কোথাও শান্তি নেই
কোথাও শান্তি নেই
কোথাও শান্তি নেই
কাজের লোক , মেয়ে নয় ছেলেও নয়। সে শুধু কাজের। আমরা যখন চারপাশে নানা অন্যায় ও অত্যাচারে সহনশীল, তখন ওদের কাজে না আসাকে গর্হিত অপরাধ ধরে বিচার করি স্বাভাবিক ভাবে ।
অবশ্য অনেকে সপ্তাহে একদিন নয়, তিনদিন ছুটি নিয়ে বসে থাকে । আবার অনেকে দুটো বাসনপত্র বেশি হলে, বেশি কথা বলতেও ছাড়ে না।
শ্যামল সামান্য চাকরী করে। গ্রামে সবাই থাকে।সবাই ব্যাপারটা যদিও আজ অর্থহীন। কাজের মাসি আজও এলো না। অপেক্ষা করে,কিছু একটা সিদ্ধ রান্না করে খেয়ে স্কুলে যাবে, কিন্তু রান্না ঘরের অগোছালো অপরিচ্ছন্ন বাতাবরণে , অফিসে পাড়িদেয়। তিনদিন না বলে কয়ে আসেনি। ফোন নম্বর দিয়েছিল বটে,কিন্তু পেল না কল করে। পরদিন শরীরটা ভালো নেই,অফিস ছুটি নিয়েছে ।
কয়েকবার ঘুম এসে ঘুম ভেঙেগেছে। মাথাব্যথা ও গায়ে জ্বর। ভোরের দিকে ছটপট করে ক্লান্ত শরীর কিছুটা ঘুমে আচ্ছন্ন হয়, ৮টা নাগাদ ঘুম থেকে উঠে একবার ওয়াশ রূম থেকে ফিরে , চেষ্টা করলো অফিসে যাবার জন্য প্রস্তুত হতে। কিন্তু পা দুটো টলছে, শরীরটা কাঁপছে ও মাথাটায় অসম্ভব ভার ভার বোধ, যেন চোদ্দমন ওজন কে চাপিয়েছে।
১১টা নাগাদ চোখ দুটো হঠাৎ খুলে গেল। দেওয়াল ঘরির দিকে তাকিয়ে বিরক্ত হয়ে মোবাইলটা নিয়ে ফোন করতেই,আজ একবারে পেয়ে গেল।
--কী ব্যাপার? আজ আসবে তো। কোন খবর নেই।
--না, দাদা আসছি। আপনি বাড়ি আছেন তো।
--হ্যাঁ ১২টার মধ্যে এসো ।
বিরক্তি নিয়ে বলে ওঠে শ্যামল ,আর একটা কল করে বলতে তো পারো , আজ আসবে না । কল করে তো জানাতে হয়।
--না দাদা পয়সা ছিল না, তাই জানাতে পারিনি।
১১.৩০ টা নাগাদ গীতা কাজের দিদি এলো । গম্ভীর ও বিরক্তির সুর নিয়ে শ্যামল বলে, কী ব্যাপার বলো তো
, এভাবে বন্ধ দিলে আমার খুব অসুবিধা হয়।
--হ্যাঁ দাদা জানি তো। কী করবো বলুন। নাতির ঘাড়ে-গলায় টিউমার হয়েছে ,অপারেশন করাতে হবে । ডাক্তার বাবু বলেছে, যদি না করা হয় মাথা খারাপ হয়ে যেতে পারে। ঠিক মতো দাঁড়াতেও পারবে না।
- --ও,তা কবে করবে।
-- -দেখি দাদা। আসলে মেয়েটা আমার কোন কম্মের না। এই ১৭বছর হবে। জানে ওর বাবা আমাকে ছেড়ে চলেগেছে। এই দেখুন গলায় ব্লেডের দাগ ,৬টি শেলাই পড়ে ছিল।
--সত্যি খুব খারাপ।
আসলে শ্যামল এতো কথায় থাকে না। একটু অমিশুকে। কিন্তু জীবনে অনেক হারিয়ে বেসরকারী স্কুলে পড়িয়ে যা পায়, তাতে জীবনটাকে কঠিন ভাবে দেখতে শিখিয়েছে। অর্থকে চিরকাল গুরুত্ব দিত না। কিন্তু শ্যামল অধ্যাপনা করতো।উপার্জন যা করতো ভালোই চলে যেত। গ্রামের বাড়িতে সবার সাথেই থাকতো। বাড়ির মন ও সম্পর্কের মূল্য সে দিচ্ছে,অথচ যাদের জন্য করা তারাই সর্বনাশের পথে ঠেলেই দেয়নি শুধু, এমনকি হত্যার চক্রান্ত করে।
কিন্তু বিবাহের দৌলতে 498,406,125 ইত্যাদি মামলায় ফেঁসে , একটি নষ্ট মেয়ের চক্রে ও দাদাদের শয়তানিতে সাসপেন্ড হয়। শেষে চাকরীটা ছেড়ে দেয়। এখোন ওর কেস চলছে।
বুঝেছে পড়াশুনা করলে হয় না, সমাজটাও জানতে হয়। মিশত হয় বাস্তবতা ও ছলচাতুরী ।সরলতা ও সততাকে না হলে আত্মহত্যা করতে হয়।
--তা এখন আমি ছোট ঘর করেছি খাস জায়গায়। আমার এই কাজে সংসার চলে। মেয়ে ক্লাস এইটে পড়ে, তখন গেল পালিয়ে। দুবছরের মাথায় এলো ফিরে। জামাইয়ের আগে সংসার ছিল। তারপরে আবার ওই অল্প বয়সে ওরকম করলো। কোথায় লেখাপড়া করে দাঁড়াবে ,তা না,ফেসবুক ওঐসব করে ,কী পরিচয়,তারপরে যা হয়। এখোন বাবু বাড়িতে খায় আর ঘুমায়। ছেলেটার সব খরচ আমাকে টানতে হয়।
--সত্যি খুব খারাপ। তো মেয়ে ডাক্তারের কাছে ছেলেকে তো নিয়ে যেতে পারে।
--তা হলে হয়েছে। কোন দায় দায়িত্ব বোধ নেই। দেখবেন দাদা কোন কাজ মেয়ের জন্য অফিসে। ও তো কম্পিউটাটা শিখছে।
--দেখবো।
চিৎকার নয়, জোরে জোরে গীতা বলছে। আর কাজ করছে। এসব শুনতে ভালো লাগে না। পৃথিবীতে পরিবার,শিক্ষা ও মূল্যবোধ নিয়ে সে কী ভাববে বা কোথা থেকে শুরু ও শেষ করবে ভাবনা,বুঝতে পারে না।
কোথাও শান্তি নেই।
এসব ভাবছে,মাথটা এমনিতে আজকাল কম কাজ করে, তারপর এসব ব্যাপার ,শরীর অসুস্হ অবস্হায় তো অসহ্য।
কাজ শেষ হলে,গীতার হাতে শ্যামল 2000 টাকার নোট দিয়ে বলে ,আমার অসুবিধা ,ভালো লাগত যদি কিছু করতে পারতাম । টাকাটা দিয়ে বাচ্চাটাকে ওষুধ ও খাবার যেন কিনে দেয়।
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ তেমন করে না। তবুও কৃতজ্ঞতার ছাপ চেহারায়।
কাল কাজে আসবে ,তবে একটু দেরি হতে পারে বলে,চলে যায় । শ্যামলের ভাবনাটা বন্ধ হয়ে আসছে। আবার মাথা ব্যাথা ও জ্বরটা মনে হচ্ছে সহ্য করতে পারার অবস্হায় নেই। দরজাটা বন্ধ করে চাঁদর মুড়ি দিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো। বুকের মধ্যে দিকচিহ্নহীন শূন্যতা ও নিঃসহায়তা আচ্ছন্ন করছে আজ সব থেকে বেশি।
@সুনীলকুমার@21/4/19