উড়ানসঙ্গী
উড়ানসঙ্গী
প্রকৃত সঙ্গীর দেখা জীবনে পাওয়া বড় ভাগ্যের ব্যাপার, নাহলে বহু স্বপ্ন অধরা থেকে যায়। কিন্তু চাইলেই কি পাওয়া যায়? মেয়েবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল অনেক দূর পড়াশুনা করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে।কিন্তু পয়সার অভাবে দরিদ্র সংসারের অবস্থা দেখে মনে হয়েছিল স্বপ্ন দেখাটা অন্যায় এরকম পরিবারের মেয়েদের। তবুও শুধুই নিজের জেদে না মেধার জোরেও প্রিয়া এগিয়ে গিয়েছিল অনেক দূর। নিজের পড়াশুনার খরচ নিজেই কিছুটা জুগিয়ে চলেছে। কিছুটা মেধা বৃত্তি, কিছুটা টিউশন করে। অনেক দূর এগোতে হবে, দশ জনের একজন হতে হবে এই ইচ্ছা প্রোথিত হয়ে গেছে মনে।
কিন্ত বাধ সাধলো তার অভাবী বাবা,যে কিছুতেই আর টাকার জোগাড় করতে পারলো না।কোনোরকমে গ্রাজুয়েশন অবধি পড়িয়ে আর পারল না উচ্চশিক্ষার জন্য মেয়েকে এগিয়ে দিতে।মেয়ের পরীক্ষা শেষ হতেই একজন ভালো পাত্রের সন্ধান করে পাত্রস্থ করে দিল।ভেবেছিল প্রিয়ার স্বপ্নের ইতি ঘটেছে।নতুন বিয়ে,ভালোবাসায় মোড়া রঙিন স্বপ্ন নিয়েই সংসার নামক যাঁতাকলে পিষ্ট হতে হবে।তাই বিয়ের পরে মনমরা থাকতো খুব।স্বামী অনেকবার জিজ্ঞেস করলেও মুখ ফুটে কোনোদিন কিছুটি বলতো না। শ্বশুর বাড়িতে ভালোবাসা পেলেও মন খারাপ করে থাকতো।একদিন রেজাল্ট বেরোলো গ্রাজুয়েশনের।সে ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছে আর কলেজে প্রথম হয়েছে।কিন্ত প্রিয়া জানতো না রেজাল্টে কি হয়েছে।খুবই উদ্বিগ্ন ছিল।সেদিন প্রিয়া আশাই করেনি যে স্বামী ছুটি নিয়েছে শুধু ওর রেজাল্ট বেরোবে বলে।ফিরে এসে বর তার আদরের প্রিয়াকে রেজাল্ট বললেও খুশি হয়নি।তারপর বললো,’দেখো সারপ্রাইজ আছে কিন্ত!’
প্রিয়া তাকাল সাগ্রহে তার বর মহাশয়ের দিকে। মাস্টার্সের ফর্ম তুলে নিয়ে এসেছে নামী বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে। প্রিয়া অবাক হয়ে গেলো, আনন্দাশ্রু সহ বরকে জড়িয়ে ধরলো।আর তার স্বামী বললো, ‘আমি চাই তুমি এগিয়ে যাও,উচ্চশিক্ষিত হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াও।আর এই কদিন এন্ট্রান্স টেস্ট এর জন্য নিজেকে তৈরি করো।’
প্রিয়া সানন্দে নতুন উৎসাহে পড়াশুনা শুরু করে দিল।
আর মনে মনে ভাবলো,এরকম বিশেষ পুরুষ থাকলে জীবনে সব মেয়েদের স্বপ্ন,স্বাধীনতা শেষ হয় না, বরং আরো এগিয়ে নিয়ে যায়। প্রকৃত স্বাধীনতায় সে ডানা মেলে উড়ে যেতে চায় তার সোনালী ভবিষ্যতের দিকে।
