#স্নেহের টান
#স্নেহের টান
ছোটগল্প
বিষয়: সামাজিক
কলমে: বুলা বিশ্বাস
শিরোনাম:
#স্নেহের টান
পর্ণার আঁচলে আলতো টান। ভিড়ে ঠাসাঠাসি বাসে গলদঘর্ম অবস্থায় পর্ণা বাসের রডটাকে আঁকড়ে ধরে দাঁড়িয়েছিল। ও কাপড়ের আঁচলটাকে যথাস্থানে টেনে নেয়। আবার টান। এবার আঁচলটাকে টেনে ও ওর কোমড়ে গুঁজে নেয়। ওদিকে কন্ডাক্টর চেঁচাচ্ছে, 'যাদবপুর থানা, যাদবপুর থানা।' ঝুপঝুপ করে বেশ কিছু লোক নেমে গেল। বাসটা একটু ফাঁকা হল। পর্ণা একটা সিটও পেয়ে গেল।
সন্তোষপুর জোড়া শিবমন্দিরে ও নামবে। একটু অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিল ও।
আবার টান। এবার আঁচলে নয়, কুঁচিটা খামছে ধরেছে।
ছোট্টদুটো হাত ওর কাপড়ের কুঁচিটা আঁকড়ে ধরে ওর মুখের দিকে একটা কচি মুখ হাঁ করে তাকিয়ে আছে। পরণে জীর্ণ একটা ফ্রক, বছর পাঁচেকের একটা মেয়ে, চুলগুলো উসকোখুসকো, সারল্যমাখা দু'টো চোখ পর্ণাকে এ কোন মায়াজালে আবদ্ধ করলোরে বাবা!
নিঃসন্তান, স্বামীপরিত্যাক্তা পর্ণার সুপ্ত মাতৃহৃদয় কেমন যেন হাহাকার করে উঠলো। নিমেষে সেই আবেগকে সংযত করে জানলার বাইরে ও মুখ ফেরালো। কিন্তু নাহ্, কিছুতেই ওকে ও অস্বীকার করতে পারছে না। পরক্ষণেই ভাবছে, তাই বা কী করে হয়! কার না কার বাচ্চা? ওর কী করে হবে? মনের ভিতরটা আকুলিবিকুলি করতে লাগলো। তবুও নিজেকে সংযত করে, বাড়ির স্টপেজ আসতে পর্ণা ঝপ করে নেমে পড়লো। দ্রুতপদে এগিয়ে যাচ্ছে। কী মনে হলো, ও পিছন ফিরে তাকালো। আরে ওইতো ও ছোট্ট ছোট্ট পায়ে ওর পিছন পিছন ছুটে আসছে। পর্ণা থমকে দাঁড়ায়। হাঁফাতে হাঁফাতে দৌঁড়ে এসে 'মাম্মা' বলে ও পর্ণার কোমড় জড়িয়ে ধরে বিবশ হয়ে পড়লো। পর্ণা ওকে জড়িয়ে ধরে ব্যাগের ভিতর থেকে জলের বোতলটা বার করে ওর চোখে মুখে দিতে, বাচ্চাটা ওর দিকে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকায়।
পর্ণা ওকে জাপ্টে ধরে বাড়িতে নিয়ে আসে। সেই থেকে ও জয়ীর মা। স্নেহ, ভালোবাসা, পড়াশুনা শিখিয়ে ও জয়ীকে বড় করে তুলেছে।
জয়ী এখন একুশ বছরের ভরা যুবতী। ও এখন সমীরণের হতে চলেছে। একই অফিসে ওরা চাকরি করে। একে অপরকে ভালোবাসে। একদিন অফিস ফেরত জয়ী সমীরণকে ওর মায়ের কাছে নিয়ে আসে। 'মা, আমরা একে অপরকে ভালোবাসি। আমরা বিয়ে করতে চাই।' পর্ণা একগাল হেসে ছেলেটার সাথে গল্প করে। ওর পরিচয় সব জেনে নেয়। পর্ণা সব বলে, কিন্তু আসল সত্যটা ও বলতে পারে না। কারণ জয়ীর জন্যই তো পর্ণা ওর পুরোনো ফ্ল্যাট ছেড়ে দিয়ে, অনেক দূরে অন্য ফ্ল্যাটে চলে গেছে। সেখানে সবাই জানে ও ওর মা। ওটাই ওর আসল পরিচয়।
সামনের মাসেই জয়ীর বিয়ে। দেখতে দেখতে পর্ণার জীবন ও সময়ের পড়ন্তবেলায় কত কী যে মনে পড়ছে, ও নিজেই গুছিয়ে নিতে পারছে না। জয়ীকে ওকে ছেড়ে দিতে হবে। ও সুখী হোক, মা হিসেবে পর্ণাতো এটা চাইবেই, অপরদিকে একাকীত্বের বেদনা ওকে ঘিরে ধরার জন্য যেন ব্যস্ত হয়ে পড়েছে! ও যেন দৃঢ় চিত্তে সামনের পরিস্থিতি সামাল দেবার জন্য প্রস্ততি নিচ্ছে।
-------------
কলমে: বুলা বিশ্বাস
ফোন নাম্বার: 7980205916
মেল আইডি:
bulabiswas60@gmail.com
