DR. SUNILKUMAR ROY

Romance

3.1  

DR. SUNILKUMAR ROY

Romance

সম্ভোগ

সম্ভোগ

13 mins
1.2K


সম্ভোগ , বিবাহ ও ভাঙনের ইতিকথা

                                সুনীলকুমার রায়

                                 

দুপুরের গরমে ক্লান্ত অনিশ ঘরে এসে বসেছে। অনিশ খুব একটা বাইরে মেশে না। এটা ওর অভ‍্যাস হয়েগেছে। আড্ডা দেবার মন থাকলেও আড্ডা দেওয়া তার হয় না।

 জীবনে একটু একটু করে সব শুরু হতে না হতে হারিয়ে যায়।

অবিনাশ একক। মন খারাপ হলে সামাজিক নানা সংযোগ ব‍্যবহার করে। পড়ে কখনো ।কখনো শেয়ার করে নিজের অভিজ্ঞতা।

প্রচন্ড গরম। ঝড়বৃষ্টির সম্ভাবনা কম।যদিও আকাশ গুমোট হয়ে আছে।যদিও আকাশ মাঝে নিজের মতো করে মেঘের ঘোলাটে চোখ ফাঁকি দিয়ে দেখছে পৃথিবীর মাটি, জল ও গাছ। মানুষকে দেখার কিছু নেই। সব ভালো নয়, কিছু তো খুব জীবন্ত শয়তান, মাঝে শ্রেণী আছে যারা ,তারা কেউ কেঁচো, কেউ জোঁক, কেউ বা এসব নয়, হায়না বা সাপ। তবে চারপাশে আর কোনো প্রাণীর দেখা পাওয়া যায়, সেটা মানুষের মধ‍্যে থাকে। এরা হল ধান্দাবাজ। এদের চরিত্রের রঙ এখনো পর্যন্ত পাওয়া যায় না।

হঠাৎ মেঘ গর্জন করে ওঠে ,জানলাগুলো বন্ধ করে একটি জানলা সামন‍্য খুলে বাতিসের দমকা অনুভব করতে চাইছে অনিশ ।

তার দুঃখ নেই, কিন্তু বোকামী ভরা জীবনটাকে উপভোগ করতে করতে বোঝে যা ঘটেছে সেটা উপভোগের , তবে আমৃত‍্যু ব‍্যাধির মতো বয়ে বেড়াতে হবে।

ডিভোর্স হয়েগেছে আট বছর হল।যাকে ডিভোর্স করেছে,সে প্রেম করতো একজনকে আর ধাক্কা খেয়ে বিয়ের প্রস্তাব দিল তাকে। অবিনাশ তখন পি-এইচ.ডি'র কাজ নিয়ে ব‍্যস্ত। চমকে উঠেছিল। 

  প্রমিতা কলেজে গেস্ট হিসেবে যোগ দিয়েছিল। এক অধ‍্যাপক কলিগ পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল , প্রথম পরিচয়ে প্রমিতা বলে ,তাকে যদি একটি পেয়িংগেস্ট দেখে দেয়। তার তো দুর্গানগরের দিকে তেমন চেনা নেয়।

যথারীতি দুদিন পরে ফোন করে প্রমিতা। আপনি ঘর দেখলেন , নাকি ভুলে গেছেন।

--না,না ।জানাবো। আর আমার নিজের ঘর ফাঁকা পড়ে থাকে ,থাকবেন নাকি ।

এই ধরণের আলটপকা বলে না ঠিক সবসময় , তবে এলোমেলো কথা বলে থাকেই। যে কথাগুলো থেকে বোঝা যায়, সামাজিক যোগাযোগের সূত্র একটু দুর্বল বেশ। সহজ,সরল। মিথ‍্যা কৌশল বা ছলাকলা করা তার স্বভাবে নেই।


এতো জটিল জীবন ,শুধু বোঝে না চারপাশের মানুষ যতটা সহজ তার চেয়ে বেশী জটিল।

ওপাশের ফোন থেকে প্রমিতা অনিশকে বলে , আচ্ছা আমাকে বিয়ে করবেন।

প্রত‍্যুত্তরে অনিশ জানায় করতে তেমন কিছু অসুবিধা নেই ,তবে বাড়িতে না জানিয়ে সে বিয়ে করবে না বা করতে পারবে না।

--ও! তা ভাবুন জানাবেন।

আসলে অনিশ এমন বাড়িতে জন্মেছে যে বাড়ি থেকে বাইরে যাওয়া তার সাধ‍্য নেই। অথচ বাড়ির অবদান ও কর্তব‍্য নগন‍্য। বাড়িকে তার ভালোবাসা ও বাড়িতে তার অস্তিত্ব।

যথারীতি অফিসে যাবার পথে দেখা হলেও কথা হয়নি। শুধু তারা কদমতলী স্টেশনের কাছে এসে দেখা করবে।

বিকাল 4.30টে। চৈত্রের উত্তাপ। হাঁটতে হাঁটতে অনিশ কি বলে শুরু করবে ভাবে নি। কেননা সে কাউকে কোনদিন বলতে পারেনি ভালোবাসি , না কোন মেয়ে এসে তাকে বলেছে ভালোবাসি। তার শুধু উতলা মুহূর্তে মনে হতো ,আচ্ছা তাকে কি কেউ ভালোবাসতে পারে না।সে শ‍্যামশ্রী ,সুঠাম ও মেধা সম্পন্ন ও সমাজে প্রতিষ্ঠিত। বলে রাখা ভালো ,প্রমিতা অসাধারণ না হলেও পোশাক ও কথা বলার আভিজাত‍্যে ও দেহেরগঠনে বনেদি বাঙালী পরিবারের ছাপকে বহন করে।

অনিশ বলে , চলুন,আমরা এদিকে কোথাও রাস্তার পাশে চাতালে বসি।

--তুমি রাস্তায় বসবে কেন?

--না,তবে চলুন প্ল‍্যাটফর্মে বসি।

--সে না হয় বসা যাবে। কিন্তু আপনির পর্বটা বাদ দাও।

--ঠিক আছে।

কি বলবে বুঝে উঠতে পারে না । কয়েক কদম এগিয়ে যেতে যেতে প্রমিতাকে যতটা না দেখছে,তারচেয়ে বেশী আশেপাশের ছাত্রছাত্রী যদি সামনে পড়ে যায়, বা পরিচিত কেউ। এরকম মুহূর্তে প্রমিতা বলে, কী কিছু বলো।

--না, জীবনের কিছু মুহূর্ত প্রথম হয়, ভাষা জোগায় না। আর লাজুকদের তো সমস‍্যার শেষ নেই।

--আচ্ছা দেখছো মেঘ করেছে ,বৃষ্টি হতে পারে। একটু একটু জোরে বাতাস বইছে। বরং চলো তোমার ফ্ল‍্যাটে যাওয়া যাক। কোথায় থাকো দেখাও হবে। আর বসে গল্প করা যাবে।

অযাচিত এই ইচ্ছাকে সম্মান করে। ট‍্যাক্সি বুক করে পাড়ি দেয় কলকাতার শহরতলির আরেক নগর কলকাতা।এক কলকাতার হাজার বৈশিষ্ট‍্য।

  ট‍্যাক্সিতে বসে কথা খুঁজে পাচ্ছে না। এক আনন্দের অনুভূতি ,প্রেমে পড়ার বিস্ময় ও নিজের মনের চঞ্চলতা সামলাতে পারছে না।প্রমিতা তার হাত দুটো টেনে নেয়।এই হাত ধরার মধ‍্যেই যে জীবনে এতো সহজ আনন্দ সুখ, বুঝে উঠতে পারে না। আনন্দের সাথে ভয় ও বেদনা জড়িয়ে থাকে। কী করে বলবে তার অপার লড়াই ও কলঙ্কিত ঘটনা। বলে ফেলবে ,না বলবে । সে সময় মতো সব বলবে।

প্রমিতা হাত দুটো জড়িয়ে আলতো করে কিস করে। বলে তোমার মধ‍্যে আলাদা কেমিস্ট্রী আছে, আমার হাত ছাড়তে ইচ্ছা করছে না।

কেমিস্ট্রী এই কথাটা প্রথম শুনলো অবিনাশ। একজন মানুষের জন্য আরেক জন মানুষের যে বন্ধনের দিক, এক অনু-পরমানুর বন্ধনের মতোই তীব্র। সে পরে জেনেছে একে ও ওকে জিজ্ঞাসা করে । কারণ বন্ধুমহল ওর কম,পরিচিতি যদিও অনেক।

বাড়ির সামনে গাড়ি থেকে নেমে গেট খুলে ওর ফ্ল‍্যাটে যায়। ডাইনিং হলে বসতে বলে পড়ার ঘরে ব‍্যাগ রেখে ফিরতেই প্রমিতা বলে,তুমি আমার পর নাকি যে আমি আরাম করে বসার জন‍্য ভিতরে ঢুকতে পারবো না।

--না,না তা নয়, আসলে আমি বুঝে উঠতে পারছি না, কি করবো না করবো, ..

--আরে থাক ওসব কথা।

--বসুন ,আমি ফ্রেশ হতে যাচ্ছি, আপনি ইচ্ছা করলে যেতে পারেন।

তোয়ালেটা বার করে খাটের পরে রাখে।

ওয়াশরূম থেকে ফিরে এসে মুখের জল পুছে নেবার জন‍্য গামছার দিকে হাত বাড়াতে টেনে নেয় কোলের দিকে।

-কী হল ?

এখনো আপনি। আপনি নয় তুমি। বলতে বলতে

চোখের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট দুটো চেপে ধরে দাঁত-ঠোঁটে। শরীর ছেড়ে দেয়। লুটিয়ে পড়ে।

চোখদুটো বন্ধ প্রমিতার এবার। অনিশ লজ্জায় লাল হয়ে , আধবোজা চোখ দুটি দিয়ে পারমিতার অপরূপ মুখের শোভা দেখে মুগ্ধ ,স্মৃতিভ্রষ্ট । শরীরে শরীর মিশে যেতে চেয়ে, হাত বাড়িয়ে দেয় বুকে। ঠোঁট দুটো যেন নতুন কচি ধানক্ষেত। প্রথম বৃষ্টির প্রাবল‍্যে ছিঁড়ে যাচ্ছে পাতা।

খুলে ফেলে জামা। অনিশ জেগে ওঠে, বহুদিনের চাপা বেদনা ও মরুভূমি আদরে গলে যাচ্ছে যেন।

একটি হাত দিয়ে প্রমিতা চেপে ধরেছে তার আকাঙক্ষাকে। অনিশের হাত খুলে ফেলে শাড়ি। প‍্যান্টি টানতে দেখতে পায় শুভ্র মেঘে নীলাভ ঘাসের পেলব মখমল। বলে একবার চুম্বন করবো। পারমিতা চুপ করে চোখ বন্ধ করে আছে। পারমিতা শরীরটা ছেড়ে দিয়েছে। কিছু বলছে না। ডালিমের মতো লাল হয়ে উঠেছে গাল। অদ্ভুত কোমল লবনাক্ত আঁশটে ভাব আর গোলাপজামের গন্ধ ও স্বাদে জিভ ডুবিয়ে দেয়।উন্মাদ হয়েগেছে কী সে। কোমর থেকে নামিয়ে জাঙিয়া মুখের মধ‍্যে আনন্দ দন্ড দিতেই, পারমিতা জিভের অপূর্ব কৌশলে ,ঠোঁট ও দাঁতের শিল্পিত ব‍্যবহারে পুলকিত হয়ে,একহাতে সুডোল সুপুষ্ট স্তন চেপে ধরে ,অন‍্যহাতে চেপে ধরে ত্রিবলী ও শস‍্যাশ‍্যামলা ভূমি।একটি আঙুল দিয়ে থাকে উষ্ঞ প্রস্রবণে। এই অসম্ভব মুহুর্তে বাইরে মেঘের গর্জন,দমকা বাতাস আর বৃষ্টি ভিজিয়ে দিচ্ছে। বাইরের তাপ ও চাপ তাদেরকে আর সীমার মধ‍্যে রাখছে না। পারমিতা দুপা একটু ফাঁকা করে ঠেলে দেয় ,অবিনাশকে। অবিনাশ আনন্দ দন্ড দিয়ে যখন ঠিক মতো প্রস্রবনে দিতে পারছে না, একহাত বাড়িয়ে দেয়, অপূর্ব রসালো উষ্ঞস্রোতে নিজেকে ডুবিয়ে দিতে চেয়ে ,বারবার অনিশ ওই স্রোতের রূপ ,রস ও গন্ধ নিতে পাগলের মতো জড়িয়ে ধরে।

প্রমিতা দুপা ঝড়ের উন্মতায় শরীরসহ ডাল-পাতা নিয়ে গাছের প্রসারতাসহ, পা দুটি প্রসারিত করে বলে, আরও জোরে ধাক্কা দাও, মিশে যাও, আরও আরও ।

এভাবে বাইরে ভিতরে ঝড় কমকরে আধঘন্টা চললো। অবিনাশের বিছানা ভিজে গেছে।লজ্জা অনিশ চিরকাল পেয়ে থাকে। উঠতে যেতেই বুকে টেনে নেয়। উন্নত বুকের কুসুমকোমল গভীরতায় ডুবে যায়।

ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আসতে

চায় চোখ। একটা কথা হঠাৎ মাথায় এলো অনিশের।যে আমাকে এত টেনে নিল, সেই দেখলো প্রথম ঝড় বৃষ্টি হচ্ছে ,তার শোভা কেমন।অনিশ বলে , আচ্ছা তোমার চোখ বন্ধ ছিল কেন।

--আমি উপভোগ করছিলাম।

আসলে প্রমিতার অভিজ্ঞতা অন‍্য। মিথ‍্যা কথায় বললো। যেমন মিথ‍্যা বললো এখোন। আর অনিশ ভাবতেই পারে না প্রমিতা এমন কিছু করতে পারে। ভালো লাগে, মনে ধরা ও সময়ের স্রোত ,এসব তো চলছেই।ওর অস্বাভাবিক নয় কিছু।

তখন সময় সাড়ে পাঁচটা হবে। প্রমিতা বলে, যেতে ইচ্ছা করছে না , তবুও যেতে হবে।

আর একটু জড়িয়ে ধরবে। বলতে না বলতে মোবাইলের ঘন্টি বেজে ওঠে। সংযোগ কেটে দিয়ে কলব‍্যাক করতে করতে বলে, যা বলবো, তা তুমি শুনলে অজ্ঞান হয়ে যাবে

। অপরপ্রান্তের কথা শুনতে পাচ্ছে না। কিন্তু বুঝতে পারছে বাড়ির লোক কত খোঁজ রাখে, যত্ন নেয়।

--ফোন করেছিলে কেন? না, আমি এখনো কলেজে আছি। পরীক্ষা তো কাল। তাই মাইক্রোস্কপ সেট করছি। হ‍্যাঁ ৬টা নাগাদ বার হবো।

 বিস্মিত হলেও অনিশ ভাবে, তাকে কত ভালোবাসে,তারজন‍্য কি না করছে। ভালোবাসার জন‍্য অনুভূতি জরুরী , সময়কাল নয়।

(২)

পথচলার অভিজ্ঞতা জন্মায় সঙ্গ থেকে। সে বন্ধু ও আড্ডা থেকে। সারল‍্য, একরৈখিক ভাবনা, অকপটে যতটা পারা খারাপ কে খারাপ বলে চলা সব কমবেশি মূল‍্য যাইহোক, সংসারে অচল। সংসার হল ডাইনোসর যুগের আরশোলা থেকে এযুগের হায়না সদৃশ মুখোশপরা ভদ্রলোকের সমাহার ।আর এযুগে তেল ও জল মিশ খায় কিনা জানি না। তবে কার ধর্ম কী বলা মুশকিল।


‌অনিশ বাড়িতে জানিয়েছিল। বাড়ি থেকে দাদারা বলেছে অমত নেই । কেননা ওদেরও ভালো করে চেনে। ওরাও ওকে ভালো করে চেনে। একদিন গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসুক। তারপর কথা বলবে ওদের বাড়ির সাথে।


রাতে সে মনে করিয়ে দেয় একদিন তার গ্রামের বাড়িতে যেতে হবে। গ্রামের বাড়ি শহর থেকে ট্রেনে 2ঘন্টার রাস্তা । আর পরস্পরের বাড়ির।দূরত্ব এক কিলোমিটার হবে। কিন্তু প্রমিতারা থাকে স্টেশন সংলগ্ন ইঁটকাঠের বেড়াজালে। ওদের বাড়ি ভেতরে। যেখানে বিদ‍্যুৎ সেদিন পৌঁছাল। রাস্তাঘাট সেদিন পাঁকা হয়েছে।

যথারীতি দুই বাড়ির মধ‍্যে বিয়ের কথা এগিয়ে যায়, সামনাসামনি বসে কথা হতে বাকি। শীঘ্র বিয়ে হবে। দিনক্ষণ ঠিক হবে পরে। এতো বিয়ের তাড়া কিসের জন‍্য। শুভকাজ তাড়াতাড়ি শুরু করতে হয়, কিন্তু কোন শুভকাজ। আসলে শাস্ত্রের বিধান থাকলেই তো বেদবাক‍্য হয়ে যায় না।তখন সময়ের দিক থেকে কাজের পরিসর, সামাজিক জীবন সব ছিল কর্ম-বংশবিস্তারে সীমাবদ্ধ। কৃষিনির্ভর দেশ। শ্রম লাগতো, বুড়িয়ে যেত অকালে খাদ‍্য,রোগ সংকটে। সুতরাং ছকের মধ‍্যে জীবন একমাত্রিক। আজকের এই বহুমাত্রিক মেলামেশার সুযোগ,একই সঙ্গে জীবনের গতি একাধিক সূত্রে যুক্ত।গোষ্ঠী জীবন দুর্বল।পারিবারিক সম্পর্কের কথা জোরাল নয়।মায়া-মমতায় ভাটা। তাই একটু খোঁজ-খবর দরকার বৈ কি। যেহেতু আমাদের সমাজেই নয়,সারা বিশ্বে রকমভেদে বিয়ে ব‍্যাপারটা চিরস্হায়ী বন্দোবস্ত। নারীর দিক থেকে ভাবনা ও জীবনযাপন সুনিশ্চিৎ করাটাই লক্ষ।

এদিকে একসপ্তাহ অতিক্রান্ত। কলেজে সহকর্মীরা জেনেগেছে তাদের

বিয়ে। নানাজনের নানা মন্তব‍্য। বুঝতে পারশে অনিশ কোথাও ভুল হচ্ছে অথবা নয়। হ‍্যাঁ তাড়াতাড়ি বটে। তবে খারাপ কিছু ভাবছে না।

অফিস ফেরার পথে ,

কথায় কথায় বেলা গড়িয়ে যায়। প্রমিতা বলে সে বাড়ি আজ যাবে না। তারকাছে থেকে যাবে। বাড়িতে অশান্তি ভালো লাগে না। কেন কি নিয়ে অশান্তি প্রমিতা খুলেও বলছে না। অনিশ ঘরে খাবারের ব‍্যবস্হা করছে রাতের। ওদিকে ওর বাবা ও মা ফোন করছে, তীব্র বাদানুবাদ বুঝতে পারছে। একটি কথা আবৃত্ত হয় প্রমিতার মুখে, তার মাকে বলছে ,কী আমি বিয়ে করে সুখী হবো না ...

অবিনাশ ফোন নিয়ে প্রতিশ্রুত হয়ে ওদের বলে , বুঝিয়ে ও আজ না হলেও কাল বাড়ি দিয়ে আসবে। আর জোর করে এমন কিছু করার ইচ্ছা ওর নেই। বিয়েও কাল করে নেবে না,সামাজিক অনুষ্ঠানের মাধ‍্যমেই হবে।

রাতগভীর হয় ক্ষেতে বসে প্রমিতা। আর যাইহোক ,ওকে আজ আর বাড়ি পৌঁছে দিত পারলো না।

প্রমিতা বলে, মা সব সময় বলে তুই বাজে মেয়ে।

--কেন?

--না, চাকরী পেয়ে যাচ্ছে সবাই।আমি তিন বছর হলো বেকার বসে আছি। নেট বা স্কুল সার্ভিসে পাচ্ছি না।বন্ধুরা সব চাকরী পেয়ে গেল।

--তা, এর জন‍্য অশান্তির কী আছে।

--সখ ছিল,সখ পূর্ণ হচ্ছে না।

আর সব সময় সিরিয়ালের কোন মেয়েকে দেখিয়ে বলবে তুই ঐ মেয়েটার মতো খারাপ,নষ্ট, বলে -- মাগি ।

এসব শুনবার পর ব‍্যথিত হয়,মা যদি এমন করে সত‍্যি দুঃখের। এক আধটা প্রশ্ন জাগে তবু কিছু বলতে পারে না।

সমস‍্যা বোঝার জন‍্য বলে, আচ্ছা তোমার কোন কি, মানে এমন কিছু , যা নিয়ে....

না, প্রমিতা রাগে না। স্বাভাবিক ভাবে বলে, বন্ধু ছিল আমার।

--বন্ধু তো থাকতেই পারে।

না, ওকে মায়ের পছন্দ ছিল। বিয়ে করবে বলে খুব ,কয়েকবার বাড়িতে এসেছিল, তো আমি না বলে দিলেই ,অশান্তি বাড়তে থাকে।

--এসব নিয়ে ভাবনার কি আছে। বন্ধু হলেই বিয়ে করতে হবে ,মানে কী।

কিন্তু এতো কাছে, এমন ভাবে পাবার পর মনে হয় না তার এই প্রমিতা কোন খারাপ মেয়ে। মার্জিত কথা,আধুনিকা, শিক্ষিতা। আর কোন মেয়ে এগিয়ে আসতেই পারে, ছেলেরা শুধু এগিয়ে আসবে তা তো নয়।

পরদিন, কলেজে যাবার জন‍্য তৈরি হয়েছে। পথে বেরিয়ে স্টেশনে ওঠার গলিমুখে পাশ থেকে, কে জনে বলে ওঠে ও আরে উচ্ছিষ্ট ছেলেকে নিয়ে ঘুরছে। থু থু। মুখ ফেরাতে দেখে সেই তোতলী মুখরা দজ্জাল মেয়েটি ননী, চোখাচোখি হতে বলে, যে মেয়ে বিয়ের আগে রাত কাটায় , সে আবার কত জনের সঙ্গে শুয়ে এসেছে তার ঠিক আছে। না, তোকে ছাড়বো না। বলেই, ননী মেয়েটি অনিশের জামার কলার চেপে ধরে। বলে আমি ছাড়বো না , কী আমাকে ছেড়ে এখন একে নিয়ে থাকা। ... যদিও ওই গলি রাস্তায় লোকের যাতায়েত কম। তাই ঘটনাটায় শোরগোল তেমন হয় নি।

কিন্তু , বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে। বলে থানায় যাবে, কেস করবে। কিন্তু সেও তো ঝামেলা।

প্রমিতা বলে ,আসলে ব‍্যাপারটি কী বলো। অনিশ বলে , পরে বলছি।

বলার মতো মন ও মুখ কোনটাই নেই। তার মন খারাপ হয়। কিছু অবুঝ নিস্তব্ধতা তাদের দুজনের মাঝে। প্রমিতা, কলেজে একবার আলাদা ভাবে এসে জানায়, সে চিন্তা যেন না করে ,কোন কারণেই ওর পাশ থেকে সরে যাবে না।

বিকালের পড়ন্ত সময়ে প্রমিতা গ্রামের বাড়িতে ফিরে যায়। রাতে ফোন করে বলে, সে সময় চায়। তারপর ভাববে কী করা যায়।

অনিশ সম্মতি জানায়।দুদিন অতিবাহিত। তাদের কথা বন্ধ। শরীর খারাপ বলে কলেজে না গিয়ে দুদিন অন্তহীন সমস‍্যার কূল খুঁজে না পেয়ে কলেজের কাছে মোড়ের মাথায় অপেক্ষা করে।

প্রমিতা উপেক্ষা করে। বলে, বারন করে ছিলাম না।

--না খুব কষ্টে আছি।

স্টেশনে বেঞ্চে বসে , কথা চলতে থাকে। তুমি ভাববে না। ডিভোর্স তোমার হয়েছে , সেটা এক সপ্তাহ টেকেনি, তাও শুনেছি। একদিন শুধু ,প্রথম দিন ফিজিক‍্যাল হয়েছিলে ,সে জোরাজুরি করেছিল বলে। তাও শুনেছি। কিন্তু তাই বলে ভাববে না, আগামী দিনে যার সাথে বিয়ে হবে সে কী পাবে। তাকে ঠকাবে।......

কাঠিন‍্যে কোন উত্তর নেই। ফ‍্যালফ‍্যাল করে চেয়ে হঠাৎ হাত দুটো চেপে ধরে বলে ক্ষমা করো।

আসলে ওই ঘটনার জন‍্য দুঃখিত।

--কী ঘটেছিল।

-- আসলে ,আমি ভাড়া বাড়ি থেকে ফ্ল‍্যাট কিনেছি। আর্থিক চাপেও ছিলাম। তো বাড়িতে একটু বসে সময় নষ্ট না করে কোচিং শুরু করি। একদিন পাড়ার ভবেশ বাবু বললেন, তার মেয়ে শ‍্যামা নাইনে পড়ে যদি একটু দেখিয়ে দিই। নিমরাজি হয়ে পড়াতে যায়। তখন ওদের বাড়িতে গিয়ে কয়েক দিনের মধ‍্যে শ‍্যামবর্ণ সুশ্রী মেয়েটির সাথে পরিচয় হয়। এক-আধদিন চা দিতে আসতো পড়ার ঘরে। বিবাহিত এইয মেয়েটির পরিচয় দিতে গিয়ে বলেছিল তার দিদি ননী। একদিন, বাড়িতে গিয়ে কাউকে দেখতে না পেয়ে বসার ঘরে বসে পেপারে চোখ বোলাতে বোলাতে ,জিজ্ঞাসা করে ,শ‍্যামা বাড়িতে নেই। ও বলে, না পিসে মশায় ওদের নিয়ে আজ সকালে বেলুড় ঘুরতে গেছিল। বলেছিল ৫টার মধ‍্যে চলে আসবে। কিন্তু এখনো ফেরেনি। তাই আপনাকে জানানো হয়নি।

আমি উঠতে যাবো, এবং বললাম আগেই বললে পারতেন ,তাহলে বাইরে থেকেই চলে যেতাম। ও বললো, বসুন না।দিনরাত তো পড়া নিয়ে থাকেন।

--না, না,সেটা নয়। আসি।

অনন‍্যা বললো,একটু চা খান ,তার মধ‍্যে ওরা চলে আসবে। এর মধ‍্যে ওদের বাড়িতে ল‍্যান্ডফোনে কল আসে, ওদের ফিরতে ফিরতে রাত ৮টা হয়ে যাবে। ....সেটা অনন‍্যা আমাকে জানায়। চা করে পাশের সোফায় বসে

দু-চার কথা বলতে বলতে , বলে আপনার চোখ ও ঠোঁটের মধ‍্যে যাদু আছে, চেপে ঠোঁট দিয়ে হাসেন ,সেটা কিন্তু অপূর্ব।

লজ্জিত হয়ে বলি,না না তেমন কি?কিন্তু আপনিও বেশ ভালো। তা আপনি কি করেন। বলে ,আমার ৪বছরের মেয়ে আছে। আমি বেসরকারী নার্সিং বিভাগে চাকরী করি।

-- ও!তা স্বামী!

-- ছাড়ুন , ও সব কথা।

এর মধ‍্যে হঠাৎ লোডশেডিং, দুর্গানগর অঞ্চলে প্রায় হয়। ও,হঠাৎ আমার শরীরের কাছে চলে আসে। আমিও নিজেকে সামলাতে পারি না। হতাশা ও যণ্ত্রণায় ওর চাবুকের মতো শরীরের সাথে মিশে যায়।

এতক্ষণ পর প্রমিতা কথা বলে। তা বেশ তো চলছিল। হঠাৎ আমার দিকে হাতবাড়ানো কেন।বলিহারি রুচি।আর বেশ কাব‍্যিক তো।কিন্তু অনিশ উল্টো বলতে পারত, মহাশয়া আপনার দিকে আমি নয়, আপনি এগিয়েছেন , প্রস্তাব দিয়েছেন,সেটাতে সাড়া দিয়েছি।বলেনি, আগ বাড়িয়ে কাউকে আঘাত করা স্বভাব নয়।

--সবাই মানুষ।

--তাই বলে এরকম একটি মেয়ের সাথে। কোথায় তোমার চাকুরী ও কোথায় একটি বেশ‍্যার পেশা।

অনিশ চুপ করে থাকে।প্রমিতা বলে বলো, তারপর।

--তারপর আর কী কয়েকদিন এভাবে শারীরিক সম্পর্ক হয়। কিন্তু কোথাও ঠিক হচ্ছে না আর আমার পড়ানো অসুবিধা বলে জানিয়ে, অন‍্য মাস্টার দেখতে বলে পড়ানো বন্ধ করে দিই। অনুরোধ করেছিল। কিন্তু আর ওসব যুক্তি এবার শুনিনি।

--তা ঐ মেয়েটি যোগাযোগ করেনি।

--না, কোনদিন নয়। কিন্তু ৪মাস হয়েগেছে। হঠাৎ এ ভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে ,কি জন‍্য এমন চিৎকার করলো। বললো, আমাকে ছেড়ে দিয়ে এর সাথে সম্পর্ক।

--ও হয়তো ভেবেছিল তুমি বিয়ে করবে।

--না ,সে সব কথা কোনদিন হয়নি। এক-আধটা কথা। শরীর। আর যতক্ষণ লাগে।

--টাকা-পয়সা দাও নি।

--না, মনে হয়নি। ও কখনো বলেনি।

--সেইজন‍্য এই রকম। তা কিসের জন‍্য সেক্স করবে।

অনিশের ভাবনায় আসেনি এসব। তবে দেওৎআ উচিৎ ছিল। অনিশ তো উচ্চ বেতনে চাকরী করে।কিন্তু এই সম্পর্কটার মধ‍্যে শরীর ছিল। মন। কোন নাম নেই সম্পর্কের। টাকা দেওয়াটা তো অপমান....

সুর কাটে চিন্তার। প্রমিতা যেদিন এসেছিল , প্রথম যেদিন ট্রেনে বাড়ির পথে তুলে দেয়, ৫০০টাকা দিয়েছিল। সে তো কর্তব‍্য, ঐকান্তিকতা ও সবে গেস্ট হিসেবে কলেজে যোগ দেওয়া

জীবনসাথী হবে,তার জন‍্য ভালোবেসে উপহার।

      

     দুজনের মধ‍্যে সুরটা কেটে গেছে। নীরবতা ভঙ্গ হল।প্রমিতা বিরক্তি প্রকাশ করে চুপকরে থাকে কিছুক্ষণ। তারপর বলে ওঠে,

যাইহোক , তোমার জীবনে যা ঘটেছিল তখোন আমি ছিলাম না, আমার জীবনে কিছু ঘটেছিল তখোন তুমি ছিলে না । কিন্তু তোমার জীবনে নতুন কিছু যেন না ঘটে । ঘটলে এবার ক্ষমা করতে পারবো না।

--অনিশের চোখ ছলছল করে ওঠে।প্রমিতার হাতদুটো চেপে বসে আছে। কিন্তু ও ভাবতে পারে না, শান্তশ্রী মেয়েটির কথার মধ‍্যে কোন ইঙ্গিত আছে।জিজ্ঞাসা করার শক্তিও নেই। কারণ তার সম্পর্ক আলোর মতো । যদি জিজ্ঞাসা করে তো বলবে, নিজে যা তা করছো ,আর অন‍্যের ব‍্যাপারে বাজে কথা। বলবে বন্ধু ছিল তাই। শুধু বন্ধু। আর সত‍্য যদি না কিছু করে, বিয়েটা যদি ভেঙে যায়, তা হলে পরিস্হিতি হবে খুব খারাপ। তবে বুঝতে পারে জীবনে শান্তি ও সুখ নেই। সব রোমান্টিকতা অর্থহীন। এযেন দুটো রেল লাইনের মতো।কোনদিন মিলবে না।

আর সরে যাওয়ার শক্তিও নেই। সবাই জেনেগেছে, বিয়ে হবে।দিনক্ষণ ঠিক। সরেগেলে যে বদনাম ও অপমান হবে,সেটা সামলাতে পারবে না।

 










 



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance