Ignite the reading passion in kids this summer & "Make Reading Cool Again". Use CHILDREN40 to get exciting discounts on children's books.
Ignite the reading passion in kids this summer & "Make Reading Cool Again". Use CHILDREN40 to get exciting discounts on children's books.

Santana Saha

Romance Inspirational Children

4  

Santana Saha

Romance Inspirational Children

টিটো

টিটো

4 mins
113


"বাড়িতে আমার গোপাল আছে,তিনবেলা পুজো দিই, আবার একটা কুকুর বাড়িতে ঢোকানোর কি দরকার ছিল হ‍্যাঁ?" - বাড়িতে ছেলে আর ছেলের বউয়ের নিয়ে আসা নতুন কুকুরছানাটাকে এভাবেই অভ‍্যর্থনা করলেন মলিনাদেবী। "অবলা প্রাণী, অমন করে বলছ কেন মা, ওদের আমরা না দেখলে কে দেখবে বলো"-বলে মলিনাদেবীর ছেলে সুজয়। "হ‍্যাঁ, মা আর দুটোদিন গেলেই দেখবেন, ও আপনার কিরকম বন্ধু হয়ে উঠেছে।"- হেসে বলে বৌমা অঞ্জলী। "থাক থাক, আমার আর বন্ধু হয়ে কাজ নেই, আমার গোপালই আমার বন্ধু। আর খবরদার বলে দিচ্ছি ঐ কুকুর যেন আমার ঘরে না ঢোকে।" - বলেন মলিনাদেবী। "মা,ওভাবে ওকে কুকুর না বলে 'টিটো' বলে ডাকবেন। ভাল লাগে শুনতে। ঐ নামটাই আমরা দিয়েছি।"- অঞ্জলী বলে। "আহা, কুকুরকে আবার কুকুর বলা যাবে না,আদিখ‍্যেতা দেখে আর বাঁচি না! কোথায় এখন একটা ছেলেপুলে হয়ে বাচ্চা মানুষ করবে, তা নয় ,উনি একটা কুকুর নিয়ে এসে ন‍্যাকামি শুরু করলেন!"- বলে রাগে গজগজ করতে করতে চলে যান মলিনাদেবী। চোখদুটো জল ছলছল করে ওঠে অঞ্জলীর। "আঃ, মা তুমি জানোই তো সব। গত ছবছর ধরে কম চেষ্টা তো করা হল না, বাচ্চা না হলে ও কি করবে? তোমার গোপালও তো মুখ তুলে চাইল না।" - বিরক্ত হয়ে বলে চলে যায় সুজয়।

অবলা প্রাণীদের উপর বরাবরই অঞ্জলীর দয়ামায়া একটু বেশি।ছোট থেকে পাড়ার বেপাড়ার কত যে অসুস্থ কুকুর বিড়ালকে সুস্থ করে তুলেছে, তার হিসেব নেই। কিন্তু বড় হয়ে চাকরিতে ঢুকল, তারপর বিয়ে করল, তাই এখন আর ঐ অবলা প্রাণীগুলোর জন‍্য বেশি সময় বের করতে পারে না। গত ছবছর মাতৃত্বহীনতার যন্ত্রণা বুকে পুষে চলেছে সে। তাই ভেবেছিল বাড়িতেই একটা কুকুর পুষবে। শাশুড়ির কথায় তার বুকের সব শূণ‍্যতা যেন হাহাকার করে ওঠে। টিটোকে জড়িয়ে ধরে হুঁ হুঁ করে কেঁদে ওঠে সে। 

দেখতে দেখতে টিটো বড় হতে থাকে। সকালে অঞ্জলী আর সুজয় তার সাথে বেশ কিছুটা ভাললাগার সময় কাটায়। এখন তো সকাল হলে টিটোই সুজয়কে মর্নিং ওয়াকে যাবার জন‍্য ডেকে তোলে। ঐটুকু একটা প্রাণীর কি বুদ্ধি! অফিস যাবার সময় সুজয় আর অঞ্জলীর হাতে হাতে ওদের দরকারী সব জিনিসগুলো এনে দেয়। জুতোর র‍্যাক থেকে অঞ্জলী আর সুজয়ের জুতো তুলে ঠিক জায়গায় এনে রাখে তাদের পরার জন‍্য। ওদের পিছন পিছন ওদের গাড়ি পর্যন্ত দৌড়ে যায় লেজ নাড়তে নাড়তে।আবার ওরা ফিরলে আনন্দে লেজ নাড়তে নাড়তে ওদের গায়ের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ওদের আদর করতে থাকে। তবে পশু হলে কি হবে, টিটোও যেন বোঝে যে মলিনাদেবী ওকে পছন্দ করেন না। তাই বকাঝকা করেন। তাই সুজয় আর অঞ্জলী বেরিয়ে গেলেই মুখ গোমড়া করে একদম চুপ করে বসে থাকে।

একদিন মলিনাদেবী তার ঘরে বসে গোপালপুজো করছিলেন। এমন সময় টিটো দেখে ওনার ঘরে একটা ইঁদুর। কুকুরের যা স্বভাব। আর থাকতে না পেরে ঘেউ ঘেউ করে তেড়ে গেল ইঁদুরটার দিকে। আর যায় কোথায়, মলিনাদেবী কুরুক্ষেত্র শুরু করলেন,"কি! শয়তান, হাড়বজ্জাত ,অসভ‍্য কুকুর তোর এত বড় সাহস তুই আমার গোপালপুজোর সময় আমার ঘরে ঢুকিস! আমার ছেলে আর ছেলের বউটা তোকে আদর দিয়ে দিয়ে মাথায় তুলেছে!দাঁড়া তোকে এমন শিক্ষা দেব,আর কোনদিনও আমার ঘরে ঢোকার সাহস পাবি না। বলে ঘরে দরজার পাশে থাকা খিলটা দিয়ে প্রচন্ড জোরে জোরে মারতে লাগলেন টিটোর শরীরে। টিটো যন্ত্রণায় কঁকিয়ে উঠল, তবু কামড় দিল না, হয়ত মনিব বলেই। সেদিন বাড়ি ফিরে সুজয় দেখে, টিটোর চোখে জল। তারপর কাজের দিদির কাছে সব কথা শুনে মাকে গিয়ে বলে,"ছিঃ মা ছিঃ, একটা অবলা প্রাণীর উপর তুমি এমন অত‍্যাচার করতে পারলে? বলা যায় না মা, তোমার গোপাল চাইলে হয়ত তুমি নিজেই একদিন ওর কাছে ঋণী হয়ে থাকবে...।" মলিনাদেবী ঠোঁট বেঁকিয়ে চলে গেলেন।


এর দুমাস পরের ঘটনা। মলিনাদেবী সকালবেলায় তাদের বাড়ির সামনের বাগানে গিয়ে ফুল তুলছিলেন গোপালপুজোর জন‍্য। টিটো তার পিছনে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়েছিল। মলিনাদেবী জানতেন না যে তার জন‍্য কি ঘোর বিপদ অপেক্ষা করে রয়েছে। তার থেকে কিছুটা দূরেই এক বিষধর শঙ্খচূড় সাপ তাকে ছোবল মারতে এগিয়ে আসছে। কিন্তু টিটোর সেটা চোখ এড়ায়নি। সে একছুটে গিয়ে সাপটার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। শুরু হল সাপে আর কুকুরে মরণপণ লড়াই। অবশেষে টিটো মারতে সক্ষম হল সেই সাপটাকে।কিন্তু ততক্ষণে ঐ বিষাক্ত শঙ্খচূড় ক্ষতবিক্ষত করে দিয়েছে তার দেহকে। বিষে নীল হয়ে গেছে সারা শরীর। 

অঞ্জলী আর সুজয় জানতে পেরেই টিটোকে নিয়ে ছুটল শহরের নামী পশু হাসপাতালে। অঞ্জলী ডাক্তারবাবুকে বলল,"আমি যত টাকা লাগে দেব। আপনি শুধু আমার টিটোকে বাঁচান।" কিন্তু ডাক্তারবাবু মাথা নেড়ে বলল, "আমি আমার যথাসাধ‍্য করব। কিন্তু পরিস্থিতি আমার হাতের বাইরে চলে গেছে। এখন ঈশ্বরই ভরসা।" মলিনাদেবী চিৎকার করে উঠলেন, "গোপাল,তুমি টিটোকে ভাল করে দাও। আজ আমার জন‍্য ওর এই অবস্থা। আমি এখন বুঝতে পেরেছি ঠাকুর, আমি এতদিন কি অন‍্যায় ওর উপর করেছি!"বলে ঝরঝর করে কেঁদে ফেলেন। একসপ্তাহ যমে কুকুরে টানাটানির পর মৃত‍্যুর মুখ থেকে ফিরে এলো টিটো। মলিনাদেবী হাতজোড় করে গোপালকে বললেন,"আমি আজ সব প্রতিবেশীদের ডেকে তোমার হরিরলুট দেব।"



Rate this content
Log in