Partha Pratim Guha Neogy

Romance Tragedy

3  

Partha Pratim Guha Neogy

Romance Tragedy

আটপৌরে প্রেমের গল্প

আটপৌরে প্রেমের গল্প

3 mins
509


-তুমি আসলে একটা আনরোমান্টিক!

-আমি?

-হুম, তুমি..

-কী জন্য?

-অনেক কিছুর জন্যই..

-যেমন?

-যেমন সেদিন বৃষ্টি হচ্ছে, আমি তোমাকে বললাম চলো বৃষ্টিতে ভিজি; কিন্তু তুমি কী করলে? বললে না থাক..ঠান্ডা লেগে যাবে, এখানেই দাঁড়িয়ে থাকি।

-বৃষ্টিতে না ভিজলেই আনরোমান্টিক?

-ঠিক তা না। এমন আরো অনেক কিছুই আছে, ঐটা তো একটা উদাহরণ দিলাম মাত্র।

-ওহ্..

-হুম..

এই হলো আমার গার্লফ্রেন্ড বিজলীর সাথে আমার কথোপকথন। বিজলী যে কথা একেবারে মিথ্যাও বলেনি, সেটা আমি নিজেও জানি। ছোটবেলায় আমার মা-ও বলত আমার মধ্যে না-কি একেবারেই রসকষ নাই।সত্যি কথা বলতে কী আমি ঠিক এই ফিলিংস গুলো বুঝে উঠতে পারি না। ফলে পরে পস্তাই - তখন হাত কামড়ানো ছাড়া আর কিছু করার থাকে না।

কিন্তু এ থেকে মুক্তির উপায় কী! এভাবে তো চলতে দেয়া যায় না। আর চলতে দিলে গার্লফ্রেন্ড তো আর গার্লফ্রেন্ড থাকবে না, অন্যের জাস্ট ফ্রেন্ড হয়ে যাবে।

গার্লফ্রেন্ডকে অন্যের জাস্ট ফ্রেন্ড হওয়া থেকে বাঁচানো জন্য আমি নানান উপায় খুঁজতে লাগলাম। সারাদিন কোক খাই আর বুদ্ধি খুঁজি; কিন্তু মাথায় কিছুই আসে না। কোক খেতে খেতে কয়েকদিনে আমার ওজন পাঁচ কেজি বেড়ে গেল, তারপরও মাথায় কিছু আসল না।

এবার কোক নিজে না খেয়ে মেসের জীবন ভাইকে খাওয়ানো শুরু করলাম এবং কাজে দিল। জীবন ভাইয়ের পরামর্শ মতো ইউটিউবে শর্টকাটে রোমান্টিক হওয়ার নানান উপায় খুঁজতে লাগলাম।

সহজে রোমান্টিক হওয়ার পাঁচটা টিপস, দশটা টিপস, এরকম হাজার হাজার ভিডিও দেখতে দেখতে একসময় আমি ওভার রোমান্টিক হয়ে গেলাম।

অনেক ভিডিও দেখা হয়েছে, এবার apply - র পালা। একদিন শুভক্ষণ দেখে আমি মাঠে নেমে পড়লাম।

বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে। রাত হয়েছে বেশ। রাত হয়েছে তাতে কী, রোমান্টিকতার তো কোনো দিন-রাত নেই। আর তাছাড়া রোমান্টিসিজমের জন্য রাতই সবচেয়ে পারফেক্ট।

একটা নীল পাঞ্জাবি পরে ছাতা ছাড়াই বাইরে বেরিয়ে গেলাম। হাতে একটা গোলাপের তোড়া নিলাম। বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে রাস্তায় হাঁটছি।

হাঁটতে হাঁটতে আমি এখন বিজলীদের বাসার সামনে। কিন্তু কী আশ্চর্য! দারোয়ান বেটা কিছুতেই আমাকে ভিতরে ঢুকতে দিবে না। বেটা এর আগেও আমাকে বিজলীর সাথে কয়েকবার দেখেছে, তারপরেও দিচ্ছে না। শেষমেশ দরদাম করে বেটার পকেটে তিনশ টাকা গুঁজে দিয়ে ভিতরে ঢুকলাম।

বিজলীদের বাসায় গিয়ে কলিং বেল চাপতেই বিজলীর মা এসে দরজা খুলে দিল। বিজলীর সাথে দেখা করতে এসেছি শুনে তিনি একটা নবম আশ্চর্য টাইপ লুক দিলেন। তারপর চেঁচিয়ে বিজলীকে ডাকলেন।

আমি একটা সোফায় বসে আছি। আমার সামনের সোফায় বৃষ্টি। বিজলীর পাশে তার ছোটবোন। সেই সোফা থেকে একটু দূরে তার মা। আরেকটু দূরে দরজার কাছে তার বাবা। আর রান্নাঘর থেকে উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে বাসার কাজের মেয়েটা ।

বিজলী আমার দিকে কটমট করে তাকাচ্ছে। সেই তাকানোতে আমার অন্তর আত্মা শুকিয়ে যাচ্ছে। কোনোক্রমে মিনমিন করে বললাম , ‘এক গ্লাস কোক হবে? আমার আবার টেনশন হলে কোক খেতে হয়, নইলে গলা দিয়ে কোনো কথা বের হয় না।’

বিজলীর মা আমার হাতে এক গ্লাস কোক এনে দিলেন। আমি কোনোক্রমে সেটা ঢকঢক করে গিলে বিজলীর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে এক নিশ্বাসে বলতে শুরু করলাম, ‘তুমি নিশ্চয় আমার ফোন বন্ধ পেয়ে এতক্ষণ টেনশন করছিলে। বিশ্বাস করো..সারপ্রাইজ এভাবেই দিতে হয়, এভাবেই রোমান্টিক হতে হয়, লাভ গুরু চ্যানেল থেকে শিখেছি। বিশ্বাস করো আমার আর কোনো উপায় ছিল না, বাধ্য হয়েই এমনটা করেছি। সরি। বিজলী , বাইরে অনেক বৃষ্টি হচ্ছে। প্লিজ, চলো না দুজনে আজকে বৃষ্টিতে ভিজি। দুজন মিলে আজ রাতে নতুন কিছু একটা সৃষ্টি করি।’

পুনশ্চঃ এই ঘটনার পরের দিন বিজলীর বাবা রেজিস্টার ডেকে বিজলীর বাবার বন্ধুর ছেলের সাথে ওর বিয়ে দিয়ে দেয়। এরপর তিনটা বর্ষা কেটে গেছে। বৃষ্টির ঘর আলো করে বাদল, মেঘ, প্লাবন নামে তিনটা ছেলে এসেছে। এবার চতুর্থ ছেলে হলে নাম রাখবে সৃষ্টি এবং এবার ওরা একটা মেয়ের জন্য চেষ্টা করছে। আর মেয়ে হলে তার নাম রাখবে বর্ষা।

আজকেও বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে। সেই বৃষ্টির তালে তালে বিজলী আর ওর হাজবেন্ড নতুন কিছু সৃষ্টির চেষ্টা করছে আর আমি জীবন ভাইয়ের পরামর্শে বৃষ্টির রাতে সময় কাটাবার দশটি কার্যকারী উপায় লিখে ইউটিউবে সার্চ করছি ।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance