অনলাইন পড়াশুনা
অনলাইন পড়াশুনা


চল্লিশজনের ক্লাস থ্রী, তুফান যেন ক্লাসরুমে।
'ম্যাম আমায় লিখতে দিচ্ছে না',
'ম্যাম, ও আমায় মারছে', 'ম্যাম ও চকলেট খাচ্ছে'
'ম্যাম পেন্সিল পড়ে গিয়েছে'।
একটু পরপর,'ম্যাম ক্যান আই গোটু টয়লেট?'
এই তুফান সামলাতে ম্যাম প্রতিদিন খাচ্ছে হিমশিম।
কিন্তু একসাথে গলা ছেড়ে গান গাইতে মনে তখন রিমঝিম।
এখন ডিজিটাল ক্লাসে সবাই অনলাইন।
বন্ধুদের দেখতে পেয়ে ডাকাডাকি, 'ইয়েস ম্যাম' এর ছড়াছড়ি।
অক্লান্ত ম্যাম কথা বলেই চলে কিন্তু কিছুক্ষণে ভিডিওতে দেখতে পায়;
রূপেশ ড্যাবড্যাব তাকিয়ে
শ্রীতমা মন দিয়ে লেখে
সুরুচি ঘুমিয়ে পড়েছে।।
পীযূষ ওর পোষা টম কে নিয়ে খেলছে।
কয়েকজন গেম খেলে চলেছে।
সেই উচ্ছল ক্লাসরুম, বাচ্চাদের হৈ হৈ
জুম্ অনলাইনে সেই আনন্দ আর কই।
অনলাইন ক্লাস চলছে এগারোর;
স্কুলের পর 'আকাশ', টিউশন গোটা বারো।
স্কাইপে এখন দেরি হয়ে যাবার প্রশ্ন নেই
ক্লাসে প্রায় পুরো ক্লাস হাজির তাই।
স্কাইপে স্যার বোর্ডে প্রব্লেম সল্ভ করেই চলেছে
তিতির কিন্তু হোয়াটস্যাপে,
চলছে সন্মিলির ভীষণ পছন্দের এপিসোডটা।
রাজ্ স্যারের সাথে চলার চেষ্টা করে যাচ্ছে।
কথা শুনে শুনে কৌশিক টেবিলেই ঘুমিয়ে পড়েছে।
ফুটবলে পা নেই, স্কুলবাসের হাওয়া নেই।
টিচারদের নিয়ে গল্প নেই। নেই বকবকম কথা কওয়া।
অনলাইনে টিচাররা এগোয় বেশি,ছাত্রদের খাবি খাওয়া।
মেডিকেল এ ফার্স্ট ইয়ার, কেমিস্ট্রিতে এম এ,
ইঞ্জিনীরিং ফাইনাল ইয়ার,
গুগল ক্লাসে চুপচাপ সব।
হচ্ছে থিওরী, মাঝে মাঝে কিছু রেকর্ড ভিডিও,
হাতে করে এনাটমির সেই রোমাঞ্চ কোথায়
কোথায় বা রসায়ন ল্যাবে একের পর এক একুয়েশন;
ফ্যাক্টরি ইঞ্জিনিয়ারিং ড্রইয়িং মন ভরে না অনলাইনে।
সেই যে গরমের ছুটিতে যাবার ছিল ইতিহাসের এক্সকারশনে।
ক্লাসের পর বন্ধুদের সাথে অগোছালো গল্পের ফুলঝুরি।
হস্টেলের ডিনার রুমটা, চিকেন ডিশটা ভাগ করে খাওয়া।
ক্লাস ফাঁকি মেরে সিনেমা আর বাইরে খেতে যাওয়া।
সারারাত জেগে দলবেঁধে পরীক্ষার তৈয়ারি
হারিয়ে গেলো সব দিন, একা তুমি। তুমি তোমারি।