একটি প্রেমের জন্ম
একটি প্রেমের জন্ম
একটি প্রেমের জন্ম
@সুনীলকুমার
আজ প্রথম আলো । জীবনে অনেক সময় নষ্ট শুধু নীতির মালা ঠেলে। নীতি সততা আজ দেখবার বস্তু বটে। যদিও কোথাও মিউজিয়াম নেই। তবু মিউজিয়াম আমার সামনে থাকে,দেখার চোখ ও মন নেই। স্বামী বিবেকানন্দ ,নেতাজী,নজরুল, রবীন্দ্রনাথ,বিদ্যাসাগর রয়েছেন যে।
জীবনে অকপট হবার,সরল হবার ও সত্যপথে চলার মূল্য ,কর্তব্যে দায়বদ্ধতা ও ভালোবাসা আপনজনদের তো অন্যায় নয়।
মা, বাবা,দাদা ও ভাই। এদের প্রতিমাসে কর বা তোলা দেওয়াকে দেখভাল,ভালোবাসা বলে না। তাদের প্রতি যত্নশীল হবার ইচ্ছা ও চেষ্টাটায় বড়ো কথা।কজন বোঝে।
সম্পর্ক এ যুগে অচল। ভাই নাকি ভাইয়ের পেছনে ছুরি মারে,হিংসা করে , বাধা দেয় ও টেনে নামায়।বিচিত্র বাবু এসবে বিশ্বাসী নয়। বয়স তার তিরিশ। সে উচ্চতর পেশায় নিযুক্ত। অনেক কথায় শোনেনি সে। তবুও শুনেছে। সামাজিক মতে গ্রামে বেড়ে ওঠে যে, সেই সমাজ,পরিবার,আত্মীয় এদের নিয়ে তো চলতে হয়। বাদ দিলে দেওয়া যায়। সেই ধাতব দিয়ে তার হৃদয় তৈরি হয়নি।
প্রেম করার মধ্যে তার মনে হয় ,নিজের প্রতি,পরিবারের প্রতি ও দেশের প্রতি অন্যায়। ছাত্রজীবনে প্রথম কাজ পড়াশুনা করা।
নিজেকে যোগ্য করে তোলা সাধ্যমতো। যে নিজেকে গড়তে পারে না বা নিজের দায়িত্ব নিতে বঞ্চিত, সে কী করে এ সব দায়িত্ব নেবে।
বাড়ি থেকে সম্বন্ধ।এলো। নিমরাজী হয়ে মত দিল। নিশ্চয় ভালো চায় বাড়ির লোকজন। ওর যেখানে পছন্দ হতো, দাদারা ক্ষমতা বলে ভেটো দিয়ে ভেঙে দিত শুধু নয়, খুঁত বার করে ধীক্কার দিত।
ভাবতো সামাজিক অভিজ্ঞতা কম।তাই। ওরা হয়তো ঠিক। বিয়ের রাতে ঘুম এলো না তার। বাড়ির সাথে সম্পর্ক নেই আর। প্রচুর পরিমানে টাকা নষ্ট হলো। মেয়েটি খোরপোষের জন্য নিল।
বিয়ের দিনটি ছিল ভয়ংকর। তার শিক্ষা ,রুচি ও উন্নত ও কালচার সব শেষ।
বার বার মেয়েটি ফোনে কথা বলছে।বলছে মামা ফোন করছে।বিচিত্র যতদূর জানতো মেয়েটির মামাই নেই। সন্ধ্যায় কল এলো বিচিত্রর কাছে। মশায় কাকে বিয়ে করেছেন।ও তো আমার সাথে পালিয়ে গেছে।দুবার অ্যাবর্শন করেছে। এবার তো আমার বাচ্চা নিয়ে গেছে....
মাথার মধ্যে হাতুড়ি দিয়ে কেউ আঘাত করলে বা শারীরিক নিগ্রহের যে অসহায়তা ভোগ করতে হয়,তেমন অবস্হা ওর। এমন সময়,সন্ধ্যার দীপ নিভে লোকজন মশাল জ্বেলে অনুষ্ঠান শুরু করেছে। পা টলছে।কে যেন ডাকছে। ফিরতে দেখলো ঘটকী কে।একদিন দেখেছিল। সব কথা বলা হল না তার।বলো শুধু না জানিয়ে বিয়ে করলে। ....ও ভালো মেয়ে না...কথা শুরু হতে না হতে ঘটকী বুড়ি কে ওর মেজদা ডেকে নিয়েগেল ।মেজদা বাড়ির শেষ কথা।
বাসর রাত।দোদুল্যমান হয়ে ঘরে ঢুকছে। ঢুকতে না ঢুকতে মেয়েটি মানে শুলা বলে ,এ সব কী অনুষ্ঠান হচ্ছে। আসলে ডিভোর্সী বলেই তো...
বিচিত্র বলে, আমার সাধ্য যা হয়েছে...অথচ ও বলতে পারে না ভিখারী তোদের বাড়ি তো কোন রকম তাবু খাটিয়ে পাঠিয়েছে। ন্যূনতম জলখাবার দিতে পারে নি। একটা সুতো নেয়নি। ....
কিছু কথা এদিক হতে না হতে,...
শুলা খাটের পরে চিৎ হয়ে, কাপড় তুলে দিয়ে বলে, এই বাল লাগাবি না কথা বলবি।শুয়োরের বাচ্চা হয়ে ঘোঁৎ ঘোঁৎ করবি । ক্ষাণকির ছেলে মারা না হলে ফোট
ভেঙে পড়ে। গুঁড়িয়ে গেল জীবন ও ভাবনা। মত দিয়েছিল।বিয়ে করবে না বলে বেঁকে বসেছিল। তারপর, দাদার ছলনা ,খবর নিতে বলেছিল, গুরুত্ব দেয়নি।দাপড়ে চুপ করিয়েছিল।
পড়াশুনা করা লোকটি ভাবে।,এ শিক্ষা সব ব্যর্থ। সবাই বলবে মাথা গরম করে ও খারাপ বলে বিয়ে টেকে না।মেয়ে গুলো ভালো।
কোন কালেই বেশি আড্ডা বা মেয়েদের সাথে সহজ হতেও পারে না। চিরকাল নীতি,সত্য বাজে কথা না বলা,চুরি বা প্রতারণা না।করা এসব শিখেছে। বলেছে এই আদর্শ।বিশ্বাস করেও।
কিন্তু রাত কাটলো।এবার এতদিনের বাড়ির সাথে দূরত্বের পালা। জানে বাড়ির লোক ছোট হয়ে যাবে।ওরাও সম্পর্ক রাখতে চাইবে না। ও কষ্ট পাবে।তবুও একা হতে হবে।
সকালে জানলো বাড়ির লোক। দাদা বললো,করবি না,লাগাবি না তো গালাগালি করবেই। সব কিছু গৌণ হয়ে গেল।
বিচিত্র পালিয়ে গেল। তারপর বধূ নির্যাতন,পণ নেওয়া , অবৈধ সম্পর্ক মেয়েদের সাথে ইত্যাদি কেসে জেলেও গেল।
মেয়েটি আবার সিভিক পুলিশ ছিল। পুলিশের সাথে রাত কাটাতো।তাও জানলো অ্যারেস্ট হবার পর। সেই থানাতে যে থানাতে ওর যাতায়েত।ওখানকার বাবুরাই বলেছে তাকে।জিজ্ঞাসা ছিল, কে তার এ বিয়ে ঠিক করলো।বাড়ির লোকজন কেন এরকম মেয়েটিকে সাপোর্ট করছে। দাদার ইন্টারেস্ট কিসে।
তারপর ,আজ সুরিকার সাথে দেখা। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজে এসে। মেয়েটির চোখ দিয়ে টপটপ করে জল পড়ছে।বকছে তাকে। ভর্তি হতে পারবে না।
বিচিত্র এগিয়ে যায়। ব্যবস্হা করে দেয়। মেয়েটিকে ফোন নাম্বার দিয়ে বলে ,অসুবিধা হলে বলো দেখবো।থাকো তো বাঁকুড়ায়। তা ঠিক আছে, দেখবো সাধ্য মতো।
তারপর ,অনেকদিন পর ধন্যবাদ জানিয়েছিল। ভুলেও গেছিল বিচিত্র। কত অর্থ সাহায্য করেছে, কত ক্ষতি সয়েছে ও, উপকার করেছে, বিনিময়ে ভদ্রতাটুকুও পায়নিও। আসলে, ও ভাবে তার সত্য আজ অচল।তবুও সত্য,মূল্যবোধ ও মনুষ্যত্বের জন্য প্রকাশভঙ্গি ও বলার ধরণ বদলাবে। তবে সরবে না ,মূল্যবোধের পথ থেকে।
সামাজিক নৈতিকতা তো মূল্যহীন।আজ আছে।কাল নেই। কারণ, একদা মেয়েদের পড়তে দেওয়া হত না, কারণ মেয়েরা পড়লে বিধবা হয়ে যাবে।কম বুদ্ধি ওদের। কতদিন আগে আর ,ঊনবিংশ শতাব্দীতে তার ভাঙন শুরু।আজ বললে লোকে হাসবে।
সুরিকা বুকের নীচে। উত্তপ্ত ঠোঁটের চুম্বনে ভেসে যাচ্ছে। সুঠাম ও সুডোল বুকের মধ্যে মুখ রেখে ও
শ্বেত ঊরু ও নাভিতে মুখ রেখে নিচ্ছে আদিমতার ঘ্রাণ। উত্তেজনায় ভূমিকম্প।
লজ্জিত। কি বলবে।ভেবে পাচ্ছে না, ওষুধ খেতে হবে কিনা জানতে চায় । সুরিকা বললো সে কি করে বলবে।
--তোমাদের সেফ সময় ....জানো কিছু।
--না।
--দাঁড়াও গুগলে শার্চ করি। পড়তে পড়তে হঠাৎ চোখ আটকে গেল। যারা প্রথম সেক্স করছে তাদের ক্ষেত্রে।সেফ পিরিয়ড বলে কিছু হয় না। ।...
--তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞাসা করবো।
--বলুন।
--তুমি আগে সেক্স করেছো , না আসলে লেখাটা দেখে প্রশ্ন জাগলো, তুমি করেছো , তাই না।
--হ্যাঁ।
কিছুটা ব্যথা পেল বুকে। তবুও বুকের মধ্যে যখন সমুদ্রের ঢেউ আছড়ে পড়ছিল,তখন প্রথম ঢেউ হলে যা হয়,এর ভেঙে পড়া ঢেউ তেমন যেন ছিল না। এত সূক্ষ্ম অনুধাবন কঠিন,বোঝা দুঃসাধ্য।
--তো কি করতে তখন।
--ও কণ্ডোম পরতো।
দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। ওদের বয়সের পার্থক্য বেশ।বুকের মধ্যে লাজুক মাথাটা টেনে নেয়। স্যালুট এই মেয়েকে। সহজ কথা সহজে বলা যায়।শেখার আছে।কোন লোভ,মোহ যাকে ভড়ং করতে শেখায়নি।
--তুমি বিয়ে করবে আমাকে।
--না।
--কেন?
--আমি স্বাধীন ভাবে বাঁচতে চাই। কোন জবাব, খাওয়া,ঘুম,পোশাক সব। সব ব্যাপারে নির্দেশ অসহ।
--হুম।ভালো। সব ক্ষেত্রে ব্যাপারটা ওমন নয়।
--হয়তো।
--তুমি এতো নরম,কোমল ও শান্ত , অথচ চিন্তা ভাবনা সম্পর্কে এতো বলিষ্ঠতা কোনদিন মনে হয়নি , ভালো লাগছে।পড়ো।নিজেকে তৈরি করো। পরে ভেবো।
--আর ঐ জন্য কি ।
--না ওর সাথে সম্পর্ক না থাকার সমান। অশান্তি ভালো লাগে না। যোগাযোগ তলানিতে। দেখা ও কথা ৬মাসে একবারও হয় কিনা সন্দেহ।
--ঠিক আছে। যা ভালো বুঝবে করো। নিজেকেআগে বোঝো,তৈরি করো স্বাবলম্বীর পথ। তারপর যাকে মনে হয়।
--না না, ভাববেন না।
--ঠিক। কবে দেখা হবে ।
--সময় হলে বলবো। নিজেকে যত্ন নিন। ভালো থাকুন।
আজ বিচিত্র সত্যর কাছে মাথা নত করলো।স্যালুট করলো জীবনের কাছে।যেখানে ঘৃণ বা যন্ত্রণা কিছু নয়, অদ্ভুত অনুভূতি ব্যাখ্যাহীন ও তারপাশে বিস্মিত এক প্রশান্তি।হ্যাঁ দেখো তুমি যা ভাবো,চাও আমি কিন্তু ঠিক তা নই, তবে আমি মিথ্যা বলছি না।