Partha Pratim Guha Neogy

Romance Others

3  

Partha Pratim Guha Neogy

Romance Others

স্মৃতি তুমি বেদনার

স্মৃতি তুমি বেদনার

3 mins
264


আয়নার সামনে তৈরী হচ্ছিল ঝিনিক। পিছন থেকে তাড়া লাগাল অরিজিৎ, "আর সাজের দরকার নেই ঝিনিক, তুমি এমনিতেই দেখতে ফ্যাব।" 


উঠে পড়ে ঝিনিক।অরিজিৎ ওকে দুচোখ ভরে দেখতে দেখতে বলে, " তোমার এই শাড়িটা তো আগে কখনও দেখিনি। যদিও সব পোশাকে তুমি অনন্যা তাও এই শাড়িটায় অসাধারণ লাগছে। "

ঝিনিক কিছু বলে না একটু হাসে শুধু, কিন্তু মুখে একটা ছায়া ঘনায় ওর। আজ ওদের দ্বিতীয় বিবাহবার্ষিকী, তাই পাঁচ তারা হোটেলে নৈশ ভোজের প্ল্যান করেছে অরিজিৎ । ড্রাইভ করতে করতে ঝিনিকের কথাই ভাবতে থাকে অরিজিৎ। মেয়েটা সবসময় একটা খোলসে ঢেকে রেখেছে নিজেকে।প্রতিদিন এত কাছ থেকে দেখেও কী যেন পাওয়া হয়নি ওর। 

এসব ভাবনার মধ্যেই ওরা পৌঁছে যায় হোটেল J W Mariott - এর সামনে। এখানেই ওদের table book করা আছে আজ। "ঝিনিক, এই ঝিনিক নেমে এসো, আমরা এসে গেছি।" অরিজিতের কথায় বাস্তব পৃথিবীতে ফিরে আসে ঝিনিক। তারপর আস্তে আস্তে গাড়ি থেকে নেমে আসে। " কী এত ভাবছিলে শুনি, পুরো রাস্তায় একটাও কথা বলোনি!" ঝিনিক একটু হেসে বলল, " কই কিছু ভাবছিলাম না তো। তুমিও তো কোনও কথা বলোনি, জিৎ। "

"সে আমি না বললে কবেই বা আর কথা বলো তুমি!"মনে মনে বলে ওঠে অরিজিৎ। 


বুক করা নির্দিষ্ট টেবিলে এসে বসে ওরা দুজন।" তুমি তো অর্ডার দেবে না জানি, তাই আমিই বলে দেই তাহলে? স্মিত হেসে সম্মতিসুচক ঘাড় নেড়ে মুখ তুলে তাকালো ঝিনিক। ঠিক তখনই চোখ পড়ে গেল পাশের table- এ বসে থাকা couple- র দিকে আর থমকে গেল ঝিনিক, ভদ্রলোকটিও পলকহীন। 


" এ তুই কী বলছিস রাহুল! কী করে এক লহমায় ভুলে যাবে বল তো! সেই কোন ছোটবেলা থেকে একসাথে থাকতে থাকতে তুই আমার অভ্যেস হয়ে গেছিস। তোকে ছাড়া একটা দিনও কল্পনা করতে পারি না আমি আর তুই সারাজীবনের কথা বলছিস!"

"যা বলছি একেবারে ঠিক বলছিরে ঝিনঝিন। পারলে আমাকে ক্ষমা করিস। নুতন করে শুরু কর জীবনটা।" 


ম্যাডাম ও ম্যাডাম সারাক্ষনই তো ভাবের জগতে থাকেন, আপনার পছন্দের খাবারগুলো অন্তত একটু মনোযোগ দিয়ে খেলে এই অধমের একটু ভালো লাগবে। " অরিজিতের ডাকে চিন্তার জল ছিঁড়ে যায় ঝিনিকের। তারপর একটু হেসে খেতে শুরু করল ঝিনিক। অরিজিৎ ওর দিকে তাকিয়ে একমনে ভাবতে থাকে যে বছর আড়াই আগে ওদের অফিসে কাজ করতে এসেছিল ঝিনিক। প্রথমদিন থেকেই এমন একটা গাম্ভীর্যের বলয় তৈরী করে রেখেছিল নিজের চারপাশে যে সেটা ভেঙে কেউই সহজভাবে মিশতে পারত না ঝিনিকের সঙ্গে। অরিজিৎ কিভাবে যেন ওর এই নিশ্ছিদ্র বলয়ে ঢুকে পড়েছিল আস্তে আস্তে।

তারপর একদিন অরিজিৎ বিয়ের প্রস্তাবটা দিয়েছিল। কথাটা শুনে অদ্ভুতভাবে হেসেছিল ঝিনিক এবং বলেছিল " আশাহত হবে কিন্তু, তখন আফসোস করবে না তো? "

অবাক লাগলেও এ নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামায়নি অরিজিৎ। ঝিনিকের মত অনিন্দ্যসুন্দরী একজনকে নিজের করে পাওয়ার আনন্দেই মশগুল ছিল মনটা, বিয়েটা হয়ে গিয়েছিল। আজ সেই বিয়ের দু'বছর, কিন্তু অরিজিৎ ভাঙতে পারলো না, ওদের মধ্যেকার অদৃশ্য দেয়ালটা। 


ঝিনিক এবার অরিজিৎকে বলে, "কী নিজে এখন কোন জগতে শুনি!" ওদের কথার মাঝেই পাশের টেবিলে বসা ভদ্রলোক উঠে ওয়াশরুমের দিকে যায়। অরিজিৎ হেসে বলে, " ট্রাই করছিলাম তোমার মত ভাবের ঘরে বাসা বাঁধতে। আরে সব তো শেষ আর কিছু খাবে? আইসক্রিম? "

না, আমি আইসক্রিম খাবো না। আসছি একটু ওয়াশরুম থেকে। " বলে ঝিনিক উঠেপড়ে।

লেডিস আর জেন্টস ওয়াশরুমের মাঝে একটা কমন প্যাসেজ।থমকে দাঁড়ায় ঝিনিক, পা যেন আর সরছেই না ওর। উল্টোদিক থেকে পায়ে পায়ে এগিয়ে আসছে পাশের টেবিলর ভদ্রলোক। ম্লান একটা হাসি ফুটিয়ে বলে, "কেমন আছিস ঝিনঝিন? এই শাড়িটায় আজও চোখ ফেরানো যায় না তোর থেকে!"

অস্বাভাবিক একটা ভাঙচুর চলছে ঝিনিকের মধ্যে, কিন্তু তাও শান্ত চোখে তাকাল ভদ্রলোকের দিকে আর বলল, " ঠিক যেমনটা রেখে গিয়েছিলি! তুই নিশ্চয়ই খুব ভালো আছিস রাহুল। "

বলে চোখের জল আড়াল করতে কোনও দিকে না তাকিয়ে এগিয়ে যায় ঝিনিক, দেখতেও পায় না ওদের ঠিক পিছনেই দাঁড়িয়ে থাকা অরিজিৎ।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance