Sheli Bhattacherjee

Drama Inspirational

3  

Sheli Bhattacherjee

Drama Inspirational

আত্মবিশ্বাস

আত্মবিশ্বাস

2 mins
2.0K


"দেখ, দুপুরের এই কাঠফাঁটা রোদ্দুরে আমবাগানে দাঁড়িয়ে একের পর এক ঢিল ছুঁড়ে আমগুলোকে তাক করে চলেছে ছেলেটা।"


হাস্যরত আরেক কৈশোর কণ্ঠ এ কথার পরিপ্রেক্ষিতে বলে ওঠে ...

"আরে ও ছেলে নয় রে। মেয়ে।"


"বলিস কি?"


"হ্যাঁ রে। আর ও আম পাড়ার জন্য ঢিল ছুঁড়ছে না।"


বিপরীতে বিষ্ময়সূচক প্রশ্ন "তবে?"


"ও প্র‍্যাকটিস করছে। তিরন্দাজ হতে চায় ও।"


কথাটা মাথার উপর দিয়ে চলে গেল অপর কিশোরের। এই গ্রামে কোনো মেয়ে ছেলেদের মতো পোষাক পড়ে কিনা তির ছোঁড়ার নিশানা ঠিক করছে, ভেবেই তার অবাক লাগে।


এদিকে মেয়েটি তারপর ক্লান্ত হয়ে ঘরে ফেরার পথ ধরে। পথে দেখা হয় ওর বাবার সাথে। বাবা ছিলেন অটো রিক্সার ড্রাইভার। বাড়ির পথে যেতে যেতে হতাশায় ভেঙে পড়লো কিশোরী। কিছুতেই ঠিকঠাক করে নিশানা লাগাতে পারছে না সে। শুনে তার বাবা মেয়ের মাথায় স্নেহের হাত রেখে বললেন, "মনোবল রাখতেই হবে। মনোবলই যেকোনো মানুষকে তার লক্ষ্যে পৌঁছে দেয়।"

"কিন্তু বাবা, আমি একটা মেয়ে হয়ে এই খেলায় মেতে উঠেছি বলে, অনেকেই যে আমায় ..."

মেয়ের কথাকে মাঝপথে থামিয়ে দিলেন বাবা "একদিন তারাই তোকে সেলুট করবে। পেছনে না চেয়ে সামনের দিকে দেখ। আজ নিশানা সঠিক হয়নি বলে থেমে থাকিস না। অনুশীলনই একমাত্র চাবিকাঠি সাফল্যের দরজায় পৌঁছানোর।"


তারপর মেয়েটি তার বাবার কথা অনুসরণ করে চালাতে থাকে অনুশীলন। ঘরের দারিদ্রের সাথে সাম্য রেখে নিজের নিশানাকে ধার দেওয়ার জন্য সে বাঁশের তৈরি তীর ধনুক গড়ে অনুশীলন করতে শুরু করে। 


***********************************


না, বেশিদিন মেয়েটিকে মানে রাঁচির রাতু-চাটি গ্রামের মেয়ে দীপিকা কুমারীকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয় নি। সাফল্য ছাপিয়ে এসেছে তার ক্রমাগত নিরলস অনুশীলনের হাত ধরে। ২০০৬ সালে মেক্সিকোতে আয়োজিত আর্চারি বিশ্বকাপের জুনিয়ার কম্পাউন্ড প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় ভারতীয় হিসাবে জেতে দীপিকা কুমারী। তারপর ২০০৯ এ যুক্তরাষ্ট্রে আয়োজিত যুব বিশ্ব আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপে স্বর্ণ পদক জেতে সে। তারপর এক এক করে ২০১০ এ কমনওয়েলথ গেমে পদক জিতে, ২০১২ সালে ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পুরষ্কার অর্জুন পুরষ্কারের জন্য নির্বাচিত হয়। যা পরবর্তীকালে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির হাত থেকে ২০১৪ তে গ্রহণ করে দীপিকা। 


এরপরও দীপিকার জীবনে এসেছে অনেক সম্মান ও পুরষ্কার। পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত হয়েছে সে। অত:পর হৃদয়ে বিদ্ধ হয়েছে ভারতের আরেক নামকরা পুরুষ তিরন্দাজ অতনু দাসের প্রেম। বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে ভারতীয় এই দুই তিরন্দাজ।


দীপিকার কথায় এখনও বারংবার ভেসে আসে সেই কথা "অনুশীলনের কোনো বিকল্প নেই। ট্রাই ট্রাই এগেইন।"


(সমাপ্ত)


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama