Partha Pratim Guha Neogy

Romance Fantasy Others

3  

Partha Pratim Guha Neogy

Romance Fantasy Others

তুমি যে আমার - ২য় পর্ব

তুমি যে আমার - ২য় পর্ব

5 mins
451


১ম পর্বের পর - হ্যাঁ, সত্যি বোধ হয় একেই প্রেম বলে। বড্ড মিষ্টি এই অনুভূতি, আগে কোনদিন এমন তো হয়নি। কখন রাতের ঘুমপরী চোখের পাতায় পালক বোলাল, আর বুঝতে পারিনি।

সূর্যর জন্মদিনটা এসেই গেল, কোনদিন আমাদের বাড়ি সেভাবে ঘটা করে কারওরই জন্মদিন পালন হয় না। বিয়ের পর প্রথম জন্মদিন ওর, তাই স্বাভাবিক ভাবেই আমি উত্তেজিত ।

ও আমার ভীষণ ভাল বন্ধু এখন, যার সাথে মনের কথাগুলো নির্দ্বিধায় বলা যায়। আজ ওকে নিজের মনের কথাটা বলবো ঠিক করেছি। ওর ব্যক্তিত্ব, ওর রুচি, শিক্ষা এসবকিছুর জন্য ওকে ভাল না বেসে, শ্রদ্ধা না করে থাকতে পারিনি।প্রেম আমার জীবনে কোনদিনই আসেনি সেভাবে, তাই জীবনের প্রথম এই প্রেমটা আমায় ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল দূর দিগন্তের স্বপ্নের নীল সীমানায়।

বাড়ির বাগানের এদিকটায় তেমন আসাই হয় না। আজ দিনটাও এত সুন্দর, মেঘলা, খুব ইচ্ছে হলো যাই । এদিকটায় অনেক কয়েকটা ফুল গাছ আছে, আপন মনে সুগন্ধ ছড়ায় তারা, আজ বড়ো ইচ্ছে হলো ফুল দিয়ে ঘরটা ভরিয়ে তোলার।

**************

রজনী গন্ধা, জুঁই, গোলাপ আর তার সাথে আকাশের কালো মেঘের ঘনঘটায় সেজেছে আজ আমার ঘরটা। বাধা দিল শাশুড়ি মা, সূর্য নিজের জন্মদিন পালন করে না, কিন্তু শুনে মানতে পারিনি। আমার এই অবাধ্যতার একটাই কারন – আজ এই সুন্দর পরিবেশে নিজের মনের কথাটা নির্দ্বিধায় নিজের মনের মানুষটাকে জানানো।

লাল রং আমার খুব যে ভাল লাগত, তা নয়, তবে ইদানিং, গাঢ় লাল রংটাই আমার ভীষণ প্রিয়। তাই ঘরের বেডসীট, জানলার পর্দা, টেবিলে সাজানো অ্যারোমা ক্যান্ডেল, বা ফুলদানীর গোলাপটা, সবটাই আজ লাল। জানলার কাঁচে টুপটাপ জলবিন্দু ভিড় জমাচ্ছে। বাইরের আকাশে ঘন কালো মেঘ, আর সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়ায় দুলছে সামনের বেলফুলের গাছটা, আর অপেক্ষায় আমি। এখনো আসছে না কেন, ফোনেও পাচ্ছি না। কোথায় তুমি? এখনও কেন ফিরছো না? আর অপেক্ষা করতে পারছে না এই মন, কেমন পাগলামো করছি দ্যাখো।যেন, আমি কোনদিনই ভাবিনি, আমি প্রেম করবো, বা প্রেমে এভাবে পাগল হবো। হ্যাঁ, এটা প্রেম ছাড়া কী? প্রেম কী শুধু বিয়ের আগেই করা যায়? বিয়ের পর দুজন অজানা মানুষ যখন একে অপরকে একটু একটু করে চেনে, বোঝে, জানে, তাতে এক অন্যই নেশা থাকে। প্রথম তোমার ছবি দেখে তোমায় ভাল লেগেছিল, কিন্তু তোমার কথা বলা, তোমার তাকানো, তোমার হাসি, ঘুমন্ত অবস্থায় তোমার মুখটা, হ্যাঁ, খুব খুব ভাল লাগে। তোমার বুকের কাছের তিলটা, তোমার বুকে কী আমার মাথা রাখার জায়গা হবে? জানি না, একটা মেয়ে হয়ে কীভাবে লজ্জার মাথা খেয়ে এসব বলি বলতো। জানো, তুমি যখন ঘুমাও, তোমার হাতের আঙুলে নিজের হাতটা জড়িয়ে রাখি, ভাগ্যিস তখন তুমি ঘুমাতে। কিন্তু, আজ সবটা তোমায় বলতে চাই। তোমার শরীরের উষ্ণতা, তোমার দেহের সুবাস, তোমার ঠোঁটের স্পর্শ। নাহ, আর আমার কোন দ্বিধা নেই, কোন আপত্তি নেই। তোমার কাছে মাথা নত করতে রাজী আমি। কই তুমি তো স্বামী অধিকার ফলাতে একবারও একজন নারীর অসম্মান করোনি, হোক না সে নারী তোমার স্ত্রী, এই জন্যই তোমায় শ্রদ্ধা করি। কিন্তু, কোথায় তুমি? এতটা রাত হয়ে গেল, এত রাত তো কর না তুমি।

***************

ফোনে বারবার চেষ্টা করেও লাভ হলো না, আনরিচেবল। বাইরে ঝড় জলে প্রকৃতি বীভৎস রূপে তখন, মনটা বড্ড খচখচ করছিল। চিন্তা হচ্ছিল, কিছু হলো না তো? ভাবতেই ভাবতেই কলিং বেলটা বাজলো। হৃদ্স্পন্দনটা একলহমায় যেন অনেকটা বেড়ে গেল। সিঁড়ি পেরিয়ে দৌড় লাগলাম।

**************

“এত দেরী কেন আজ? তোমায় তো ফোনেও পাচ্ছিলাম না”, না বিয়ে হওয়া ইস্তক কোনদিন এভাবে কথা বলিনি, কিন্তু অজান্তেই আজ অধিকার বোধটা কথায় প্রকট হচ্ছিল। সূর্যও সেটা বুঝতে পারছিল। ওর দৃষ্টিতেই সেটা স্পষ্ট।

-“কিন্তু এসব কী মা তোমায় বলেনি কিছু?”

-“বলেছেন, তুমি তোমার জন্মদিন পালন করো না, কেন তা জানি না অবশ্য।”

সূর্য আমার দিকে সরাসরি কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে চোখটা সরিয়ে নিল।

-“আমার প্রথম প্রেম এই দিনেই আমায় ছেড়ে চলে গেছল, তাই-” হুট করেই বলে দিল ও কথাটা।

-“মা-কে বলেছিলাম, জানো ওর নামও রমাই ছিল। তাই যখনই তোমার নামটা শুনেছিলাম। বাদ দাও , তোমার আর ওর মধ্যে কিন্তু কোন মিল নেই জানো, নামটা ছাড়া, বয়সেও ছোট তুমি।”

সূর্যর কথাগুলো আমার মনে জাস্ট তীরের মত বিঁধেছিল। এটাই তাহলে সূর্যর দেরীর কারণ? কিন্তু, কই, ওর চোখেও তো আমি আমার জন্য। তাহলে? ও আজও ঐ মেয়েটার কথাই। কই এতদিনে এত বড় কথাটা বলেনি তো, এত কথা বলল, আর এটা।

আমার মনের কথাটা ধরে নিয়েই সূর্য বলল,”তখন আমার কিছু ছিল না, আর ওর আমার জন্য সময় ছিল না, আর সত্যি আমার তখন দেওয়ার মত কিছুই নেই, বেকার ছেলে একটা, কী বা করতাম। ছবিটা তোমায় দেখালে হতো।।। কিন্তু।

-“কিন্তু কী?” মুখ দিয়ে ফস করে কথাটা বেরিয়েই গেল।

-“কিন্তু, ছবিটা ছিঁড়ে ফেলে দিয়ে এলাম আজ, আমার মনের আর কোথাও ওর কোন জায়গা নেই, এটা যখন বুঝলাম, তখন ফটোটা রেখেই বা কী লাভ? আর যখন” 


কথাটা শেষ না করেই আচমকা একটা টান দিল আমার হাত ধরে। পড়লাম ওর বুকে। এক মুহূর্তের জন্য কিংকর্তব্য বিমূঢ় আমি। এত কাছে কখনও এভাবে। আমার ধমনী, শিরা-উপশিরায় রক্ত চলাচল তখন দ্রুত হারে।

-“তুমি আমার জীবনে এসে গেছে, তখন আর কেউ তো থাকবে না। ওর সাথে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর প্রথম এই জন্মদিনটায় আমার এতটুকু মন খারাপ হয়নি, কারনটা তুমি জানো, আর দেরীটার কারণ হলো এইগুলো।”

বলেই কিছু কাগজপত্র বের করল। দেখলাম টিকিট, হোটেল বুকিংস-এর কিছু ডকুমেন্টস।

-“তোমার পারমিশন না নিয়েই টিকিটটা কেটে ফেলেছি মুসৌরির, আমি জানি তুমি আর না বলবে না।”

দেখলাম বুকিংটা হানিমুন প্যাকেজের। নাহ, বিয়ের পর কয়েকমাস কেটে গেছে, হানিমুন নিয়ে সত্যি আমাদের মধ্যে কোন কথা হয়নি। মনেও হয়নি কিছু। লজ্জায়, আনন্দে কী যে হচ্ছিল আমার মধ্যে, তা অবর্ণনীয়। বৃষ্টি তখন মুষলধারে, জানলার কাঁচটা হাওয়ায় খুলে বৃষ্টির ছাঁট আদ্র করছিল আমার মুখ। বুঝলাম ওর হাত জড়িয়ে রয়েছে শক্ত করে আমায়। নতি স্বীকার ছাড়া আর কোন উপায়ও নেই, আর আমিও তো ওর কাছে হারতেই চাই। মোম-এর নরম আলোয় আর সুবাসে মাতাল সেই রাত।

এই রাত, এই মুহূর্ত থমকে থাকে না। এর শেষ যেন না হয়, মনে মনে চাইছিলাম। ওর হাত আমার ভেজা ঠোঁটের উপর পড়া আমার অবাধ্য চুলটা সরাচ্ছিল, তখনই আকাশ কাঁপিয়ে বাজটা পড়ল। ভাগ্যিস পড়ল, সেই সুযোগে ওর বুকে নিজের মুখটা লুকোতে পারলাম, লজ্জায় ওর চোখের দিকে তাকানোর আর ক্ষমতা নেই আমার, আর ঠিক তখনই ওর ঠোঁট নিমেষে এঁকে দিয়েছিল আমার জীবনের ভালবাসার মানুষটার প্রথম চুম্বন, আমার গালে। বিয়ের পরও প্রেম করা যায় তাহলে। আমাদের প্রেমের সাক্ষী রইল, ফুলদানির গোলাপ, মোমের শিখা, রাতভর বৃষ্টি আর ।।।। আর তোমার আমার চোখে আঁকা অজস্র স্বপ্নগুলো।

কানের কাছে চুপি চুপি বলল ও, “ভালবাসি”। বাইরের অঝোর ধারার বৃষ্টির সাথে পাল্লা দিয়ে একাত্ম হল দুটি ঠোঁট, দুটি মন, দুটো শরীর ।।।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance