অসুখ (গদ্যকবিতা)
অসুখ (গদ্যকবিতা)
সবসময় অনর্গল কথা বলতে থাকা মেয়েটা,
হঠাৎ করে কেমন যেন চুপ করে যায়।
আজ আর অপ্রাসঙ্গিক কথা বলে না।
কথায় কথায় জ্ঞান দেয়না।
উচ্চস্বরে বার্তালাপ করেনা
সব কথায় ফোড়ন কাটে না,
যেই মেয়েটা নাকি প্রানোচ্ছল প্রাণবন্ত ছিলো।
কেমন যেন ঝিমিয়ে পড়েছে সে,
আজ তাকে বড্ড অন্যমনস্ক দেখায়।
আজ আর সব কথায় অভিমান করে না
সেই অভিমানি মেয়েটা।
রাগ করেনা যেকোন অছিলাতে।
ভালো লাগে না আর সত্যি,
এমন পরিবর্তনে তার।
কি জানি তার কি হোলো,
হঠাৎ করে বদলে গেলো সে।
সত্যিই কি সে বদলে গেছে? নাকি...
কেউ বদলে দিয়েছে তারে?
আজ আর সে খুব একটা আঁকে না,
কবিতাও লেখে না।
আগে তো মাঝে খুব রান্না করতো মেয়েটা।
কি হোলো তার?
যে এখন আর তার রান্নায় স্বাদ হয়না।
সারা বাড়ি বেশ তো নুপুর পায়ে হেটে বেড়াতো।
নানা জিনিসের আবদার ছিলো তার,
আজ তো সেই বায়নাটাও তার নেই।
মেয়েটা আজ আর তেমনটা নেই
যেমনটা সে ছিলো,
পটলচেরা চোখের কোণে আজ
কালো বর্ণের মেঘের ছোয়া,
গৌরবর্ণা মেয়েটা আজ কেমন যেন শ্যামলা দেখায়।
কোমর সমান কেশরাশি আজ তার
বিলুপ্ত প্রায়।
আনমনা বেখালি নিশ্চুপ এক মূর্তির মতো
পড়ে থাকে সে এককোণে।
হাসিটাও তার যেন খুব কষ্টের
এসবের কারণ তো জানবার চেষ্টা হয়েছে অনেক।
কিন্তু অভিধানে কিছু নেই।
তবে...?
সেকি প্রেমাঘাত পেয়েছে...?
তবে কি পরীক্ষায় অসফল...?
নাহ এসব তো কিচ্ছুটি নয়।
তবে.
..?
কোন চিন্তা....?
যা তাকে ঘুমোতে দেয় না,
করতে দিতে চায়না তার খেয়াল খুশি মতো কিছু করতে।
হ্যাঁ, তা তো বটেই।
এক মারণ অসুখ যে তার শরীরে থাবা বসিয়েছে।
করালগ্রাসের সন্মুখীন সে।
সেখান থেকে ফিরবার যে আর কোন পথ নেই।
তিল তিল করে এগিয়ে যাচ্ছে সে।
সে যে সেই পথের যাত্রী।
মেয়েটা এখন আর কাঁদেও না।
শুধুই অন্যমনষ্কতা তার শরীরে।
এ এক অসুখ,
যা ধ্বংস করে দেয়,
মানুষের স্বপ্ন, আশা আর আকাঙ্খা
খুন করে ফেলে তার জীবনের
বেচে থাকার তাগিদ টাকেও।
মেয়েটা......
যে আজ শুধুই শরীর,
প্রাণ থেকেও যে কিনা প্রাণহীন।।
মেয়েটার পুতুলের সখ ছিল খুব
সব্বার কাছে সে বায়না করতো পুতুলের।
সারা ঘরময় তার টেডি বিয়ার ছড়ানো থাকতো
তার ঘরের দরজা খুলতেই দেখা যেত
মেঝেটা আর ফাকা নেই,
শুধুই টেডি আর টেডি
টেডি গুলো কে সে রোজ পরিষ্কার করতো,
কারণ এটিই যে তার
সবথেকে প্রিয় জিনিস।
কেউ কে ছুতে পর্যন্ত দেয় না।
এত্ত বড় মেয়ে, কিন্তু টেডির বেলায় সে যেন
ঠিক ছোট্ট টি হয়ে যায়।
কিন্তু আজ সে বদলে গেছে,
বাস্তবতা বদলে দিয়েছে তাকে।
আজ তার ঘরে শুধু একটিমাত্র টেডি
যাকে আগলেই সে সারাদিনটা কাটিয়ে দেয়।
পাড়ার ছোট্ট শিশুদের সে বিলিয়ে দিয়েছে
মনের মাঝে কষ্ট চাপা দিয়ে।
কি হবে আর টেডি দিয়ে,
জীবনটাই যে শেষের পথে।
মেয়েটা মায়ের কাছে
এক অদ্ভুত আবদার রেখেছে,
"মা, আমি যেদিন মারা যাব
সেদিন কিন্তু
এই টেডিটা কোল ছাড়া কোরনা যেন"।।