাছি কোথাও দেখতে পাচ্ছে না, তাহলে সব গেলো কোথায়? ভীষণ রাগ হচ্ছে এবার সুমির|ভাইয়া এসেছে বলে বাড়িতে কত্ত ভীড় জমেছে, 'মা'ও আজকাল তাঁকে আর আগের মতো ভালোবাসে না, একটু খোঁজও নিচ্ছে না সে ঘুম থেকে উঠেছে কিনা, কিছু খেয়েছে কিনা ?রাগে গদগদ করে উঠে ভিড় ঠেলে এগিয়ে যেতেই দেখলো ঐ দূরে চুপ করে বসে 'মা' কি জানি মুখে বিড়বিড় করছে আর একটা বড় বাক্সই হাত বুলাচ্ছে, আর সবাই ভাইয়ার নাম নিয়ে কি সব যেনও বলছে আর চোখ মুচছে|সে কিছুই বুঝতে পারছে না ভাইয়া আসার খুশিতে সবাই এরকম করছে কেনো ?


কিন্তু ভাইয়া কোথায়, তাকে তো দেখতে পাচ্ছে না, তাহলে কি ভাইয়া পুতুল আনেনি,খালি হাতে এসেছে? সাতপাঁচ ভেবে খুব রাগ হচ্ছে সুমির এবার, তাই কাউকে কিছু না বলে আবার এককোণে গিয়ে চুপ করে বসে পড়ে|ভাইয়া যে তাঁর জন্য কিচ্ছুটি আনেনি, সেটার দিকে 'মা'য়ের একটুও খেয়াল-ই নেই, এই জন্য তো তাঁর এখন কাঁদা উচিত, তা নয় উল্টে সবাই ভাইয়ার নাম নিয়েই কেমন জানি চিৎকার করে কাঁদছে, কেউ তো সুমিকে কিচ্ছুটি বলছেই না|আর ঐ বাক্সটাতেই বা কি আছে, সবাই বাক্সটা ধরেই কাঁদছেই বা কেনও, কি আছে ঐ বাক্সের মধ্যে? তাহলে সত্যিই কি ভাইয়া পুতুল আনেনি,পাছে তাঁর বোন খুব কান্নাকাটি করবে সেই ভয়েই কি নিজেকে ঐ বাক্সের মধ্যে লুকিয়ে নিয়ে এসেছে ? রাগ তো আরও বাড়ছে সুমির, ভাইয়া তো আগে কোনওদিন এরকম করেনি, তাহলে আজ কেনও ভাইয়া লুকিয়ে এলো? সবাই তো দেখছি কাঁদছে,তাহলে জিজ্ঞেস করবোই বা কাকে? 'মা'কেও তো সবাই ঘিরে বসে আছে, এতো ভিড়ে 'মা'য়ের কাছেও তো যেতে পারছে না, সবাই এভাবে কাঁদছেটাই বা কেনও?


হাজার প্রশ্ন এখন ছোট্ট সুমিকে ঘিরে|এবার সে রীতিমতো ঘাবড়ে যায়, একছুটে সবাই কে ঠেলে কোনও রকম 'মা'য়ের কাছে পৌঁছাই, আর কোলে গিয়ে 'মা' কে জাপ্টে ধরে বসে, দেখে 'মা' তখনও কাঁদছে আর সামনে রাখা বড় বাক্সটাই হাতবুলাচ্ছে, সবাই 'মা'কে ঘিরে আছে, সুমি তখনও মায়ের কোলে বসে কাঁধের মধ্যে মুখ গুঁজে আছে, আর লোকমুখে কানাফুঁসি শুনতে পাচ্ছে তার ভাইয়া নাকি ফিরে এসেছে,আর এখন ঘুমোচ্ছে, সুমি ভাবছে ভাইয়া যদি ফিরেই আসে ,তাহলে কেনই বা তাঁকে আদর করছে না, সামনে আসছে না, কেনোই বা তাঁর সাথে দেখা না করে এখনও ঘুমোচ্ছে? সত্যিই তাহলে পুতুল আনতে পারে নি বলেই কি এতো লুকোচুরি?


মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেল ছোট্ট সুমির, তখনও 'মা'কে জাপ্টে ধরে আছে, অনেকজনের মুখেই ফিসফিসিয়ে বলতে শুনছে 'এতো ভালো ছেলেটা তাঁর 'মা'এর কোল ফাঁকা করে চলে গেলো না ফেরার দেশে' -কেন কাঁদছে সবাই, ভাইয়া কোথায় চলে গেলো, না ফেরার দেশ কোনটা?

হাজার প্রশ্ন এখন ছোট্ট সুমিকে কাঁটাতারের বেড়ার মতো বিদ্ধ করছে. এবার সে একটু ভয় পেয়ে গেছে, কাঁদো কাঁদো মুখে 'মা' - 'মা' বলে ডেকে উঠলো দু-বার,

কিন্তু হায়রে পোড়া কপাল অভাগিনি সেই 'মা'য়ের, কোনকিছুতেই হোশ বা নজর নেই শুধু ঐ বাক্সটা ছাড়া! মৃত্যু সবচেয়ে বড় দাগা দিয়ে যায় কাছের মানুষ গুলোকে, তাঁরা বয়ে বেড়ায় এই অসহ্য বেদনার ভার, বাকিটা জীবন ধরে চাপা কষ্ট তাড়িয়ে বেড়ায়৷ না জানি স্বস্তির ঠিকানার সম্মতি মিলবে কবে?


এরকম হাজার হাজার অভাগা সুমি এখনও অপেক্ষায় থাকে প্রিয়জনদের ফেরার আশায়...

কিন্তু,যে বা যারা না ফেরার দেশে চিরকালের মতো হারিয়ে যায়, সে যে বড় অসহায় হয়ে পৃথিবী ছাড়ে আপনজনদের ছাড়াই, সেকথা কে আর কাকে বোঝায়!

তাই ছোট্ট অবুঝ সুমি আজও অপেক্ষারত তাঁর প্রিয় ভাইয়া 'সুমন' এর অপেক্ষায়...


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy