নির্মলবাবুর উদারতা
নির্মলবাবুর উদারতা


পাঁচশোখানা সুতির শাড়ি,দুশোটা চকোলেটের বাক্স,পাঁচ হাড়ি মিষ্টি আর পঞ্চাশটা বারো-তেরো বছর বয়সী মেয়েদের জামা। ফর্দতে পরপর সব লিখে ফর্দটা স্ত্রী কমলার দিকে এগিয়ে দেন নির্মলবাবু। ফর্দটা ছেলের বউ সুস্মিতাকে দেবার নির্দেশ দিয়ে বলেন,ওকে বলবে সব জিনিসগুলো যেন কালকের মধ্যেই কিনে নিয়ে আসে আর পাই টু পাই হিসাব যেন লিখে রাখে। আমি তোমার কাছে যে টাকা দিয়ে রাখলাম তাতে সব হয়েও আশা করি কিছু ফেরত আসবে।কমলা প্রশ্ন করে,কি হবে এতসব জিনিস দিয়ে? নির্মলবাবু বলেন, আরে পরশু নারীদিবস না,এখন তো সেই নিয়ে মাতামাতির শেষ নেই। তা আমিই বা সেই সুযোগটা ছাড়ি কেন? বুঝলে কমলা এমন সব দিনই তো সেরা দিন দাতাকর্ণগিরি দেখানোর আর সেই ফাঁকে নিজের গদিটা আরেকটু মজবুত করা আর কি!এইবারও
যদি আমি জিতি তবে একটা দায়িত্বপূর্ণ বিভাগের মন্ত্রী হওয়া থেকে আমাকে কেউ আটকাতে পারবে না।খুশিতে মুখটা উজ্জ্বল হয়ে ওঠে নির্মলবাবুর!
আজ নারীদিবস। নির্মলবাবু সকাল সকাল বেড়িয়ে গেছেন বাড়ি থেকে। দলের দায়িত্বশীল নেতা বলে কথা! তার তো আজ কত প্রোগ্ৰাম! পরপর দুটি বৃদ্ধাশ্রমে যান তিনি সেখানে মহিলাদের বস্ত্র বিতরণ করেন। তারপর যান এক অনাথ আশ্রমে। সেখানে সব বাচ্চাদের চকোলেট,মিষ্টি বিলি করে চলে যান একটি স্কুলের অনুষ্ঠানে। সেখানে তাকে সম্বর্ধনা দেওয়া হয়। তিনি স্কুল থেকে পূর্বনির্ধারিত পঞ্চাশজন গরীব,মেধাবী ছাত্রীকে হাজার টাকা করে অনুদান আর নতুন জামা দেন। সেখানে নারী স্বাধীনতা নিয়ে এক লম্বা,চওড়া বক্তৃতায় তিনি বলেন,
মেয়েরা তো মায়ের জাত। তাই সব নারীকেই সম্মান করা উচিৎ (যদিও কিছুদিন বাদে বাদেই নতুন নতুন মেয়ের সাথে সহবাস করা তার নেশা) । মেয়েরা না এগোলে জাতি এগোবে না, দেশও এগোবে না। তাই সবসময় মানুষের পাশে থাকার অঙ্গীকারবদ্ধ আমাদের দল নারীস্বাধীনতাকল্পে কত প্রকল্প নিয়ে এসেছে! আমিও সেই মহান যজ্ঞের একজন কান্ডারী। কথায় আছে, চ্যারিটি বিগিনস্ এ্যট হোম। আমিও তাই আমার ছেলের বউয়ের সাথে নিজের মেয়ের মতোই ব্যবহার করি। আপনাদেরকেও তাই আহ্বান করি প্রত্যেক নারীকে তার প্রাপ্য সম্মান দিতে।আশা করি আপনারা ভোট দিয়ে আবার আমাদের জয়যুক্ত করবেন এবং নারীউন্নয়নের এই ধারাকে অব্যাহত রাখবেন।
হাততালিতে ফেটে পড়ে সবাই। বাচ্চাদের প্রণাম নেবার সময় আর তাদের সঙ্গে ফটো তোলার সময় খুশিতে গদগদ, বিনয়ের প্রতিমূর্তি নির্মলবাবুকে চেনাই যাচ্ছিল না! ফেরার সময় তার মনে বেশ একটা ফুরফুরে আমেজ। যাক বাবা ,আজ দলের আর সেইসঙ্গে নিজের ভাবমূর্তি অনেক উজ্জ্বল করা গেল!
বাড়ি ফিরে ইজিচেয়ারে ক্লান্ত শরীরটা ছড়িয়ে দেন তিনি। এমন সময় থমথমে মুখে ঘরে ঢোকে নির্মলবাবুর ছেলে পরেশ। নির্মলবাবুকে বলে, বাবা আজ সুবীরবাবু দশলাখ টাকা নিয়ে এসেছিল কিন্তু সুস্মিতা খুব অশান্তি করে ওনাকে ফিরিয়ে দিয়েছে আর আমাকে বলেছে ঘুষের টাকা নিয়ে কাউকে চাকরী না দিতে।
নির্মলবাবু গর্জে ওঠেন, কি বললি? অপদার্থ! একটা মেয়েছেলের সঙ্গে পারিস না তুই! ওকে বলে দিবি, এত জনগণপ্রীতি দেখাতে হলে যেন বাপের বাড়ি চলে যায়। এখানে থাকার দরকার নেই।