আয়না
আয়না
আজ মন ভালো নেই,
আজ আমার সই পালিয়েছে,
কে জানে কোথায়,
বাজিয়ে আপন কলতান হয়তো বা ভিজিয়েছে কারোর প্রাণ।
--দিন রাত যে মেয়েটা বিছানায় শুয়ে বইয়ের পাতা ওল্টায় আর খাতার মধ্যে ঘুড়ি আঁকে ,তার আবার সই কোত্থেকে এলো শুনি..
কেন ওই যে মেঘের বজরায় চড়ে আসে , ওই তো আমার বিষণ্ণতার
সঙ্গী, আমার পোড়া শহরের গঙ্গা,
আমার মন প্রাসাদের জানালা....
আমার সই।
--ওঃ বৃষ্টি, তাই বললেই তো হয় বাপু, কি যে ভালো দেখলে!! তুমি আর কি বুঝবে মেয়ে মানুষের জ্বালা, ঘরের কাজ তো আর করতে হয় না, সারাদিন তো চিলে কোঠার ঘরে বসে কি জানি কি করো,
আঃ এখন আর কথা বলতে ভালো লাগে না, তুমি এখন এসো দেখি।
--তা চলে যাচ্ছি! কিন্তু এভাবে আর কতদিন! বিয়ের সানাই বাজলো বলে ! তখনতো শ্বশুর বাড়ির লোক বলবে, মেয়েকে কিছুই শেখায়নি ,পড়ায়নি।
কেন এইতো বেশ আছি,
জীবন -ছন্দের পরিপাটি বাগানে আমি খাঁচা বন্দী হতে চাই না,
ছন্দ পতনের নীল আকাশেই তো পেখম মেলেছি,
আমি মুক্ত বিহঙ্গ এক।
--আঃ মোলো যা, তাহলে সারা জীবন টা কি এই বাপের ঘাড়ের বোঝা হয়ে পড়ে থাকবে!
শিব রাত্রির সলতে হলেও বুঝি আমাকে এই কথা বলতে,
আমি তো চেয়ে ছিলাম যেতে ,এই পোড়া মাটির দেশ ছেড়ে,
স্বপ্নে মোড়া খামে এসেছিল চিঠি,
নৃত্য সম্রাজ্ঞী !
হতেও তো পারতাম বলো.....
মা সেদিন ফালা ফালা করে তরমুজ কেটেছিলেন,
সাদা চিনে মাটির প্লেটে রাখা সেই তরমুজ আমি পরিবেশন করেছিলাম হাসিমুখে|
--সেই কোন এক জন্মে কোন চিঠি এসেছিল, তার দুঃখে বুঝি এইভাবেই সারাটা জীবন কাটাবে. মেয়েদের ঘড়ির কাঁটাটা তাড়াতাড়ি ছোটে.... বুঝলে, আমাদের কি আর স্বপ্ন দেখতে আছে, পুরুষ মানুষের তৈরি বিলাস বহুল অট্টালিকার মাঝে আমরা হলাম নির্বাক আয়না গো। সেখানে শ্বেত পাথরের মেঝে , ঝাড় লণ্ঠন, আছে অফুরন্ত আহারের আয়োজন , সেখানে আমরণ বসেছে জলসা। আর বৃদ্ধ রাজা গোলাপের ঘ্রাণ নিতে নিতে সামনে আয়নায় নিজের প্রতিবিম্বের দিকে চেয়ে আছেন। আমরা শুধুই একটি আয়না গো আয়না।
সরাও এই মায়ার বাঁধন, গোপনে মুছে নাও অশ্রুজল,
আমি আজ হাঁটতে চাই,
ছায়া বীথির পথে আমি হাঁটতে চাই অসংখ্য জোনাকির সাথে,
করো না আমায় দেবতার নৈবেদ্য,
আমি হাঁটতে চাই পিছুটানহীন, বৃষ্টির খোঁজে,
কাকতাড়ুয়ার দেশে, সোনালী নদী বক্ষে আমি সেই ছায়ামানুষ যে অনন্তকাল নৌকা বাওয়ায়,
শিল্পীর চিরমলিন চিত্রপটে আমি সহস্র তুলির টান ,
মহা বিশ্বের অপার রহস্যের মাঝে আমি অবিরল আঁধার স্রোত।
…………………………