Rinki Banik Mondal

Inspirational

3  

Rinki Banik Mondal

Inspirational

আস্তিক না নাস্তিক

আস্তিক না নাস্তিক

2 mins
700


ববিতা এই বাড়িতে বিয়ে হয়ে এসেছে প্রায় একবছর হতে চলল। ও এই সেনবাড়ির একমাত্র ছেলে রৌণকের স্ত্রী। এই বাড়িতে আসার পর থেকেই ববিতার শাশুড়ির সাথে বাকবিতন্ডা লেগেই থাকে। রৌনক সংসারের এই ব্যাপারে নাক গলায় না।

শাশুড়ির এত বাছবিচার, বাসি কাপড়ে এটা ছুঁতে নেই, ওটা ছুঁতে নেই, ঋতু বিষয়ে নানারকম আচার-বিচার, এগুলো ববিতা কিছুতেই মানতে চায় না। আর শাশুড়ির সাথে মনমালিন্য হওয়ার আরেকটা বড় কারণ ববিতা ঈশ্বর বিশ্বাসী নয়। শাশুড়ির কাছে ও এইজন্য 'নাস্তিক' বলে পরিচিত। তবে ববিতা ঈশ্বর বিশ্বাসী নয় ঠিকই, কিন্তু যে কোনো মানুষকে আপণ করে নিতে পারে। ঐ তো সেদিন ববিতার শাশুড়িমা একটি মুসলমান বাচ্চা স্কুলের জন্য চাঁদা চাইতে এসেছিল দেখে তাকে চাঁদাই দিল না, কারণ ও মুসলিম ছিল। কিন্তু ববিতার এইসব জাতপাত বিভাজনের মানসিকতা নেই। ও সেই ছেলেটিকে চাঁদাও দিয়েছিল, সাথে ভালোবেসে দুটো বিস্কুট'ও দিয়েছিল। এই নিয়ে বাড়িতে সেদিন শাশুড়ি বৌ'এর মধ্যে অশান্তিও কম হয়নি। "জীবে প্রেম করে যেই জন সেই জন সেবিছে ঈশ্বর"- ববিতা এইটাতেই বিশ্বাস করে।

তবে এইবার পুজোতে দেবীবরণের দিন হল এক কান্ড।দেবীবরণের দিন সকাল থেকেই ববিতার শাশুড়িমার মনটা খুব খারাপ। প্রত্যেক বছর এই দিনটাতেই তিনি সেজেগুজে লাল-পাড় শাড়ি পরে মাকে বরণ করতে যেতেন, কিন্তু তিন বছর হয়ে গেল তা আর হয়না। কারণ তার স্বামী নেই। তবে এইবার ববিতা শাশুড়িমার শত আপত্তি সত্ত্বেও তাকে জোর করে মন্ডপে নিয়ে গিয়ে দেবী বরণ করতে বাধ্য করায়। তবে শাশুড়িমার আপত্তিটি ছিল সমাজের ভয়ে, মেনে আসার প্রথার ভয়ে। কিন্তু ববিতা যে এইসব মানে না। যুক্তি তর্ক দিয়ে যে সে সমাজের মুখের ওপর কথাও বলতে পারে। তবে দেবী বরণ করতে পেরে ববিতার শাশুড়িমা খুশি হয়ে বৌমার উদ্দেশ্যে বলে- 

-------"নাস্তিক হলেও, তুই কিন্তু আমার নয়নের মণি হয়ে উঠেছিস।"

-------হ্যাঁ আমার আস্তিক শাশুড়িমা।তুমিও যে আমার বড় আপনজন। তাই তোমার মনের কষ্ট যে আমি বুঝি"

এই বলে ববিতা ওর শাশুড়িমা কে জড়িয়ে ধরে। শাশুড়িমাও আজ বৌমার উপর বেজায় খুশি।

নাস্তিক আর আস্তিকের সংমিশ্রনেই নয় এই সমাজ সুন্দর করে গড়ে উঠুক।



Rate this content
Log in