The Stamp Paper Scam, Real Story by Jayant Tinaikar, on Telgi's takedown & unveiling the scam of ₹30,000 Cr. READ NOW
The Stamp Paper Scam, Real Story by Jayant Tinaikar, on Telgi's takedown & unveiling the scam of ₹30,000 Cr. READ NOW

Tandra Majumder Nath

Inspirational

4.9  

Tandra Majumder Nath

Inspirational

স্নেহময়ী

স্নেহময়ী

6 mins
602


ট্রাফিকে লাল বাতি জ্বলতেই গাড়িটা থেমে গেলো। 

স্নেহলতা গাড়ির কাঁচটা আংশিক নামিয়ে নিতেই একটি ছোট্ট মেয়ে হাতে গোছা খানেক গোলাপ নিয়ে হাজির হয়।

-মেমসাহেব ফুল নিন না..

স্নেহলতা কিছু বলে না চুপ করে তাকিয়ে থাকে মেয়েটার দিকে।

-নিন না মেম সাহেব, আজ তো রোজ ডে তাই না..? ভালোবাসার মানুষ কে আজ গোলাপ দেবেন না...? নিন না মেম সাহেব...

স্নেহলতা ভাবতে থাকে সামান্য কটা টাকার জন্য এই ছোট্ট মেয়েটা এই রোদে ছেড়া জামা গায়ে ফুল বিক্রি করছে। সত্যিই ক্ষিদে একটা আজব জিনিস, ক্ষিদে মেটানোর জন্য মানুষ কত কিই না করে, হয়তো আমার সাথেও এমনটাই হতে পারতো, কারণ আমিও তো.......

-মেম সাহেব....  

ছোট্ট মেয়েটির ডাকে সম্বিৎ ফিরে পায় স্নেহলতা।

-কত করে...?

-একটা ফুল ২০ টাকা মেম সাহেব, 

-আর সব গুলো...?

-সব গুলো....? হাতের কর গুনতে থাকে মেয়েটি।

মৃদু হাসে স্নেহলতা,

ব্যাগ থেকে ২০০০ টাকার নোট বের করে দেয় আর সব গুলো গোলাপ নিয়ে নেয়।

ছোট্ট মেয়েটি ২০০০ টাকার নোট টি দেখে অবাক হয়ে যায়, চোখ দুটো খুশিতে চিকচিক করে ওঠে। আনন্দে সে চলে যায়।

লালবাতি সবুজ হয়ে ওঠে।

-এত্তগুলো ফুল নিলেন ম্যাডাম...? কোন অনুষ্ঠান আছে.. নাকি...?

গাড়ির ড্রাইভার জিজ্ঞেস করে ওঠে।

স্নেহলতা কোন উত্তর করে না।

কিছুক্ষণ পর আবারও ড্রাইভার বলে ওঠে, 

আজ রোজ ডে,আজ তো ভালোবাসার মানুষ কে গোলাপ দেওয়ার দিন। 

আমাকেও কিনতে হবে।

-তুমি কার জন্য কিনবে...? 

-আজ্ঞে ম্যাডাম.... আর কার জন্যে বলুন...

ওই আমার মিসেস এর জন্য

-তুমি বুঝি তাকে খুব ভালোবাসো...?

এবারে লজ্জা পায় ড্রাইভার সুকান্ত, হ্যাঁ তা তো বটেই।

-ম্যাডাম বললেন না তো এত্তগুলো ফুল নিলেন কেন?

-ওই যে ভালোবাসার মানুষের জন্য।

গাড়ির স্পিড টা বাড়িয়ে দেয় সুকান্ত।

-সুকান্ত... 

-হ্যাঁ ম্যাডাম বলুন

-তুমি গাড়িটা একটু কুমার গ্রাম নিয়ে যাবে..?

এবারে গাড়ির গতি কমিয়ে দেয় সুকান্ত।

-কেনো ম্যাডাম..? আপনার তো ব্লকে আজ জরুরি মিটিং আছে। 

-হ্যাঁ তা আছে, তবে সেখানেও আমার জরুরি কাজ আছে। চলো না।

-বলছি কি ম্যাডাম কুমার গ্রাম জায়গাটা খুব একটা সুবিধের নয়। আপনি অন্য কেউকে না হয়....

-সুবিধের নয় মানে....? কোন সমস্যা...?

- না সমস্যা ঠিক নয়, আসলে.....

-আসলে কি..?.

-আসলে সেখানে বৃহন্নলা দের অত্যাচারে মানুষ একেবারে উত্ত্যক্ত।

-কেন তারা করেটা কি...?

-ভালো মানুষ কেউ কে দেখলেই তার কাছে যা থাকবে টাকা পয়সা সব নিয়ে নেবে।

যার যখন যা প্রয়োজন সব দোকানে গিয়ে হামলে পড়ে, আর নিয়ে আসে।

-তুমি কি তাদের এসব করতে কখনো দেখেছো..?

-আজ্ঞে না ম্যাডাম, সুকান্ত ইতস্তত বোধ করে।

-তাহলে বললে কি করে।

-আজ্ঞে যাদের সাথে হয়েছে ঘটেছে ব্যাপার গুলো তারাই বলেছে।

-তার মানে শোনা কথা...তাই তো..?

বেশি কথা না বাড়িয়ে চলো । 

-ঠিক আছে ম্যাডাম 

গাড়ির গতি আবারও বাড়িয়ে দেয় সুকান্ত।

গাড়ির কাঁচ নামিয়ে মুখটা বাইরে বেড় করে চোখ বন্ধ করে শীতল সমীরণের ঘ্রাণ নিতে থাকে মহকুমা শাসক স্নেহলতা।

কিছুক্ষণ পর গাড়ি এসে থামে কুমারগ্রাম।

-ম্যাডাম, এসে গেছি। 

চোখ মেলে তাকায় স্নেহলতা।

চারিদিকে শুধুই বৃহন্নলা দের ভিড়।

কিন্তু যাকে খোজে এই দু নয়ন তার দেখা যে কোথাও মেলে না।

-তুমিও এসো সুকান্ত, 

-না ম্যাডাম আপনি যান। আমি গাড়িতে আছি।

স্নেহলতা গাড়ি থেকে নেমে যায়, হাতে গোলাপের গোছা টা নিতে ভোলে না।

এক পা দু পা করে এগোতে থাকে। প্রবেশ করে স্নেহলতা কুমার গ্রামে। চারিদিকে শুধুই বৃহন্নলা দের ভিড় কিন্তু দেখা মেলে না শুধু তার।

দু একজন বৃহন্নলা কাছে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে চলে যায়, কেউ বা গাল টিপে চলে যায় কেউ বা স্নেহলতার পরিচয় জানতে চাইছে। স্নেহলতার সেসবে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। এগোতে 'থাকে আরও সামনে। শেষমেষ একজন বয়স্ক মানুষকে দেখতে পেয়ে সামনে এগিয়ে যায়,

-নমষ্কার, আমি স্নেহলতা, আমি এখানকার মহকুমা শাসক। 

-আরে কি বলছেন ম্যাডাম,আরে কে কোথায় আছিস চেয়ার নিয়ে আয় রে, একটু জল নিয়ে আয়। সেই বয়স্ক বৃহন্নলা জোড়ে জোড়ে বলতে থাকে৷ আর নিমিষেই সবাই জল চেয়ার নিয়ে হাজির।

-ম্যাডাম হঠাৎ আপনি এখানে।

আমাদের নামে কোন অভিযোগ গেছে নাকি...? 

কিন্তু আমরা তো এখন সবাই পরিশ্রম করেই উপার্জন করি। 

এই কেউ কিছু কোথাও করেছিস নাকি...?

-আরে না না উত্তেজিত হবার কিছু নেই। কোন অভিযোগ আসেনি আপনাদের নামে।

ইতিমধ্যে সেখানে বৃহন্নলাদের একটা ভিড় জমে যায় প্রায়।

-তাহলে, এখানে আপনি...?

এদিকে তো... 

-কেউ আসে না তাই তো...?

-না মানে....?

-এখানে আসার কারণ তো নিশ্চই একটা আছে।

আচ্ছা আপনাদের মধ্যে স্নেহময়ী কে কেউ চেনেন...?

-স্নেহময়ী....

সেই বয়স্ক মহিলা নামটা বার বার আওড়াতে থাকেন আর উপস্থিত সকলেও।

-না ম্যাডাম এই নামে তো কেউ নেই এখানে।

-একটু ভাবুন না, প্লিজ আমাকে নিরাশ করবেন না দয়া করে।

-স্নেহময়ী নামে সত্যিই এখানে কেউ থাকে না।

আবারও একবার নিরাশ হয়ে ফিরছি। কোথায় আছো তুমি, কবে দেখা পাব তোমার। মনে মনে বলে ওঠে স্নেহলতা । 

চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়ে স্নেহলতা। সবার উদ্দেশ্যে হাত জোড় করে বলে ওঠে আমি আসছি, আপনাদের কোন রকম সমস্যা হলে আমাকে নিশ্চই জানাবেন আর স্নেহময়ী নামে কারও খোজ পেলে আমাকে অবশ্যই জানাবেন।

একসাথে সকলে বলে ওঠে -

হ্যাঁ, নিশ্চই। 

আজও তোমার দেখা পেলাম না। মনে মনে হতাশ হয় স্নেহলতা। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে।

দু এক পা হাটতেই পেছন থেকে কে যেন বলে ওঠে,

-আমিই স্নেহময়ী।

স্নেহলতা থমকে দাঁড়ায়। পেছন ফিরে তাকায়।

বৃহন্নলা৷ দের ভিড় ঠেলে বেড়িয়ে আসে সেই মানুষ যাকে স্নেহলতার দু নয়ন খুজে বেড়াচ্ছিল এতদিন।

চোখ চোখ ছল ছল করে ওঠে স্নেহলতার চিৎকার করে ডেকে ওঠে,

-মা.....

দৌড়ে যায় সেই বৃহন্নলার দিকে।

ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরে তাকে।

স্নেহময়ীও জড়িয়ে ধরে স্নেহলতা কে।

-তুমি কোথায় ছিলে মা...? কত্ত খুজেছি তোমাকে...? আমায় এত তাড়াতাড়ি পর করে দিলে।

মহকুমা শাসকের এমন ব্যবহার দেখে উপস্থিত সকলেই প্রায় হতভম্ব। 

-খবরদার আমায় মা বলে ডাকবি না। 

স্নেহময়ী কান্না জড়ানো গলায় বলে ওঠে।

-মা কে মা বলবো না তো কি বলবো।

অবিরাম অশ্রুধারা বয়ে যেতে থাকে স্নেহলতার।

-খবরদার বলছি আমি তোর মা নই। আমি তো তোকে জন্ম দেইনি। 

-শুধু কি জন্ম দিলেই মা হওয়া যায়।

যিনি কষ্ট করে লালন পালন করে বড় করে তোলেন তিনি কি মা নন।

-হ্যাঁ তিনিও মা। কিন্তু তুই ভুলে যাচ্ছিস যে  একজন নারীই মা হতে পারেন। আর আমি তো....অভিশপ্ত..

-ছিঃ এমন কথা বোল না গো।

ডুকরে কেঁদে ওঠে স্নেহলতা।

-আগে তুই বল, এখানে কি করে এলি। কি করে বুঝলি আমি এখানে আছি..?জানলি কি করে..?

-জানতাম না তুমি এখানে আছো। সম্পূর্ণটাই অনুমান করে এসেছি। স্নেহময়ী চোখ মুছিয়ে দেয় স্নেহলতার।  

- জানো মা, আজ রোজ ডে, মানে গোলাপ দিবস। আজ প্রত্যেকে তাদের ভালোবাসার মানুষ কে লাল গোলাপ দেবে। তাই আজ আমার প্রিয় মানুষের জন্য লাল গোলাপ নিয়ে এসেছি। তুমি নেবে না।

স্নেহময়ী কিছু বলতে পারে না, অবিরাম অস্রুধারা বয়ে যেতেই থাকে।

স্নেহলতা বলতে শুরু করে,

জানো আজ যখন আমি ট্রাফিক জ্যামে আটকে গিয়েছিলাম তখন দেখি একটি ছোট্ট মেয়ে হাতে গোছা খানেক গোলাপ নিয়ে আমার কাছে বিক্রি করতে এলো। তখনই এক ঝলকেই আমার শৈশব টা মনে পড়ে গেল। আমিও তো এমনটাই ছিলাম। ক্ষিদের তাড়নায় বেছে নিয়েছিলাম ফুল বিক্রি করা। একদিন তুমি আমায় দেখতে পেলে কি মনে করে যেন আমায় নিয়ে এলে তোমার বাড়িতে। আদর যত্ন স্নেহ ভালোবাসা দিয়ে তিলে তিলে বড় করে তুললে এই অনাথ শিশুকে। নাম ছিল না আমার স্নেহময়ীর মমতা দিয়ে আদরের নাম রাখলে স্নেহলতা। পদবী না আমার আগে ছিল না এখন আছে। তারপর একদিন পাঠিয়ে দিলে বোর্ডিং স্কুল সেখানেই চললো পড়াশোনা তারপর বিদেশ পাড়ি। সেখান থেকে ডিগ্রি নিয়ে যখন ফিরলাম তখন তোমার পুরানো বাড়িতে তোমাকে আর পেলাম না। অনেক খুজেছি তোমাকে পাইনি। বুঝতে পারলাম আর যোগাযোগ রাখতে চাওনা তুমি আমার সাথে। পড়াশোনার সমস্ত খরচ তুমি চালিয়ে গেছো অনেক কষ্টে। আমি যেখানেই মহকুমা শাসক হয়ে যাই সেখানেই খোজ নেই তোমার। নাম জিজ্ঞেস করি কেউ তোমার খবর দিতে পারে না। আজ ট্রাফিকে তোমাদের মতন একজনকে দেখতে পেলাম অটো তে। কুমার গ্রাম যাওয়ার কথা বলছিল। তাই চলে এলাম এখানে। 

প্রথমটায় নিরাশ হলাম তোমার খোজ না পেয়ে।

-আসলে ফুলমতির নাম যে স্নেহময়ী তা আমরা কেউই জানি না। সেই জন্যই বলতে পারছিলাম না। সেই বয়স্ক মহিলা জানায়।

এতক্ষণ সকলে স্নেহলতার কথা শুনছিল, সবারই চোখ ছল ছল করে ওঠে।

স্নেহময়ী স্নেহলতার কপালে আলতো চুম্বন করে, বলে

 -ওঠে সত্যি আমি চাই নি তুই আমার খোজ কর, আমার জাত নেই ধর্ম নেই চরিত্র নেই ব্যক্তিত্ব নেই, তুই শিক্ষিত হয়েছিস ভদ্র সমাজে বাস করিস খামোখা আমার জন্য তোর ভবিষ্যৎ নষ্ট করতে চাইনি। 

-  ছিঃ ছিঃ এমন কথা বোল না গো। আজ আমি যা সবটাই তোমার জন্য। তুমি না থাকলে আজ হয়তো সেই আস্তাকুঁড়েতেই বড় হতাম আমি।

নাও লাল গোলাপ তোমার জন্য। তোমায় যে বড্ড ভালোবাসি।

-না, আমি নেব না।

-কেন..? অবাক হয় স্নেহলতা 

আমি কি এই ভালোবাসার যোগ্য...? এই গোলাপ নেবার যোগ্য...?

-তুমি যদি যোগ্য না হও তবে এই ফুলের কে যোগ্য বলো? ভালোবাসার জাত ধর্ম হয় না, শুধু চাই মনের গভীরে শ্রদ্ধা আর নিষ্ঠা। 

-তাহলে সব্বাইকে দিতে হবে তবেই নেব।

মৃদু হাসে স্নেহলতা, 

নিশ্চই সব্বাই কে দেব।

স্নেহলতা সবার হাতে লাল গোলাপ দেয় আর গোলাপ দিবসের শুভেচ্ছা জানায়।

ইতিমধ্যে সুকান্ত এসে হাজির হয়।

-ম্যাডাম, ব্লক থেকে আপনার ফোন এসেছে, জরুরি মিটিং আছে।

-হ্যাঁ বলো কিছুক্ষণের মধ্যেই আসছি।

-ঠিক আছে

আজ আমি আসি। 

আমি আবার আসবো, সবাই ভালো থেকো।

স্নেহলতা মৃদু হাসে।

গাড়িতে উঠতেই সুকান্ত জিজ্ঞেস করে, 

-ম্যাডাম, গোলাপ গুলো তো আপনি ভালোবাসার মানুষের জন্য কিনেছিলেন। তাহলে... 

-যাদের দিয়েছি তারাই তো আমার প্রিয় মানুষ।

সুকান্ত আর কথা বাড়ায় না।

শুধু গাড়ির গতিটা বাড়িয়ে দেয়।  


Rate this content
Log in

More bengali story from Tandra Majumder Nath

Similar bengali story from Inspirational