উজ্জ্বলার প্রমোদ
উজ্জ্বলার প্রমোদ
জানিনা আজ কেন জানিনা প্রমোদের ঘুম আসছে না। তখন রাত বারোটা বেজে দশ। প্রমোদের ফোনের রিংটোন বেজে উঠল। স্ক্রিনে শো করছে ‘উজ্জ্বলা কলিং”।
প্রমোদ আর উজ্জ্বলা ক্লাস ফাইভ থেকে খুব ভালো বন্ধু। দুজনেই এখন মাস্টার্স করছে। প্রমোদ স্ট্যাটিস্টিকস্ এ আর উজ্জ্বলা ইকোনোমিকস্ এ।
প্রমোদ ফোনটা রিসিভ করে বলল-“হ্যাঁ, বল” । “তোর গলাটা ভাঙা ভাঙা লাগছে কেন বলতো, আবার ঠাণ্ডা লাগিয়েছিস”- ধমক দিয়ে বলল উজ্জ্বলা । “আরে না না। ওই একটু লেগেছে আর কি।”- বাধ্য ছেলের মত বলল প্রমোদ ।
-“কি করছিস?”
-“কিছু না। নতুন কিছু লেখার ভাবনা তৈরি করছিলাম”। প্রমোদের লেখালেখির শখটা ছোটো থেকেই। কবিতা লিখতে ভীষণ ভালোবাসে।
-“আরে শোন না, তোকে ওই ব্যাপারেই কল করেছিলাম”, ফোনের ওপার থেকে বললো উজ্জ্বলা ।
-“কি ব্যাপারে? আবার নতুন কিছু লেখার আবদার না কি?”- হেসে হেসে বলল প্রমোদ
-“হুমম। কালতো সরস্বতী পূজো। মানে বাঙালির প্রেম দিবস। আর তুই তো জানিস দুবছর আগে তপন আমাকে কালকের দিনই প্রোপোজ করেছিল। তো তুই আমার আর তপনের জন্য কিছু লিখে দে!” আবেগে বলল উজ্জ্বলা ।
-“আচ্ছা প্রেম করবি তোরা আর লিখব আমি”
-“বাজে না বকে তাড়াতাড়ি লিখে হোয়াটস্অ্যপে সেন্ড কর”
-“আচ্ছা অর্ডার তো। আমি কি কবি না কি!”
-“তুই লিখিস তাই বললাম। যা লিখতে হবে না”-এবার একটু ন্যাকা সুর গাইল উজ্জ্বলা ।
-“ন্যাকামো করতে হবে না , চেষ্টা করবো। একটু টাইম দে। ভালো না হলে কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না কিন্তু!”
-“আরে তুই লিখলে ভালোই হবে। আমি সিওর”
-“ঠিক আছে আর গ্যাস মারতে হবে না”
-“ওকে লিখে সেন্ড কর”
-“ওকে দেখছি”
-“আচ্ছা, কাল কার সাথে বেরোবি?”
-“একা, যেরকম বেরোই’
-“কেন, আমাদের সাথে বেরো।”
-“তোরা প্রেম করবি আর আমি চৌকিদার। তাই তো!”
-“ধুর, তোকে নিয়ে আর পারি না। রাখতো আর লেখাটা সেন্ড কর।” কিছু টা বিরক্ত হয়েই বলল উজ্জ্বলা ।
-“ওকে, টা টা । গুড নাইট”
প্রমোদ ফোনটা রেখে একটা সিগারেট ধরাল আর রবীন্দ্রনাথের দুটো লাইন আওড়াতে থাকল
“তুমি যাহা চাও তাই যেন পাও
আমি যত দুঃখ পাই”
তারপর চারিদিক একরাশ নিস্তব্ধতা যেন হঠাৎ করেই একাকীত্বের বাঁধনে ঘিরে ফেরল প্রমোদকে। আকস্মিকভাবে এবং অজান্তেই যেন সে হারিয়ে ফেললো কাউকে।
ডায়েরিতে কবিতার নাম লিখলো ‘ উজ্জ্বলার প্রমোদ ‘। অর্থাৎ উজ্জ্বলার আনন্দ। না, এই কবিতা আর উজ্জ্বলার জন্য নয়, একান্তই প্রমোদের !

