রাতের হিমেল বাতাস
রাতের হিমেল বাতাস
রাতের হিমেল বাতাস
প্রণব কুমার ভট্টাচার্য
লেখক
প্রফেসর ডাক্তার প্রনব কুমার ভট্টাচার্য। এম. ডি (কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়,): এফ আই সি পি (প্যাথলজি)
ভূতপূর্ব অধ্যক্ষ, কৃষ্ণনগর ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্স ,পালপাড়া মোড় , কৃষ্ণনগর, নদীয়া জেলা , পশ্চিম বঙ্গ ।
পূর্বতন অধ্যক্ষ জে. এম. এন মেডিক্যাল কলেজে চাকদহ। নদীয়া জেলা। পশ্চিম বঙ্গ
পূর্বতন প্রফেসর এবং প্রধান প্যাথলজি বিভাগ পশ্চিম বঙ্গ সরকারের মেডিক্যাল এডুকেশন সার্ভিস ক্যাডারের
কবিতার রচনা তারিখ-:.০৭.০৩.২০২৫ ভোর ১টা ১২
এডিট করা -: হয়নি
কপিরাইট-: সম্পূর্ণ ভাবেই প্রফেসর ডাঃ প্রণব কুমার ভট্টাচার্যের
রেসিডেন্স এর ঠিকানা-:
মহামায়া এপার্টমেন্ট। মহামায়াতজীবন ও মৃত্যুর মাঝেলা ১৫৪ নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু রোড,পোস্ট অফিস -গড়িয়া কোলকাতা ৮৪,
E mail profpkb@yahoo.co.in
টাইটেল-: রাতের হিমেল বাতাস
তুমি কি শুনতে পাও, প্রফেসর?এ
এই হাওয়ার কানাকানি?
বইয়ের পাতায় পাতায় যে শব্দেরা নাচে,
সেগুলো কি কখনো তোমার নাম ডাকে?
কাল রাতের বৃষ্টি ভিজিয়ে দিয়েছে জানালা,
আশ্চর্য তোমার চোখে এখনো শুকনো মরুভূমি,
আমি যেন ছায়া হয়ে বসে থাকি,
তোমার কথারা আলো ছড়ায়,
আমি নীরব। প্রদীপের মতো জ্বলি।
তুমি বোঝাও মহাকাশের ব্রহ্মান্ড এর ব্যাখ্যা,
আমি খুঁজি মনের অভিকর্ষ।
তুমি বলো, “স্ট্রিং থিওরী ,”
আমি ভাবি, প্রতিটি কর্মের প্রতিক্রিয়া
তুমি কি জানো,
নদীর জল চুপচাপ ভাসায় যেসব ভেলা,
সেগুলোও একদিন সমুদ্র চায়?
তোমাকে ছাড়াই আমি আজকাল বইয়ের পাতায় দাগ কাটি,
একদিন তুমি যদি বুঝে ফেলো—
এই বাতাস কি শুধুই বাতাস ছিল?
তুমি কি দেখেছো, প্রফেসর?
আলো-আঁধারের ফাঁকে ফাঁকে
কোনো এক ছায়া গলে পড়ে
স্মৃতির নির্জন পঙ্ক্তিগুলোয়?
আমি এখনও অপেক্ষায়,
সমুদ্রের ঢেউ যেমন ফিরে চায় আকাশ,
তুমি কি বুঝবে কখনো
আমার শব্দেরা কোথায় ভাসে?
রাতের হিমেল বাতাস
তোমার কাচের জানালায় আঁকে
নিস্তব্ধতার ভাষা,
তুমি কি পড়তে পারবে
সে নীরব ছন্দ?
এই কবিতাটি এক গভীর আত্মঅন্বেষণ, অপেক্ষা ও সংলাপের প্রতিচ্ছবি। এটি দুটি ভিন্ন জগতের মানুষের ভাবনার সংঘাত ও সংযোগকে তুলে ধরে। কবিতাটির দর্শন বিশ্লেষণ করলে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো বোঝা যায়—
১. জ্ঞান বনাম অনুভূতি:
কবিতার "প্রফ" (সম্ভবত একজন অধ্যাপক বা বিজ্ঞানী) মহাকাশ, স্ট্রিং থিওরি, এবং ব্রহ্মাণ্ডের রহস্য ব্যাখ্যা করেন, যা যুক্তিনির্ভর জগতের প্রতীক। অন্যদিকে, কবি অনুভূতি, মনের অভিকর্ষ, ও সম্পর্কের গভীরতা খোঁজেন। এটি যুক্তি বনাম অনুভূতির চিরন্তন দ্বন্দ্বকে প্রকাশ করে।
২. সংলাপ ও নিঃসঙ্গতা:
কবিতাটি মূলত একতরফা সংলাপ—কবি প্রফেসরের প্রতি তার অনুভূতি প্রকাশ করছেন, কিন্তু কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। "আমি যেন ছায়া হয়ে বসে থাকি, তোমার কথারা আলো ছড়ায়, আমি নীরব। প্রদীপের মতো জ্বলি।" এখানে একতরফা ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, ও নিঃসঙ্গতার অভিব্যক্তি দেখা যায়।
৩. অপেক্ষা ও আকাঙ্ক্ষা:
কবি অপেক্ষা করছেন—যেমন সমুদ্র আকাশের কাছে ফিরে যেতে চায়। এটি সম্পর্কের এক অসম আকাঙ্ক্ষার রূপক, যেখানে এক পক্ষ অনুভূতিগুলোকে গুরুত্ব দেয়, আর অন্য পক্ষ যুক্তিবাদী ও দূরত্ব বজায় রাখে।
৪. পরিবর্তন ও উপলব্ধি:
"তোমাকে ছাড়াই আমি আজকাল বইয়ের পাতায় দাগ কাটি,"—এই পংক্তি বোঝায় যে কবি নিজেকে খুঁজে পাওয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছেন, যদিও স্মৃতির ছায়া এখনো রয়ে গেছে।
৫. নীরবতার ভাষা:
শেষ অংশে "নিস্তব্ধতার ভাষা" বোঝায় যে কিছু অনুভূতি প্রকাশ না করেও বোঝা যায়, যদি কেউ তা উপলব্ধি করতে পারে।
দর্শনের সারমর্ম:
এই কবিতার দর্শন মূলত অস্তিত্ববাদ, নিঃসঙ্গতা, ও অনুভূতির গভীরতায় নিহিত। এটি বোঝায় যে বিজ্ঞান ও যুক্তির বাইরেও এক অন্তর্নিহিত সংবেদনশীলতা আছে, যা কেবল এক কোমল নারী হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করা যায়। কবির আকাঙ্ক্ষা, অপেক্ষা, এবং আত্মোপলব্ধির যাত্রা এখানে গুরুত্বপূর্ণ।
এই কবিতাটি এক অর্থে জীবনানন্দ দাশের "আমি ক্লান্ত প্রাণ এক"—এর ভাবধারাকে মনে করিয়ে দেয়।

