STORYMIRROR

Partha Pratim Guha Neogy

Romance

4  

Partha Pratim Guha Neogy

Romance

সমপ্রেমীর আত্মকথন

সমপ্রেমীর আত্মকথন

5 mins
375

বর্তমান যুগে জীবনযাত্রা প্রচন্ড কঠিন হয়ে উঠেছে। একদিকে যেমন জীবনযাত্রার মান যত বাড়ছে, ততই উপার্জনের রাস্তা কমে আসছে। ফল শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বেকারত্ব খুব বড় একটা অভিশাপ।সেই অভিশাপের আগুনে শুধুই গ্রামের পর গ্রাম পোড়েনি, পুড়েছে শত তরুণের স্বপ্নের পর স্বপ্ন।যুবক হলেও স্বপ্ন দেখতে অভ্যস্ত কোন কালেই ছিলাম না,আজও নয় কারন আমি জানি স্বপ্ন ভাঙার কষ্ট গভীর রাত্রের দুঃস্বপ্নের চেয়ে ও বিবর্ণ।জীবনের নানা পরিস্থিতি এমনিতেই আমাকে ক্লান্তিকর অভিশপ্ত সমকামী করেছে।সেই কষ্টে বুকের পাঁজর ভেঙেছে শতবার।গভীর রাত্রে নিঃসঙ্গ অবস্থায় বুকের চিনচিন ব্যথা আমাকে জাগিয়ে রাখে ।হায়রে জীবন,তাকে আমি না পারছি অর্জন করতে না পারছি ছাড়তে ।মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে দূরে কোথাও চলে যায় যেখানে মানবদেহ কুরে কুরে খাওয়া জন্তুগুলো নেই। আর আমার মত বেকারের আরতো কোন পথ খোলা নেই।


কিন্তু আমি এতোই হতাশ যে তা থেকে মুক্তি লাভের উপায় অজ্ঞাত । আজ আপনারা জানবেন আমার জীবনের অর্জন,গ্রহণ আর বর্জন সংক্রান্ত সব কথা । আমার প্রেম,ভালবাসা,বিশ্বাস আর বিশ্বাস ভঙ্গের গল্প।আমি অসীম। আমি যদিও গ্রামের ছেলে, তাই বলে বোকা সোকা ছিলাম না।গ্রাম বলতে এখন আগেকার মত গ্রাম নেই, খোল নলচে বদলে প্রায় শহরের মতোই হয়েছে ।আমার ছিল একটা সুন্দর পরিবার।পরিবারে ছিল না সুখের ঘাটতি।তখন আমি স্কুলের ছাত্র।স্কুলে তখন সিক্স - সেভেনে পড়তাম।দাপিয়ে বেড়াতাম সারাবেলা।


প্রচন্ডরকম ডানপিঠে স্বভাবের ছিলাম আমি। জন্যে এমন দিন ছিল না,যেদিন মার খেতে হয়নি।মার খেয়ে চলে যেতাম নদীর পাড় আর সেখানে গিয়ে আনমনে বসে বসে নদী দেখতাম।মাঝে মাঝে সারাবেলা থাকতাম নদীর পাড়ে। আর আমার সমকামী হওয়ার শুরু সেখান থেকেই।আমার একাকিত্বের মধ্য থেকেই তার উৎপত্তি।আমার খুড়তুতো ভাই রতন ,সে তখন কলেজে পড়তো।একদিন আমি তার দ্বারা কলঙ্কিত হলাম।বৃষ্টিভেজা এক সকালে সে আমাকে রান্না ঘরে তার যৌন চাহিদা পূরণ করতে ব্যবহার করে।তার সুঠাম শরীর আর পুরুষালীকাম আমাকে চিরদিনের মত সমকামী করে দিল।


এরপর থেকে প্রতিনিয়ত আমি তার দ্বারা যৌনকাজে ব্যবহৃত হয়েছি ।আমি তার কাছে ছুটে যেতাম এক অদ্ভুত আকর্ষনে।অনেক আটকাতে চেয়েছি নিজেকে কিন্তু পারিনি।বাবা মা দুজনকেই হারালাম।তাদের মৃত্যুরপর আমাকে দেখার মতো কেউই রইলো না।অনাথ হয়ে একা হয়ে গেলাম পনের ষোল বছরের কিশোর বয়সে।বড় দিদির সাথে শহরে চলে আসলাম তাদের ফ্ল্যাটে উঠলাম আর কলেজে ভর্তি হলাম।রতন,যে ব্যক্তি আমার হৃদয়ে সমকামের বীজ পুঁতে দিল - সে কিন্তু বিয়ে করলো।আমি অনেক কেঁদেছিলাম আমার ভালোবাসার জন্য কিন্তু তার মূল্যটুকু ও ছিল না।সেদিন থেকেই বুঝতে পেরেগিয়েছিলাম আমি সমকামীতার জ্বালা।


সমকাম আমার মনে এতটা বাঁধা বেঁধেছিল, যে তারপর যাকে দেখেছি তাকেই ভাললেগেছে।একরাত বিছানায় পাওয়ার আশায় বুক বেঁধেছি কাউকে ভালবেসে।যার ফলশ্রুতিতে কষ্টই পেয়েছি বারবার।রতন ভাইয়ের পর পরবর্তী কালে আমার জীবনে আসে অচিন ।অচিনই ছিল আমার প্রথম প্রেম।যাকে আমি মন থেকে ভালবেসেছিলাম।কলেজের ফাইনাল ইয়ারে যখন ছিলাম তখন অচিন তার দোকান খুলে বসেছিল।তাকে যত দেখতাম ততোই ভাল লাগতো।বাসার ঠিক পাশেই ছিল তার মনিহারী দোকান।আমি ছাদ থেকে,বারান্দা থেকে অথবা পড়ার টেবিল থেকে তাকে দেখতাম।সে ও আমাকে লক্ষ্য করতো ও দেখতোও ।


আমাদের চার চোখের মিলনে কবে যে প্রেম হয়ে গেল, তা আমরা বুঝতে পারলাম না ।একদিন সে আমায় ডাকলো আর তার পাশে বসিয়ে গল্প করলো।তার কথা বলার ধরন,তার অট্রহাসি,তার পেশিবহুল বাহু,লোমশবুক,এলোমেলো চুল আর চোখের মায়া আমাকে এতোই টানছিলো যে,একদিন বলেই দিলাম তাকে মনের কথা।সেই ঠোঁটে চুম্বন করেছিল।আমাকে পরিপূর্ণরুপে ভালবেসেছিল।টানা দু বছর আমি তার পাশে ছিলাম।কিন্তু ভাগ্য বড় ধোঁকা দিল আমায়।ভর্তি হলাম ইউনিভার্সিটিতে। পড়াশোনার জন্য আমি ওঠলাম হোস্টেলে আর সেও পালটাতে লাগলো। তারপর একদিন সে আমাকে একা করে সমাজ আর ধর্মের দোহাই দিয়ে সে বিয়ে করলো।


আমার প্রথম ভালবাসা সেই অচিন, আজ অন্যের ভাবতেই বুকে কষ্টের তীর এসে বেঁধে ।সেই তীর বুকের ভিতরে রক্ত ঝরায় আর সেই রক্ত চোখে জল হয়ে ঝরে।যাক বাদ দিন, এখন থাক এসব কথা । একজন বেকার মানুষের তো কষ্ট থাকবেই।পড়াশোনা শেষ করতে অনেক কষ্ট করেছি।আজ যখন শেষ হলো,তখন পাচ্ছি না জীবন ধারনের জন্য একটা চাকরি। যদি একটা চাকরি পেতাম, তবে হয়তো পিছনে ফেলে আসা কষ্ট গুলোর কবর রচনা করতে পারতাম কাজের ব্যস্ততার মধ্যে। এই চিন্তাই আমার হৃদয়টাকে গ্রাস করে রেখেছিল।ভাগ্য আমাকে সাহায্য করলো এইবার।একটা চাকরি পেলাম - একটা বেসরকারি কম্পানিতে।


অতীতের ফেলে আসা কষ্টগুলো ভুলে কাজে মন দিলাম।রতন ,অচিন ,অমিত আরো কিছু মানুষের লালাগ্রন্থীর শিকারে আমি যখন ক্লান্ত,অবসন্ন আর মানসিকভাবে হতাশাগ্রস্থ,তখনই চাকরিটা আমাকে নতুন করে বাঁচার সাহস যোগাল।আমি সমকামী তা ভুলে একজন দায়িত্ববান মানুষ হতে চেষ্টা করতে লাগলাম।দিনগুলো খুব ব্যস্ততায় কাটছিল।সকালে কাকভোরে উঠে ফ্রেশ হয়ে প্রাতরাশ তৈরী আর রাত্রে ফিরে আবার রান্না করে খাওয়া।এইভাবে ব্যস্ততার মধ্যে দিন কাটছিল যার ফলে খুব ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। জীবনে আবার নতুন করে কেউ আসবে না বা আমিও নতুন করে কারুর সাথে জড়িয়ে পড়ব না - আমি নিশ্চিত ছিলাম । কিন্তু মানুষ ভাবে এক আর হয় আরেক - তারপরে যা হল।


আমার অফিসের ম্যানেজার,নাম নীল । উনি ছিলেন প্রচন্ড রাগী। আমার থেকে বয়সে এক দু বছরের বড়ই হবে।দেখতে এতো স্মার্ট যে একবার দেখলে আরেকবার ঘাড় ফিরিয়ে দেখতে হবে আর রাত্রে শুয়ে ভাবতে হবে।আমি এটাই ভাবতাম যে ,যে ছেলে এত স্মার্ট সে কেন এতো রাগী ।তবে আমার সাথে ততোটা রাগ দেখাতো না, ও কম কথা বলতো ।মাঝে মাঝে খেয়াল করতাম আমার দিকে তাকিয়ে দেখছে।আমি তো ভাবনায় পড়ে যেতাম যখন নীল স্যারের প্রেমপূর্ণ দৃষ্টি আমার চোখে আটকা পড়ে যেতো। সত্যি বলতে ধীরে ধীরে আমিও তাকে ভালবেসে ফেলছিলাম।


তার ভালবাসা আমাকে রাত জাগাতে শুরু করল।মাথার তার গুলো ছিঁড়তে শুরু করলো বেখেয়ালি চিন্তায়।রাতে রান্না করে খাওয়ার চেয়ে তার কথা ভেবে ডায়রি লিখতেই পছন্দ করতাম।কিন্তু ,ভয় প্রাণগ্রাসী ছিল।কারন ,উনি এমন কেউ যাকে জীবনে পাওয়ার ইচ্ছে তো দূর, তাকে ছুঁয়ে দেখতে চাওয়াও বৃথা চেস্টা। ।তার পরেও কি পাওয়ার আশায় যেন হৃদয় উত্তপ্ত হতে লাগলো।জানি না,ওনার মনে কি আছে, তবু কেন যে মনে হয় সে ও চায় আমাকে।সে ও ভালবাসে আমাকে।আমাকে চায় সে ও।


কিন্তু বলে না কেন?আমি কি করে তাকে বোঝাবো ?যেখানে সে আমার ওপরওয়ালা ।তারপরেও মন মানেনি।ভালবাসার জালে আবদ্ধ হতেই হল আমাদের।সেদিন অফিসের মিটিং সেরে আমি, নীল আর অন্যরা বের হচ্ছিলাম,এমন সময় নীল আমার হাত টেনে ধরে বললে তার সাথে চলতে।আমার বস, তাই বিনা দ্বিধায় চললাম তার সাথে।গাড়িতে চড়ে বসতেই সে গাড়ি চালিয়ে ছুটল।আমার বুক কোন আতঙ্কে যেন ধুক ধুক করে কাঁপছিল।গাড়ি এসে থামল তার বাড়ির সামনে।আমি তাকে অনুসরন করে হেঁটে চললাম।সে তার রুমে আমাকে বসিয়ে নিজেই কফি করে আনলো।আমি চুপ করে ছিলাম।


কিছু বলার ছিল না,ভয়ে হৃদপিন্ড গলা বেয়ে বের হয়ে আসতে চাইছিল। নীল এসে আমার পাশে বসলো,কয়েকবার গলা ঝেড়ে বললো ,অসীম,তুমি আমার হবে?আমি বোবা হয়ে তাকিয়ে ছিলাম তার দিকে।সে আমাকে জড়িয়ে ধরে কপালে কিস করে বলল,অসীম আমি তোমাকে ভালবাসি।তার এই কথায় আমি আটকে গেলাম।বললাম, আমিও ভালবাসি।তার ঠোঁটে ঠোঁট ডোবালাম।তার চোখে চোখ রেখে এক অজানা ভালবাসার জগতে পা দিলাম।সেখানে শুধু সুখ আর সুখ।এই আমার সমকামী জীবন।যা আজ বললাম।হ্যাঁ,আমি আর নীল আজো এক সাথেই আছি।কিন্তু কোথাও যেন ভাঙনের সুর।আশা করি আমার ভালবাসা পারবে সেই ভাঙন ঠেকাত কারন আমি পুনরায় আবার কষ্ট পেতে চাই না। আমি বিশ্বাস করি, প্রকৃত ভালোবাসা কখনও হারে না।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance