খুব হাসতো সে মেয়েটা
খুব হাসতো সে মেয়েটা
খুব হাসতো সে মেয়েটা
পাড়ায় বেপাড়ায় সময়ে অসময়ে
খিলখিলিয়ে উঠতো..
অনেক সময় তার হাসির শব্দ, মেলে থাকা অশ্বত্ব গাছটার ডাল পাতা চড়ে
সারি দেওয়া দোকানগুলো পেড়িয়ে, আসতো আমার চিলেঘরে
জিজ্ঞেস করলে বলতো, 'কি করবো, হাসি পায় যে' আবার হাসতো…. তারপর আবার….
খুব হাসতো সে মেয়েটা
অবশ্য এখন একবারে ভিন্নরকম
সময়ের নিষ্ঠুর কষাঘাত বদলেছে জীবন ; সে হাসি হারিয়েছে
চোরাবাস্তবের অন্ধকার অতলে
একবার দেখেছিলাম, বাবার সাথে বাজারে গিয়ে কিনে এনেছিল একটা দেবদারু চারা
এখন সেটা আকাশ ছোঁয়া এক বৃক্ষ
মূহূর্তে ছুটে আসা বাতাসে গা ঝাড়া দিয়ে বাড়িটার নিস্তব্ধতা ভাঙে
ঘোর কাটে,
ফিরে তাকায় মেয়েটা - বাবার কথা মনে পড়ে
একটা দীর্ঘশ্বাস
তারপর আবার নিশ্চুপ কাজ করে যায় ; নষ্ট মুনির অভিশাপগ্রস্ত কোন মানবীর মতো
কাজ করে যায়
ঝাড় দেয়, উঠোনে গোবর ছড়া
কাপড় কাচে
রান্না করে
সূর্য পশ্চিমে ঝুঁকলে
কুয়োর পাড়ে বাসন মাজার শব্দ লেজ নাড়িয়ে ঘুরে বেড়ায় বাড়িময়..
দুটো ঘরে তালা ঝোলে
বাবা মারা গেছেন আট মাস, গেল শুক্রবার বোনের ছেলে দুবছরে পড়ল
কোণের ঘরটায় শয্যাশায়ী মা আজ কতদিন..
বড় শুনশান এই বাড়িটা
ধীরলয়ে ঘিরে নেয় নিঝুম সন্ধ্যা
দিনের শেষ আলোকবিন্দুটুকুও যখন এক নিঃশ্বাসে টেনে নেয় রাত্রি
দেওয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে মেঝেতে সে বসে পড়ে
শূন্যে লটকে থাকে দৃষ্টি
একটা ছেলের গলা, বেড়ার ওপাশে, কাওকে ডাকছে..
অপলক চোখে বিষন্ন স্মৃতি ঢেউ খেলে - দৃশ্যগুলো জুরতে জুরতে.. জুরতে জুরতে
সেই দিনগুলো স্পষ্ট হয় চোখের সামনে
স্কুল থেকে ফেরার পথে
যে ছেলেটার সাইকেলের চেন্ পড়ে যেত বারবার
মিটিমিটি দেখতো
পরে বুঝেছিল, তার জন্য নয়
মেলায় যাবার পথে
যে ছেলেটা গা ঘেঁষে যেতে যেতে বলেছিল
আমিও যাব নাকি তোমাদের সাথে ?
সেও তার জন্য নয়
তাকে দেখতে এসে ছেলের বাবা বলেছিলেন,
'বাঃ, লক্ষী প্রতিমার মতো মুখ !'
মূহূর্তে চলকে উঠেছিল তার স্তিমিত রক্তের স্রোত
কিন্তু..
সেও তো বোনকে দেখে
মায়ের ডাক এখন তার কানে - কেমন গোঙানির মতো শোনায়
ম্রিয়মান বাল্বের আলোয় ঘরটা ভূতুরে লাগে
পেছনে দেওয়ালে ঝুলছে ধূসর মলিন ওদের গ্রুপ ফটো
সবাই চুপ আর
ও হাসছে খিলখিল করে
খুব হাসতো সে মেয়েটা…. ।।