STORYMIRROR

Anindita Kashyap

Romance Others

3  

Anindita Kashyap

Romance Others

সম্পর্কের আধিক্য

সম্পর্কের আধিক্য

3 mins
216

প্রথমত আমি আমার একমাত্র কন্যা শিশুর মা, তারপর একজন চাকরিজীবি মহিলা। লকডাওনের আগে কিন্তু প্রথম পরিচয় টা দ্বিতীয় হয়েছিল। 

লকডাওনের প্রথম দিন, চিন্তা নেই, তাড়াহুড়ো নেই, ভালো লাগছে, পরিবারের সাথেই সময় কাটাব, আনন্দ।

কাজ কিন্তু খুব নিষ্ঠার সহিত করি আমি, সেটা কার্যালয়ের কাজ হোক বা বাড়ির কাজ। আমার কাজে আঙুল টোয়ানোর সুযোগ কাওকে দেইনা।নিজের কাজ নিজে করতেই চেষ্টা করি। 

আগে কাজের থেকে যখন বাড়ি ফিরতাম তখন মেয়ে আমার দুপুরের ঘুমে। স্কুল থেকে এসে বাবার সাথে খাওয়া- দাওয়া করে শুয়ে পরত, পাশে তার বাবা। আমি ভাবতাম শুয়ে থাকতেই সব কাজ সেরে নিতে। যেটা খুব কিঞ্চিত সম্ভব হতো। মেয়ে উঠে এসে জড়িয়ে ধরে একটু সময় চাইত। আমিও জড়িয়ে ধরতাম কিন্তু তারমধ্যেও একটি তাড়না থাকত এবং সেটা আমার মেয়ে বুঝতে পারত। প্রথম প্রথম খারাপ লাগত কিন্তু সেটা যেন দুইজনেরই সহ্যের মধ্যে এসেগিয়েছিল। কিছু না বলেই ওর তাকানোতেই ও বুঝাতো যে অনেক গল্প আছে ওর আমার সাথে। আমি সেটা না বুঝার ভাব করে এড়িয়ে যেতাম, আবার কখনো ওর গল্প আমার কাজের মধ্যেই শুনানোর চেষ্টা করত, আর আমি ঠিক কাজ টাকে জোরদিয়ে করে শুনবার অনিচ্ছা টা ওকে বুঝিয়ে দিতাম। কারণ কাজ সম্পূর্ণ করব তবে বিছানায় তাড়াতাড়ি যাব, সারা দিনের পরিশ্রম মেটানোর একমাত্র উপায়। সকালে আবার স্কুল, অফিস সবটাই তো আছে। একটা আশা ওকে রোজই দিতাম আবার রোজই ভাঙতাম, "বিছানায় গিয়ে শুনব তোমার গল্প, হবে?"। কিন্তু বিছানায় গিয়ে আমাকে গল্প শুনানোর ওর শক্তি থাকে আমার শুনার শক্তি থাকে না। হুম হুম করতে করতে আমি কখন যে নাই হয়ে যাই নিজেই বলতে পারিনা। খারাপ লাগত আমারও, আমিওতো মা। কি করার, কি পাওয়ার তাড়না যে প্রলেপ দিয়ে দিত সেই আবেগের উপর। এরমধ্যেই মেয়ে কখন যে এত বুঝের হয়ে গেল। মার যে সময়ের অভাব সেটা সময় তাকে সিখিয়েছিল। অতটা গা ঘেষেনা, কিছু তেমন গল্পও থাকেনা ওর। রবিবার দিন টা খুব প্রিয় ছিল ওর, মা বাড়িতে থাকবে তাই। কিন্তু এখন রবিবার আসলেই তার মন খারাপ স্কুল বন্ধ থাকে, এখন সে রবিবার একদম ভালোবাসেনা।


লকডাওনে অনুভব করলাম, মেয়ে একেবারে খুশি না, যেহেতু স্কুল বন্ধ। আমি কিন্তু একটু খুশি ছিলাম ওকে একটু সময় দিতে পারব করে। আমার বাড়িতে থাকা নাথাকা অতটা মায়নে রাখেনা ওর জন্যে এখন। লকডাওনের আগে যেমন দিনচর্যা চলছিল ও সেটাই মেনে চলছিল, বেশি কথা বলেনা আমার মেয়ে। জড়িয়ে ধরে চুমু দেওয়ার অভ্যাস টাও প্রায় নেই। আমি একটু একা অনুভব করছিলাম। বুঝতে পারছিলাম যে সব থেকে আপনজন দূরে সরেগেলে কেমন মনে ব্যাথা হয়। কিন্তু আমিতো এখন বাড়িতে এখন কেন ও গল্প শুনাতে আসেনা। এখন তো সকালের তাড়না নেই, জেগে জেগে মোবাইল টিপাটিপি করি কিন্তু ওর গল্প তো শুনায় না। 

সপ্তাহ দুই এক পর একদিন পাশে ডেকে বললাম, "বস না, আমিতো এখন বাড়িতে, তোর কোনো গল্প নেই শুনানোর?" কি না বললাম, ওর চেহারায় যে খুশির ছোয়া দেখলাম, আমার চোখের কোণ ভিজতে সময় লাগলনা। জিজ্ঞাসা করলাম, "এত দিন ধরে তো বাড়িতেই আছি আসিস না কেন তোর গল্প নিয়ে?" খুব সাধারণ উত্তর দিল ও, " তোমার তো কত ব্যস্ততা, আমি পাশে আসলে তোমার অশুবিধে হয়, তাই। জান মা, আমার বন্ধুরা অনেক ভালো। আমার কথা শুনে, কত গল্প করি আমরা। এইজন্যই তো স্কুল টা বন্ধ থাকলে একদম ভালো লাগেনা। আমার বন্ধুদের কত গল্প আছে তুমি শুনবে মা?" উত্তর দিলাম, "শুনবতো, আমার সোনামার গল্প।" বলেই জড়িয়ে নিলাম বুকে, কি যে সুখ অনুভব করলাম বলে বুঝানো যাবেনা।তারপর আবার আগের মতো করে মেয়েটিকে ঘুরিয়ে পেলাম। ওর চেহারায় আমি পাশে থাকার আনন্দ টা আবার ফুটে উঠল।

ওর খুব সাধারণ উত্তরটা আমাকে অসাধারন চিন্তাধারা দিল। দূরত্বে ভালোবাসা বাড়ে সত্যি কিন্তু আপনজনকে এতটাও দূরত্ববোধ করাতে নেই যাতে দূরে থাকাটা তাদের অভ্যাস হয়ে যায়। কাছে ফিরিয়ে পাওয়ার আমি যেই সুযোগ পেয়েছি, সবাই সেটা পাবে কিনা? লকডাওনে আমাকে চিরকাল মনে রাখার মতো অনুভুতি দিয়েছে। প্রাধান্য কোনটার বুঝতে পেরেছি। আধিক্য কার সেটাও জানলাম।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance