বৃষ্টির কাব্য (পর্ব-৪)
বৃষ্টির কাব্য (পর্ব-৪)
৪.
"রেনু কালকে একটু ঝামেলা হতে পারে।"
মেঝের দিকে তাকিয়ে কথাটা বলল ইনু সাহেব।
"কেন ভাইজান কী হবে?"
"কী হবে সেটা কীভাবে বলি। আমার মন বলছে ঝামেলা হতে পারে।"
রেনু বেগম চিন্তায় পড়ে গেলেন। তিনি ধরেই নিয়েছেন কাল হাসান কোনোকিছু করবে।
ইনু সাহেব যদিও কিছু বলেনি কী হবে। তাও রেনু বেগমের কেমন যেন মনে হল হাসানেরই কোনো যেন ঝামেলা হবে।
" ভাইজান কার ঝামেলা হবে এটা বলতে পারবেন? "
" না এটাও বলতে পারছিনা।"
রেনু বেগমের মনে হচ্ছে তিনি মিথ্যা বলছেন যে তিনি জানেন না। কারণ তিনি রেনু বেগমের চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলছেন না। আসলে ইনু সাহেব জানেন কার কী ঝামেলা হবে।
রেনু বেগম চিন্তিত মুখে বসে আছেন। কলিং বেল বাজছে। রেনু বেগম উঠে দরজা খুলতে গেলেন। ইনু সাহেব হাসানের ঘরে যাওয়ার জন্য আগালেন। তার সাথে আলাপ করে সময় কাটানো এসময় সবচেয়ে ভালো হবে।
মোবারক সাহেব ঘামে ভেজা শরীর নিয়ে ভেতরে ঢুকলেন। খুব হাপাচ্ছেন। রেনু বেগম তার অবস্থা দেখে বলতে চেয়েছিলেন- তোমার আবার কী হল এতো হাপাচ্ছ কেন?
তিনি বলতে গিয়েও বললেন না। ঘরে ঢুকেই মানুষ একটু আরামে বসতে চায়। এসময় কথা বলতে একদম ইচ্ছা করে না । কিছুক্ষণ আরাম করে বসে থাকতে ইচ্ছা করে। মোবারক সাহেবও তাই করলেন। রেনু বেগম মোবারক সাহেবের টিফিন বক্স রান্নাঘরে রেখে বসার ঘরে এলেন। সেখানে মোবারক সাহেব ছিলেন না। বোধহয় ভেতরের ঘরে গিয়েছেন। তিনি কেন হাপাচ্ছিলেন সেটা রেনু বেগম জানলেন না আর। যদিও পরে জানতে পারবেন। কিন্তু এইসময় জানলে বিষয়টা আরো ভালো করে বলতে পারতেন মোবারক সাহেব। এধরনের ছোটখাটো কথা হয় না বলেই তাদের মধ্যে দুরত্ব বাড়ছে ধীরে ধীরে।
ইনু সাহেব হাসানের ঘরে ঢুকতেই দেখলেন হাসান খাটে বসে আছে চুপচাপ। তিনি খেয়াল করে দেখলেন তার ঠোঁট নড়ছে না। অর্থাৎ সে বিড়বিড় করে কথা বলছে না। হাসান তাকে দরজায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলল," মামা ভেতরে আসেন।"
তিনি ভেতরে ঢুকে হাসানের পাশে বসলেন। হাসানকে তিনি শুষ্ক গলায় জিগ্যেস করলেন," জাহেদ উল্লাহ আছে এখানে?"
হাসান মুচকি হাসি দিয়ে বলল, " না মামা। সে শুধু বৃষ্টি হলেই আসে। তবে দুই দিন আগে এসেছিল। "
" কী বলল এসে?"
" তেমন বিশেষ কিছু না। কবিতা বলেছিল। "
ইনু সাহেব অবাক হয়ে জিগ্যেস করলেন, " কী কবিতা? ও তোকে কবিতা শোনায়?"
" মাঝে মাঝে।"
" কবিতাটা আমাকে একটু শোনা।"
" মামা ভুলে গিয়েছি। "
ইনু সাহেব অট্ট হাসি দিয়ে বললেন, " আরে সমস্যা নেই। "
" মামা তোমার কোনো কিছুতেই সমস্যা থাকে না। সবসময় হাসতে থাকো। কেন মামা?"
হাসান প্রশ্ন করবে- এরকম তিনি কখনোই ভাবতে পারেন নি। যাই হোক তিনি হাসানের প্রশ্নের জবাবে বললেন, " আরে সংসারেই সব সমস্যা। সংসার নেই সমস্যাও নেই। I am a very Happy man."
হাসানের মুখে এখনো মুচকি হাসি। সে তার মামার দিকে না তাকিয়েই বলল, " আর এই সংসার নামক সমস্যাতেই পড়তে যাচ্ছে সাজ্জাদ ভাইয়া। "
ইনু সাহেব চমকে উঠে বললেন, " সাজ্জাদ তোকেও বলেছে? "
" হু "
ইনু সাহেব চুপ করে রইলেন। তিনি বুঝতে পারলেন সাজ্জাদকে দেখে যতটা চাপা স্বভাবের মনে হয় সে ততটাও চাপা না। তার সমস্যার কথা সবাইকে গোপনে বলে বেড়াচ্ছে।
রেনু বেগম ইনু সাহেবকে হাসানের ঘরে ঢুকতে দেখার পর থেকেই তার ভেতরে কেমন জানি করছে। তার মনে হল হাসান ইনু সাহেবের মত জঘন্য কাজটা করবে। আর সেটা কালকেই। নাহলে ইনু সাহেব তাকে বলত না যে ঝামেলা হবে।
খাবার শেষে মোবারক সাহেব সোজা রুমে চলে যান। কিন্তু আজকে গোমরা মুখে যে চেয়ারে তিনি খান সেখানেই বসে আছেন। রেনু বেগমও থালা বাসন সরিয়ে ঠিক মোবারক সাহেবের বিপরীত চেয়ারটায় বসলেন। মোবারক সাহেব গোমরা মুখ করে বললেন, " রেনু শোন। কাল আমার আসতে দেরী হবে। বসের গ্রামে যাব। আচ্ছা তোমার বসের কথা মনে আছে?"
" ঔ যে মোজাফ্ফর নামের ভদ্রলোকটা?"
" হ্যাঁ। তিনি আজকে বিকেলে মারা গেছেন। কাল তার জানাযায় যাব। "
রেনু বেগম বুঝতে পারলেন কেন মোবারক সাহেব বাসায় হাপাতে হাপাতে এসেছিলেন। নিশ্চয় মেডিকেলে দৌড়াদৌড়ি করতে হয়েছে। তার আবার শ্বাসের সমস্যা বেশিক্ষণ হাটলে শ্বাসের সমস্যা হয় যা অনেকক্ষণ থেকে যায়।
রেনু বেগম স্বাভাবিক গলায় বললেন, " কালকে আসতে আসতে কতক্ষণ হবো। "
" জানি না এখনো। দেখি না কতক্ষণ লাগে।"
এটা বলেই মেবারক সাহেব উঠে চলে গেলেন নিজের রুমে। এখস তিনি একটা পুরো সিগারেট খাবেন। রেনু বেগম সিগারেটের গন্ধ সহ্য করতে পারেন না বলেই এখন তিনি রুমে যেতে পারবেন না। তিনি একলা বসে আছেন ডাইনিং রুমে। কারো সাথে গল্প করতে পারলে ভালো হত। সামিরা ঘুম, হাসান আর সাজ্জাদের সাথে গল্প করা মানে বটগাছের সাথে গল্প করা। ইনু সাহেবের সাথে গল্প করতে তার ইচ্ছা নেই। আর মোবারক সাহেব তার গল্প করবেন না। রেনু বেগম তাই ঘুমানোর সিদ্ধান্তই নিলেন।
