ইতিকথা
ইতিকথা
(১)
নমস্কার! আজ আংশিক মেঘলা থাকবে আকাশ, বাতাসে জলীয় বাষ্পের উপস্থিতিতে বাড়বে আর্দ্রতাজনিত অস্বস্তি।
বিদ্যুৎ অফিসের তরফে জানানো হয়েছে বৈদ্যুতিক তার বিচ্ছিন্ন হওয়ায় এখন টানা কিছুদিন বিদ্যুৎ বিভ্রাট চলবে।
তাই আজ Suzzaneর সাথে গঙ্গার পাড়ে দেখা হবেনা সৌগতর।
সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, প্রশান্ত মহাসাগরে ঝড় ওঠার ফলে দূর দ্বীপবাসিনীর সাথে সমস্ত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে।
ঝিন্টির আসতে দেরী হচ্ছে দেখে কিছু বেকার graduate যুবক আলিপুর আবহাওয়া দফতরে হানা দিয়েছে।
এণ্টালির মালার আদলে দুর্গা মূর্তি গড়ার বিরুদ্ধে আজ উচ্চ আদালতে জন স্বার্থ মামলা দায়ের করেছে এক দল বামন।
অন্যদিকে অগোচরে, অজ্ঞাতসারে ভোরের শিশির ফোঁটার হাত ধরে টলমল পায়ে এগিয়ে আসছে শীত।
(২)
আরও জানা যাচ্ছে, একটি ধূসর রঙের বেড়াল নিখোঁজ হয়েছে,
শেষ দেখা গিয়েছিল আহিরীটোলা ঘাটের সিঁড়িতে বসে রোদ পোহাতে।
তার মা খুঁজেছে তাকে মুদির দোকানের বাকির খাতায়,
কুলুঙ্গির মধ্যে রাখা সিঁদুর কৌটোর ভিতরে খুচরো ১ টাকায়, ২ টাকায়।
কিন্তু বেড়ালের খোঁজ মেলেনি।
অনেক রাতে সব কাজ সেরে মা যখন শোবার ঘরে আসে,
চাঁদের আলোয় ভেজা বিছানার ওপর শুয়ে থাকা দুটো জ্বলন্ত চোখ বলে ওঠে,
" মা কন্যাশ্রীর টাকা টা দিয়ে এবার দোকানের বাকি টা মিটিয়ে দিস।"
এদিকে উঠোনের ঈশানকোণে কাঁঠালচাঁপা গাছ টা দুমড়ে মুচড়ে মাটি তে মিশে যাচ্ছে ক্রমাগত।
(৩)
শ্বশুরবাড়িতে tiktokvideo করতে না দেওয়ায় যে নতুন বউটা সেদিন ওই দোতালা সাদা বাড়িটার ছাদ থেকে ঝাঁপ দিল,
তার সাথে আজ একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন একসময়ে শীতকাতুরে হলেও এখন তিনি বরফে সাঁতার কাটতে শিখে গেছেন।
গলায় আটকে থাকা মাছের কাঁটাটার থেকে এখন আর দুর্গন্ধ বেরোয় না।
অষ্টমীতে যে নীল শাড়িটা পরার কথা ছিল,
তাতে নাকি আলতার দাগ লেগেছে বলে তার ববকাট শাশুড়ি সেটা বিক্রি করে দুটো প্লাস্টিকের বালতি কিনেছে।
তিনি আরও জানিয়েছেন, ছোট বেলায় পাড়ার মাঠে badminton খেলতে গিয়ে যেসব দাদারা তাকে chocolate খাওয়াতে নিয়ে গেছিল,
তাদের নব নির্মিত নারী মুক্তি মোর্চার সদস্যা হতে পেরে তিনি গর্বিত।
" DAIRYর কান মলা পাতার ভাঁজের ভেতরে গুঁজে রাখা ফর্দটা যেন তোমাদের দাদা অফিস যাওয়ার পথে নিয়ে নেয়।
ফর্দর নিচে ছোট্ট দু লাইন লেখা, " তোমার আমার জন্যে mysore sandal সাবানটা আনতে ভুলনা কিন্তু।"
(৪)
সোদপুরের রিমঝিম যখন একদিন ছাদে কাপড় মেলতে গিয়ে বাজপাখির প্রেমে পড়ে বাসা ত্যাগ করল,
এক শালিক হন্তদন্ত হয়ে মোড়ল কাকাতুয়ার কাছে গেল, বলি এর বিহিত আপনাকে করতেই হবে,
এ যে ঘোর অনাচার, ঘুঘুর ঘরের মেয়ে হয়ে কিনা শেষে বাজ/শকুনের সাথে সংসার বাঁধবে, ছিঃ ছিঃ
এই ধৃষ্টতার কি কোন সাজা হবেনা জাহাঁপনা?
বক বকুম করতে করতে এলো শত খানেক বিজ্ঞ পায়রার দল। তেনারা সাফ জানিয়ে দিলেন,
ঘরের মেয়ে কে অমঙ্গল ঘটার আগে ঘরে ফেরাতে না পারলে ছাঁটা হবে ডানা, পড়বে পায়ে বেড়ি।
দীন মজুর চড়ুই ভয়ে ভয়ে বলল, মেয়ে মানুষের এত দুঃসাহস তো জীবনেও দেখিনি বাপু।
কাকাতুয়া তলব করলেন প্রবাসী কোকিল কে, দিকে দিকে এই খবর ছড়িয়ে দিতে হবে,
বাজের বংশ ধ্বংস করেই সাঙ্গ হবে পালা।
ডাকা হবে সভা, বসবে আদালত। সকাল সন্ধ্যা পেয়াদা কাকেরা মহড়া দিতে আরম্ভ করল,
রাতের অন্ধকারে গাছের ডালে বসে পাতার আড়াল থেকে প্যাঁচার দল উঁকি দিল সহস্র জানালার ফাঁকে।
শুরু হল সভা, ঝাঁকে ঝাঁকে এলো পাখি, বুলবুল , মাছরাঙা, টুনটুনি, হাঁস, ময়না,টিয়া, বাবুই।
এবার বিচার হবে, জব্দ হবে বদজাত মেয়ে। কাঠঠোকরার ORDER ORDERএ থামল কোলাহল।
একে একে বিজ্ঞজনে বক্তব্য রাখলেন। পক্ষিমাতা কে সামনে এনে দেওয়া হল উদাহরণ, করতে হবে এনাকেই অনুকরণ।
ঠিক তখন নীচের তলায় বসে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে পাত্রর মা রিমঝিম কে জিজ্ঞেস করলেন,
"মা তুমি প্লেনে চড়েছ? আমার বেটু কিন্তু প্লেনেই ট্রাভেল করে বেশিরভাগ।"
তীক্ষ্ণ দীপ্ত দৃষ্টিতে তার হবু শাশুড়ির দিকে চেয়ে রিমঝিম একটু মৃদু হেসে বলল "না"।