উৎসর্গ
উৎসর্গ
ছেলেটা মানুষ হলো না বলে, কি কম আফশোস মলয়বাবুর মনে! কতবার বলেছে মন দিয়ে পড়াশুনোটা করতে। তা সে কথা সে কানে তুললে তো! কলেজে ভর্তি হয়েই কি যে রাজনীতির ভূত মাথায় চাপল ছেলেটার! নিজের ভবিষ্যতটা ছেলেটা একটু যদি ভাবতো আজকের দিনটা তাঁদের আর দেখতে হতো না। একটা লম্বা দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন মলয়বাবু! বাড়িতে এতক্ষণে কী পরিস্থিতি কে জানে! অ্যাক্সিডেন্টের খবরটা পেয়েই যা কান্নাকাটি শুরু করেছিল ইন্দিরা। এই খবরটা যখন পাবে, কি যে হবে আর ভাবতেও পারেন না মলয়বাবু। একটু আগে এসেই সিস্টার দুঃসংবাদটা জানিয়ে গেছেন। ব্রেনডেথ মানেই তো মৃত্যু!
বাবু তাদের ছেড়ে চিরতরে চলে গেল। সিদ্ধান্ত যা নেওয়ার এখনি নিতে হবে। বাবুকে একেবারে মুছে দিতে যেতে পারবে না কিছুতেই। ডাক্তারবাবুর সাথে দেখা করে নিজের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন মলয়বাবু। প্রয়োজনীয় সই-সাবুদ সারা হলে পাড়ার ছেলেরা জোর করে বাড়ি দিয়ে যান ওনাকে। ওরাই আছে হাসপাতালে, বডি পেলে বাড়ি নিয়ে আসবে।
বাবুর মৃত্যু ঘিরে শহর উত্তাল। বিপরীত পার্টির লোকেরা নাকি ইচ্ছা করে ধাক্কা মেরেছিল বাবুর বাইকে। তাদের পার্টির লোকরা ছেড়ে কথা বলবে না। বাবুর মৃতদেহ নিয়ে নাকি তারা মিছিল করবে। প্রতিবাদে মুখরিত
হবে সারা শহর।
কি হবে! তাতে কি বাবু ফিরবে!
ইন্দিরা ঘনঘন জ্ঞান হারাচ্ছে। আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী মহিলারা তাকে আগলে রেখেছে। মলয়বাবুরও তো বুকটা দুঃখে ফেটে যাবে মনে হচ্ছে। তবু তাঁকে শক্ত থাকতে হচ্ছে। ছেলেটাকে কত সময় কত বকাবকি করেছেন। আজ যে কি ভীষণ আফশোষ হচ্ছে তা শুধু একজন সন্তানহারা পিতাই বুঝতে পারবেন।
একটু আগেই হাসপাতাল থেকে ফোন এসেছিল। সব কিছু ঠিকমত হয়ে গেছে। গ্রহীতাদের লিস্টটাও এসএমএস করে দিয়েছে মলয়বাবুর নম্বরে। যাদের মধ্যে বেঁচে থাকবে তাদের একমাত্র ছেলেটা।
মোবাইলটা খুলে এসএমএসটা পড়ছিলেন মলয়বাবু।
কর্ণিয়া(1)--- নাজিম শেখ।
কর্ণিয়া(2)--- পুনম কাউর।
হার্ট--- আকাশ চ্যাটার্জ্জী
লিভার--- ডরোথী গোমস্
কিডনি(1)--- পরেশ কিস্কু
কিডনি(2)--- জয়ন্তী আগরওয়াল
তখনই 'হরিবোল' ধ্বনি কানে আসে মলয়বাবুর। বাবুর দেহ এসে গেছে। বাবুর পার্টির দলের পতাকায় ঢাকা রয়েছে বাবুর দেহটা। নশ্বর মৃতদেহটুকু নিয়েও রাজনীতি হচ্ছে। বাবু এতক্ষণে পৌঁছে গিয়েছে দেশের নানা প্রান্তের নানা ধর্মের ছয়জন মানুষের শরীরে। তাদের মধ্যেই বেঁচে থাকবে মলয়বাবুর একমাত্র ছেলেটা....!!