এক অন্যরকম মা
এক অন্যরকম মা
হলদে নিয়নে মেশা বিকেলটা বড্ড আবছা আজ।
মেসবাড়ির জংধরা জানালা ঘেঁষে ছটফটে আমি,
- বাড়ি ফিরে তোমার গালে হামি আঁকব বলে- 'মা'।
ফুলগলি হতে গোলাপ-মোগরা কিনেছিলাম , ভেবেছিলাম, তোমার খোঁপায় সাজিয়ে দিব।
- কাল মাতৃদিবস ছিল যে তাই।
কিন্তু গিয়ে উঠতে পারলাম আর কই।
স্নায়ুরন্ধ্র থেকে পাঁজরে বিলি কাটছে ,
তোমার রঙের সুতো-রা -- হামাগুড়ি,
বুলি আওড়ানো, সহজপাঠ, তোমার হাতের
ভাতমাখা ---স্মৃতির পারদ বেড়েই চলেছে।
অবাক হই আমি,মাতৃদিবস নিয়ে এত আনন্দে মাতে যারা,ওরাই কিনা যাচ্ছে ভুলে
-" মাতৃত্ব তো শরীরে আর লিঙ্গে নয়,
সে তো বাসা বাঁধে আদরে আর মমতায়। "
মাতৃত্ব -'ধ্রুবক, শর্তমৃত' ।
তাই তো মাতৃহারা শিশুর বাবা,
কিংবা মূক পশুকে হাত বাড়ানো মানুষগুলোই - আজ ওদের মা।
মা জানি আমি, শহরের ক্ষীণ মানসিক ওরা,
আঙুল তোলে, রোজ চেঁচায়
তোমায় -
'শখ্ দেখেছ ছেলের, মা হবে।
মেয়েতো নয় আদতে এক রূপান্তরিত নারী। '
কিন্তু মা জানো, তুমিতো আমার কাছে
শাড়ীর ভাঁজে , টিপের নকশায়,
চুড়ির রিনিরিনি তে
প্রকৃত নারী- 'আমার মা' ,
যে মা একুশ বছর আগের, ডাস্টবিনে
কাতরানো ছোট্ট আমি-কে অলিন্দে ঠাঁই
দিয়েছিলে। কই সেদিন সেই সমালোচনায়
মত্ত মানুষেরা কোথায় ছিল !!!
ভাবি আমি ,
এবার মরলে তুমি হয়ে জন্মাবো।
তোমার লড়াইটা দেখব লড়ে ।তোমার মতো -মানুষগুলোর চাপা কান্নার গতি রুখব।
জানো মা, দুটো টিউশনি ধরেছি, বছর পেরোলে চাকরিটা ছুঁলে, আমাদের একটা বাড়ি হবে -- ঠিক যেমনটা তুমি স্বপ্ন দেখো । সেদিন ,
আকাশটাও হবে তোমার ।
সমালোচনার বিষাক্ত রেণু ভাসবে না আর ওই আকাশে,
--- উঠবে না আর আঙুল।
শব্দেরা গড়বে 'এক অন্যরকম মা 'এর গল্প, তবে পরাজয়ের নয় জিতে ফেরার রাজকাহীনি ।